আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হোক কলরব, ফুলগুলো সব, লাল না হয়ে... ... ...

১। সাময়িক জর্মন প্রবাসী হয়রানাবীরের বিবাহ হল সেই গত বছর। স্বামীপ্রবর তো গবেষণা নিয়েই ব্যাস্ত, ওইদিকে তার বৌয়ের ‘নাই কাজ তো খই ভাজ’ অবস্থা। এখন সে রাত-বিরাতে বিবাহানুষ্ঠানের এটেন্ডেন্স খাতা নিয়ে রোলকলে ব্যাস্ত। কালকে রাত সাড়ে তিনটায় হঠাত আমারে জিজ্ঞাসা করে আমি তাদের বিয়াতে গেছি কিনা।

আমার নাকি ফোটুক পাওয়া যাচ্ছে না। বললাম- ৯ মাস আগের কথা তো আমারই মনে নেই। কাহিনি এইখানে শেষ হইলে সমস্যা ছিলনা- কিন্তু, ‘৯ মাস’ কথাটা মনের মধ্যে আটকায় গেল। শাহবাগী নাস্তিক ব্লগার তো, ৯ মাস শুনলেই আগে খালি মুক্তিযুদ্ধ মনে পড়ে। ৩০ শুনলে মাসের আগে লাখের হিসাব মাথায় আসে।

৭ শুনলে ভাগ্যের আগে মার্চের কথা মাথায় আসে। ১৪ কিংবা ২৫ শুনলে... নাহ, থাক- মাথা গরম হয়ে যাবে।
২। সপ্তাহে এক বা দেড়দিন বাসায় থাকলে আমার পদবী হয়- “পারিবারিক আইটি উপদেষ্টা”। এই বুইড়াকালে বাপ-মা দুইজনেরই ইমেইল আইডি খুলে দিয়েছি।

দুইজন সেটা আবার মহা উতসাহে ব্যাবহারও করে। গতমাসে দিলাম খুলে ফেসবুক। সপ্তায় সপ্তায় রিভিশন ক্লাস নিতে হয় অবশ্য। জিমেইল আর ফেসবুকও আবার হাড় বজ্জাত। দুইদিন পরপর চেহারা বদলায়।

আর বাপরে বুঝাইতে জানটা বের হয়ে যায় যে আমি কোনও মাতব্বরি করে রাখি নাই। সে যাক, এই বয়সেও উনাকে নতুন জিনিস শিখে হজম করে ফেলতে দেখে ভালই লাগে। কিন্তু মুশকিল হল গত সপ্তায়। আব্বার নতুন শখ জাগছে ব্লগ নিয়ে। ভাবছি এইবার উল্টাপাল্টা লেখা ছাড়ান দিয়ে শিশুতোষ লেখা শুরু করব।


৩। মর্ম ভায়ার “সচলপাঠ” আর জোহরাপার "সচলায়তন, রবীন্দ্রনাথ ও জননীদের গল্প” পড়ে মাথামুথা হ্যাং হয়ে আছে। আগে মনমেজাজ খারাপ থাকলে একেকদিন একেকজনের সচলগে ঢুকে পুরানো লেখা পড়তাম। এই দুই লেখা পড়ে একেবারে পাগলের হাতে ভাইব্রেটর ধরায় দিলে যেই অবস্থা হবে, একেবারে সেই অবস্থায় আছি। এর ভাল খারাপ দুইটাই আছে।

ভাল হল যে পুরা সচলের ট্রাভেলগাইড পেয়ে গেছি। আর খারাপ হল এত্ত এত্ত ভাল লেখকের লেখা পড়ে বড্ড সঙ্কুচিত বোধ করছি। আমার অবস্থা এখন “বাঙ্গালীর হাসির গল্পের” সেই নাপিতের মত। যদ্দিন বেচারা ডাক্তারীবিদ্যার কিছু জানতনা, তদ্দিন বেশ করে ঘ্যাচাং-ঘ্যাচাং ফোড়া কেটে ফেলত। কিন্তু ডাক্তারীবিদ্যা শিখেই শুরু হল হাত কাঁপাকাঁপি।

আগে কীবোর্ড হাতে নিলেই গোলামাজম নয় আইনস্টাইনের গুষ্টি উদ্ধার করতে ভয় লাগতনা। কিন্তু এখন একটু হাত কাঁপছে বৈকি।
৪। দুপুরে ঘুম তাড়াতে ‘আকবর আলী খান’ এর একটা বই পড়ছিলাম। অর্থনীতির গল্প ভাঁজতে গিয়ে তিনি যেভাবে রবিঠাকুর-মুজতবা আলী থেকে শুরু করে মোল্লা নাসিরুদ্দিনকে টেনেছেন তা রীতিমত ইর্ষনীয়।

ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হল- এই করতে গিয়ে মূল কথার নড়চড় হয়ে যায়নি। ছোটবেলায় আব্বা ঠিক তাই করতেন- গল্প বলতে বলতে ইতিহাস আর রাজনীতি বেশ করে গুলে খাওয়াতেন, আম্মা খাওয়াতেন বিজ্ঞান আর অংক- অথচ মনে হত বেশ গল্প শুনছি। নিখাদ গল্প শুনতে শুনতে মূলকথাটা ঠিকই মাথায় গেঁথে যেত। বহুদিন পর ক’দিন আগে দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের ‘যে গল্পের শেষ নেই’ আর আব্দুল্লাহ-আল-মূতী’র ‘এসো বিজ্ঞানের রাজ্যে’ আবার পড়তে গিয়েও ঠিক একই অনুভূতি হল। আহ, দুনিয়াটা কেবল গল্পময় হত।


৫। সালাম আজাদের একটা বইয়ে পেলাম- “রবীন্দ্রনাথের অনেক গানেরই জন্ম হয়েছে বাথরুমে”। তিনি কবিগুরুকে উদ্ধৃত করেছেন- “নাবার ঘরে গান তৈরি করবার বেশ কতকগুলো সুবিধে আছে। প্রথমত নিরালা। দ্বিতীয়ত অন্য কর্তব্যের কোন দাবী থাকেনা।

মাথায় এক টিন জল ঢেলে পাঁচ মিনিট গুনগুন করলে কর্তব্য জ্ঞানে বিশেষ কোন আঘাত লাগেনা। সবচেয়ে সুবিধা হল যে- কোনও দর্শক সম্ভাবনা না থাকায় সমস্ত মন খুলে মুখভঙ্গি করা যায়। মুখভঙ্গি করতে না পারলে গান তৈরি করবার পুরো কিছুই যেন আসে না। ” আমি হাজার হলেও রবিবাবুর বিমুগ্ধ পাঠক তো। বাথরুমে বিকট মুখভঙ্গি করার অভ্যাস তাই পুরোমাত্রায়ই আছে।

আজকে আরো বেশিই হল। ঝোলানো তোয়ালেটা দেখে প্রথমে তিলোত্তমার সুরক্ষিত প্রাসাদে তোয়ালে পরিহিত তারেকাণুর ছবিটা মনে ভেসে উঠল, সেখান থেকে তেজসৃপ, তেজসৃপ থেকে রুপকুকথা। ঠিক তখনই, হঠাত বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত আঘাত করল ভাবনা- দ্য আইডিয়া।
৬। সম্প্রতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) কোর্সে “বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস” শীর্ষক একটা আবশ্যিক কোর্স যুক্ত হতে যাচ্ছে।

অতি উত্তম প্রস্তাব। কিন্তু শিক্ষক/শিক্ষার্থীদের সিংহভাগ ব্যাপারটা ভালভাবে নেননি। কারণ ইতিহাস জিনিসটা অনেকের কাছেই পাঠ্য হিসেবে বেশ বিরক্তিকর রকটা জিনিষ। ইতিহাস মানেই শায়েস্তা খাঁর আমল, মোগলাই বাদশাদের কাজকারবার, বক্তিয়ার খলজীর বাংলা বিজয়, নবাব সিরাজ আর মীরজাফর... সর্বোপরি বিশ্লেষণ বিহীন একগাদা নাম আর সাল। অবশ্য হবে নাই বা কেন? যেখানে পদার্থবিদ্যার প্রশ্ন হয়- “মহাকর্ষ ধ্রুবক ‘G’ এর মান তিন দশমিক স্থান পর্যন্ত মুখস্থ লিখ” কিংবা রসায়নের প্রশ্ন হয়- “এভোগেড্রো সঙ্খ্যার মান মুখস্থ লিখ” সেখানে ইতিহাসের এমন ব্যাবহার মোটেই অসংলগ্ন নয়।

আনন্দের ব্যাপার হল জাফর স্যার, কায়কোবাদ স্যারদের গনিত অলিম্পিয়াডের ফলে রাতারাতি পরিস্থিতি পালটে না গেলেও খুব ধীরে ধীরে বিজ্ঞানবিমুখ একটা প্রজন্মের মাঝ থেকে একটা বিজ্ঞানপিপাসু অংশ তৈরি হচ্ছে, হয়ত অনেকটা হয়েও গেছে। ফলাফল হল বাজারে এখন যথেষ্ট না হলেও কিছু পরিমানে গনিত ও বিজ্ঞানের জনবোধ্য বই পাওয়া যায়, কারন তার ব্যাবহারকারী আছে। নজরুল ভাইয়ের এই পোস্টটা পড়ে মনে হয়েছিল, গনিত অলিম্পিয়াডের পর বোধ হয় আরেকটা প্যারাডাইম শিফট হতে যাচ্ছে।
৭। আসল কথাটা কিন্তু এখনও বলতেই পারিনি।

হাফডজন আপাত উল্টাপাল্টা বকবকানি শেষে এবার লাইনে আসি। আমাদের এই সচলে এত্ত এত্ত লেখক, গবেষক, বিজ্ঞানলেখক, ছড়াকার, গল্পকার, কার্টুনিস্ট, চিত্রশিল্পী, বিশ্লেষক, ইতিহাসবিদ ইত্যাদি ইত্যাদি আছে। আমরা কি ছড়া, রুপকথা এবং কমিকের আদলে আমাদের ইতিহাসের ঘটনাগুলো লিখে ফেলতে পারি? একদম বাচ্চাদের জন্য। ‘হাম্পটি ডাম্পটি স্যাট অন এ ওয়াল’ বাদ দিয়ে তাদের ছড়া শেখার শুরুটা তো হতেই পারে মুক্তিযুদ্ধের একটা দুর্দান্ত ছড়া দিয়ে। বাবা-মায়েরা বাচ্চাকে ঘুম পাড়াতে ডালিমকুমারের পাশাপাশি শোনাতে পারেন মুক্তিযুদ্ধের নায়কদের নিয়ে লেখা চমৎকার একটা রুপকথা।

স্পাইডারম্যানের বদলে সদ্য পড়তে শেখা বাচ্চাদের হাতে উপহার হিসেবে তুলে দেয়া যেতে পারে মুক্তিযুদ্ধের রংচঙে কমিক (মেজর কামরুল হাসান ভুঁইয়ার ‘সেন্টার ফর লিবারেশন ওয়ার স্টাডিজ’ ইতোমধ্যে এমন কয়েকটি কমিক প্রকাশ করেছে)। অর্থাৎ, ইতিহাস পুরোটাই থাকল, কিন্তু বাচ্চাদের রসগোল্লায় ভরে ওষুধ খাওয়াবার মত। এই বাচ্চারা যখন বড় হবে তখন দেখা যাবে সেই কালের “কাদের মোল্লারা” ভি দেখানোর সাহস পায় কিনা।
আরো উন্নততর আইডিয়ার জন্য মন্তব্যের আশায় রইলাম। চিন্তায় কোন ভুল-চুক থাকলে সেটাও চিহ্নিত করুন হাত খুলে, কীবোর্ড তো সামনেই আছে।

সবাই রাজী থাকলে শিশুদের জন্য হাঁ বলুন- নইলে আমি একাই শুরু করে দেব কিন্তু।

সোর্স: http://www.sachalayatan.com/     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।