আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাঠাভ্যাসের নস্টালজিয়া...কিম্বা নস্টালজিক পাঠাভ্যাস

কখনো চাই নাই দূরে থাকি...তবু দূরগুলো বারে বারে আসে...

অনেকদিন আগে আমি বলছিলাম কোন গাইডবই দিয়া আমার জীবন চালাইতে আমি অনিচ্ছুক। আমার এই অনিচ্ছার ভিত্তি ছিলো আমার চারপাশের প্রকৃতি। আমার চারপাশের সবকিছু পালটায়, চারপাশের অন্যান্য উপকরণের বা প্রাণের দ্্বান্দ্বিক সাপেক্ষে। যখন এই সিদ্ধান্ত নিছিলাম তখন আমি দ্্বন্দ্ব বুঝতাম না, কিন্তু তা'ও একটা পরিবর্তনের সুক্ষ খেলা আমার বোধে এসে নাড়া দিতো। আমি সেই পরিবর্তনের ছোঁয়া নিতাম...আজো নেই...সকল ইন্দ্রিয়ের সম্মিলনে।

আর তাই নিজের জীবনটারেও দ্্বান্দ্বিকতায় ভাবি! কোন উপরের সুপারিশে সময়ের চলন থাকেনা। আমি তখন ক্লাস এইটে পড়ি। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে যাই, বই পড়ি, আড্ডা দেই, সাঈদ স্যারের গল্প শুনি, মুগ্ধ হই। লাইব্রেরীতে অনেক বইয়ের মাঝে সময় কাটানোর অনুভূতিটা অনেক অন্যরম। অনেক নির্ভরতা।

তো সেইখানেই আমার পরিচয় প্রথম দ্্বন্দ্বের সাথে, ভাবের সাথে...বস্তুর সাথে। আমি প্রথম পড়ছিলাম রাহুল সাংকৃত্যায়ন। তখন অনেক কিছুই বুঝিনাই কিন্তু আমার যে অবিশ্বাসী চেতনা, তার সাথে কিরম জানি বোধের মিল ছিলো...আর তাই মনে হইলো আরো খানিক বুঝি...বস্তুর ধর্ম নিয়া যদি আরেকটু উপলব্ধি পাই... তারপর আবার যে কে সেই...সব পড়ি। মাসুদ রানা, কিশোর থ্রিলার, সেবা ওয়েস্টার্ন, হেনরী মিলার (!)...রবি ঠাকুর, জীবনানন্দ...বঙ্কিম, শরৎ চন্দ্র...রোল্যান্ড ডাল, হ্যারিয়েট বীচার, শেকপীয়ারের এব্রিজ ভার্সন গুলি...চার্বাক দর্শন...এইরম কতো বই! মনে করতে গিয়া দেখি অনেক কিছুই মনে নাই। কিন্তু এসএসসি পরীক্ষার শেষে আমি হঠাৎ পরিচিত হইলাম মহল্লার এক বড় ভাইয়ের সাথে।

তপন বড়ুয়া। সে একটা লিটল ম্যাগাজিন বাইর করতো। গান্ডীব। এই ম্যাগাজিনে তখন লিখতো সাজ্জাদ শরীফ, শান্তনু চৌধুরী, কাজল শাহনেওয়াজ, ব্রাত্য রাইসু...আর প্রিয় কবি শোয়েব সাদাব...আমি তপনদার সাথে পিজি হাসপাতালের পেছনে একটা বট গাছের তলায় আর শাহবাগের সিলভানায় সপ্তাহে দুই একদিন যাইতাম। তারা কতো বইয়ের কথা কইতো! আমি তার অধিকাংশই পড়ি নাই।

মেজাজ যাইতো খারাপ হইয়া! আমি ঐসব বইয়ের নাম মনে রাইখা জমানো টাকা আর মায়রে জোরাজোরি কইরা পাওয়া টাকা দিয়া কিনতাম বই, তপন দা কিছু দিতেন। সেইখানেই আমি শুনি পিটার বিকসেল, মিলান কুন্ডেরা, বোর্হেস, বালজাক, মার্কেজের নাম...রাম বসু, উৎপল কুমার বসু, বিনয় মজুমদারের কবিতা পড়তেন তারা। আমি মুগ্ধ হইয়া শুনতাম। মনে হইতো যদি এরম লিখতে পারতাম! কলেজ পাশ দেওনের পর আবার একটা অবসরের সময়। তখন আবার শাহবাগ যাওনের শুরু।

আড্ডা কথন একটু পালটাইছে। আজিজ মার্কেটের কঙ্কালটা তখন তৈরী হইছে কেবল। নীচের তলায় একটা দোকান পাঠক সমাবেশ। আমি যাই সেইখানে। আদিত্যরে চিনতাম আগের থেইকা।

আরো পরিচয় হইলো তাজুল, শামীম কবির, জুয়েল মাজহার, আশিক মোস্তফা, নভেরা, বায়েজীদ মাহবুব, ব্রাত্য রাইসু এগো লগে। এইটা নব্বই সালের প্রথম ভাগ। এগো লগে পরিচয়ের পর আমরা তখনকার জনপ্রিয় প্রপঞ্চ উত্তরাধুনিকতা লইয়া গ্যাজাইতাম। টেরী ঈগলটন, লিওটার্ড, সুসান সনট্যাগ, রোলা বার্থগো লইয়া অনেক বাতচিত করতাম। বাতচিত করতে গিয়া বিজু'র ঐখানেই বই নিয়া পইড়া ফেলতাম।

পরিচয় হইছিলো মাশরুর আরেফীনের সাথে। তারও বই সংগ্রহ অনেক ভালো ছিলো। কিন্তু উত্তরাধুনিকতা লইয়া পড়তে গিয়া আমার হঠাৎ একসময় মনে হইলো মডার্নিজমের কিছু চিরায়ত পড়নটা দরকার। আর তাই বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের চিরায়ত গুলি আবার পড়তে শুরু করলাম। ভলতেয়ার, রুশো, ড্যানিয়েল ডিফো, লুই ক্যারোল...।

সাথে আমার ছোট ফুফা যিনি একদা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টারী করছেন, তিনি কইলেন মার্ক্সিজম পড়ো। তার থেইকা তিনটা বই পাইছিলাম আমি, বাটর্্রান্ড রাসেলের হিস্টোরী অফ ওয়েস্টার্ন ফিলোসফি, আফানাসিয়েভ-এর মার্ক্সিস্ট ফিলোসফি, আর মার্ক্স-এঙ্গেলসের একটা ভলিউম যেইটাতে মেনিফেস্টো, ফু্যয়ারবাখ থিসিস, ডায়ালেক্টিক অফ নেচার আর স্টেট, ফ্যামিলি এন্ড অরিজিন অফ প্রাইভেট প্রোপার্টি-এর মতোন বই গুলি সংকলিত ছিলো। রাশিয়ান প্রকাশনায় ইংরেজী পড়াটা আমার কাছে বাংলার চাইতে সহজ মনে হইতো বইলা আমি রীতিমতো উত্তেজিত ছিলাম ঐ বইগুলি পাইয়া। আফানাসিয়েভ আমার জীবনে একদম দেবদূতের মতোন আসলেন। তার হাত ধইরাই আমি প্রথম দ্্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের পাঠশালায় আসি।

এতো সুন্দর কইরা এতো জটিল একটা দর্শনরে বুঝাইয়া দেওন যায় সেইটা আমি হয়তো কোনদিন জানতেও পারতাম না, আফানাসিয়েভ না থাকলে। সেই বই পইড়া আমি একটা দর্শন আসলে কেমনে মানব ইতিহাসরে ব্যখ্যা করে সেইটা বুঝতে শিখছিলাম। সব তত্ত্বরে উদাহরণ হাজির কইরা অনেক সহজ কইরা দিছেন উনি। তো দ্্বন্দ্ব মূলক বস্তুবাদের বিষয় আসলে আমি একটু আবেগী হইয়া পড়ি এই কারনে। দ্্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের প্রধান তিন সূত্রের কথা আফানাসিয়েভ কইছিলেন একদম সোভিয়েত বিপ্লবের ইতিহাস বিশ্লেষণ কইরা।

1. পরিমানগত পরিবর্তনের সাথে গুণগত পরিবর্তন আবার ভাইস ভার্সা। 2. বিপরীতের ঐক্য আর 3, নেগেশন অফ নেগেশন। এই তিন সূত্রেই নিহিত বস্তুর সকল পরিবর্তন। আমি হয়তো এই বিষয়ে খুব শিগগিরী এই বিষয়ে বিসদ লিখতে পারুম কোন কালে, সেই আশা রাখি। ইদানিং আসলেই টাইম পাইতাছি কম।

আর সাথে উৎসাহেরও ঘাটতি পরছে। আর ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র নিয়া হুদাই জামায়াতি বাগাড়ম্বর দেইখা আরো বিরক্ত লাগতেছে। ইতিহাসের বস্তুবাদী ব্যখ্যা পড়লে ধর্মকেন্দ্রীক রাষ্ট্র খুব নতুন জিনিস না বইলাই মনে হইবো। আর তারা অনেক মতবাদরে পরাজিত আর বাতেল কইতাছে দেইখাও আমার হাসি পাইতেছে। ঐসব ধর্মকেন্দ্রীক রাষ্ট্রের কথা আমি নিশ্চিত তাগো মনে আছে।

সেইসবের পরিণতি কি হইছিলো, কেন হইছিলো তা'ও যদি একটু শোনাইতেন উনারা, তা'ও ভালো লাগতো। হয়তো আমার বুঝনের ভুল কাটতো...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.