বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখ দ্বিতীয় বিদ্যায়। বিভিন্ন অঞ্চলের পুরাণ বিবেচনা করলে দ্যাখা যায় প্রাচীন ভারতের পুরাণে অপেক্ষাকৃত বেশি যৌনতা ছিলো, আমার কাছে সেটাই মনে হয়। অন্যান্য পুরাণ, য্যামন গ্রীস, রোম অথবা জার্মান দেশের পুরাণের মতোন ভারতের পৌরাণিক পুরুষ চরিত্রগুলো ছিলো অতিমাত্রায় বহুগামী, বীরোচিত। তবে অন্যসব দেশের পৌরাণিক নারী চরিত্রগুলো একটু কম হলেও বহুগামী ছিলো, কিন্তু ভারতীয় পৌরাণিক চরিত্রগুলোর অবস্থা এক্ষেত্রে সমবেদনা পাওয়ার মতোন, আমি অন্তত বহুগামী নারী ত্যামন একটা দেখিনি, যেটুকু পাওয়া যায় সেটুকু একাধিক বহুগামী পুরুষেরই কল্যাণে। স্বেচ্ছায় বহুগামী এক নারী চরিত্রের দ্যাখা পাওয়া যায় দ্রৌপদী-পঞ্চপান্ডবের উপাখ্যানে, পঞ্চপান্ডবের মা কুন্তী, যার কারনে দ্রৌপদীও ভাগ্যক্রমে অথবা দুর্ভাগ্যক্রমে বহুগামী হয়েছেন।
পাণ্ডু ও কুন্তি
কুন্তী ছিলেন কুন্তিভোজ'র পালিতা কণ্যা, বাসুদেবের বোন, কৃষ্ণ'র ফুফু। তার মানে কুন্তী'র পাঁচ ছেলে, যারা পঞ্চপান্ডব নামে পরিচিত ছিলেন তারা হলেন কৃষ্ণ'র ফুফাতো ভাই। মামাতো ভাই কৃষ্ণ ১৬ হাজার রাজকণ্যা বিয়ে করলেও পঞ্চপান্ডবেরা পাঁচ ভাই পেলেন একটামাত্র বৌ! কুন্তী যখন কুমারী ছিলেন তখন তার গৃহে দুর্বাসা মুনি অতিথি হয়ে এলে কুন্তী তাকে সেবা দ্বারা সন্তুষ্ট করে দ্যান। খুশি হয়ে দুর্বাসা মুনি কুন্তীকে এক অদ্ভুত বর দ্যান, যা কিনা এতোদিন শুধু পুরুষেরাই পেয়ে এসেছে। বর টা ছিলো অ্যামন, কুন্তী কোন দেবতাকে স্মরণ করলে সেই দেবতা এসে কুন্তীকে যৌনসঙ্গম দ্বারা পরিতৃপ্ত করে পুত্রসন্তান দান করবে।
দুর্বাসা মুনি, আরেক পৌরাণিক চরিত্র শকুন্তলাকে শাপ দিচ্ছেন
বর পেয়ে কৌতুহলী কুন্তী কুমারী অবস্থায়ই সূর্যদেবকে কামনা করে বসেন, সূর্যদেবের সাথে মিলনে কুন্তী গর্ভবতী হয়ে পরায় সন্তানের জন্ম হলে লজ্জায় তাকে পানিতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। এই পুত্র মহাভারতে কর্ণ নামে পরিচিত হন। কথিত আছে, "কুন্তি" নামের অর্থ "সূর্যদেবের প্রেমিকা"।
(ডানে) কর্ণ, মহাভারতের অন্যতম চরিত্র, অর্জুনের সাথে কুরুক্ষেত্রে
এরপর কুন্তিভোজ কুন্তীর জন্য স্বয়ংবরা'র আয়োজন করলে কুন্তী পাণ্ডু'র গলায় মালা দ্যান। পাণ্ডু'র আরেক স্ত্রী ছিলো, মাদ্রী।
একদিন পাণ্ডু মাদ্রী ও কুন্তীকে নিয়ে হিমালয়ের দক্ষিনে বেরিয়ে পরেন। সেখানে এক মুনি, যার নাম কিমিন্দম, হরিণের রূপ ধরে এক হরিণীর সাথে সঙ্গমরত ছিলেন। পাণ্ডু না বুঝে হরিণ-হরিণী দুটোকে হত্যা করেন, মৃত্যুর আগে কিমিন্দম পাণ্ডুকে এক শাপ দ্যান যে, পাণ্ডু যদি কোন নারীর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয় তাহলে তার মৃত্যু ঘটবে। এই ঘটনার পর পাণ্ডু যেদিন কুন্তীর সাথে সঙ্গম করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন সেদিন কুন্তী দুর্বাসা মুনি'র বরের কথা বললে পাণ্ডু তিনজন দেবতাকে কামনা করতে বলেন। কুন্তী দেবতা ধর্মকে আহবান করলে তার সাথে মিলনে যুধিষ্ঠির'র জন্ম হয়, বায়ু'র সাথে মিলনে ভীম ও ইন্দ্রের সাথে মিলনে অর্জুনের জন্ম হয়।
সতীন মাদ্রী এই বিশেষ মন্ত্র কুন্তীর কাছ থেকে জেনে অশ্বিনীকে কামনা করেন, জন্ম হয় দুই পুত্রের- সহদেব ও নকুল। পাণ্ডু'র দুই স্ত্রী'র গর্ভে জন্ম নেয়া যুধিষ্ঠির, ভীম, অর্জুন, সহদেব ও নকুল, এই পাঁচ পুত্র হলো পঞ্চপান্ডব। এরপর একদিন অত্যন্ত কামার্ত অবস্থায় পাণ্ডু মাদ্রীর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হলে কিমিন্দম মুনি'র শাপে পাণ্ডু'র মৃত্যু হয়। এরপরের কাহিনীর প্রায় পুরোটা জুরে আছেন পঞ্চপান্ডব ও দ্রৌপদী, যা আরেক ট্র্যাজেডি...।
দ্রৌপদী ও পঞ্চপান্ডব
ছবি : উইকিমিডিয়া কমন্স ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।