আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আলম ভাইয়ের সাথে আলাপচারিতায় উত্থাপিত প্রসঙ্গ

জ্ঞান: জ্ঞানের প্রয়োগেই স্বাথকতা। অজিত জ্ঞান, শিক্ষা, অভিজ্ঞতা ব্যবহারিত না হলে তা বড়ই মূল্যহীন হয়ে পড়ে। যে জ্ঞানকে উৎপাদন করে, পুনরুৎপাদন করে কিংবা ব্যবহার করে উভয়েই জ্ঞানী। কিন্তু জ্ঞানকে সংরক্ষণ বা ধারণকরাটা অনেক সময় অথহীন বিবেচিত হতে পারে। কারণ শুধুই তথ্য সমৃদ্ধ মগজধারীকে অন্যের দয়া ও অনুকম্পা নিয়েই অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হয়।

ফলে জ্ঞান অজনই যথেষ্ট নয় চচা বা অনুশীলনটা গুরুত্বপূণ বটে। একটি লাইব্রেরী কিংবা বই যেমন অনেক তত্ত্ব আর তথ্যের ভান্ডার তেমনি তত্ত্ব আ তথ্য সমৃদ্ধ মগজধারী ব্যক্তিও ঠিক তেমনি নিথর, নিস্তব্ধ, নিরব। মূলত সংরক্ষণ করার সামথ্যই শুধুমাত্র মূল্যবান এমনটি নয় বরং প্রয়োগ, ব্যবহার ও চচাটাই মূখ্য। লাইব্রেরী বা বই জড়, লেখক-পাঠক জীব; জড় থেকে জীব কিছু সংগ্রহ বা আহরণ করতে পারে কিন্তু প্রয়োগ ও চর্চা না করলে কিছুই জীবন্ত হয়ে ওঠেনা,প্রাণচাঞ্চল্য বা প্রাণপ্রাচুযতা আসেনা। অপদাথ ও অক্ষম বিবেচিত হবার জন্যে এটাই যথেষ্ট যে,অভিজ্ঞতা ও শিক্ষাকে কাজে লাগাতে পারছেনা।

কারো খাদ্য আছে কিন্তু খাবার সামথ্য নেই, সম্পদ আছে কিন্তু সম্পদ ব্যয়ের ক্ষমতা নেই- এর যে অবস্থা ঠিক তেমনি পুথিঁগত বিদ্যানের অবস্থা। বই, লাইব্রেরী কিংবা কম্পিউটারের যেমন নিজস্ব ক্ষমতা নেই; পরিবতন, পরিবধন বা পরিমাজনের সিদ্ধান্ত নেয়ার সামথ্য নেই ঠিক বাস্তবক্ষেত্রে প্রয়োগে অক্ষম বিদ্যান, জ্ঞানীকেও অন্যের উপরই নিভরশীল হয়ে চলতে হয়। সে ব্যবহারিত হয়, অন্যের সিদ্ধান্তে পরিচালিত হয়, অন্যের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসাবে টিকে থাকে। ফলে জ্ঞান অজনের পাশাপাশি তা প্রয়োগে সক্ষম হিসাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারাতেই কল্যাণ। পলিসি: আপনি কি আখ থেকে রস বের করার মেশিন দেখেছেন? যেখানে আখগুলো মেশিনের নিধারিত পদ্ধতি বা প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত হয়ে নিজেকে উজার করে দেয়।

সিস্টেমটা এমন যে, স্থান বা বৈশিষ্টগত পাথক্যের উধ্বে ওঠে তারা নি:সরণ করে রস, নি:শেষ হয় সবটুকু বিলিয়ে। কৌশলটা শক্তিশালী হওয়ায় সব আখের ভাগ্যে একটি নিদিষ্ট পরিণতিই এসেছে এবং নিয়ন্ত্রক বা পরিচালকের উদ্দেশ্যানুযায়ী ব্যবহারিত হয়ে নিয়ন্ত্রকের কাংখিত ফলাফল হাসিলে চূড়ান্তভাবে ভুমিকা রেখেছে। কিন্তু যে ব্যবহারিত হচ্ছে, সে যদি খাঁটি না হত বা ভেঁজাল হত অথাৎ আখ না হয়ে লোহার রড ঢুকলে সিস্টেমটাই অচল হবে,মেশিনটাই বিকল হবে। এক্ষেত্রে সতকতা পরিচালকের, আয়োজকের। কিন্তু প্রতিষ্ঠিত সিস্টেমের সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে সমপণ করেছে যে আখগুলো তারা কিন্তু রসটা পায় না।

সিস্টেমটা টিকিয়ে রাখার স্বাথে আখগুলো জরুরী বটে কিন্তু তারা সুবিধাভোগী নয়, বিলিয়ে দেয়াতেই যেন তাদের ধম হয়ে পড়ে। তাই মূলত সিস্টেমটাকে সচল রাখার জন্যে যারা গুরুত্বপূণ তারা মেশিনকে সচল রাখতে প্রয়োজনীয় তৈলের মতই ক্রিয়াশীল। আমার দৃষ্টিতে কোন প্রতিষ্ঠিত সিস্টেমের সাথে একাকার হয়ে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা নি:সন্দেহে সহজ, স্বাভাবিকভাবেই সরল পদ্ধতি। যারা সিস্টেম গড়ে তুলেন আর যারা তা টিকিয়ে রাখতে ব্যবহারিত হনতারা এক নয়। কোন প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে নতুন সিস্টেম দাঁড় করানো মোটেই সহজ কাজ নয়।

সুতরাং নিরুপায় বা বাধ্য হয়ে সম্পৃক্ততা আর সম্পৃক্ত থেকে আনন্দ লাভ ও উপভোগ্য মনে করতে পারার অবস্থা একই রকম নয়। ফলে আপনি পুরাতন প্রথাকে চ্যালেঞ্জ করলে সেই প্রক্রিয়া থেকে যারা সুবিধাভোগী ছিল নিশ্চিত তারা এটাকে ভালভাবে নেবেনা। ফলে নতুনকে পুরাতন ব্যবস্থার শক্তির চেয়ে কিছুটা বেশি শক্তি নিয়েই টিকে থাকতে হবে। এটি ঠিক যে, প্রতিটি সিস্টেমেই কিছু সুবিধাভোগী থাকবে। তুলনামূলকভাবে যেটি বেশি যৌক্তিক,গ্রহণযোগ্য,অধিকাংশের জন্যে কল্যাণকর সেটিই গ্রহণযোগ্য বা উৎকৃষ্ট বিবেচিত হতে পারে।

ব্যক্তি গুরুত্বপূণ: ব্যক্তিগঠন বা আত্মগঠন না করে জাতি, ধম, মানবতার কল্যাণ বিধান করার চিন্তা অবান্তর। সুনিপুণ কারিগর না হয়েই বিরাট খেদমত করার স্বপ্ন হাস্যকর। ব্যক্তিকে উপেক্ষা করে সামষ্টিক ক্ষেত্রে সাফল্য দু:স্বপ্ন। বাস্তবতা বজিত আবেগই অনেককে চালিত করে। প্রয়োজনীয় দক্ষতা ছাড়া ব্যক্তি ড্রাইভার বা পাইলট হলে যেমন যাত্রীর জীবন বিপণ্ণ হবার সম্ভাবনা; সংগঠন বা সমাজের নেতৃত্বও তেমনি।

বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকষতা: খেলোয়াড়কে মাঠে যেমন সুণিপুণতার সাথে পারদশীতা প্রদশন করেই প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে হয়, জরুরী অপারেশনের সময় রোগীর প্রতি ডাক্তারকে যেমন অত্যন্ত তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হয়, সদা তৎপর ও সচেতন থাকতে হয় আসলে বিভিন্ন তত্ত্ব নিয়ে খেলা করার মত বুদ্ধিমান, জ্ঞানী, প্রজ্ঞাবান ও দূরদশী মানুষও তেমনি প্রয়োজন। বহুবিধ কনসেপ্ট সংক্রান্ত পরিচ্ছন্ন ধারণা ছাড়া,চচিত প্রসঙ্গে ব্যাপক দখল ও গভীর পান্ডিত্য ছাড়া বিদ্যমান জ্ঞানকে নিয়ে খেলা করে নতুন জ্ঞানের উৎপত্তি ঘটানো সম্ভব নয়। সাধারণ ও স্বাভাবিক স্তর পেরিয়ে যেতে পারলেই কেবল সম্ভব ভারি, রসকসহীন, শুষ্কতার মধ্য থেকেও রস বের করে নিয়ে আসা। পিপীলিকার মত পরিশ্রমী,মৌমাছির মত কারিগর হলেই কেবল সম্ভব বিশাল বিস্তৃত পরিসর থেকে মূল্যবান মণিমুক্তা বের করে আনা। প্রসারিত দৃষ্টি, উন্নত মগজ, উৎকৃষ্ট হৃদয় ও মানসিক হিম্মত ছাড়া জ্ঞানের জগতে প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠা অসম্ভব।

সঠিকটাকে বাছাই তখনই সম্ভব যখন বিবেচনা ক্ষমতা থাকে তীব্র। বিচার করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া তখনই সম্ভব যখন সকল বিকল্প মত, পথ, পদ্ধতি সম্পকে থাকে স্বচ্ছ ধারণা। ডাক্তার না হয়ে যেমন প্রেসক্রিপশন দেয়ারই কোন অধিকার নেই তেমনি সংকীণতা, নীঁচুতার উধ্বে ওঠা ছাড়া, তূলনামূলক মূল্যায়নের ক্ষমতা অজন ছাড়া রায় দেয়া বা সমালোচনা করার কোন অধিকার নেই। জ্ঞানের উৎপাদন, পুনরুৎপাদন করার সক্ষমতা অজন করতে প্রবল সাধনার বিকল্প কোন সহজ পথ নেই। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।