যদি নির্বাসন দাও.................................................................. আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরী ছোঁয়াবো আমি বিষ পান করে মরে যাবো! বিষণ্ন আলোয় এই বাংলাদেশ নদীর শিয়রে ঝুঁকে পড়া মেঘ, প্রান্তরে দিগন্ত নির্নিমেষ- এ আমারই সাড়ে তিন হাত তুমি।
"ভালোবেসে চলে যেওনা, ভালোবেসে চলে যেতে নেই। "
তাই যদি হবে তবে কেন ভালোবাসার মানুষগুলি একবুক কষ্ট দিয়ে এভাবে অকালেই হারিয়ে যায়? আর কত নির্জন রাতে বিষন্ন অন্তরে একাকী ম্ল্লান মুখে আকাশের তারা গুনে কাটতে হবে কষ্টের রক্তাক্ত প্রহর? সব কষ্টগুলো তো ঈশ্বরের সৃষ্টি ঠিক যেমন আমিও তাঁর এক নগন্য সন্তান। সন্তানের ব্যাথায় যদি পিতৃহৃদয়ে হাহাকার না-ই উঠলো তবে তুমি কেমন পিতা? তোমার চোখ কি কখনো ভেজে না তোমারই অপত্যের নিদারুন ক্রন্দনে? কেন এতো কাঁদাও তুমি, বার বার দহনে দহনে অঙ্গার করো বুকের জমিন? এ কিসের খেয়ালীপনা?
1. শ্যামলী। খুব ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট।
এস.এস.সি-তে দ্বাদশ বোর্ড স্ট্যান্ড করেছিলো। কেমেস্ট্রি প্রাইভেট পড়তে গিয়ে ওর সাথে পরিচয়। অতপর নিখাদ বন্ধুত্ব। তার রুচিবোধ, মনন, সহমর্মিতা সবই ছিলো মুগ্ধ হবার মতো। আমিও মুগ্ধ হলাম।
দুজন দুজনের খুব ভালো বন্ধু ছিলাম। কিন্তু নাটক-উপন্যাসকেও হার মানিয়ে এলো এক ঝড়। সেই ঝড় ঝরা পাতার মতো উড়িয়ে নিয়ে গেলো তাকে চিরতরে। ব্রেইন টিউমার হয়েছিলো তার। বাঁচানোর কোন ত্রুটি করেনি আঙ্কেল-আন্টি।
তবুও বাঁচানো গেলো না। এভাবেই আমার উচ্ছল বন্ধুটিকে দেখলাম চোখের সামনে সাদা কাফনে আবৃত হয়ে অন্ধকারের সাথী হতে। শ্যামলী, কতদিন মাটির নীচে একইভাবে শুয়ে আছে! তোমার বুঝি কষ্ট হয় না? আমার এখনো খুব কষ্ট হয়, খুব, খুব।
2. পত্রিকায় সম্ভবত: ইমদাদুল হক মিলনের একটা আর্টিকেল আমাদের অনেকের চোখে পড়ে যায়। শুচি নামে একটি মেয়েকে বাঁচানোর আকুল আর্তি।
আর্টিকেলটা পড়ে খুব কষ্ট লাগলো। ভার্সিটির সব বন্ধুরা ঠিক করলাম কালেকশনে নামার। বেশ ভালো এমাউন্ট কালেক্ট হলো। শুচিকে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়া হলো। সে মোটামুটি সুস্থ হয়ে ফিরে এলো।
পত্রিকায় ওর ছবি দেখে অব্যক্ত ভালোলাগায় মন ভরে উঠলো। কিন্তু হায়, তখনো কি জানতাম বিধাতার আরো কিছু গোপন অভিসন্ধি ছিলো মনে ! তাই আচমকা একদিন দেখলাম সে আবারো পত্রিকার শিরোনাম। তবে হাসিমাখা মুখে নয়, মৃতু্যর শীতল শান্ত ছায়ার আশ্রয়ে। কোনদিন যাকে দেখিনি সেই মেয়েটা কেমন করে হৃদয় দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে চিরদিনের জন্য চলে গেলো! এতো নিষ্ঠুরভাবে কেউ যেতে পারে?
3. এবার যার কথা বলবো সে সবার পরিচিত অমিত যাকে বাঁচানোর জন্য সারা দেশের মানুষ একসূত্রে বাঁধা পড়েছিলো। আমি অবাক বিস্ময়ে সে সময় লক্ষ্য করেছিলাম সারা দেশের মানুষের একাত্মতা।
গর্বে বুক ভরে উঠেছিলো সেদিন। এবারো বুঝি বিধাতার ঈর্ষা হলো আমাদের ভালোবাসার বন্ধন দেখে! তাই কি প্রমাণ করতে চাইলো নিজের শ্রেষ্ঠত্ব? ছোট ভাইটিকেও নিয়ে গেলো জীবনের সব যন্ত্রণা থেকে মুক্ত করে। কেমন আছিস অমিত? এখন তো আর তোর নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয় না, তাই না?
আমি এখন আর কাউকে ভালোবাসতে পারি না। ভালোবেসে কারো হাত ধরতে যে খুব ভয়! যদি আবার তাকেও হারাতে হয়! এখন আমি সারা রাত্রির আকাশের তারা গুনি। কেউ জানে না, আসলে আমি প্রতি রাতে আকাশের বুকে তারাদের মাঝে প্রিয় মানুষগুলিকেই খুঁজে বেড়াই।
ওই তো, জ্বলজ্বল করছে শ্যামলী যেমন ভাস্বর ছিলো উচ্ছলতায় সারাজীবন, একটু দূরেই শুচি হাসছে খিলখিল করে আর উত্তরের আকাশে ওই তো অমিত। আমাকে বলছে, ভাইয়া এবার যা, ঘুমোবি না?
সত্যি রে। আমিও ঘুমোতে চাই, চিরতরে ঘুমোতে চাই। এতো কষ্ট নিয়ে কেউ কি বেঁচে থাকতে পারে, বল?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।