দেশের বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিকভাবে মধুচাষ বৃদ্ধি পাইতেছে। রাজশাহীতে মধুচাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনার কথা জানা গিয়াছে। নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে মধুচাষ করিয়া অল্প বিনিয়োগ, শ্রম ও স্বল্প সময়ে লাভবান হওয়া সম্ভব। স্থানীয়ভাবে এ অঞ্চলে মধু সংগ্রহকারীদের মৌয়ালী বলে। বাগমারা উপজেলায় মৌয়ালীর সংখ্যা প্রায় অর্ধশত।
বাগমারাসহ আশেপাশের এলাকায় তাহারা মধু সংগ্রহ করে। মধুর উৎস হিসাবে প্রাকৃতিকভাবে গড়িয়া ওঠা মৌচাক তাহাদের একমাত্র ভরসা। শীত, গ্রীষ্ম, শরৎ, বসনত্দ এই চার মৌসুমে তাহারা মৌচাকের সন্ধানে বাহির হয়। এই সময় মৌমাছি বিভিন্ন বৃৰরাজির ফুল হইতে মধু সংগ্রহ করিয়া মৌচাকে জমা করে। শীতকালে সরিষা ফুলের মধু উৎকৃষ্ট।
দৰিণাঞ্চলের বড় বড় সরিষা ৰেতে নেটিং পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবে মধু সংগ্রহ করা হয়। রাজশাহী অঞ্চলেও এই ব্যবস্থা গড়িয়া তোলা সম্ভব। ইহাছাড়াও বাক্স পদ্ধতিতে মধুচাষ করিয়াও অনেক বেকার এখন স্বাবলম্বী। এইজন্য প্রয়োজন যথাযথ প্রশিৰণ ও স্বল্প বিনিয়োগ। সংরৰণের অভাবে প্রতি বৎসর অনেক মধু নষ্ট হয়।
একটি মৌচাকে গড়ে এক হইতে দশ কেজি মধু পাওয়া যায়। স্থানীয় বাজারে এই মধু 160 হইতে 200 টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। প্রায় একই মূল্যে মৌচাকের মোমও বিক্রি করা যায়। প্রতি মৌসুমে মৌয়ালীরা মধু ও মোম বিক্রি করিয়া মাসে 5 হইতে 7 হাজার টাকা আয় করে। মধুচাষ ও মধু সংগ্রহে উপযুক্ত সহযোগিতা প্রদান করা হইলে বহু লোকের কর্মসংস্থানের পথ সুগম হইতে পারে।
আধুনিক প্রক্রিয়ায় মধু উৎপাদনের লৰ্যে দেশব্যাপী 17 হাজার 5শত 30 জনকে প্রশিৰণ দেওয়ার কথা শোনা যায়। ইহাছাড়া নারী ও পুরম্নষদের বিনামূল্যে বাক্স ও মধু নিষ্কাশনের যন্ত্র সরবরাহেরও কথা। দেশে মধু উৎপাদনের জন্য একটি পরিকল্পিত ও সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হইলে মধুচাষের মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হইবে। মধুর তুলনা কেবল মধুই। মধু লোকে যেমন পছন্দ করে তেমনি মধুর উপকারও নানাবিধ।
দেশে মধু আহরণ একটি লাভজনক পেশায় পরিণত হইয়াছে। দেশের অনেক স্থানেই পেশা হিসাবে মধু আহরণকে বাছিয়া নেওয়া হইয়াছে। সুন্দরবন এলাকায় মধু আহরণ একটি গুরম্নত্বপূর্ণ পেশা। দিনাজপুরেও মধু আহরণ একটি লাভজনক পেশা হিসাবে স্বীকৃত।
অনেকে মনে করেন গতানুগতিক চাষাবাদ হইতে মধুচাষ অনেক লাভজনক।
শীতকালে যখন প্রচুর পরিমাণে সরিষা চাষ হয়, তখন মধু সংগ্রহ দ্বিগুণ বাড়িয়া যায়। আম ও লিচুর সময়ও অনেক মধু সংগ্রহ হয়। জানা গিয়াছে স্বল্প পরিমাণ পুঁজি খাটাইয়া কেহ কেহ বৎসরে 50 হইতে 70 হাজার টাকা আয় করিতে সৰম হইয়াছে। দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলার কয়েকশত চাষী বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মধু আহরণ করে। এই তিনটি জেলায় বৎসরে 350 টন মধু সংগৃহীত হইয়া থাকে বলিয়া জানা যায়।
এই পরিমাণ আগামীতে আরও বৃদ্ধি পাইবে বলিয়া অনেকেরই অভিমত। প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরৰণের সুবিধা না থাকায় মধু সংগ্রহকারীরা কমমূল্যে মধু বিক্রি করিয়া দিতে বাধ্য হয়। এ জন্য মধু সংগ্রহকারীদের প্রশিৰণ, বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে বাক্স প্রদান ও মৌমাছি পালন সম্পর্কে প্রয়োজনীয় প্রশিৰণের মাধ্যমে মধুচাষ কার্যক্রমকে আরও সম্প্রসারিত ও সমৃদ্ধ করা সম্ভব। শুধু সুন্দরবন নয়, দেশের অন্যান্য স্থানেও এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মধু সংগ্রহ করা হইতেছে। সুন্দরবনের মধুর সুনাম দেশে-বিদেশে ছড়াইয়া আছে।
প্রতি বৎসর চৈত্র মাসের মাঝামাঝি হইতে বৈশাখ মাসের মাঝামাঝি পর্যনত্দ একমাস ধরিয়া সুন্দরবনের মধু আহরণ করা হয়। সুন্দরবনে মধু সংগ্রহের সময় আহরণকারীরা নানা হুমকি ও বিপদের সম্মুখীন হয়। এইসব সমস্যা দূর করা প্রয়োজন। বর্তমানে মৌমাছি পরিচর্যা, মধু সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, মান নিয়ন্ত্রণসহ মধুচাষের বিকাশ ও আধুনিকায়নের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন প্রশিৰণের উদ্যোগ নিয়াছে কয়েকটি এনজিও প্রতিষ্ঠান। এইসব প্রতিষ্ঠান মধুচাষীদের সংগঠিত করিয়া প্রয়োজনীয় কারিগরি প্রশিৰণ দিতেছে।
তাহাদের প্রশিৰণের ফলে মধুচাষকে গতানুগতিক ধারা হইতে তুলিয়া আনিয়া একটি আধুনিক শিল্পে রূপানত্দরের ব্যবস্থা করা হইতেছে ইহা আশার কথা।
ঃঃ দৈনিক ইত্তেফাক ঃ 06.11.2006 ঃঃ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।