আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

Virtual Personality: একটি আলোচনা পোস্ট। মাঈনউদ্দিন মইনুল।

Consistency is the last refuge of the unimaginative. –Oscar Wilde (ইহা হইল আমার কনসিসটিন্সি না থাকিবার একটি গ্রহণযোগ্য অজুহাত)
সাইবার বিশ্বে যে যা খুশি তা-ই হতে পারে। ছেলে হতে পারে একজন সুন্দরি মেয়ে, কুৎসিত হতে পারে সুদর্শন, গরীব হতে পারে ধনী এবং একজন দুর্বল ব্যক্তি আবির্ভূত হতে পারে শক্তিশালী প্রতিপক্ষরূপে। এতে কেউ কিছু মনে করছে না, কারণ কেউ কাউকে প্রমাণ করতে পারছে না – প্রয়োজনও বোধ করছে না। ‘বেনামী বা পরিচয়বিহীন’ থাকার সকল সুবিধা নিচ্ছেন অনেকেই*। এখানে খারাপ হওয়া যেমন সহজ, ভালো হওয়াও বাস্তব জীবনের চেয়ে অনেক গুণ সহজ – শুধু আঙ্গুলগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করলেই হয়।

ঠিক এটিই আমার আলোচ্য বিষয় – এতো সুযোগ থাকার পরও কীভাবে মানুষ ভারচুয়ালি অর্থাৎ দৃশ্যমানভাবে একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরে? এটি তাদের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ, যারা অনলাইনে লেখেন বা সামাজিক মাধ্যমে জড়িয়ে আছেন অথবা যারা ফ্রিল্যান্সিং করে অর্থ উপার্জন করেন। ফ্রিল্যান্সিং যারা করেন তাদের জন্য ‘পরিচয়বিহীন’ থাকার সুযোগ কম, কারণ নিজেদের উপার্জন হাতে পেতে হলেও আসল পরিচয় দিতে হয়। কোথায় কখন কী তথ্য শেয়ার করা হয়, তা খেয়াল রাখা কঠিন। ইমেল, টুইটার, স্কাইপে, ব্যাংকিং, ফেইসবুক ইত্যাদি বিভিন্নভাবে জড়িয়ে আছে আমাদের স্ব স্ব কমপিউটারের আইপি ঠিকানা অথবা ইমেল এড্রেস। তাই, পরিচয় বের করা কঠিনও নয়, যদি কেউ কারও পেছনে ভালোমতো লাগেন।

অতএব, ভারচুয়াল ব্যক্তিত্বকে** সমুন্নত রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ বলে অনেকে মনে করেন। ভারচুয়ালি যারা আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব নিয়ে ইন্টারনেট সমাজে বিচরণ করছেন, তাদের ভারচুয়াল আচরণ নিয়ে তৈরি হলো এ পোস্টটি। ভারচুয়াল পারসনালিটি বিষয়টি অনেক প্রচলিত হলেও এখনও তা কাগজে-কলমে লিপিবদ্ধ হতে শুরু হয় নি। এবিষয়ে চলছে বিভিন্ন রকমের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ। সহব্লগারদের অংশগ্রহণ কামনা করে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরলাম: ১) নিজের অস্তিত্বকে তুলে ধরা: এটি সকলেরই পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না শুরুতেই।

যারা লেখায় ও মন্তব্যে যথাসম্ভব নিজের যোগ্যতা, দক্ষতা, মতামত, অনভুতিকে সাবলীলভাবে তুলে ধরেন, স্বাভাবিকভাবেই তারা অন্যকে আকর্ষণ করতে পারেন । খারাপ কথা, খারাপ ছবি, নিম্নরুচির কমেন্ট করে তারা নিজের বিপক্ষে দাঁড়ান না। ২) ভারচুয়াল সততা রক্ষা করা: যা ভালো তাতে লেগে থাকা: এশ্রেনীর মানুষ মন্তব্য দেন আন্তরিকভাবে, কোন বিষয়ে মুগ্ধ হলে তা প্রকাশ করেন নিঃসংশয়ে। নাম যেকোন একটি হতে পারে, সেটি বিবেচ্য নয়। কারও সাথে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বে তারা জড়ান না, বাস্তব জীবনে সে আপনার বন্ধু হলেও তারা তা করেন না।

কারও বিষয়ে কুৎসা রটিয়ে আলোচনা হলে, সেখানে তারা অংশ নেন না। ৩) নিজের নামটিকে একটি ব্রান্ড হিসেবে গড়ে তোলা: সবখানে একটি নামই তারা ব্যবহার করেন: কী ব্লগ, কী টুইটার, কী ফেইসবুক। প্রোফাইল ছবিও বেশি বেশি না বদলান না। বদলালেও সবখানে একসাথে হাল নাগাদ করেন। একটি করপোরেট ব্রান্ড যেমন তার সুনামকে ধরে রাধার জন্য চারদিক থেকেই সতর্ক থাকে, ঠিক তেমনভাবে তারা একে রক্ষা করেন।

নিজের নামটি ব্যবহার করে তারা কোথাও বেফাঁস কথা/কাজ করেন না। ৪) ক্লিক করার আগে চিন্তা করা: ক্লিক করা মানে হলো, তা চূড়ান্ত এবং অপরিবর্তনীয়! এরপর আর শুদ্ধ করার সুযোগ থাকে না। কোন কিছু লিখে তারা ভেবে নেন – লেখাটি কি সঠিক, তা কি সকলের কল্যাণে আসবে, ভাষা কি ঠিক আছে, তাতে কি সত্য এবং বস্তুনিষ্ঠতা আছে? ইত্যাদি ইত্যাদি। কাউকে বা কোন গোষ্ঠীকে অপমান/অবমাননা করে কোনকিছু লেখেন না বা পোস্ট দেন না। ৫) যত্রতত্র গিয়ে সেখানে চিহ্ন না রেখে আসা! আমার অতি পরিচিত একজন অনলাইন বন্ধু একটি পর্নোসাইটে গিয়ে কী কী ছবি ‘লাইক’ করেছেন, আমার ফেইসবুকের নিউজ ফিডারে ভেসে ওঠলো একদিন।

সরাসরি বলে তাকে বিব্রত না করে আমি শুধু একটি স্প্যাম রিপোর্ট করলাম। ভারচুয়ালি যারা ব্যক্তিত্বশীল তারা সম্ভব হলে বদভ্যাস ত্যাগ করেন – অথবা অন্য কেউ তা জানে না! কয়েকটি সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর (Frequently Asked Questions / FAQ)*** ক) ভারচুয়াল ব্যক্তিত্ব কী? > ইন্টারনেটে প্রকাশিত লেখা, মন্তব্যে বা ছবিতে ‘অদেখা’ মানুষগুলোর যে চিত্র অন্য একজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সামনে ফুটে ওঠে। . খ) ভারচুয়াল ব্যক্তিত্ব রক্ষায় কী কী বিষয় বিবেচনায় রাখতে হয়? > প্রধানত, লেখা, মন্তব্য, প্রোফাইল ছবি, অন্যান্য পোস্ট এবং সার্ফিং হিস্টরি। . গ) নেটিকেট এবং ভারচুয়াল ব্যক্তিত্বের কি যোগসূত্র আছে? > নেটিকেট বা সাইবার জগতের আচার-ব্যবহার যে জানে, তার পক্ষে ভারচুয়াল ব্যক্তিত্ব রক্ষা করা সহজ। . ঘ) ব্লগিং বা সামাজিক নেটওয়ার্কিং-এ ভারচুয়াল ব্যক্তিত্ব কী প্রভাব ফেলতে পারে? > সরাসরি প্রভাব ফেলে।

নাম ও প্রোফাইল ছবি যদি আগেই পরিচিত এবং জনপ্রিয় হয়, তবে পরবর্তিতে লেখা বা পোস্টে বেশি হিট পড়বে। এটি স্বাভাবিক। . ঙ) ভারচুয়াল ব্যক্তিত্ব রক্ষায় কোন বিশেষ যোগ্যতার প্রয়োজন আছে কি না? > আপাত দৃষ্টিতে তা মনে হয় না – শুধু ভালো ইমেজ রক্ষা করার প্রচেষ্টাটি ধরে রাখলেই হয়। তবে যারা স্বাভাবিক জীবনে ব্যক্তিত্বশীল এবং বন্ধুত্বপরায়ন তাদের জন্য এটি অধিক সহজ। . চ) সামাজিক ব্যক্তিত্ব রক্ষার চেয়ে ভারচুয়াল ব্যক্তিত্ব রক্ষা করা কি সহজ নাকি কঠিন? > সম্মুখ পরিস্থিতিতে আবেগ/অপছন্দ দমন করা কঠিন।

তাছাড়া, সামাজিক জীবনে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মাথা ঠাণ্ডা রাখার একটি বিষয় আছে, সাইবার জগতে শুধু আঙ্গুলগুলো দমনে রাখলেই চলে। সামাজিক ব্যক্তিত্ব রক্ষা করা কঠিন, কারণ ওখানে বাস্তব প্রয়োগ দেখাতে হয়, যা ভারচুয়াল জগতে নেই। ভারচুয়াল ব্যক্তিত্বের সাথে প্রাসঙ্গিক লেখাগুলো: ১)) আধুনিক ব্লগারদের ১০টি প্রিয় ভুল ২)) অন্যের পোস্টে সৃজনশীল মন্তব্য [ছবি ইন্টারনেট থেকে] পরিশিষ্ট: ___________________________________________________ *সাধারণত পরিচয় গোপনই থাকে। তবে সমস্যা গুরুতর বা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চলে গেলে আইপি ট্রাকিং করে সংশ্লিষ্ট অপরাধীকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে আজকাল। **Virtual Personality টার্মটি এখনও মনস্তাত্ত্বিকদের বিষয় হয়েই আছে।

Virtual Personality নামে কণ্ঠস্বর ব্যবস্থাপনার জন্য একটি এপলিকেশন সফটওয়্যার আছে। ভারচুয়াল অনেককিছুরই সংজ্ঞা আছে কিন্তু ভারচুয়াল ব্যক্তিত্ব বিষয়টি এখনও অসংজ্ঞায়িত । ফলেই এর পরিচয় বের হয়ে আসবে! ***প্রযুক্তির গতিশীলতার মতো প্রযুক্তিনির্ভর টার্মিনোলজিগুলো প্রতিদিন হালনাগাদ হচ্ছে এবং ব্যবহার-উপযোগীতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাই এলেখাটিও হালনাগাদ হতে থাকবে আগামি দিনগুলোতে!
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।