অতি সংক্ষেপঃআমি পেশায় একজন চিকিৎসক...নেশায় একজন ভাবুক...আর মনে প্রানে একজন মানুষ... ঘটনার শুরুটা হয়েছিল ইন্টারনীর মাঝামাঝি সময়ে। বড়ভাই শান্তুর রুমে বসে খিচুড়ি খাচ্ছিলাম। খেতে খেতেই আলাপ শুরু হল,
-ভাই দেশের কি অবস্থা দেখসো?চলো পলিটিক্স করি।
-কি করবি তুই?ভালো কিছু করতে যাবি তো তোরে নাই কইরা দিবে।
-তাই বলে কিছু করার নাই?কিছু তো উপায় আছে নাকি?
-শুন,আমাদের দেশে এখন আর এক দুইজন মিলে কিছু চেঞ্জ করতে পারবেনা।
তাই কিছুই হবেনা...
সেদিন আমার কথাগুলো যেমন ঠিক ছিল,বড়ভাইয়ের কথাগুলো আরও বেশি ঠিক ছিল।
ইন্টারনীর পর তখন আমরা ঢাকায়। আমি ইব্রাহিম কার্ডিয়াকে আর বড়ভাই স্কয়ার হসপিটালে জব করে। আশ্চর্য ব্যাপার!কিভাবে কিভাবে যেন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটেই যায়!
জিগাতলায় লেকপাড়ে আমরা সালাদ আর কোক খাচ্ছি,হঠাৎ বড়ভাই শুরু করল,
-কি করবি সাকিব?কিছু একটা তো করা দরকার।
-কি করবা?পলিটিক্সে নাই ভাই।
রাজনীতির মাথা নাই,তাই বিশেষ মাথা ব্যাথাও নাই।
-তাই বলে কিছু করব না?কি বলস তুই!
-হুম করব। চল অস্ট্রেলিয়া ভাগি। এক ঢিলে বহু পাখি।
সেদিনও আমাদের দুইজনের কথাগুলো ঠিক ছিল।
শুধু কথামত কাজ হচ্ছিলনা।
এরপর প্রতি সপ্তাহেই আমরা আড্ডা জমাতাম,কখনও জিগাতলায় কখনও আবার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে। আমাদের সাথে যোগ হল তানভীর ভাই,জনি ভাই,আসিফ,জাহিদ,অন্তু,জ্যোতিদা সহ আরও অনেকে। আমরা উপলব্ধি করলাম দেশের জন্য করতে হলে রাজনীতি করা লাগেনা। নিজ নিজ জায়গায় সৎ থেকে নিঃস্বার্থ ভাবে দেশের মানুষের জন্য কিছু করা মানেই দেশের জন্য করা।
এই চিন্তা থেকেই তৈরি হল Bangladesh People's Foundation- BPFপথচলা শুরু হয়ে গেল।
গত ১৪ই জানুয়ারী,২০১৩ তে আমাদের প্রথম ইভেন্ট "পথশিশুদের শীতবস্ত্র বিতরণ" চরম এবং গরমভাবে সফল। চরম আর গরমের ব্যাখ্যাটা আগে দিয়ে নেই নাইলে পরে ভুলে যাব।
জীবনে ভালো কাজ খুব বেশি করা হয়নাই। কাল যখন হাইকোর্টের সামনে মাইক্রোবাস থেকে নামলাম সামনে তখন সাড়ি সাড়ি মানুষ শুয়ে আছে।
পিছনে শুধু কিছু গাড়ির আওয়াজ আর ডানপাশের কোনায় একটা পুলিশ ভ্যান ঝিমোচ্ছে। সামনের মানুষগুলার কেউ ফুটপাথে চাদর বিছিয়ে,কেউ মূল গেটের দুইধারের মাটিতে,কেউ উপচে পরা গাছের ছায়ায় তেল চটচটে প্ল্যাস্টিকের মোড়কে শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে। ঠিক যখনই আমরা গাড়ির ভিতর থেকে কাপড় বের করলাম মনে হল সবার মাঝে ঈদ লেগে গেল। কোনভাবেই তাদেরকে একলাইনে দাঁড়া করা গেলনা। কালরাতে আকাশে চাঁদ ছিল কিনা দেখিনাই,তবে নতুন কাপড়ের উল্লাসটা ওদের কাছে চানরাতের চাইতে কম ছিলনা।
এই আনন্দ আমার প্রথম বেতনের টাকা দিয়ে বাসায় পার্টি দেওয়ার আনন্দের চাইতে অনেক বেশি।
হাইকোর্ট থেকে গাড়ি নিয়ে ধানমন্ডির দিকে রওয়ানা দিলাম। পথের মোড়ে একটু পর পরই দেখি মানুষ ছোট হয়ে শুয়ে আছে। তাদের ঘুম থেকে উঠিয়ে হাতে কাপড় ধরিয়ে দিলাম। মানুষ অপ্রত্যাশিত কিছু পেলে তার চোখে অবাক দৃষ্টি ফুটে উঠে।
বয়স হয়ে গেলে মানুষের অবাক হওয়ার শক্তি আস্তে আস্তে কমে যায়। আমি কাল ঘুম থেকে জাগিয়ে কম্বল দেওয়ার সময় এক বৃদ্ধার শুধু চোখে নয়,মুখেও অবাক দৃষ্টি দেখেছি। আমি এই দৃষ্টির সাথে অপরিচিত,তাই নিজেও বারবার অবাক হয়েছি। আমাদের এই ইভেন্ট তাই চরমভাবে সফল অবাক করা এক ইভেন্ট।
আমাদের শীতবস্ত্রের মাঝে কম্বলের চাইতে সোয়েটার ছিল অনেক বেশি।
কম্বল ফ্রি সাইজের জিনিস। সবাইকে দেওয়া যায়। সোয়েটার ছোটবড় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই কথাগুলো আগে মাথায় আসেনি। পাবলিকদের মাঝে তাই দেখলাম কম্বলের ডিম্যান্ড অনেক বেশি।
আমাদের কম্বল কম থাকায় সেগুলা আমরা বেছে বেছে যাদের সবচাইতে খারাপ অবস্থা তাদেরকে দিচ্ছিলাম। পাবলিক ডিম্যান্ড বলে কথা। অনেকেই উত্তেজিত হয়ে উঠল। অতি উৎসাহী কেউ কেউ আবার দূর থেকে হালকা পাতলা গালিও দিল। মুখে যদিও খুব গম্ভীর একটা ভাব নিলাম,কিন্তু আসলে তো আমি হাসতে হাসতে শেষ।
মনে মনে ভাবতেছিলাম,আমি যে ডাক্তার তোমরা তো তা জানোনা। ফার্স্ট ইয়ার থেকেই তুমুল গালি খেতে খেতে বড় হয়েছি। এইসব ছুটকা ফাটকা গালিতে আমার কিছু হয়না। এইদিক থেকে এই ইভেন্ট তাই গরমভাবে সফল এক ইভেন্ট।
আজ ১৮ই জানুয়ারি আমাদের ইভেন্ট ছিল ব্র্যাক ক্লিনিকে নাইট ডিউটিতে কর্মরত ডাক্তার সাজিয়া আফরিন ইভার হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদস্বরূপ টি.এস.সি. থেকে প্রেসক্লাব পর্যন্ত মৌন মিছিল।
দাবী ছিল ব্র্যাক কর্তৃক সাজিয়া আপুর পরিবারকে ন্যায্য ক্ষতিপূরণ এবং সরকার কর্তৃক কর্মরত সকল নারী চিকিৎসককে সুষ্ঠু নিরাপত্তা দান। জানিনা কতটুকু সফল হতে পারব। কিন্তু আমরা শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যাব। সাজিয়া আপুকে আর ফিরে পাওয়া যাবেনা,কিন্তু ভবিষ্যতে আমরা আর কোন সাজিয়াকে এমন নির্মম ভাবে হারাতে চাইনা।
আগামী ৮ই ফেব্রুয়ারি,২০১৩ তারিখ থেকে BPF এর ব্যানারে আমাদের MONTHLY FREE HEALTH CAMP শুরু হতে যাচ্ছে।
আগ্রহী ডাক্তাররা সরাসরি যোগ দিতে পারেন অথবা স্পন্সর দিয়েও হেল্প করতে পারেন। আমার ফেসবুক আইডি Bhai Sakib.আমিসহ আমরা সকলের দোয়াপ্রার্থী। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।