মন'রে কৃষি কাজ জানো না, এমন মানব জমিন রইলো পতিত, আবাদ করলে ফলতো সোনা
গত 29 শে জুন পৃথিবীর নবম আর্শ্চযের উম্মোচন হল। চার বছরের শ্রম আর 4.2 বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে বানানো চায়না-তিব্বত রেললাইন। পৃথিবীর সবচেয়ে দর্ূগম জায়গায় রেললাইন। সমুদ্্র সমতল থেকে এর উচ্চতা স্থান ভেদে 500-4000 মিটার। একইসাথে জেনে রাখুন এভারেস্ট এর উচ্চতা 8888 মিটার।
যে ধরনের ভূমিতে এই লাইন করা হয়েছে সেটাকে বলে পারমাফ্রস্ট মাটি( Permafrost ) র্অথাৎ হাজার বছর ধরে যে মাটি ফ্রিজিং টেম্পারেচারের নীচে আছে। যেসব জায়গায় ফ্রিজিং না সেখানে এক্সট্রা পাইপ দিয়ে মাটি কুলিং করে ফ্রিজিং করা হচ্ছে। প্রত্যেকটা কেবিনে এক্সট্রা অক্সিজেন সাপ্লাই নিশ্চিত করা হচ্ছে, কারণ এই অলটিচিউডে অক্সিজেন কম থাকে। এত কিছু বলার পরও এর বিশালত্ব বোঝানো সম্ভব না।
এটা করবার কারনে ট্যুরিজম রেভিনিউ 2010 এর মধ্যে দ্্বিগুণ হয়ে যাবে।
মাল পরিবহনে খরচ কমে যাবে 75 ভাগ।
এসব বলার উদ্দেশ্য হলুদ মুখো দের ফিরিস্তি গাওয়া না।
চাইনিজরা বলছে এটা করবার কারণে তিব্বতের উন্নয়নে জোয়ার আসবে। তিব্বতে দালাইলামার অনুসারি বা চায়না বিরোধীরা বলছে এই লাইন আসলে তিব্বতের কফিনে চায়নার শেষ পেরেক। এর কারণে তিব্বতিরা তাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলবে।
হান গোত্রিয় চাইনিজরা এখানে আরো বেশি মাত্রায় অভিবাসী হবে। র্সবোপরি তিব্বত তার রহস্যের ঘেরাটোপে বন্দি চরিত্র হারাবে।
খুব কনভিনসিং কথা বাট স্টিল আরো কিছু
চিন্তার অবকাশ আছে।
সারা পৃথিবী জুড়ে এথনিক কালচার নিয়ে একধরণের র্চবিত র্চবন আছে।
মর্াকিনিরা রেড ইন্ডিয়ানদের মেরে যাদুঘরে পৌঁছে দিয়েছে, এখন ওদেরকে অভয়ারন্য দিচ্ছে, যা অনেকটা লাইভ যাদুঘর এর মত।
বড় বড় বিজ্ঞরা থিসিস নামাচ্ছে , যে রেড ইন্ডিয়ান কালচার বাঁচিয়ে রাখতে হবে , আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের প্রয়োজনে । আসলে তারা তাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে দেখাতে চায় যে, কি অসাধারণ একটা বন্ধুবৎসল জাতিকে কচুকাটা করেছি আমরা দেখো । এটাই আমাদের যোগ্যতা, তোমাদের ও এটা ধরে রাখতে হবে।
অস্ট্রেলিয়ানরা অ্যাবরিজিনদের মেরে একদম গুটিকয় বানানোর পর স্যুভিনির হিসেবে অল্প কয়টা রেখেছে। এটা নিয়ে তাদের হম্বিতম্বি দেখলে মনে হবে চাঁদের পাছায় আগুন লাগিয়ে দিয়েছে ওরা।
সিডনি অলিম্পিক স্টেডিয়াম বানানোর সময় তারা ঘোষনা দিল , আমরা স্টেডিয়াম বানানোর পরিকল্পিত স্থান থেকে কয়েক কিলো সরে এসেছি। কারণ তাতে এক বিশেষ প্রজাতির ব্যাঙ বিলুপ্ত হওয়া থেকে বেঁচে যাবে।
এথনিক কালচার নিয়ে র্চবিত র্চবনটা হচ্ছে , আধুনিক সভ্যতার স্টিমরোলারে পড়ে তারা তাদের নিজস্ব কৃষ্টি হারিয়ে ফেলবে। এ আমাদের অমূল্য সম্পদ। এ হারাতে দেওয়া যায় না।
আমাদের আহমদ শরীফ স্যার এটা নিয়ে একবার বলেছিলেন , এই ধরণের চিন্তা হচ্ছে আসলে একধরণের হিপোক্রেসি। আমি এ্যাপর্াটমেন্টে থাকবো, স্যুট-টাই পড়ে মালটিন্যাশনাল এর মোটা টাকা বেতন নিব, গাড়ি চড়ব, বছরে একদিন মনিপুরি নৃত্য দেখে তালি দিব। আর আদিবাসীরা সায়া-ব্লাউজ পরে থাক, মাদল বাজাক, মহুয়ার রস পান করুক । ওদের মধ্যে একটা প্রিভিলেজ শ্রেনী , এখানে এসে বিটিভিতে বছরে একবার নাচ প্রর্দশন করে যাক । তাহলেই কালচার রক্ষা হল।
আমরা নিজেরা লেংগুঠ ছেড়ে প্যান্ট পড়তে পারি, ওরা পরলে সমস্যা কোথায়।
আমিও বলি ঠিক কথা, শুধ ু বাংগা লি না সারা দুনিয়াতেই চলছে এরকম হিপোক্রেসি।
এর মানে কি কালচার হারিয়ে যাবে ?
না হারাবে না।
কালচার হচ্ছে সময়ের পরিক্রমায় বদলাতে থাকা একটা বিষয়। এখানে লেংগুঠ যেমন ধরে রাখা যায় না, তেমনি সভ্যতার নামে র্ধমকে ছুড়ে ফেলা যায়না।
সময় তৈরি করে চাহিদা, সময় ছুড়ে ফেলে অপাংক্তেয়কে।
আমি পর্াবত্য চট্টগ্রামের একটা গল্প বলি। এক বুড়ি ষাটের্াধ্ব বয়স। একা থাকে, পরিবার পরিজন কেউ নেই। সন্তানরা যে যার পথে চলে গেছে।
তার জীবন ধারণ হয় এখন অর্ামি ক্যাম্পে পেঁপে বিক্রি করে। আগে ওদের জামা-কাপড়ের বালাই ছিলোনা, ওদের জীবন যাপনে অংশ দরকারও ছিলোনা। কিন্তু যখন থেকে সমতলের বাংগালিরা যাওয়া শুরু করলো তখন ওরা দেখলো আব্রু রক্ষা নামক একটা বিষয় আছে। এখন বাংগালিদের সামনে যেতে হলে কাপড় পরে যেতে হবে। ঐ বুড়িমা শুধু প্রতিসপ্তাহে একবার অর্ামি ক্যাম্পে যাওয়ার জন্য একসেট কাপড় রেখেছে , এবং ঐ টাই তার একমাত্র কাপড়।
এটা হয়ে গেল তার বাড়তি খরচ। এখন অর্ামি ক্যাম্প আসায় (জনসমাগম র্অথে) তার যেমন লাভ হয়েছে তেমনি ক্ষতিও হয়েছে। এরমানে এই না যে অর্ামি ক্যাম্প না হলে তার আয়ের উপায় থাকতো না , এর আগেও অনেক বুড়ি মা বেঁচে ছিল অন্য উপায়ে।
তাহলে বিষয়টা ইকোনোমিক্স এর সাপ্লাই - ডিমান্ড এর পেরিফেরিতে চলে গেল। এই সুযোগে কাপড়ের দোকান খুলে বসেছে কিছু লোক।
সেলাই র্কমে নিয়োজিত হয়েছে আরেকদল লোক। পাইকারি এবং খুচরা বিক্রেতার দল তৈরি হয়েছে। এই র্পযন্ত বিষয়টা খুব ভাল বলা যায় তবেই, যদি এই প্রত্যেকটা পেশাজীবি শ্রেনী হয় আদিবাসী গোত্রভূক্ত। তাহলেই কাপড়ের ব্যবহার এর সুফল এরা ভোগ করবে। তারমানে ভোক্তা শ্রেনীর পাশাপাশি, উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় এদের অনর্্তভূক্ত করতে হবে।
শুধু ভোক্তা বানালে চলবে না। আমাদের দেশে জোরপর্ূবক উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে সমতলের লোকদের। এটার ফলাফল ভালো হয়নি ।
বাজারের প্রয়োজনে সমতলের লোক একসময় ঠিকই ঢুকতো, এবং সেটাতে সুন্দর সহাবস্থানের পরিবেশ তৈরি হত।
আদিবাসী বা পাহাড়িদের সন্তান যারা শহরে এসে উচ্চ শিক্ষা নিচ্ছে, তারা অনেকেই আর ফিরতে চায়না ঐ পাহাড়ে।
পাহাড়ের জীবন ভীষণ কঠিন। ভোর চারটায় উঠে জুম চাষ করে সন্ধ্যায় ফেরত আসা। এখানে সব বয়সী পুরুষ - মহিলা থাকে । আমরা যে বয়সটাকে বলি রিটায়ারমেন্ট এইজ। ঐ বয়সী মানুষ থাকে।
জুম চাষ মানে প্রতিদিন পাহাড়ি এলাকায় অন্তত 10-20 কিলো হাঁটাহাঁটি। যারা হেঁটে কেওক্রাড়ং বা বিজয় গিয়েছে তারা জানে কি অবিশ্বাস্য কষ্ট দিনে 20 কিলো হাঁটা (হিমুর দেখিতে গিয়াছি র্পবত মালা পড়ুন)।
কেন এই মানুষের সন্তানরা হঠাৎ করে পরির্বতিত হয়ে যায় । রুমা আসার পর 20 কিলো হেঁটে বগা লেক গিয়ে বাবা-মা'র সাথে দেখা করতে চায়না। শহরে প্রাপ্ত নবলব্ধ যান্ত্রিক বাহনের স্বাদ হচ্ছে এর কারণ।
তারমানে এই প্রক্রিয়ায় ধীরে ধীরে তাদের অভ্যাস পরির্বতিত হবে।
প্রত্যেক ভূভাগের উপযোগী র্অথনৈতিক ব্যবস্থা
তৈরি করতে না পারার কারণেই এ অবস্থার মুখোমুখি আমরা।
কালচার এভাবেই ধ্বংস হয়। আমাদের চোখের সামনে, আমাদের বর্্যথতায়। বছরে একবার মাদল বাজিয়ে যাদুঘরের আবহ আনা যায় , কিন্তু কালচার ধরে রাখা যায় না।
কালচার থাকে জীবন যাপনের মধ্যে দিয়ে।
অনেক আগড়ুম বাগড়ুম মাদল আমি নিজেই বাজিয়ে ফেললাম।
চাইনিজদের এই রেললাইন আসলে কি কারণে
তৈরি ? এতখানি খরচ করে, অসামান্য কর্ীতির কারণ কি ? তিব্বতে উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দেওয়া নাকি সাম্রাজ্যবাদি থাবা বিস্তার ? অনেক গুলো প্রশ্ন, ভাবুন , খুঁজুন উত্তর।
ছবি : বিবিসি , চাইনিজ পেইজ , এবং নাম ভুলে গেছি পেইজ =======================================
2' সরা জুলাই, 2006
রাত 11:25
কলাম্বিয়া।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।