ফ কি র মো হা ম্ম দ র ত ন মি য়া চি শ তি
হযরত মঈনুদ্দীন চিশতির 'জবান'কে তকদিরহীনের তকদির বলে জানবে। হযরত খাজা বাবা পীরের আদেশে ওই মায়ের
জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করলেন। ওই মা সাত সন-ানের জননী হয়েছিলেন
হযরত রাসূলে পাক (সা.) রজব মাসের 27 তারিখে আল্লাহপাকের দর্শন লাভের জন্য বিবি উম্মে হানীর (রা.) ঘর থেকে 'বোরাক' নামক বাহনে মে'রাজ শরিফে গমন করেছিলেন। সিদরাতুল মোনতাহা পর্যন- পেঁৗছে জিব্রাইল (আ.) বললেন, আমার সামনের দিকে যাওয়ার অনুমতি নেই। এরপর বোরাকেরও ক্ষমতা নেই অগ্রসর হওয়ার।
তখন 'রফরফ' নামে একটি বাহন হযরত নবী করীম (সা.)-কে নেয়ার জন্য হাজির হল। হযরত নবী করীম (সা.)-এর জ্যোতির্ময় চেহারা মোবারক থেকে নূরের বিচ্ছুরণে রফরফের মধ্যে জজবাত পয়দা হল। 'রফরফ' যিকরে এলাহির উন্মাদনায় নাচতে লাগল। নবীজী (সা.) 'রফরফে' আরোহণ করতে পারছিলেন না। তখন আলমে 'আরওয়াহ' বা রুহের জগৎ থেকে এক 'রুহ মোবারক' এসে 'রফরফের' নূরানী লাগাম ধরে শান- করলেন।
অপর আর এক 'রুহ মোবারক' একে সুরত ধারণ করে তার কাঁধ মোবারক পেতে দিলেন। হযরত নবী করীম (সা.)-কে আল্লাহপাক জানিয়ে দিলেন, যে রুহ মোবারক 'রফরফ'কে শান- করেছিলেন সে রুহ তাঁরই উম্মতের রুহ, দুনিয়াতে তাঁর নাম হবে হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতি (রহ.)। যে রুহ কাঁধ পেতে দিয়েছিলেন সেই রুহ হযরত গাউসুল আযম মুহিউদ্দিন জিলানী (র.)। হযরত নবীজী (সা.) ঘোষণা করলেন, হে মঈনুদ্দীন তুমি আমার বাহনকে শান- করেছ দুনিয়াতে তুমি আমার প্রচারিত ধর্মকেও শান- করবে। তোমার এই হাত ব্যতীত আল্লাহর মা'রেফাতের খাজানা 'বেলায়েত' বণ্টন হবে না।
তোমার অনুমোদন ব্যতীত কেউ বেলায়েত লাভ করতে পারবে না তথা অলিআল্লাহ হতে পারবে না। হযরত খাজা গরিব নওয়াজ 530 হিজরি সনের 14 রজব ইরানের সিস-ান প্রদেশের সঞ্জরে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র 15 বছর বয়সে তার মহান পিতা হযরত খাজা গিয়াসুদ্দীন হাসান (র.) ইন-েকাল করেন। পিতার ওয়ারিশ সূত্রে তিনি একটি ফলের বাগানপ্রাপ্ত হন। একদিন তিনি যখন ফলের বাগান পরিচর্যা করছিলেন তখন হযরত ইব্রাহীম কান্দুজী (রহ.) নামে এক মাযযুব অলি আল্লাহ সেখানে উপস্থিত হন।
খাজা বাবা দরবেশকে তাজিমের সঙ্গে বসিয়ে তৃপ্তি সহকারে বাগানের ফল খেতে দেন। উল্লেখ্য, মাযযুব অলি আল্লাহ হযরত ইব্রাহীম কান্দুজী (রহ.) এলহামের মাধ্যমে আল্লাহপাকের তরফ থেকে নির্দেশপ্রাপ্ত হয়েই হযরত খাজা গরিব নওয়াজের কাছে এসেছেন। তিনি অন-র্দৃষ্টি দ্বারা হযরত খাজা বাবার আধ্যাত্দিক রাজ্যের উচ্চতম মরতবা ও বাদশাহীর কথা উপলব্ধি করলেন। তিনি ঝুলি থেকে এক টুকরো রুটি বের করে চিবিয়ে হযরত খাজা বাবার মুখে প্রদান করলেন। খাজা বাবাও পরম আদব ও ভক্তির সঙ্গে তা খেয়ে ফেললেন।
সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সব অন-ররাজ্য খোদায়ী নূরে আলোকিত হল। হূদয়ের পর্দা অপসারিত হল। তিনি ওয়াহাদাতের মঞ্জিল দেখতে পেলেন। আল্লাহ প্রেমের প্রবল তরঙ্গে তার সব অজুদ প্লাবিত হল। সংসারের সব মায়া তাঁর অন-র থেকে লুপ্ত হল।
তিনি ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া আটার কল, ফলের বাগান বিক্রি করে দিলেন এবং সব টাকা গরিব-দুঃখীর মধ্যে বিতরণ করে দিয়ে আল্লাহর রাস-ায় বেরিয়ে পড়লেন। অভাবনীয় ও অবর্ণনীয় রুহানি আকর্ষণ নিয়ে তিনি আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্বেষায় নিমগ্ন হলেন। সে সময় নিশাপুরের নিকটবতর্ী 'হারুন' নামক স্থানে জগদ্বিখ্যাত অলিআল্লাহ ইমামোল আউলিয়া হযরত খাজা উসমান হারুনী (রহ.) অবস্থান করছিলেন। তিনি আপন রুহানি জ্যোতিতে জগতের খোদাপ্রেমিক মানব সন-ানের অন-ররাজ্য আলোকিত করে যাচ্ছিলেন। হযরত খাজা গরিব নওয়াজ তাঁর দরবারে উপস্থিত হলেন।
তার পবিত্র হাতে বায়াত গ্রহণ করে মুরিদ হলেন। হযরত খাজা বাবা গরিব নওয়াজ নিজ মোর্শেদের কাছে দীর্ঘকাল (প্রামাণ্য তথ্য অনুযায়ী 20 বছর 6 মাস) অবস্থান করে পীরের খেদমত করেন। হযরত খাজা উসমান হারুনীর (রহ.) অভ্যাস ছিল, তিনি সব সময় গরম পানি দিয়ে অজু করতেন। হযরত খাজা বাবা প্রতি মুহূর্তে অত্যন- সতর্ক থাকতেন যেন মোর্শেদ কেবলার গরম পানি পেতে অসুবিধা না হয়। সফরে গেলে তিনি পীরের চুলা নিজ মাথায় বহন করতেন।
এমনকি মক্কা মোয়াজ্জেমা ও মদিনা মোনাওয়ারা সফরে তিনি উত্তপ্ত মরুভূমি পার হওয়ার সময় পীরের অজুর পানির জন্য জ্বলন- চুলা নিজ মাথা মোবারকে বহন করতেন। তিনি পীরের খেদমতে অবস্থানকালে একাধারে আট বছর নিদ্রা যাননি। 20 বছর বিছানায় পিঠ লাগাননি।
একবার হযরত খাজা গরিব নওয়াজ পুকুরের পাশে (মতান-রে কুয়ার পাশে) মোর্শেদ কেবলায় কাপড় ধৌত করছিলেন। এ সময় দেখলেন যে, এক মা কাঁদতে কাঁদতে বনের দিকে যাচ্ছে।
খাজা বাবা ওই মাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, 'আপনি এমন করে কাঁদছেন কেন মা?' মা উত্তর করল 'আমার কোন সন-ানাদি হয় না, আমার স্বামী আমাকে এ কারণে পরিত্যাগ করবে বলে জানিয়েছে। জগতে আমার কোন আশ্রয় নেই, তাই আমি আত্দহত্যা করতে যাচ্ছি। ' হযরত খাজা বাবা বললেন, 'আপনি আমার পীর সাহেব কেবলার দরবারে যান। এখানেই তার দরবার। তার দরবার থেকে কেউ খালি ফেরত যায় না।
তিনি দোয়া করলে আপনার সন-ান হবে। মা বলল, 'আমি তাঁর কাছে গিয়েছিলাম। তিনি তাঁর রুহানী শক্তি দ্বারা আমার ভাগ্যলিপি দেখে বলেছেন, আল্লাহতায়ালা আমার ভাগ্যে কোন সন-ান লেখেননি। তিনি আমার কান্নায় বিগলিত হয়ে দ্বিতীয়বার মোরাকাবা করে বললেন, মা আমি লওহে মাফুজ ভালো করে দেখলাম, কিন' কোথাও তোমার সন-ান দেখলাম না। অতএব আমার আত্দহত্যা করা ছাড়া কোন উপায় নেই।
' মহিলার এই দুর্দশায় দয়ার সাগর হযরত খাজা বাবার অন-র দুলে উঠল। তিনি অত্যন- অধীর হয়ে মাকে সঙ্গে নিয়ে মোর্শেদ কেবলার খেদমতে গিয়ে তার জন্য প্রার্থনা জানালেন। হযরত খাজা উসমান হারুনী (র.) বললেন, 'বৎস মঈনুদ্দীন, আমি এই স্ত্রীলোকের ভাগ্যলিপি দেখেছি কোথাও আল্লাহপাক তার জন্য কোন সন-ান লেখেননি। '
একথা শুনে অত্যন- পেরেশান হয়ে অশ্রু প্লাবিত চোখে দয়ার সাগর গরিব নওয়াজ অত্যন- আদব ও ভক্তির সঙ্গে নিঃসন-ান নারীর মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করার জন্য আরজ করলেন। হযরত খাজা উসমান হারুনী (র.) হুজুর খাজা গরিব নওয়াজের এই আর্জিতে আবারও মোরাকাবায় গিয়ে ফরিয়াদ করলেন, 'এলাহী, তুমি সর্বশক্তিমান।
এই নিঃসন-ান নারীর মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হওয়ার জন্য আমার মঈনুদ্দীন চিশতির চোখে অশ্রু ধারা প্রবাহিত। তুমি এই নারীর মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করতে সক্ষম। ' তখন হযরত খাজা উসমান হারুনী এলহামের মাধ্যমে দৈববাণী শুনতে পেলেন, 'হে উসমান হারুনী, তুমি লওহে মাহফুজ দেখে নিরাশ হয়েছিলে, তখন তো তুমি আমার কাছে কিছু চাওনি। যদি মঈনুদ্দীন চিশতি আমার কাছে প্রার্থনা করো তাহলে ওই নিঃসন-ান নারী নিশ্চয়ই সন-ান লাভ করবে। তুমি এই সুসংবাদ অবগত হও।
কারও অদৃশ্য লিপিতে কিছু না থাকলেও মঈনুদ্দীন চিশতি যদি আমার কাছে প্রার্থনা করে তবে অলিখিত অদৃষ্ট লিপিও তার প্রার্থনানুসারে লিখিত হয়ে যায়। মঈনুদ্দীন চিশতির 'জবান'কে তকদিরহীনের তকদির বলে জানবে। হযরত খাজা বাবা পীরের আদেশে ওই মায়ের জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করলেন। ওই মা সাত সন-ানের জননী হয়েছিলেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।