সত্য একদিন প্রকাশ পাবেই, আমি না করলে আপনি করবেন, না হলে আরেকজন করবে। প্রকাশ হবেই আজ ভার্সিটি থেকে ফিরার পথে একটু ভিড় দেখে এগিয়ে গেলাম। । কৌতুহলী মনটিকে সান্তনা দিতে মূল ঘটনা জানতে চাই, কিন্তু যা শুনতে পেলাম তাতে নিজেরই মানতে কষ্ট হল।
একজন মধ্যবয়স্ক ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে আমাদের এই অযাযিত ভিড়ের জন্ম।
লোকটি বিখ্যাত কেউ নন, পেশায় একজন রিক্সাচালক। ভদ্রলোকের বাড়ী রংপুর। তার আয়ের উপরই সন্তানের ভরনপোষন ও লেখাপড়ার ব্যবস্থা করেন
ঘটনাটি নিম্নরুপঃ রিক্সাচালক সকাল(শীতের দিন তাই সকাল বললাম) ১১টা(আনুমানিক) থেকে এক ছাত্রকে নিয়ে সাহেব বাজার যান, সেখান থেকে ঐ ছাত্রের প্রেমিকাকে রিক্সায় নিয়ে নওদা-পাড়া জিয়া পার্ক যান। সেখানে ভাংতি নাই বলে ৫০টাকা নিয়ে সেই টাকায় টিকেট কাটেন। তিনি ১০/১৫মিনিট পর ফিরবেন এই বলে রিক্সাচালক কে বসিয়ে রেখে সেই গুনধর ছাত্রটি তার প্রেমিকাকে নিয়ে মধুর ডেটিং এ চলে যান পার্কএ।
বেলা ১টার দিকে বের হন। বেশি টাকা দিবেন বলে সেই রিক্সায় প্রথমে সাহেব বাজার, তারপর ভার্সিটি আসেন। এরপর রুম থেকে টাকা আনতেছি বলে হলের ভিতর ঢুকে যান। তারপর আর ফিরে আসেন নি। রিক্সাচালক অনেক সময় অপেক্ষা করেন।
কিন্তু ছাত্রটি আর ফিরে আসেনা দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। একজন বয়স্ক মানুষ কাদছে!!কি নির্ম্ম সত্যি!
ঘটনার সমাপ্তি এখানেই হতে পারত, কিন্তু একজন স্থানীয় দোকানদার এসে, সব ছাত্রকে উদ্দেশ্য করে গালি দিতে থাকেন। (গালির ধরন এতই বিশ্রী যে লেখার সাহস পেলাম না) তখন কেন জানিনা নিজের কাছে খুব খারা্প লাগল। একজন ছাত্রের অমানবিক কাজের জন্য সকল ছাত্রের গালি শুনতে হল। কেন??
যখন প্রায় সকল ছাত্র নিজের অবস্থান থেকে সমাজের কল্যানের চিন্তা করে।
তখন কেন এই অপবাদ মাথায় নিতে হচ্ছে??কেন একজন দোকানদারের গালি শুনতে হবে??
কয়েকদিন আগে আমরা ক’জন বন্ধু মিলে শীতার্তদের জন্য কাপড় সংগ্রহ করতে যাই। সবাই কিছু না কিছু সাহায্য করেছে। যারা পারেনি তারা আমাদের কাজের প্রসংশা করেছে। পরেরবার দিবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।
সংগ্রহিত কাপড় বিত্রন করতে যাই।
সেদিন সারাদিনে মাত্র ২টি পরাটা আর ৫০গ্রাম বাদাম ছিল তাদের খাবার। কারন খাবারের টাকা বাচিয়ে আরো ১টি কম্বল কিনেছে, ১০/১২কিমি বেশি হেটেছে ২টা চাদর বেশি দিতে পারবে বলে। অথচ জীবনে কখনও এত রাস্তা হাটেনি, এত ক্ষধার্থ থাকেনি। যারা পরের কারনে এই কষ্ট করল তারা খারাপ হতে পারে না।
অপ্রতুল কাপড় অতিশীঘ্র শেষ হয়ে যায়।
তারপর এক পর্যায়ে দেখলাম এক ছোটভাই নিজের টূপি খুলে এক বৃদ্ধের মাথায় পড়িয়ে দিল। এক বন্ধু গায়ের চাদর খুলে দিয়ে দিল একজনের হাতে। মানুষজনের কষ্ট দেখে যাদের হ্রদয় এতটা কাদে তারা খারাপ ,এটা মানতে পারব না। তারা অন্তত একজন রিক্সাচালকের ভাড়া না দিয়ে উ্লটো তার টাকাতে ফুর্তি করতে পারেনা
। যাদের দিকে সারাদেশ চেয়ে থাকে, তাদের এমন ব্যবহার হতে পারেনা।
আমরা সাধারন মানুষের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র হতে চাই । চাই তাদের ভালবাসা পেতে। কেননা আমরা তাদেরই সন্তান, ভাই-বোন, আত্মীয়, আমরা তাদেরই আপনজন। সবাই আপনার ভালবাসার চাই যাতে আপনার কল্যানে নিজকে নিয়োজিত করতে পারি। দয়াকরে দু’একজনকে দিয়ে সবাইকে বিচার করবেন না।
সবশেষে বলব, আমরা সবাই খারাপ নই, সবাই খারাপ নই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।