হেঁটে হেঁটে যতদূর চোখ যায়
[বেশ কিছুদিন পর একটা গল্প লিখলাম। আশা করছি ব্লগাররা গল্পটা পড়বেন। মাঝে মাঝে মনে হয় গল্প কেন কেবল নিছক গল্প হয়! কিছু কিছু সত্য আছে যা হয়ত গল্প, যা শুধুই ভাবনা...যেগুলো সত্য হলে ভাল হত...কিন্তু আসলে সত্য নয়...যা কোনদিন পাবারও নয়...কেননা সে তো হারিয়ে গেছে.....আজ সে যে অন্যের....আসলে গল্প কেবলই গল্প মাত্র....কেন যে......আসলে এটাই কষ্ট!]
ঘড়িতে এখন দুপুর দুইটা বাজে। আর মাত্র ত্রিশ মিনিট পর অফিস ছুটি হবে। তিনদিনের টানা ছুটি-ঈদের ছুটি।
সবাই একটু পর পরই ঘড়ি দেখছে। ত্রিশ মিনিট যেন বড় দীর্ঘ সময়-কাটতেই চাচ্ছে না। মতিন সাহেব তো বলেই বসলেন, 'কি ব্যাপার আজ ছুটির সময় হবে না নাকি? কতদিন পর বাড়ি যাব জানেন? ছোট বাবুটা হয়েছে সে-ই কবে আজও কোলে নিতে পারিনি। ' সদ্যবিবাহিত নিতাই বাবু বললেন, 'বুঝছেন দাদারা চারটার বাসে যাচ্ছি। পূজোয় তো যেতে পারিনি।
তাই এবার যাচ্ছি। মা যে আমার কেমন আছে?' রসিক ভদ্রলোক ইসমাইল সাহেব। তিনি মজা করতে ছাড়লেন না-'বুঝি রে নিতাই সবই বুঝি। নতুন বউকে দূরে রেখে মায়ের নাম নিয়ে বাড়ি যাওয়া! লজ্জার কি আছে আহা বল না বউটারে কতদিন দেখি না...!'
আমার কোন তাড়া নেই। অফিস যখন ছুটি হবার হোক।
আমাকে দৌড়ে দেশের বাড়ির বাস ধরতে হবে না। মনে পড়ে এই তো গতবছরও কি কষ্ট করে বাঁদুড়ঝোলা হয়ে রাজশাহী গিয়েছিলাম। কষ্ট হচ্ছিল তবুও ভাল লাগছিল নিজের দেশে যাচ্ছি। যেখানে আমার জন্য অপেক্ষা করছে বাবার স্নেহ, মায়ের ভালবাসা আর বুবুর আদর। অথচ আজ...মাত্র একবছরের ব্যবধানে সবাই কেমন যেন বদলে গেল।
একদম ভুলে গেল? আমি কি খুব বড় ধরনের অপরাধ করেছি? যাকে ভালবেসেছি তাকে বিয়ে করেছি। তোমরা কেন যে রাজি হচ্ছিলে না? ভালমেয়ে হিসেবে হিমেল কোন অংশে কম ছিল?
শুধু নিজের কথাই বলে যাচ্ছি। আমার বাবা-মা তো অনেক দূরে থাকেন। কিন্তু ওর বাবা-মা এ শহরেই থাকেন। মাঝে মধ্যে রাস্তাঘাটে দেখাও হয়ে যায়।
তারা মুখ ফিরিয়ে নেন। প্রথম প্রথম হিমেল এ বিষয়টা নিয়ে ভীষণ মন খারাপ করত। খুব কাঁদত। আমরা যে দুপক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করিনি তা কিন্তু নয়। যতবার তাদের কাছে গিয়েছি ততবারই উনারা তাড়িয়ে দিয়েছেন।
এখন আমাদের পৃথিবীতে কেবল আমরা দুজন-আমি আর হিমেল।
আমার বউটা নামেও হিমেল, আচরণেও হিমেল। একদম ঠান্ডা মেজাজের চুপচাপ। শুনেছি ছোটবেলায় শান্ত স্বভাবের জন্য ওর খালা ওর নাম রেখেছিল হিমেল। পৃথিবীতে কেবল এই মানুষটিই আমাকে বোঝে।
আমার পাখির বাসার মত বাসায় জানি ওর খুব কষ্ট হয়। আমি ওর কোন চাওয়াই পূরণ করতে পারিনি। দিতে পারিনি একটা ভাল শাড়ি। তবুও ওর মুখে আজ পর্যন্ত আমি কোন হতাশা শুনিনি, আফসোস দেখিনি। আসলে বিধাতা যা করেন ভালোর জন্যই করেন।
ও যদি পাশে না থাকত সত্যিই এতদিনে আমি মরে যেতাম!
কখন যে সন্ধা গড়িয়ে বেশ রাত হয়ে গেছে-হাঁটতে হাঁটতে টেরই পাইনি। ঢাকা শহর এখন প্রচন্ড ব্যস্ত। লোকজন শুধু ছুটছে আর ছুটছে। মার্কেটগুলোতে উপচে ভরা মানুষের ভিড়। লোকজন শুধু কিনছে আর কিনছে।
একজনকে দেখলাম এত বেশি কিনে ফেলেছে যে জিনিসের ভারে হাঁটতে পারছে না। অদ্ভুত নগর এ ঢাকা। কারো কারো পকেটে এত বেশি টাকা...আবার কারো বা একদম পকেট ফাঁকা।
এটা আমার সংসার জীবনের প্রথম ঈদ। আমার খুব ইচ্ছে করছে সোনাদানা, দামি শাড়িতে হিমেলকে মুড়িয়ে ফেলি।
কিন্তু কিছুই করতে পারি না। আমার মত মানুষের কেবল স্বপ্নই থাকে। সাধ আছে অথচ সাধ্য নেই। নিজেকে এত তুচ্ছ মনে হচ্ছে!
-কি ব্যাপার আজ এত দেরি করলে? দরজা খুলেই জিজ্ঞেস করে হিমেল।
-না এমনিই।
-ও আচ্ছা। হাতমুখ ধুয়ে নাও খেতে দিচ্ছি।
-হিমেল আমি তোমাকে খুব ভালবাসি।
-জানি তো। কিন্তু হঠাৎ এভাবে বলছ?
-আমার খুব খারাপ লাগছে।
আমি তোমার এমনই অথর্ব হাজবেন্ড যে তোমাকে ঈদে কিছুই দিতে পারছি না। অথচ এটা আমাদের সংসারের প্রথম ঈদ।
-আরে বাবা সময় তো শেষ হয়ে যাচ্ছে না। এবার পারছ না পরেরবার পারবে। তাছাড়া আমিও তো তোমাকে কিছুই দিতে পারিনি।
তুমি এভাবে বললে তো আমারও মন খারাপ হয়।
-হিমেল তুমি এত ভাল কেন? আমি তোমাকে খুব খুব ভালবাসি।
আজ রাতের আকাশের চাঁদটা একটু আগেও বিষণ্ন মনে হচ্ছিল। এখন মনে হচ্ছে এ বিষণ্নতার মাঝেও আনন্দ আছে...কেবল খুঁজে নিলেই হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।