অবিভক্ত বাংলার গভর্নর লর্ড টমাস ডেভিট ব্যারোন কারমাইকেলের নামানুসারে কলেজটির নামকরণ করা হয়। লর্ড ব্যারোন ১৯১৬ সালের ১০ নভেম্বর কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। অক্সফোর্ড ভিলেজের আদলে ৯০০ বিঘা জমির ওপর ইন্দোস্যারাসেনিক ভাস্কর্যে নির্মিত হয় এর মূল ভবন। ১৯১৭ সালের জুলাইয়ে রংপুর জেলা পরিষদ ভবনে কলেজের প্রথম শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন ড. ওয়াট কিন্স।
১৯১৭ সালের জুলাই মাসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজটিতে আইএ এবং বিএ ক্লাস খোলার অনুমতি প্রদান করে। ১৯২২ সালে লর্ড লিটন কলেজটি পরিদর্শনে এসে আইএসসি ক্লাস খোলারও অনুমতি প্রদান করেন। ওই সময় জলপাইগুড়ি, কুচবিহার, আসাম, ময়মনসিংহের জামালপুর এলাকা এমনকি বিহার থেকেও শিক্ষার্থীরা পড়তে আসত এই কলেজে। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত কলেজটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিল। ১৯৪৭-১৯৫৩ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৫৩-১৯৯২ সাল পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়।
আর ১৯৯২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়।
প্রতিষ্ঠার ৯৭ বছরে দাঁড়িয়ে কলেজটিতে ১৭টি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স শ্রেণী এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ২৭ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। রত্নগর্ভা এই কলেজ জন্ম দিয়েছে অনেক খ্যাতিমান খ্যাতিধন্য ছাত্র-ছাত্রীর। অসংখ্য মেধাবী শিক্ষার্থী এই প্রতিষ্ঠান থেকে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল লাভ করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাদত মোহাম্মদ সায়েম ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
আছেন প্রয়াত সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমান। কেউ কেউ সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রী, সচিব, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও শিক্ষকসহ বিভিন্ন উচ্চতর পদে অভিষিক্ত হয়েছেন। এ ছাড়া চিকিৎসক, প্রকৌশলী, বৈজ্ঞানিক, রাজনীতিক, শিল্পী, সাহিত্যিক, ক্রীড়াবিদ, ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকসহ সামরিক-বেসামরিক পেশায় মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন অনেকেই। এদের মধ্যে রয়েছেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আনিসুল হক, প্রয়াত চারণ সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিন, ব্যবসায়ী নেতা আনিসুল হক, জাতীয় ক্রীড়াবিদ কামরুন নাহার ডানা।
শুধু প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি অর্জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি এই কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের কৃতিত্ব।
তারা বিভিন্ন আন্দোলন, সংগ্রাম, সংকটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কলেজের সুনাম বৃদ্ধি করেছেন। মহান ভাষা আন্দোলনে এই কলেজের ছাত্র-শিক্ষকদের ভূমিকা আজও স্মরণীয় হয়ে আছে। ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কলেজের মূল ভবনের সামনে নির্মাণ করা হয় শহীদ মিনার।
মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এই কলেজের অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে হানাদার বাহিনীর হাতে প্রাণ দিতে হয়েছে। বর্তমানে ২৭ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ৮০টি শ্রেণী কক্ষের প্রয়োজন।
কিন্তু তিনটি ভবনে শ্রেণীকক্ষ রয়েছে ৬০টি। লাইব্রেরিতে ৯০ হাজার বই থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি। ২০৭ জন শিক্ষকের মধ্যে ২৩ জনের পদ শূন্য।
কলেজ প্রশাসনিক ভবনের সামনে নির্মাণ করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য 'প্রজন্ম'। জামায়াতপন্থি শিক্ষক ও ছাত্রশিবিরের বাধার মুখে ভাস্কর্যটির নির্মাণ কাজ ১২ বছর কাজ বন্ধ ছিল।
ভিত্তিপ্রস্তরের পরপরই সেটি ভেঙে দেয় শিবিরের নেতাকর্মীরা। ২০১১ সালে তৎকালীন অধ্যক্ষ ভাস্কর্যটি নির্মাণ করতে সক্ষম হন।
শান্ত পরিবেশে উন্নতমানের পাঠদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি জাতীয় পর্যায়ে বেশ কয়েকটি পুরস্কার লাভ করেছে। এর মধ্যে ১৯৮৯ সালে কলেজটি রাজশাহী বিভাগীয় শ্রেষ্ঠ কলেজের পুরস্কার, ২০০২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার, ২০০৪ সালে জাতীয় শিক্ষা দিবসে জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং জাতীয় শিক্ষা-সপ্তাহ উপলক্ষে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুরস্কার লাভ করে।
কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ শাহ মোকসেদ আলী বলেন, কারমাইকেল কলেজের মতো ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করতে পেরে নিজেকে গর্বিত ও ধন্য মনে করছি।
কলেজটিকে তিনি একটি আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়তে চান। এ জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।