আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছবি সমাচার

যদি নির্বাসন দাও.................................................................. আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরী ছোঁয়াবো আমি বিষ পান করে মরে যাবো! বিষণ্ন আলোয় এই বাংলাদেশ নদীর শিয়রে ঝুঁকে পড়া মেঘ, প্রান্তরে দিগন্ত নির্নিমেষ- এ আমারই সাড়ে তিন হাত তুমি।

ছবি একখান া জিনিস বটে। হ্যাঁ মশায়। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, যদি আপনি ক্যামেরা হাতে কাউকে বলেন, জনাব একটু ক্লোজ-আপ হাসি দিন তো, জাস্ট একটা স্ন্যাপ নেবো। তাতেই সেরেছে।

এতোক্ষণের প্রাণোচ্ছল ভদ্রলোকটি এবার নিজেকে স্মার্টলি উপস্থাপনের হাস্যকর প্রচেষ্টায় অনেকটা শোরুমের সাজানো শো-পিচে পরিণত হয়ে যাবেন মূহুর্তেই। অতপর ছবির প্রিন্ট হাতে এলে নিজের রোবটিক মুখখানা দেখে ফটোগ্রাফারের চৌদ্দ গোষ্ঠির পিন্ডি চটকাতে থাকবেন কবরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত। তবে মশায়, ছবি কিন্তু এখন আর শুধু স্মৃতি ধরে রাখার মাধ্যম হিসেবেই সীমাবদ্ধ নয়। এখন সে রীতিমত স্পাই হয়ে উঠেছে। এই তো সম্ভবত বছর চারেক আগেকার কথা।

পত্রিকাতে দেখলাম একখান দারুন ছবি- বাংলার সূর্য সন্তানেরা অস্ত্র হাতে মিছিল করছে আর সেই মিছিলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ততকালীন সরকারের এক সাংসদ। কিংবা এই সেদিনের কথাই একটু মনে করুন না। সদ্য সাবেক হওয়া এক প্রতিমন্ত্রীর সাথে একই মঞ্চে মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসীর সহাবস্থান আর দাঁত কেলিয়ে হাসার চমতকার নির্ভেজাল দৃশ্য অবলোকনের সুযোগ করে দিয়েছে- 'ছবিই'। এই নিরীহ জিনিসটার বদৌলতে কিন্তু হাজার মাইল দূরে থেকে ও দেখতে পেয়েছি রোকেয়া হলে মধ্য রাতের বর্বর তান্ডব, ইডেন কলেজের চুলোচুলি, হরতালের সময় পুলিশ বাহিনীর মহিলা পিকেটার ঠ্যাঙানোর নির্লজ্জ সব কান্ড-কারখানা আরো কতো কি! তবুও সত্যতার প্রশ্ন কিন্তু রয়ে যায়। কারণ অনেকে রথী-মহারথীই আছেন যারা সাত সমুদ্র , তের নদীর ওপাড়ে ফার্স্ট ওয়ার্ল্ডের এয়ার কন্ডিশনড রুমে বসে তৃতীয় চক্ষু (নাকি জ্ঞানচক্ষু ! আমার মশায় এই বাম আর ডান চর্মচক্ষু ছাড়া আর কোন চক্ষুই কখনো জন্মালো না।

) দিয়ে বটতলার কাহিনি লিখেন আর কলমের এক খোঁচায় সব পত্রিকার ছবিগুলোকে বাতিল করে দেন আর্টিফিশিয়াল বলে। তা মশায় হতেই পারে। এখন তো ভার্চুয়াল রিয়েলিটির যুগ। ফিউশনের এই যুগে ছবি পাল্টানো তো গণেশ উল্টানোর মতোই সহজ। তবু বলি- এই ছবিই কিন্তু আজও অনেক সত্যের নীরব সাক্ষী।

রাজনীতির সং, ধর্মের ভং, সিনে জগতের ঢং, মুখোশধারীর রং; এসব লং লং হিস্ট্রিগুলোকে আমাদের মতো জবরজং আমজনতার হাতে পৌঁছে দিচ্ছে ফটুই, সে সাদাকালোই হোক আর রঙিনই হোক। অনেক বাজে প্যাচাল হলো। এবার মূল কথায় আসি। বহুত ডিজাইন-টিজাইন করে, থর্াড ক্লাশ কোয়ালিটিগুলোকে সেন্টু মেরে, নিজের ঢোল নিজে পেটাতে পেটাতে ফাটানোর উপক্রম করে নিজের একখানা ওয়েবসাইট তৈরি করলাম। হোম পেইজে বসালাম টাই-টুই পরা এক্সিকিউটিভ টাইপের একটা ছবি।

পরদিন পার্টি দিয়ে ওয়েবপেইজের উদ্বোধন করলাম আর বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানালাম মন্তব্য করতে। রাতে কমেন্টস চেক করতে গিয়ে দেখি, আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুটি লিখেছে, 'ঐ গাধা, হোম পেইজে চাকরীর দরখাস্তের ছবি বসিয়েছিস কেনো? বুদ্ধু , একটা ক্যাজুয়াল ছবি দে। ' ক্যাজুয়াল ছবি খুজঁতে খুজঁতে একখানা নিরীহ-নিপাট ভদ্র গোছের ছবি খুব পছন্দ হলো। এবার নিশ্চয় কারো আপত্তি থাকবে না। পরের দিন দেখি, কমেন্ট লিস্টে লেখা- 'এই বেকুব, তোর ছবি দেখে মনে হচ্ছে এইমাত্র ভূমিষ্ঠ হয়েছিস, এখনি ওয়াঁ ওয়াঁ শুরু করবি।

হারানো বিজ্ঞপ্তির জন্যও পারফেক্ট ছবিখানা, একদম আলভোলা। ' মেজাজ প্রচন্ড বিগড়ে গেলো। এবার কমেন্টের হাত থেকে বাচঁতে প্রিয় দুই বন্ধুর মাঝখানে কোলগেট হাসি মাখা মুখের ছবি আপলোড করলাম। ছবিতে যেহেতু আমি একা না, সো কেউ আপত্তি করবে না। সকাল হতে না হতেই দুই বন্ধুর ফোন।

দোস্ত প্লিজ ছবিটা চেইঞ্জ কর। সবাই তো আমাদের এলটন জনের শিষ্য মনে করছে রে। হোম পেইজে গ্রুপ ছবি! হেভি শকড্ হলাম। সবশেষে অনেক খুঁজে প্রিয় বান্ধবীর সাথে তোলা একখান ছবি এড করলাম। না এবার সকাল হতে হয়নি।

ভোর রাতেই ফোন। ওপাশ থেকে বাজখাঁই গলার ধমক, 'ঐ হালা, তোর তো সাহস কম না। আমার লগে বিলা করস। আমার পিয়ারীর লগে ছবি তুইল্যা ওয়েবে দিছস্। পাঁচ মিনিট টাইম দিলাম।

ছবি পাল্টা। নইলে ট্যাংরি ভাইঙ্গা হাতে ধরাইয়া দিমুু। ' পাঁচ মিনিট কি! পাঁচ সেকেন্ডে ছবি রিমুভ করলাম। আর নতুন কোন ছবি সিলেক্ট করার সাহসই পেলাম না! পরদিন জরুরী সভা ডেকে বন্ধুদের দায়িত্ব দিলাম গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটের মাধ্যমে আমার একখানা ছবি নির্বাচন করার। বন্ধুরা সানন্দে রাজি হলো।

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মানিব্যাগ খালি করে তাদের রিফ্রেশমেন্টের ব্যবস্থা করে আমি মহানন্দে বাসার দিকে পা বাড়ালাম। বন্ধুরা আশ্বস্ত করলো রাত আট'টার সময় ফলাফল আপলোড করা হবে। বাসায় এসে শান্তিতে দু'চোখ বুজলাম। ঘুম ভাঙ্গতেই দেখি রাত এগারটা। তড়াক করে লাফ দিয়ে উঠলাম।

ওয়েব পেইজ ওপেন করলাম। এ কি! আমি স্বপ্ন দেখছি না তো! গায়ে চিমটি কেটে দেখলাম। না, জেগেই তো আছি। ভালো করে চোখ কচলে আবার মনিটরে তাকালাম। দেখি আগের মতো আমার দিকে চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে আছে একটি রামছাগল।

আমি যেন ব্যাকগ্রাউন্ডে তার ম্যা ম্যা ডাক শুনতে পেলাম। কমেন্টস বাটনে কিক করলাম। সেখানে লেখা ---- "নির্দলীয়, নিরপে ক্ষ ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কোন ছবিই একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। তাই আপাতত সর্বসাধারণের সম্মতিক্রমে সবদিক দিয়ে তোমার জন্য মানানসই ও উপযুক্ত ছবিটি নির্বাচন করা হয়েছে। সেই সাথে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আজকের মতো আবার পুনঃ নির্বাচন অনুষ্ঠান করার আহ্বান জানানো হলো।

আশা করি বৃহত্তর গণতন্ত্রের স্বার্থে তুমি এ রায় মাথা পেতে নেবে। " মাথা পেতে নেবো কি! আমার ধড়ে তো তখন মাথাই নেই। রাগে, দুঃখে, ক্ষোভে তখনি ওয়েবসাইটটি চিরতরের জন্য আনসাবস্ক্রাইব করলাম। ভীষণ ইচ্ছে করছিলো নিজেকেও আনসাবস্ক্রাইব করে দিই পৃথিবী থেকে। কিন্তু মরিতে চাহি না আমি এই সুন্দর ভুবনে, তাই ক্যাবলাকান্তের মতো এখনো বেঁেচ বর্তে আছি।

এইভাবে যদি দিন কেটে যায় যাক না . . . . . .

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।