আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক বছরেও খোঁজ মেলেনি উত্তমের

পরিবারের সদস্যরা বলছেন, উত্তম জীবিত না মৃত, সে খবরটিও তারা জানেন না।
২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর নজিরবিহীন সাম্প্রদায়িক হামলায় সমুদ্রতীরের জেলা কক্সবাজারের রামু ও উখিয়া উপজেলার বৌদ্ধ বসতি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।
উত্তম বড়ুয়ার ফেইসবুক প্রোফাইলে কোরআন অবমাননাকর ছবি থাকার অভিযোগ তুলে ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের ওই হামলায় রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহার পুরোপুরি জ্বালিয়ে দেয়া হয়। ধ্বংস ও লুট করা হয় আড়াইশরও বেশি দুর্লভ বৌদ্ধমূর্তি। একইভাবে রামু ও উখিয়ার আরও ১৮টি বিহারে হামলা ও আগুন দেয়া হয়।

হামলা হয় বৌদ্ধ বসতিতেও।
পরে পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে আসে, পরিকল্পিতভাবে উত্তমের ফেইসবুক পেইজে ‘ভুয়া ছবি’ ট্যাগ করে রামু বাজারে বসে সেই ছবি দেখিয়ে উস্কে দেয়া হয় স্থানীয় জনতাকে। রাতে সেখানে সমাবেশ করে মিছিল নিয়ে বৌদ্ধ বসতিতে হামলা চালায় পাঁচ শতাধিক মানুষ। আর পুরো ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে চট্টগ্রামের শ্যামলী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার ডিপ্লোমা বিভাগের ষষ্ঠ সেমিস্টারের ছাত্র আব্দুল মোক্তাদির আরিফকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
উত্তমের স্ত্রী রিতা বড়–য়া জানান, ঘটনার দিন রাত ৮টার দিকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান তার স্বামী।

এরপর তার আর কোনো খবর তারা পাননি।
উত্তম থাইল্যান্ড বা মিয়ানমারে পালিয়ে গেছেন বলে এলকায় গুঞ্জন থাকলেও সেই তথ্য কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি।

রামুর ফতেঁখারকুল ইউনিয়নের হাইটুপি গ্রামের সুদত্ত বড়ুয়ার ছেলে উত্তম রামু সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখকের কাজ করতেন। স্ত্রী রিতা ও চার বছর বয়সী ছেলে আদিত্যকে নিয়ে একটি বসায় ভাড়া থাকতেন তিনি।
ওই হামলার ঘটনার পর উত্তমকে না পেয়ে মহেশখালী থেকে রামুতে বেড়াতে আসা তার খালা ও মাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

তাদের রিমান্ডেও পাঠানো হয়। এরপর উচ্চ আদালতের নিদের্শে তাদের মুক্তি দিয়ে মামলাটি খারিজ করে দেয়া হয়।
উত্তমের মামা তাপস বড়–য়া জানান, সুদত্ত বড়–য়া চট্টগ্রামের ফিশারিঘাটে চাকরি করেন। গত বছর ওই ঘটনার পর সম্প্রতি প্রথমবারের মতো রামুতে এসেছেন তিনি। তবে তিনি পুরোপুরি সুস্থ নন।

 
ঘটনার পর থেকে উত্তমের কোনো খবর তারা পাননি বলে জানান তাপস।
উত্তমের মা মাধু বড়–য়া বলেন, তার ছেলে জীবিত না মৃত- সে খবরও তারা জানেন না। গত এক বছর ধরে নিজেদের এলাকার বাইরে যাননি তিনি। সব সময় এক ধরনের আতঙ্কের মধ্যে তাদের দিন কাটছে।
স্ত্রী রীতা এখন উত্তমের মায়ের সঙ্গেই থাকছেন।


তিনি জানান, তাদের ছেলে আদিত্য প্রায়ই বাবার জন্য কাঁদে। কিন্তু গত এক বছরে উত্তমের কোনো খোঁজই তারা পানানি।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বাবুল আকতার বলেন, “এক বছরে মধ্যে নানাভাবে উত্তম বড়–য়ার খোঁজ করা হয়েছে। কিন্তু তার কোনো খোঁজ মেলেনি। ”
রামুর সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা খতিয়ে দেখতে গঠিত তদন্ত কমিটি গত ফেব্রুয়ারিতে ২০৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়।

ওই প্রতিবেদনে উত্তমকে আসামি করা হলেও তার বক্তব্য নিতে পারেনি তদন্ত কমিটি।
২৯ সেপ্টেম্বরের হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় রামু ও উখিয়ার মোট ১৯টি মামলা হয়, যার মধ্যে মাতটিতে ইতোমধ্যে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।
এর মধ্যে মূল মামলার তদন্ত পুলিশ এখনো শেষ করতে পারেনি। ওই মামলার এজাহারে উত্তমকেও আসামি করা হয়েছে।  


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।