আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মালালারা ধন্য হয়, আদুরীরা লুটায় অনাদরে...

জানি না কেন লিখি! তবু লিখি মনের খেয়ালে, পরিবর্তন করার মানসে, পরিবর্তিত হওয়ার মানসে। যদিও জানি সব ব্যর্থ হচ্ছে। তবুও আমি আছি সেদিনের সেই আলোকময় প্রত্যুষার আগমনের অপেক্ষায়

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাকিস্তানের আলোচিত কন্যা মালালা ইউসুফজাইয়ের কপালে চুম্বন এঁকে দিলেন। বয়সের ব্যবধান অনেক হলেও একই অধিবেশনে মালালা বক্তব্য রেখেছে নামীদামি অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের পাশাপাশি। মালালা প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে জানায় সে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে থাকে।

কিশোরী মালালা ইউসুফজাই বর্তমানে পশ্চিমাদের কল্যাণে পৃথিবীতে বিখ্যাত এক স্বল্প বয়সী নারী। তার কাহিনী হচ্ছে সে পিছিয়ে পড়া পাকিস্তানী তথা সারা বিশ্বের নারীদেরকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে বিদেশী ব্লগে লেখালেখি করতো। অভিযোগ রয়েছে যে নারী শিক্ষার বিরোধী তালেবানরা তার লেখালেখি পছন্দ করতো না। লেখালেখি বন্ধ করার জন্য তালেবানরা বেশ কয়েকবার তাকে হুঁশিয়ার করে দেয়, কিন্তু সিদ্ধান্তে অটল থাকায় তালেবানরা স্কুল থেকে ফেরার পথে তাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে মাথায় গুলি করে। পরে তাকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখান থেকে আরো উন্নত চিকিসার জন্য যুক্তরাজ্যে পাঠানো হয়।

এসময় তাকে নিয়ে পশ্চিমা মিডিয়া ও রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যাপক হৈ চৈ শুরু করে দেয়। পশ্চিমা মিডিয়ার কল্যাণে মালালা হয়ে উঠে নারী শিক্ষার পক্ষে একজন জীবন্ত কিংবদন্তী। তবে তালেবানরা তাকে গুলি করার ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিয়েছে যে তার নারী শিক্ষা নিয়ে লেখালেখি নয়, বরং তালেবান আদর্শের বিরোধীতা করা হতো বলেই তাকে হত্যা করতে চেয়েছিল তারা। ঘটনা যাই হোক, অল্প বয়সী এই মেয়েটি হয়ে উঠে পশ্চিমা মিডিয়ার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলে তাকে জাতিসংঘের ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কার থেকে শুরু করে আরো বহু পুরস্কার দেওয়া হয়।

তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠে ইউরোপ- আমেরিকার প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্টসহ উচ্চ পদস্থ রাষ্ট্রীয় ও অন্যান্য সংস্থাসমূহ। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সভা-সেমিনারে তাকে দিয়ে বক্তব্য বিবৃতি দেওয়ানো হয়। এ ধারা বর্তমানেও অব্যাহত রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে মালালাকে নিয়ে কেন পশ্চিমা বিশ্বের এত আগ্রহ? কী এমন তার কৃতিত্ব? নাকি সহানুভূতি থেকে তাকে এই সম্মাননা? না, আসল কারণ তা নয়। আসল কারণ পশ্চিমা বিশ্ব আমাদের কাছে যা চায় এই মালালা তাদের জন্য তাই করে দিয়েছে।

এখন তাকে আদর্শ হিসেবে দাঁড় করিয়ে তারা তাদের সাম্রাজ্যবাদ কায়েম করার পক্ষে কাজ চালিয়ে যেতে পারবে। যদি শুধু সহানুভূতি থেকেই মালালাকে নিয়ে এত হৈ চৈ করতো তাহলে তার চেয়ে বেশি সহানুভূতি পাওয়ার কথা ছিল আমাদের দেশের ফেলানীর, হৈ চৈ হওয়ার যোগ্য আমাদের দেশের আদুরীর ঘটনাও। কিন্তু তারা কি বিচার না পাওয়া সীমান্তে ফেলানী হত্যা নিয়ে উচ্চবাচ্য করেছে? কিংবা ভারতকে এ ব্যাপারে সামান্য চাপও প্রয়োগ করেছে? ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ কর্তৃক ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের মানুষ হত্যার কোন সমালোচনা করেছে? কিংবা ময়লার ভাগারে মৃতপ্রায় আদুরীকে নিয়ে কোন বাক্যব্যয় করবে, তাকেও কি ব্রিটেনে নিয়ে যাওয়া হবে উন্নত চিকিৎসার জন্য? বেঁচে গেলে তাকে কি জাতিসংঘের কোন সংস্থা কোনরূপ সহযোগিতা করবে? তাকে কি কোন পুরস্কার দেওয়া হবে? সবগুলো প্রশ্নের উত্তর হবে, না, মোটেই তা হবে না। কারণ তাকে নিয়ে ঐসব সাম্রাজ্যবাদীদের কোন ব্যবসা হবে না। সে তাদের আদর্শের পক্ষে কোন উপকারিতা বয়ে আনবে না।

সে তাদের কথিত অহঙ্কারের বাতাসে ফুলানো বেলুন ‘সভ্যতা’র গায়ে একটি সুঁচের খোঁচা। সুতরাং তাকে নিয়ে তারা মাতামাতি করবে না। বরং তাকে চাইবে সব খবর থেকে আড়াল করতে। আর আমাদের প্রধানমন্ত্রীও তার কপালে চুম্বন এঁকে দিবেন কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তার উপর নির্মমভাবে নির্যাতনকারী নওরীন আক্তার নদীরা হয়তো সময়ের ব্যবধানে পার পেয়ে যাবে অর্থের বিনিময়ে কিংবা আইনের মারপ্যাঁচে।

অতীতে অন্তত: তাই হয়েছে। ২০০০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের জুলাই পর্যন্ত সাড়ে তের বছরে নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা গেছে ৫৬৭ জন গৃহকর্মী। এছাড়াও আরো বহু গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছে। এসব ঘটনায় থানায় মামলা হলেও অধিকাংশই অর্থ কিংবা পেশী শক্তির জোরে থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। আদুরী নামে আদুরী হলেও কিংবা মানুষের আদর প্রার্থী হলেও আদুরীরা সব সময় অনাদরই পেয়ে থাকে।

আদুরীদের কপালে আদর জোটে না। আদুরীদের কপালে জোটে গরম ইস্ত্রীর ছেঁকা, গরম খুন্তির আঘাত, গৃহকর্ত্রী কর্তৃক ব্লেড দিয়ে গায়ের চামড়া কেটে ফেলা। দিনে এক বেলা খেতে পাওয়াটাই তাদের মহাসৌভাগ্য। এমন আদুরীরা মরে গেলে পশ্চিমাদের কিছু যায় আসে না। যেখানে আফ্রিকায় দুর্ভিক্ষপীড়িত শত শত কালো মানুষ না খেয়ে কঙ্কালসার হয়ে গেলেও যেমন তাদের কিছু যায় আসে না, সেখানে বাংলাদেশে আর একজন হাভাতে প্রতিনিধি উপস্থিত হলে তাতে তাদের কী আসে যায়?


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।