আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যৌননিপীড়ন বিরোধি আন্দোলন

অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা

জাহাঙ্গির নগরের আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ততা ছিলো না তেমন একটা কারন হলো ভৌগলিক বিচ্ছিন্নতা আর অন্যটা হলো পকেটের সাস্থ্য, গাঁটের পয়সা খরচ করে দেশ উদ্ধারের বিলাসিতা ছিলো না আমার। তাই আন্দোলনের মোক্ষম মোক্ষম দিনে যাওয়া হয়েছে, অবস্থান ধর্মঘট ছিলো এক দিন, আমরা বন্ধুরা মধুর ক্যান্টিন থেকে রওনা দিলাম জাহাঙ্গির নগর, পুরাটাই আনন্দ, মিছিলে আমার কণ্ঠ খুব খারাপ, আমি বোবামুর্তির মতো মিছিলের সাথে সাথে হাটাহাটি করি, হাটাহাটি করার জন্য মিছিল ভালো জায়গা, একটা মহান উদ্দেশ্য সাধিত হচ্ছে সমস্ত মিছিলে এমনটাই বোধ হয় আমার। কিন্তু একই সময়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রিনিপীড়নের অভিযোগ আসলো। ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ের এই একটা বিভাগের একটা ব্যাচের অনেকের সাথেই আমার সম্পর্ক খুব ভালো, আমার প্রিয় কয়েকজন বন্ধু তখন সেখানে ছাত্র, ওদের বললাম এ ঘটনায় তাদের অভিমত। তারা সেই অভুযুক্ত শিক্ষকের প্রশংসা করলো, তাদের ধারনা এটা অন্য কোনো একটা রাজনৈতিক কুলচাল।

তাদের স্যারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম মিছিলটা করলো ছাত্রফ্রন্ট। নিতান্ত ছোটো মিছিল, ফ্রন্টের নিবেদিত ছাত্র কর্মির সংখ্যা ছিলো কম, আর তেমন বড় মাপের বিষয় না হলে শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরিন ছাত্রদের নিয়ে মিছিল হতো, বি এন পি বা লীগ যেমন আশেপাশের 2 /10 গ্রাম থেকে ছাত্র কিংবা সমর্থক এনে বিশ্ববিদয়ালয়ে মিছিল হাঁকায় তেমন চরিত্রহীন এই বামদলগুলো না, তারা নিজস্ব কর্মিদের নিয়ে মিছিল করে, আমার অন্য একবন্ধু তখন প=রগতির পরিব্রাজক দল সংক্ষেপে প্রপদের সাথে যুক্ত, সেখানেই এই বন্ধুর সুবাদে পরিচয় রুবেল বহি্ন সাকি সহ আরও কয়েকজনের সাথে, পরিসংখ্যানের এক ছেলে ছিলো যে পরে পপুলেশন সাইন্সে চলে গেলো, এমন সব পরিচিত মানুষের সংগঠন, তারা সপ্তাহে এক দিন পাঠচকড় করে, যদিও আমার নিজের কাছে বিষয়টা ভীষন রকম ন্যাকামি লাগে, বই পড়ে সেটা নিয়ে সাংসদিয় আলোচনা আমার পছন্দ না, তারাই একটা নির্দলীয় ছাত্রের ব্যানারে যৌনিপীড়নবিরোধি আন্দোলন করবে ঠিক হলো। প্রস্তুতি নেওয়ার কিছু ছিলো না,তারা এর পর একটা মিছিল দিলো, নির্দলীয় ব্যানারে যেনো সব মানসিকতার ছাত্র যোগ দিতে পারে, প্রথম মিছিলে হয়তো 25 থেকে 30 জন ছিলো, এদের বেশীর ভাগই প্রপদের এবং প্রপদের বাইরে ছাত্র ফেডারেশন আর বিপ্লবি ছাত্রমৈত্রি, আমি নিজেই প্রথম মিছিলে ছিলাম না, পরবর্তিতে প্রচারনা চললো, চললো সাখষর সংগ্রহ অভিযান, শালার মানুষ মজার, কেউ সাক্ষর দিতে চায় না, এটাও একটা লিখিত রেকর্ড, তারা প্রশাসনের অংশভুক্ত একজনের বিরুদ্ধে চেতনার কারনে প্রতিবাদের কাজে নু্যনতম সাহায্য সহযোগিতা করছে এটা প্রকাশিত হওয়ার সম্ভবনা ছিলো কম তার পরও সাক্ষর সংগ্রহের হার ছিলো কম, তবে রাকিব সমস্যায় পড়লো অন্য খানে, আমাদের ডিপার্টমেন্টের ছাত্ররা বেশ রসিক, রাকিবের আন্দোলনের আগ্রহ দেখে তার নতুন কিছু নিক নেম জুটে গেলো, নিপিড়ীত রাকিব, যৌন রকিব, দঃর্ষক রাকিব, যার যেই বিশেষন ভালো লাগে সেটাই দিয়ে দেওয়া, এবং অবশেষে যৌননিপীড়নবিরোধি আন্দোলনের কর্মি থেকে মধ্যাপদলোপি কর্মধারয় সমাস তৈরি হয়,মাঝহের সব শব্দবাদ দিয়ে রাকিবের পরিচয় হয়ে যায় যৌনকর্মি, এসব ঠাট্টা মশকরার মধ্যেও আমার মতো হকলা ঠাট্টাবাজ ছেলের সাথে রাকিবের সম্পর্ক ভালো। তারা যেহেতু একটা আন্দোলন করছে এবং পর্যাপ্ত মিছিল মিটিং উত্তেজনার সম্ভবনা তাই আমিও যুক্ত হয়ে গেলাম, অবশ্য সরাসরি মিছিল মিটিং এর সুযোগ থাকে না তেমন, তবে মিছিলের প্রাথমিক সময়টা ধার্য হয়েছিলো 1টার দিকে তখন কোনো ক্লাশ থাকে না, মিছিলে যাওয়া যায়, মিছইল শেষের জড়তা নিয়েই ভয়, কারন কলাভবনের মাঠে আড্ডার দুষিত জীবানু, গেলেই আমি থমকে যাই, প্রপদের লোকজন সব ধরনের রাজনৈতিক দলের বিরোধিতায় পড়লো এই আন্দোলনের ফলে। তখন দেশজুড়ে সুশীল সমাজের হৃদয়ের দাবি ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে হবে, সন্ত্রাস এবং ছাত্র রাজনীতি নিয়ে সুশীল সমাজের মনোভাব দুষ্ট গরুর চেয়ে শুন্য গোয়াল ভালো।

প্রপদের নির্দলীয় ব্যানারের গ্রহনযোগ্যতা সুশীল সমাজে বেশ ভালো হলো, প্রথম মিছিল থেকেই মিডিয়া কভারেজ ভালো ছিলো, পরবর্তি দিনগুলোতে আরও ভালো মিডিয়া কভারেজ পেলো, আমার অভিমত ছিলো এটা সাময়িক একটা বিচু্যতি, প্রথমেই আন্দোলনের অরাজনৈতিকতা চাইলো সাধারন ছাত্রছাত্রিরা, তাদের দেওয়ার মতো একটাই জবাব ছিলো এটা নৈতিক অবস্থানের প্রশ্ন, যারা সমর্থন করছে এবং যারা করছে তাদের সবার উদ্দেশ্যে একটাই কথা বলার ছিলো আন্দোলন জনসমর্থন সম্পুর্নটাই একটা রাজনৈতিক প্রক্রিয়া, নির্দলীয় ছাত্রের ব্যানারে যেটা হচ্ছে সেটাও একটা রাজনৈতিক আন্দোলন অন্য সব দলীয় আন্দোলনের সাথে এটার মৌলিক পার্থক্য এখানের নেতৃত্ব নিয়ে টানাহ্যাচরা, শোম্যানশিপ নেই, এটা একদল মানুষের প্রতিরোধ যাদের নৈতিক অবস্থান তাদের প্রতিরোধ করতে বাধ্য করছে, প্রথম মিছিলের 25 জনকে তেমন আমল দেয় নি লীগ দল ফ্রন্ট ইউনিয়ন, অবশ্য প্রথম নির্দলীয় ব্যানারে নাম লেখানোর সাহস করেছিলো ইউনিয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেডারেশন আরছাত্রমৈত্রি আগেই এটার অংশ কারন তাদের প্রায় সবাই প্রপদের সাথে যুক্ত, িউনিয়ন আসার পর মিছিলের জনসমাগম বাড়লো সামান্য, তৃতীয় দিন বোধ হয় প্রথম ঢিল ছোড়ার ঘটনা ঘটলো, আমি সেই মিছিলে ছিলাম না, সমর্থন জানানোর জন্য রিকশা নিয়ে সেন্টরাল লাইব্রেরিতে পৌছানোর আগেই মিছিল শুরু হয়েছিলো, আমি সামনের চায়ের দোকান থেকে দেখলাম লীগের কয়েকজন ঢিল ছুড়ছে, পাঠি হাতে তাড়া করছে, যেহেতু প্রথম দিকে বলা হয়েছিলো মানে এটা কোনো শক্তপ্রতিরোধ হবে না, আমরা সন্ত্রাসের জবাবে সন্ত্রাস করবো না, অযথা আহত হওয়ার ঝুঁকি নেওয়া যাবে না, বরং একটু কিলঘুষি হজম করলে সাধারন ছাত্রের মধ্যে গ্রহন যোগ্যতা বাড়বে, এক জনের মাথা কেটে গেলো, সেই ছবি 4 জন সাংবাদিক তুললো, আন্দোলনের সহিংসতার ফলে আরও বেশি বেগবান হলো আন্দোলন, এর পর আর কি, লীগ বি এনপি এখানে যুক্ত হবে না, লীগের কর্মিদের কেউ কেউ সমর্থন করলেও তারা দলীয় ব্যানার থেকে বের হয়ে আসবে না, নৈতিকতার দোহাই দিয়েও এটা সম্ভব নয়, তাই বিকল্প ঐক্য হলো বামমনাদের এবং সাধারন ছাত্রদের অংশগ্রহন,গানতান্ত্রিক ছাত্রঐক্য বলে একটা ফর্মা ছিলো, একটা শিক্ষা আন্দোলনের সময় এই ফর্মাটা গঠিত হয়, তারা এসে অনুরোধ করলো, জনসমর্থন গড়ে উঠেছে এখন আন্দোলনের নেতৃত্ব দিবে সংগঠিত শক্তি, কিন্তু মূল সমস্যাটা ছিলো এখানেই, নির্দলীয় ছাত্রের ব্যানারে এই ঐক্যবদ্ধ শকতিকে আসতে হবে, এই ব্যানারে মিছিল করতে হবে এই ছিলো দাবি, তারা রাজি হয় নি প্রথম দিন, ফ্রন্টের ফ্রন্টম্যান তখন তপন ভাই, নূরল ইসলাম তখন কেন্দ্র ীয় ছাত্রনেতা, তারা এসে একদিন রাকিবদের সাথে আলোচনায় বসলো, তাদের কথা আরও মজার, এই নিয়ে প্রথম মিছিলটা আমরা করেছি, তাই জেষ্ঠতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব আমাদের দাও, একই কথা তাদেরও জানানো হলো, এইটার নেতৃত্ব দিবে নির্দলীয় ছাত্রের ব্যানারে প্রপদের লোকজন, এটা মানলে তারা মিছিলে অংশগ্রহন করতে পারবে নচেত নয়, এবং প্রতিরোধের মাত্রাও বাড়লো, ঢিল ছওড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো না, তখন লাঠি হাতে ঝাপিয়ে পড়া, কয়েক জন পিট্টি খেলো মিছিল করতে গিয়ে, এই একটা ইসু্য বিএনপি লীগের আপাত বৈরিতা ভুলিয়ে দিয়ে তাদের ঐক্যবদ্ধ করেছিলো, তাই লীগের মস্তান আর বিএনপির মস্তান এক হয়ে লাঠি নিয়ে লৌড়ালৌড়ি করতো , অবশেষএ কুইনাইন গেলার মতো বাম মনাদের সবাই একটা কমন প্লটফর্মে এসে প্রপদের লোকজনের নেতৃত্বে আন্দোলনে যোগ দেয়, পরবর্তিতে সংগঠিত শক্তি বাড়ায় নির্দলীয় ছাত্রেরাও একদিন লীগের ক্যাডারদের ধাওয়া দিলো, কুশপুত্তলিকা দাহ হলো, এবং এত দিন পর কতৃপক্ষের টনক নড়লো অবশেষে, তদন্ত কমিটি গঠিত হলো, তদন্ত রিপোর্ট পেশ করা হলো সেই শিক্ষককে বহিস্কার করা হলো, অবশ্য এর পরে শাস্তির মেয়াদ কাটিয়ে আবার সেই শিক্ষক যোগদান করেন, অন্য একটা প্রতিরোধ আন্দোলন হয় এইটার জন্য, সেই যৌননিপীড়ন বিরোধি আন্দোলনের প্রভাবেই হোক বা অন্য কোনো কারনেই হোক, সূর=যাস্ত আইন বাতিল হয়, মেয়েদের হলের গেট খোলা থাকতো এর পর রাত 9টা পর্যন্ত, ক্ষেত্র বিশেষে 9টা 30। এই একটা আন্দোলনের সুযোগে পরবর্তিতে আমরা রোকেয়া আর শামসুন্নাহারের সামনে দি িব্য আড্ডা দিয়েছি 9টা পর্যন্ত,

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.