আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

@ আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক (প্রথমার্ধ)

জন্মোপার থেকে পৃথিবী হয়ে অনন্তে >>> ©www.fazleelahi.com

সভ্য জগতের মানুষেরা সবসময়েই নিজেদের মধ্যে শুভেচ্ছার আদান-প্রদানের জন্য কিছু ভালো ভালো শব্দ বেছে নিয়েছে; যা দ্বারা একে অন্যের প্রতি শুভ-কামনা, সৌহার্দ প্রকাশ ও দো'আ করে থাকে। ইসলাম যেহেতু একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা, তাই তারও রয়েছে নিজস্ব পরিপূর্ণ কালচার; যেখানে এই 'সাক্ষাতে শুভেচ্ছা বিনিময়ের' জন্যেও রয়েছে দারুন সুন্দর ব্যবস্থা, যাকে আমরা বলি 'সালাম'। পরিপূর্ণ শব্দগুলো হচ্ছে- 'আস্সালামু 'আলাইকুম', যার অর্থ 'আপনাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক', এর সাথে আরো যুক্ত করা হয় 'ওয়ারাহ্মাতুল্লাহ্' এবং 'ওয়াবারাকাতুহ্' অর্থাৎ, 'এবং আল্লাহ্র পক্ষ থেকে রহমত ও তাঁর পক্ষ থেকে বরকতসহ'। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে আল্লাহ্ বলেন ঃ [গাঢ়]"হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য গৃহসমূহে প্রবেশ করো না যে পর্যন্ত আলাপ-পরিচয় না কর এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম না কর। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যাতে তোমরা স্মরণ রাখ।

"[/গাঢ়] [সূরা আন্-নূর ঃ 27] [গাঢ়]সালামের ফযীলত এবং এর বিস্তারের আদেশ ঃ[/গাঢ়] সাধারণভাবে মানুষের মন মাত্রই চায় যে, অন্যেরা তাকে ভালবাসুক, তার জন্য অন্য মানুষেরা অন্তরে মমতা, ভালবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ অনুভব করুক। তাহলে কি সেই পন্থা, যার দ্বারা এই ভালবাসার সূত্রপাত ঘটানো সম্ভব? প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন ঃ [গাঢ়]'তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ না মুমিন হবে। আর ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না পরস্পরকে ভালবাসবে। আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি কাজের কথা বলে দেব না, যা করলে তোমরা পরস্পরকে ভালবাসবে? তোমরা নিজেদের মধ্যে সালামের প্রসার-বিস্তার কর। '[/গাঢ়] [আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু 'আনহু থেকে বর্ণিত, মুসলিম ঃ 54] তাহলে হাদীসের ভাষ্যানুযায়ী কি শুধু ভালবাসাই পেলাম? না, আরো অজস্র অজস্র পেলাম এখান থেকেই।

সালাম দেয়া-নেয়ার মাঝে লুকিয়ে আছে 'ভালবাসা', পারস্পরিক ভালবাসার মাঝে লুকিয়ে আছে 'মুমিনের অন্তর' আর সত্যিকারের মুমিন হওয়ার বিনিময়ে রয়েছে চির শান্তির 'জান্নাত'! আল্লাহ্র রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালামের প্রসার ঘটানোর জন্য আদেশ করেছেন, এ সুন্নাত মুমিন মাত্রেরই গুরুত্বপূর্ণ মনে করে পালন করা উচিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সালামের এত বেশী প্রচলন করতে বলেছেন, যা তার এ হাদীসটি থেকে জানতে পারি, যেখানে তিনি বলেছেন ঃ [গাঢ়]'যখন তোমাদের কেউ তার (যে কোন মুসলিম)ভাইয়ের সাথে সাক্ষাত করে সে যেন তাকে সালাম করে। অতঃপর যদি তাদের উভয়ের মাঝে গাছ, দেয়াল অথবা পাথরের আড়াল হয়, তারপর আবার দেখা হয়, তাহলে যেন আবার সালাম করে। '[/গাঢ়] [আবু দাউদ ঃ 5200 এবং নাসিরুদ্দীন আলবানী তার 'সিলসিলাতুল আহাদীস আস্-সহীহা' গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। ] [গাঢ়]সালাম আদান-প্রদানের নিয়ম-পদ্ধতি ও আদব ঃ[/গাঢ়] সমগ্র মানবতার জন্য আল্লাহ্ যাকে রহমত ও শিক্ষক করে পাঠিয়েছেন তিনিই আমাদেরকে শিখিয়ে দিয়ে গেছেন কিভাবে সালাম করতে হবে এবং কিভাবে তা থেকে অধিক সাফল্য অর্জন করতে হবে।

ইমরান বিন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু 'আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন ঃ [গাঢ়]'জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বললো ঃ 'আস্সালামু আলাইকুম'। তিনি সালামের উত্তর দিলেন। অতঃপর লোকটি বসে পড়লে তিনি বলেন ঃ দশটি নেকী বা পূণ্য লাভ করলো। অতঃপর দ্বিতীয় ব্যক্তি এসে বললো ঃ 'আস্সালামু 'আলাইকুম ওয়ারাহ্মাতুল্লাহ্'। তিনি তার সালামের জবাব দিলেন।

অতঃপর লোকটি বসে পড়লে তিনি বললেন ঃ বিশটি নেকী লাভ করলো। অতঃপর তৃতীয় ব্যক্তি এসে বললো ঃ আস্সালামু 'আলাইকুম ওয়ারাহ্মাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ্'। তিনি সালামের জবাব দিলেন। অতঃপর সে বসে পড়লে তিনি বললেন ঃ ত্রিশটি নেকী লাভ করলো। '[/গাঢ়] [আবু দাউদ ঃ 5195, তিরমিযী ঃ 2689, তিরমিযীর ভাস্যানুযায়ী হাদীসটি হাসান।

] দূর থেকে হাতের ইশারায়ও সালাম দেয়া যায়, যার প্রমাণ পাই আসমা বিনতে ইয়াযীদ রাদিয়াল্লাহু 'আনহা থেকে বর্ণিত হাদীস থেকে, যেখানে তিনি বর্ণনা করেন ঃ [গাঢ়]'রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা মসজিদ অতিক্রম করে যাচ্ছিলেন। সেখানে মহিলাদের একটি দল বসে ছিল। তিনি তাদেরকে হাতের ইশারায় সালাম করলেন। '[/গাঢ়] [তিরমিযী ঃ 2897] রাসূল এখানে সালামের শব্দ উচ্চারণ করেন এবং সাথে সাথে হাতের ইশারা করেন, যার সমর্থন আবু দাউদের বর্ণনায় রয়েছে, যেখানে রয়েছে- 'তিনি আমাদেরকে সালাম করলেন'। কে কাকে আগে সালাম করবে, এ নিয়ে নানা কথা শোনা যায়।

আসুন দেখি ইসলামের মহান শিক্ষক কি বলেছেন এ ব্যাপারে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু 'আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন ঃ [গাঢ়]'আরোহণকারী পদব্রজে গমনকারী ব্যক্তিকে সালাম করবে, পদব্রজে গমনকারী উপবেশনকারীকে সালাম করবে এবং অল্পসংখ্যক অধিকসংখ্যক লোককে সালাম করবে। '[/গাঢ়] [বুখারী ঃ 6231, মুসলিম ঃ 2160] এ ব্যাপারে বুখারীর অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে, [গাঢ়]'ছোট বড়কে সালাম করবে'[/গাঢ়]। কিন্তু মহানুভব রাসূল যদি আমাদেরকে ভালবাসা ও মমত্ববোধ না শেখাবেন, তো আর কে শেখাবেন? তাইতো তার মত সর্বোত্তম শিক্ষকের কাছ থেকে শিক্ষা পেয়ে 'যোগ্য ছাত্র' সাহাবী আনাস রাদিয়াল্লাহু 'আনহু তাই করতেন যা রাসূলকে করতে দেখেছেন। [গাঢ়]'তিনি (আনাস) বাচ্চাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলে তাদেরকে সালাম করলেন এবং বললেন ঃ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করতেন।

'[/গাঢ়] [বুখারী ঃ 6247, মুসলিম ঃ 2168] তাই ছোটদেরই উচিত বড়দের আগে সালাম করা, কিন্তু বড়রাও যখন ছোটদের কাছে যাবে কিংবা তাদের অতিক্রম করবেন তখন ছোটদের সালাম করবেন; এটাই রাসূলের শিক্ষা। অমুসলিমদের প্রতি সালামের ক্ষেত্রে কিরূপ আচরণ হবে এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন ঃ [গাঢ়]'ইয়াহূদী ও নাসারারা তোমাদেরকে সালাম করলে তোমরা বল ঃ 'ওয়া'আলাইকুম'। '[/গাঢ়] [বুখারী ঃ 6258, মুসলিম ঃ 2163] এখানে যারা আসমানী কিতাব পেয়েছিল একসময় তাদের ব্যাপারেই এমন বলা হয়েছে, এর বাইরে অন্য যেসব ধর্মাবলম্বীরা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। কোন মজলিসে বা সমষ্টিতে যদি মুসলিম, ইয়াহূদী, খ্রীস্টান, অগি্নউপাসক, মূর্তিপূজক ইত্যাদির মিশ্রণ থাকে তবে সেখানেও সালাম দেয়া জরুরী। যেমনটি আমরা উসামা রাদিয়াল্লাহু 'আনহুর বর্ণনায় পাই, তিনি বলেন ঃ [গাঢ়]'নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মজলিসের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলে তাদেরকে সালাম করেন।

তাতে মুসলমান, মুশরিক, মূর্তিপূজক, ইয়াহূদী (সব রকম লোকের) সমাগম ছিল। '[/গাঢ়] [বুখারী ঃ 6254, মুসলিম ঃ 1798] [[চলবে]] [[লেখাটির পূর্ণ স্বাদ পেতে হলে অবশ্যই শেষার্ধ পড়ার অনুরোধ করছি]] [link|http://www.somewhereinblog.net/Fazalblog/post/16666|Avcbv

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।