আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ওয়েবসাইট তৈরির আগে যে বিষয়গুলো আপনার জানা দরকার

স্বাগতম আমার ব্লগে ইন্টারনেটের পরিধি ক্রমশ বেড়ে চলেছে। বাড়ছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী আর ওয়েবসাইটের সংখ্যা। এক সূত্র মতে এ পর্যন্ত নিবন্ধিত ডোমেইন সংখ্যা ২৫২ মিলিয়ন! যদিও সবগুলো ডোমেইন নেম কার্যকর নয়, তারপরও এর বিপুলতা আঁচ করা যায়। আমাদের দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের এবং ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট তৈরির বর্তমান প্রবণতা লক্ষ্য করার মতো। কিন্তু এ সংক্রান্ত সাধারণ বিষয়গুলোতে ধারণা না থাকার জন্যে অনেকেই প্রতারণার স্বীকার হচ্ছেন।

আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি- বিশেষ করে যারা ফ্রিল্যান্স ওয়েব ডেভেলপার, তাদের মধ্যে ক্লায়েন্টকে নয়-ছয় বুঝিয়ে অতিরিক্ত পয়সা নেওয়ার প্রবণতা বেশি। বেশ জনপ্রিয় একটা বাংলা ব্লগ এরকম প্রতারণার মুখে পড়ে এখন মৃতপ্রায়! এখানে যে বিষয়গুলো আলোচনা করেছি, এগুলো একেবারে নবিশদের জন্যে। প্রাথমিক ধারণা না থাকার জন্যে কেউ যাতে প্রতারণার স্বীকার না হন, উদ্দেশ্য এটা। একটি ওয়েবসাইটের সাথে মূল দুইটি বিষয় জড়িত; ডোমেইন এবং হোস্টিং। আগ্রহীদের অন্তত এই দুটি বিষয়ে ধারণা রাখা উচিৎ।

ডোমেইনঃ এক কথায় ডোমেইন (ডোমেইন নেম) হচ্ছে ওয়েবসাইটের ঠিকানা। যেমনঃ http://www.muktokontho.com আপনি ব্রাউজারে যে ঠিকানা (Web address) লিখে কোনো ওয়েবসাইটে ঢোকেন, সেটাই ডোমেইন নেম। ডোমেইন নেম হতে পারে ফ্রি অথবা টাকায় কেনা (পেইড)। ফ্রি ডোমেইন নেমের মধ্যে আছে .tk, .co.cc ইত্যাদি। প্রায়োগিক অর্থে আমরা ডোমেইন নেম বলতে পেইড ডোমেইন নেমকেই বুঝাই।

.com, .net, .org ইত্যাদি ডোমেইন মূলত টপ-লেভেল ডোমেইন (TLD) ক্যাটাগরির অন্তর্গত। এর বাইরে আছে ccTLD (Country-Code Top Level Domain), এই ডোমেইনগুলো আঞ্চলিক। যেমনঃ .com.bd বা .net.bd হচ্ছে বাংলাদেশের জন্যে। একইভাবে ব্রাজিলের জন্যে .br, ভারতের জন্যে .in, জার্মানির জন্যে .de ইত্যাদি ccTLD আছে। (তালিকা) এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, বাংলাদেশি ccTLD-এর ক্ষেত্রে আপনি শুধু .bd ব্যবহার করতে পারবেন না।

আপনাকে একটি TLD’ও নিতে হবে। অর্থাৎ আপনার ওয়েবসাইটের এড্রেস http://www.something.bd হতে পারবে না, http://www.something.com.bd হতে হবে। আপনি ইচ্ছে করলেই যেকোনো নামে ডোমেইন নিতে পারবেন না। যেমনঃ facebook.com আপনি নিতে পারবেন না, এটি অন্য কেউ নিবন্ধন করে নিয়েছে। আপনি যে নামে ডোমেইন নিবন্ধন করতে চান, সেটা অবশ্যই ফাঁকা (অনিবন্ধিত) থাকতে হবে।

আপনার কাংখিত ডোমেইন নেম নিবন্ধিত হয়েছে কিনা এখানে চেক করতে পারবেন । খরচঃ রেজিস্ট্রার (যেসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন করা যায়) ভেদে .com, .net, .org ইত্যাদি ডোমেইনের দাম ৮-৯ ডলার থেকে শুরু করে ৩৫-৪০ ডলার পর্যন্ত হতে পারে। আবার ক্ষেত্রবিশেষে ডোমেইনের দাম কয়েক হাজার ডলারও হতে পারে। ডোমেইনের চার্জ হিসাব করা হয় বাৎসরিক; অর্থাৎ এই চার্জ আপনাকে প্রতি বছর দিতে হবে। হোস্টিং- আপনি একটা ওয়েবসাইটে গিয়ে একটা ছবি দেখলেন, কিংবা ইউটিউবে গিয়ে যে ভিডিও দেখলেন; কখনো কি ভেবেছেন- এই ছবি বা ভিডিওটা কোথায় আছে বা কোথা থেকে আসছে? একটি ওয়েবসাইট মূলত অনেকগুলো ফাইলের সমন্বয়ে তৈরি হয়ে থাকে।

এই ফাইলগুলো রাখা হয় অন্য কোনো কম্পিউটারে! বিশেষ ধরণের এই কম্পিউটারগুলো চব্বিশ ঘণ্টা চালু থাকে। এগুলো সার্ভার। আপনি নিজের সাইট রাখার (হোস্ট করা) জন্যে এখান থেকে প্রয়োজনীয় পরিমাণ জায়গা ভাড়া করতে পারবেন। হোস্টিং-এর সাথে দুটি জিনিস ওতপ্রোতভাবে জড়িত; স্পেস এবং ব্যান্ডউইথ। স্পেস/ডিস্ক হচ্ছে- আপনি কী পরিমাণ ফাইল রাখতে পারবেন, সেই হিসাব।

ফাইল হতে পারে ছবি (ইমেজ), অডিও-ভিডিও কিংবা এইচটিএমএল/পিএইচপি জাতীয় ফাইল। আর ব্যান্ডউইথ হচ্ছে- আপনি কী পরিমাণ ডাটা ট্র্যান্সফার করতে পারবেন। এটা মূলত ভিজিটরের সাথে সম্পর্কিত; যতো বেশি ভিজিটর, ততো বেশি ব্যান্ডউইথ খরচ। হোস্টিং কেনার সময় আপনি যে স্পেস পাবেন, সেটা এককালীন; কিন্তু ব্যান্ডউইথ দেওয়া হয় মাসিক হিসাবে। ধরুন, আপনি একটা হোস্টিং প্যাকেজ কিনলেন, যেটাতে ১ জিবি স্পেস এবং ১০ জিবি ব্যান্ডউইথ দেওয়া হয়েছে।

এটার অর্থ হচ্ছে- আপনি আপনার ওয়েবসাইটের জন্যে সর্বোচ্চ ১ জিবি ফাইল ব্যবহার করতে পারবেন এবং প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ১০ জিবি ডাটা ট্র্যান্সফার করতে পারবেন। এক মাসে যদি ব্যান্ডউইথ পুরোটা খরচ না হয়, পরের মাসে গিয়ে সেটা আবার ১০ জিবি হয়ে যাবে। খরচঃ আমার জানামতে বাংলাদেশে কোনো হোস্টিং কোম্পানি নেই। ব্যাংক সহ কিছু প্রতিষ্ঠান নিজেদের ওয়েবসাইটের জন্যে সার্ভার তৈরি করে নিয়েছে। তবে হোস্টিং ব্যবসা করেন, এরকম যারা আছেন, সবাই রিসেলার ।

তাঁরা অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে বেশি পরিমাণ স্পেস ও ব্যান্ডউইথ সহ রিসেলার-হোস্টিং কিনে সেগুলোকে অল্প স্পেস এবং ব্যান্ডউইথের ছোট প্যাকেজে বানিয়ে বিক্রি করে থাকেন। বিদেশী, বিশেষ করে ইউএসএ ভিত্তিক কিছু কোম্পানির রিসেলার হিসেবে অনেকেই ভালো ব্যবসা করে যাচ্ছেন। কোম্পানিভেদে হোস্টিং-এর মূল্যের এতো তারতম্য হয় যে, এ সম্পর্কে ভালো ধারণা দেওয়া কঠিন। যেহেতু নতুন ওয়েবসাইট বানাবেন আপনি, আপনার জন্যে প্রাথমিকভাবে ১-১০ জিবি হোস্টিংই যথেষ্ট। আর দেশীও রিসেলারদের কাছ থেকে নিলে প্রতি জিবি হোস্টিং আপনি ৫০০-২০০০ টাকার মধ্যে নিতে পারবেন।

তবে, আপনাকে অবশ্যই খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে- আপনি যাঁর কাছ থেকে হোস্টিং নিচ্ছেন, তিনি কোন কোম্পানির রিসেলার এবং সেই কোম্পানির সুনাম কেমন। আর সরাসরি বিদেশী কোম্পানি থেকে ছোট আকারের হোস্টিং কেনার সুযোগ নেই বললেই চলে। যেগুলো আছে, তাতে আপনার পোষাবে না। বাজারের সেরা হোস্টিং কোম্পানিগুলো হচ্ছে- HostGator, JustHost, iPage, BlueHost ইত্যাদি। (সূত্রঃ গুগল )।

আর আপনাকে যে কথাটি মনে রাখতে হবে, সেটা হচ্ছে- জিনিস যেটা ভালো, দাম তার একটু বেশি! ভালো হোস্টিং বাছাই করা সত্যিকারার্থে কঠিন কাজ। এই পোস্টটি পড়ুন, আশা করি ধারণা পাবেন। কোথা থেকে কিনবেনঃ আমি সবসময় পরামর্শ দিয়ে থাকি- সরাসরি কোম্পানি থেকে না কিনে রিসেলারদের থেকে কিনুন। বিশেষ করে হোস্টিং। একাধিক কারণ আছে; হোস্টিং-এর কথা-ই ধরুন।

প্রথমত আপনার নতুন ওয়েবসাইটের জন্যে যে অল্প পরিমাণ স্পেস লাগবে, এতো ছোট আকারের হোস্টিং প্যাকেজ আপনি সরাসরি কোম্পানি থেকে পাবেন না। তাদের মিনিমাম প্যাকেজের খরচটাও হয়তো আপনার নাগালের বাইরে চলে যাবে। অথবা টাকা খরচ করে কিনলেও অকেজো পড়ে থাকবে। দ্বিতীয়ত যদি আপনার অনলাইনে লেনদেন করার সুযোগ (পেপাল, মাস্টারকার্ড ইত্যাদি) না থাকে; সেক্ষেত্রে রিসেলারের কাছে আপনি দেশীয় টাকায় মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন। তৃতীয় যে বিষয়টা জরুরী, সেটা হচ্ছে- সাপোর্ট।

যদি জরুরী কোনো সমস্যা হয়, তাহলে দ্রুত সাপোর্ট পাবেন। তবে অবশ্যই বিশ্বস্ত রিসেলার এবং ভালো কোম্পানি হতে হবে। ডোমেইনের ক্ষেত্রে আপনাকে একটা বিষয়ে অবশ্যই নজর দিতে হবে। অনেকেই ১০০-২০০ টাকায় .com ডোমেইন দিয়ে দিচ্ছে। একটা ডোমেইনের গড় মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে যেখানে ১০-১১ ডলার, সেখানে কেউ কীভাবে ২০০ টাকায় ডোমেইন দিতে পারে ভেবেছেন? শুরুতে যে ব্লগের কথা বলেছিলাম, ব্লগটা বেশ উঠে আসার পর দ্বিতীয় বছরে নবায়নের জন্যে ডোমেইন রিসেলার যে পরিমাণ টাকা দাবী করেছিল, সেই পরিমাণ শুনলে আঁতকে উঠবেন।

পরে বাধ্য হয়ে ব্লগ কর্তৃপক্ষ .com বাদ দিয়ে .net ডোমেইন কিনেছে! অতএব, সাধু সাবধান! পূর্ব-প্রকাশঃ http://www.muktokontho.com/mukto90/blog/4562 ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৩৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.