আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লিগামেন্ট-ছেঁড়া হাঁটু

আজ থেকে প্রায় বছর দুয়েক আগেকার ঘটনা। ফুটবল খেলতে গিয়ে এক বন্ধুর পায়ের সাথে বেধে মাঠের মধ্যে সাত/আটটি গড়াগড়ি খেলাম। তখনও বুঝতে পারি নি আমার হাঁটুর লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেছে। বুঝলাম তখন যখন ঢাকার পিজির অর্থোপেডিক্স বিশেষজ্ঞ আমাকে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেছিল। তিনি তখন অপারেশনের জন্য প্রস্তুত নিতে বলেছিলেন।

আমি পাত্তা দিই নি। এমন হাজারও বিষয় রয়েছে, যা আমাদের মত সাধারণ মানুষরা সাধারণত পাত্তা দেয় না। কিন্তু ডাক্তার সাহেব তখন আমাকে কিছু ট্যাবলেট লিখে দিয়েছিলেন। আমি ভক্তিসহকারে ওগুলো গ্রহণ করেছিলাম। কারণ, যদি অপারেশনের বিকল্প হিসেবে ওষুধগুলো কাজ করে।

কিন্তু “সকাল আমার হল মিছে, বিকেল যে যায় তারই পিছে”। দিনগুলো এভাবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে লাগল। সেই বন্ধুর সাথে দেখা হল যখন বাড়ি গেলাম। আমি ল্যাংড়া ভিখারির মতোই হাঁটতে লাগলাম তার সাথে সাথে। প্রথমে কিছুই কথা হয় নি এ ব্যাপারে।

আমিও বলতে চাইনি লজ্জা পাবে বলে। পরে নিজে থেকেই জিজ্ঞেস করল। শেষে বলল, আমার কারণেই আজ তোমার এ অবস্থা। আমি শুধু বললাম, না না, মানুষের জীবনে দুঃখ আসে কাউকে দায়ী করে নয়। এর জন্য দায়ী থাকে সে নিজেই।

আসলে ও অনেক মর্মাহত ছিল আমার জন্য। কারণ ও জানত, আমাদের পারিবারিক অবস্থা। তাছাড়া এতটা সিরিয়াস হবে ভাবতে পারেনি কেউ। এমনকি প্রথমে আমি নিজেও সাধারণ মস্কানো ব্যথার মতোই ভেবেছিলাম। এভাবে যেই শুনে সেই সমবেদনা জানায়।

আমার তখন মনে মনে ভালই লাগে, যদিও জানি আমি কখনো অপারেশনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারব না। অন্ততপক্ষে, ছাত্রাবস্থায় তো নয়-ই। তবু দু একজনের সমবেদনা পেলে মনটা আহ্লাদিত হয়ে উঠত। একটা সময় লক্ষ করলাম, আমার হাঁটুতে কোনো ব্যথার অস্তিত্ব নেই! আল্লাহর নিকট অনেক শুকরিয়া আদায় করলাম। আমি আগের মতো স্বাভাবিক মানুষের মতো আবার হাঁটতে পারছি।

এভাবে কাটল প্রায় এক বছর- কিছু কম হবে বৈকি। এক দিন সন্ধ্যাবেলা হঠাৎ করে কট্ করে উঠল হাঁটুর মধ্যে। কিছুক্ষণ স্থির হয়ে রইলাম। যখনই পা-টা সোজা করতে যাব অমনি বুঝতে পারলাম, যে-প্রত্যাশা আমি এতদিন যাবত লালন করছি সেটা অলীক মাত্র। পুরোনো ব্যথা আবার মাথাচারা দিয়ে উঠল।

দ্বিগুণ অসহনীয়তা নিয়ে আকাশের কালো অন্ধকারগুলো যেন আমাকে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরল। আমি চোখ বুঝে সব টের পেলাম, কিন্তু কাউকে বলার মত কোন ভাষা খুঁজে পেলাম না। আবার দিনগুলো চলতে লাগল খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। এখনো চলছে, জানি না কতদিন এভাবে খুঁড়িয়ে চলতে হবে। হয়তো মৃত্যুর পূর্বাবধি অথবা তার আগেই জীবনের প্রতি তীব্র ঘৃণা জন্ম নিবে ; সেটুকু দেখার অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে রইলাম।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।