আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দীঘি-খাল-বিল-নদী ঃ কি ক্ষতি গোসল করি যদি

"পসার বিকিয়ে চলি জগৎ ফুটপাতে, সন্ধ্যাকালে ফিরে আসি প্রিয়ার মালা হাতে"

আমাদের গ্রাম ছাড়িয়ে পাশেই বিশাল এলাকাজুড়ে একটা বিরাট "দও" (আমাদের গ্রামের নিজস্ব ভাষা) ছিল। যাকে আমরা দীঘি বা পুকুরের সাথে তুলনা করতে পারি। বিরাট এক উন্মুক্ত জলাধার। এতো বিশাল দীঘি যে এই পাড়ে কেউ গোছল করলে ওই পাড়ের লোককে ঠিক মত চেনা যেত না। ছোটবেলায় আমরা বড় ছোট, আপন, জেঠাতো, চাচাতো, ফুপাতো সব ভাই বোনেরা মিলে দল বেঁধে ঐ দীঘিতে গোছল করতে যেতাম।

ওখানে বিভিন্ন বয়েসের ছেলে মেয়ে থেকে শুরু করে আবালবৃদ্ধবণিতা সবাই দীঘির পাড় ঘেঁষে ছড়ানো ছিটানো অনেকগুলো ঘাটে যার যার মত গোছল করতো। আমাদের নির্দ্দিষ্ট কয়েকটা ঘাট ছিল। গ্রামের সবাই আমরা পরিচিত বিধায় কেউ কারও দিকে তেমন একটা নজর দিতাম না। আর মেয়েরা কেন এই দীঘিতে গোছল করে তা নিয়ে কারও কোন মাথা ব্যাথা ছিল না। মেয়েদের শালীনতা বা জাত খোয়া যাবে এই ব্যাপারে কারও এতটুকু ভয় বা ভীতির কারণ ছিল না।

একটা ব্যাপার শুধু খেয়াল করতাম আমাদের মুসলমান মেয়েরা হিন্দু মেয়েদের চেয়ে শরীরের জামা কাপড় ভেজানোর ব্যাপারে একটু বেশী সচেতন ছিল। এটা ধমর্ীয় কি সামাজিক কারণে তা কখনও ভেবে দেখিনি। আমরা কিছুউঠতি বয়েসের ত্যান্দর ছেলেপেলে ডুব সাঁতার দিয়ে মেয়েদের অনেক সময় উত্যক্ত করতাম। কিন্তু সেটা নিয়ে কোন সালিস বা বিচার বসতো না। কারণ কোন কিছুই প্রচলিত গ্রাম্য সামাজিক প্রথা অনুসারে শালীনতার বাইরে ছিল না।

। তবে সব সময় লক্ষ্য করেছি মেয়েরা এমন সময় গোছল করতে আসতো যখন আমরা কেউ দীঘির ধারে কাছে থাকতাম না। আবার অনেক সময় দেখেছি কিছু কিছু মেয়ে ঘাটে এসে বসে থাকতো। আমাদের সামনে পানিতে নামতে লজ্জা করতো তাই আমরা চলে গেলে পর ওরা পানিতে নামতো। আমরা হয়তো দুষ্টুমি করে বেশীক্ষণ পানিতে থাকতাম।

চোখ লাল করে তারপর উঠতাম। দীর্ঘকাল যাবৎ এমনই হয়ে আসছিল। এখনকার কথা বলতে পারবো না। আচ্ছা আমার একটা কথার জবাব দেবেন কি আপনারা ? ধরুন বাংলাদেশের কোন এক অঞ্চলে এমনই 43 ডিগ্রী তাপমাত্রার প্রচন্ড গরম পড়েছে। গরমে ছেলে বুড়ো নারী শিশু সবাই অতিষ্ট।

অনেক মানুষ তাই কেউ বাধ্য হয়ে, কেউ মজা করে, কেউ প্রয়োজনের তাগিদে, কেউ গাত্র দাহ মেটাতে বা কেউ নিছক সাঁতার কাটতে বা কেউ গোছল করতে দীঘির পানিতে নেমেছে। সরকার থেকে ঐ দীঘিতে মেয়েদের গোছল করার ব্যাপারে বা সাঁতার কাটার ব্যাপারে কোনরকম বিধিনিষেধ জাড়ি করে নাই। অথচ কোন মেয়েই ইচ্ছাকৃত ভাবে হোক বা অনিচ্ছাকৃতভাবে হোক সেই দীঘির পানিতে গোছল বা সাঁতার কাঁটতে নামছে না। সেটা কি দোষের? নাকি আমাদের অতি উৎসাহ মেয়েদের পানিতে নামা নিয়ে? কোনটা ঠিক? এটা কেন হচ্ছে? আমরা কেন এভাবে ভাবছি? এর কারণ কি? কোন পারিবারিক বাঁধা? কোন সামাজিক বিধিনিষেধ? কোন সামপ্রদায়িক পরাকাষ্ঠা? কোন গোষ্টিগত নিষেধাজ্ঞা আরোপ? কোন কুসংষ্কার? কোন ধমর্ীয় অনুশাসন? কোনটা দায়ী? দেখা যাবে এর কোনটাই এককভাবে বা বিচ্ছিন্নভাবে মোটেও দায়ী না। দায়ী সম্পূর্ণ এলাকার মেয়েদের বা তাদের পরিবারের নিজস্ব মানসিকতা।

আসলে এখানে দায়ী কথাটা ব্যবহার করাও ভুল। এখানে দায়ী বা সামাজিক শৃঙ্খলতার কোন প্রশ্নই আসে না। আর সেটা সেটা একান্তই মানসিকতার ব্যাপার হলে তা কেউই কোনভাবেই রাতারাতি বা আইন করে বদলাতে পারবে না। তাহলে কেন আমরা অযথা একটা সিস্টেমকে দায়ী করে নিজেদের মন্ডুপাত করছি? মেয়েদের ব্যক্তিগত ব্যাপারগুলো মেয়েদেরকেই বুঝতে দেই না কেন? মেয়েরা কি কখনও দাবী তুলেছে আমাদের ঐ দীঘির পানিতে গোছল করতে দিতে হবে। আমরা ওদের ব্যক্তিগত শালীনতাবোধটুকু কেন হনন করতে চাইছি? ধিক্ আমাদের চিন্তা ও চেতনার পরাকাষ্ঠা।

সবকিছুই নিজের চোখ দিয়ে দেখতে চাই আমরা। একবারও ওদেরকে ওদের চোখ দিয়ে দেখতে দিতে চাইনা। আসলে দেখা যাবে ঐ এলাকার বাসিন্দারা এটাকে কোন আরোপিত বিধি নিষেধ ভাবছে না। এখানে একমাত্র প্রতিবন্ধকতা নারীদের ব্যক্তিগত অভিরুচি, পরিবারের শিক্ষা এবং তাদের নিজস্বগড়ে ওঠা মানসিকতা। তারা এভাবেই অভ্যস্তহয়ে আসছে দিনের পর দিন।

এমনও হতে পারে কোন মেয়ে যদি ইচ্ছাকৃতভাবে পানিতে নামেও গোছল করতে কেউ হয়তো সেটাকে কোন গুরুত্বই দেবে না। বা সমাজে এ নিয়ে কোন সামাজিক বা ধমর্ীয় দূষণ হচ্ছে এ কথা মাথায়ই আনবে না। আবার এমনও হতে পারে মেয়েরা ইচ্ছা করেই কখনও দীঘিতে নামবে না। এটা সম্পূর্ণ তাদের নিজেদের মনের খেয়াল। একান্তই নিজস্ব ইচ্ছা।

তাহলে এখানে আপনার বা আমার কী করনীয় থাকতে পারে ? আপনি বা আমি কী সমাজ সংস্কারের কাজে নেমেছি? নাকি জোড় করেই সব মেয়েদের গোছল করিয়ে ছাড়বো এটা ভাবছি? নাকি মেয়েদের সাথে দীঘিতে গোছল করতে কেমন লাগে সেটা দেখতে চাইছি? কোনটা? কি এর উদ্দেশ্য ? কেনই বা এই চিন্তাটা আমাদের মাথায় আসছে? মেয়েদের মনের ইচ্ছা অনিচ্ছা আমরা কেন গায়ে পড়ে নিজেদের কাঁধে তুলে নিচ্ছি? আমাদের উদ্দেশ্য যদি সৎ হয় তবে আমাদের উচিৎ তাদের কথা তাদেরকেই ভাবতে দেয়া। তাদেরকেই ব্যক্ত করতে দেয়া। আমরা কি ভাবছি সেটা কখনই মুখ্য বিষয় হতে পারে না। মেয়েদের নিজস্ব অনেক ভাবনা আছে সেটা ভুলে গেলে চলবে না। (লেখাটা তাড়াহুড়া করে শেষ করলাম।

আরও পরিশীন দরকার। পরে সময় পেলে ঠিক করবো)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।