আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘বিশৃঙ্খলাকারীদের ধরতে গার্মেন্টে সোর্স নিয়োগ’

একইসঙ্গে যারা কাজ বন্ধ রেখে ন্যূনতম আট হাজার টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলন করছেন, মঙ্গলবার থেকেই তাদের কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।   
সোমবার টানা তৃতীয় দিনের মতো বিভিন্ন স্থানে শ্রমিকদের অবরোধ ভাংচুর চলার মধ্যেই সচিবালয়ে মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করার পর শাজাহান খান এই আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, শ্রমমন্ত্রী দেশের বাইরে থাকায় তাকে এ বৈঠক করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তবে শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো আশ্বাস তিনি দেননি।
প্রায় তিন ঘণ্টার বৈঠক শেষে শাজাহান খান সাংবাদিকদের বলেন, “যেসব কারখানায় অস্থিরতা চলছে, আমি তাদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।


“শ্রমিক, মালিক ও সরকারের পক্ষ থেকে আমরা আগামীকাল (মঙ্গলবার) থেকে তাদের কাজে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। এরপরও যারা কাজে যাবেন না, তারা আমাদের কেউ না। তারা কারখানা বন্ধের ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। ”
মালিক-শ্রমিকদের পক্ষ থেকে পোশাক কারখানায় কিছু ‘শ্রমিক’ নিয়োগ দেয়া হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, যারা ‘গণ্ডগোল’ করবে, তাদের সনাক্ত করাই হবে এদের কাজ।
ইতোমধ্যে কিছু কারখানায় ‘এ ধরনের শ্রমিক’ নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।


গার্মেন্ট শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক শাজাহান খান বলেন, পোশাক শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর বিষয়টি এ সংক্রান্ত মজুরি বোর্ড ‘সময়মতোই’ ঘোষণা করবে।
“আমরা তাদের স্বল্পতম সময়ের মধ্যে নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণার অনুরোধ করেছি। ”
পোশাক কারখানা নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে দাবি করে নৌমন্ত্রী বলেন, ১৫ জন পোশাক শ্রমিক ও ১২ জন পুলিশকে মৌলবাদীরা হত্যা করেছিল। এখন তারাই শ্রমিক হত্যার ‘গুজব’ ছড়াচ্ছে।
“এরা ভয়ঙ্কর জীব।

এদের প্রতিহত করতে হবে। ”
পোশাক কারখানার নারী শ্রমিকদের ‘গৃহবন্দি করার ষড়যন্ত্র’ রোধ, ‘বাঁচার মতো’ মজুরি নির্ধারণ, পোশাক খাতে জ্বালাও-পোড়াও ও ভাংচুর বন্ধ করা এবং সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভুদ্ধ করতেই গত শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শ্রমিক মহাসমাবেশ করা হয়েছে দাবি করে শাজাহান খান বলেন , ওই মহাসমাবেশকে ঘিরে ষড়যন্ত্রও হয়েছে।
“মাওলানারা মহাসমাবেশ নিয়ে মসজিদে মন্তব্য করেছেন। মৌলবাদী শক্তি এ নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছে। এর দায় শ্রমিক-মালিকরা বহন করতে পারে না।


আট হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরির দাবিতে গত তিন দিন ধরে গাজীপুর, সাভার ও রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ-অবরোধ চালিয়ে আসছে।
তাদের অবরোধের কারণে সোমবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কে প্রায় তিন ঘণ্টা এবং সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ঘণ্টাখানেক যান চলাচল বন্ধ থাকে।
শ্রমিকরা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে যান চলাচল বিঘ্নিত হয় রাজধানীর নাবিস্কো মোড় ও মহাখালী এলাকাতেও।
গাজীপুরে একটি আনসার ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে আটটি রাইফেল লুটের পর চারটি ভেঙে পুড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা।
বিশৃঙ্খলা এড়াতে গাজীপুর ও সাভারের দেড় শতাধিক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।


এই পরিস্থিতিতে কারখানা খোলা রাখার জন্য সরকারের কাছে নিরাপত্তা চান তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এস এ মান্নান কচি।
জবাবে নৌমন্ত্রী সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের নিরপাত্তা দেয়ার আশ্বাস দেন।
তিনি বলেন, “বাইরের লোক দিয়ে বিশৃঙ্খলা শুরু করে সেখানে শ্রমিকদের উস্কে দেয়া হয়েছে। শ্রমিক-মালিকরা ষড়যন্ত্র করেছে এর কোনো প্রমাণ পাইনি। তবে পরিস্থিতি ভয়াবহ করার চেষ্টা চলছে।


স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সব কারখানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, যারা বিশৃঙ্খলা করেছে তাদের চিহ্নিত করে এরা ব্যবস্থা নেবে।
কচি বলেন, “আমরা কখনোই উৎপাদন বন্ধ রাখতে চাই না। শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাক তাও চাই না। তবে ঈদের আগে কারখানা বন্ধ থাকলে বেতন দিতে কষ্ট হবে। শ্রমিকরা ভালভাবে ঈদ করতে পারবে না।

আমরা গার্মেন্ট বন্ধ করিনি, বন্ধ করবও না। ”
পোশাক কারখানা খোলা রাখার ব্যাপারে শ্রমিকদের কাছেও সহায়তা চাওয়া হয়েছে বলে জানান কচি।
এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, মুজরি বোর্ড ‘যৌক্তিকভাবে’ বেতন বাড়ানোর যে সিদ্ধান্ত দেবে- বিজিএমইএ তা মেনে নেবে।
গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নেতা মণ্টু ঘোষ বলেন, তারা শ্রমিকদের পক্ষ থেকে আট হাজার একশ টাকা বেতন নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন। তবে পোশাক কারাখানার মালিকরা মাত্র ৬০০ টাকা বেতন বাড়ানোর কথা বলেছেন।


“আট হাজার টাকা বেতনের দাবিতে শ্রমিকরা আন্দোলন করতেই পারেন। তবে ভাংচুর করে কারখানা বন্ধ করে দিতে পারেন না। ”
আর আন্দোলনের বিষয়ে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, এর দায়-দায়িত্বও সংগঠনগুলো নেবে না।
বিভিন্ন স্থানে ভাংচুরের পেছনে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য’ থাকতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করে এই শ্রমিক নেতা। পোশাক কারখানায় ভাংচুর না করতে শ্রমিকদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।


এর আগে বেলা ১২টায় বৈঠকের শুরুতে নৌমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “কোনো না কোনোভাবে কেউ বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে এ কাজ করাচ্ছে। কখনো কোনো শ্রমিক গার্মেন্টস ভাঙতে পারেন না। নিজে যে ঘরে থাকে সে ঘরে কেউ আগুন দিতে পারে না। ”
তিনি বলেন, পোশাক শ্রমিকদের দাবি ন্যূনতম বেতন আট হাজার একশ টাকা করতে হবে। আর মালিকরা দিতে চায় ৩ হাজার ৬শ টাকা।

কোনো দাবিই ঠিক নয়। আমরা সবাইকে নিয়ে বৈঠক করে বিষটি চূড়ান্ত করব। তবে সবাইকেই ছাড় দিতে হবে।
শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে এই পরিবহন শ্রমিক নেতা বলেন, “কোনো তথ্যে আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না। পোশাক কারখানায় জ্বালাও-পোড়াও ভাংচুর করে বিষয়টিকে ভিন্নখাতে নেবেন না।


অন্যদের মধ্যে শ্রম সচিব মিকাইল শিপার, সাংসদ টিপু মুন্সি, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সালাম মুর্শেদী, জাতীয় শ্রমিক জোটের সাধারণ সম্পাদক নাইমুল আহসান জুয়েল, সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার, গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি জাহানারা বেগম ছাড়াও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
গত মে মাসে পোশাক শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাড়াতে মজুরি বোর্ড গঠন করে সরকার।
পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ ন্যূনতম বেতন তিন হাজার ৬০০ টাকা করার প্রস্তাব করেছে। তবে এ শিল্পের শ্রমিক সংগঠনগুলো আট হাজার টাকা করার দাবি জানিয়ে আসছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও চেয়েছে তারা।


সরকারের মজুরি বোর্ড ইতোমধ্যে উভয়পক্ষকে নিয়ে কয়েকটি বৈঠক করলেও কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি।

সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.