যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে
অফিসের গাড়ী প্যাভিলিয়নের পথ ধরে পাঁচটা দশে। আমার দেরী হলে মাঝে মাঝে অন্য একটা গাড়ী পেঁৗছে দেয়। সে গাড়ীর ড্রাইভার ইসমাইলের সব সময় হাসি হাসি মুখ থাকে। আমাকে একদিন বলে স্যার আপনি গাড়ি চালাতে জানেন? আমি বলি না তবে আমি কেবল বাস চালাতে পারি। সে অবাক হয়।
বলে বাস চালিয়েছেন আপনি? আমি বলি হ্যা, দুলাভাইয়ের 32টা বাস ছিল - সেটা সামলিয়েছিলাম কিছুদিন - সে সুযোগে শিখেছি। সে বলে অসুবিধা নাই - কার চালানোটা আমি আপনাকে শেখাবো। আর যেহেতু বাস চালাতে পারেন, কার আপনি অল্পতেই শিখে যাবেন।
আমি তাকে বলি আমার দরকার নেই। সে বলে স্যার শুধু মানুষ মেরে পালানোর সাহস থাকলেই গাড়ী চালাতে পারবেন।
আমি বুঝি না তার কথা। মানে? মানুষ মারতে হবে? সে বলে, ঠিকই স্যার। কারণ যদি এঙ্েিডন্ট করেন তবে আপনাকে পালাতে হবে। ছেলেটিকে আমি মাত্র কয়েকদিন দেখেছি। প্রাণখোলা তার চলনবলন।
আমাকে দেখলে আরো বেশী প্রগলভ হয়ে ওঠে। আমি তাকে নিরাশ করি, দরকার নাই আমার গাড়ী চালানো শেখা।
সেদিন সকালে অফিসে ঢোকার পথে তার সাথে দেখা। চেহাড়ায় সেই ঔজ্বলতা আর নাই। যাকে দেখলে একটা সজিবতার ছোয়া পাওয়া যেত - তাকে কেমন ফ্যাকাশে লাগছে।
আমাকে দেখে দৌড়ে আসে। বলে, স্যার আমার চাকুরী চলে গেছে .. বরখাসত্দের নোটিস দিয়েছে। আমি বিশ্বাস করতে পারি না। বলি ক্যানো? সে বলে মাইলেজ অনেক বেশী হয়েছে বলে তার বস তাকে সন্দেহ করেছে - বসের ধারণা সে তেল চুরি করেছে। এডমিনকে বলেছে ইসমাইলকে বরখাসত্দ করে দিতে।
আমাকে ভেজা গলায় বললো, স্যার আমার কোন দোষ নাই। আপনি একটু যদি চেষ্টা করেন! আমি আশ্বাস দেই, দেখি কি করা যায়।
আমার বুকটা খচখচ করে। তার চাকুরী চলে যাবে বলে নয়। একটা মানুষের চেহাড়ার এমন র্যাডিকেল পরিবর্তন দেখে।
হাস্যজ্জ্বল একটা মুখ কেমন বিষন্নতার কালিতে লেপটানো। মাইলেজটা টেস্ট করার জন্য এডমিনকে অনুরোধ করি। তারপর ব্যসত্দতায় ভুলে যাই। বিকেলে যখন অফিস থেকে বের হচ্ছি তখন গেটে আবার ইসমাইলের সাথে দেখা। চেহাড়া দেখলেই বোঝা যায় - তার ফাঁিসর আদেশটা প্রেসিডেন্ট ক্ষমা করে দিয়েছেন।
হাসি হাসি স্বরে সে আমাকে বলে স্যার আপনার জন্য আমার চাকুরীটা এবার টিকে গেলো। আমি জিজ্ঞেস করি, তাহলে কি আর মানুষ মেরে পালানোর কথা চিনত্দা করবেন? সে বলে না স্যার। আমার শিক্ষা হয়ে গেছে। মিটারটা নস্ট ছিল। টেস্টের সময়ে মিটারে 5 কিলোমিটার রাসত্দা 80 কিলোমিটার উঠেছে।
গাড়ি চালাতে গিয়ে দূর্ঘটনায় মানুষ মেরে পালিয়ে যাওয়া আমার পক্ষে হয়তো সম্ভব হবে না। তাই একটা দূর্ঘটনায় ইসমাইলের চাকুরী চলে যাওয়াটাও আমি এড়াতে পারলাম না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।