আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কৈএর তেলে কৈ ভেজে খাব!

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব। ফোর্সেস গোল-২০৩০-এর আওতায় তিন বাহিনীর আধুনিকায়নের কাজ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই সরকার রাশিয়ার কাছ থেকে ঋণে ১০০ কোটি ডলার (প্রায় আট হাজার কোটি টাকা) মূল্যের সামরিক সরঞ্জাম কিনতে যাচ্ছে। এ ঋণের সুদের হার ৪ শতাংশের কাছাকাছি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ সামরিক সরঞ্জাম জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের সক্ষমতা আরো বাড়াবে এবং এসব কেনার খরচটিও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন থেকে দ্রুত উঠে আসবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে ধারণা দিয়ে আসা হচ্ছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ব্যবহারের জন্য শান্তিরক্ষীরা নিজেদের দেশ থেকেই যানবাহন, সামরিক ও অন্যান্য সরঞ্জাম সঙ্গে করে নিয়ে যায় এবং এ বাবদ জাতিসংঘ থেকে অর্থ পায়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাশিয়া সফরকালে আজ (সোমবার) অথবা আগামীকাল এই সমরাস্ত্র কেনার চুক্তিটি হওয়ার কথা রয়েছে। আট হাজার কোটি টাকার মধ্যে সেনাবাহিনীর জন্য কেনা হবে পাঁচ হাজার কোটি টাকার সামরিক সরঞ্জাম। বাকি তিন হাজার কোটি টাকার সামরিক সরঞ্জাম আসবে বিমানবাহিনীর জন্য। সরকারের কয়েকজন নীতিনির্ধারকের সঙ্গে কথা বলে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এ ঋণের সুদের হার কী হবে, তা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু বলা না হলেও এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, সাধারণত এ ধরনের ঋণের সুদের হার ৪ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে থাকে।

ঋণ পরিশোধের সময় থাকে ১০ বছর। এদিকে রাশিয়া থেকে ঋণে সমরাস্ত্র কেনার যৌক্তিক কারণ জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বাংলাদেশে নিযুক্ত আইএমএফের আবাসিক প্রতিনিধি এতেরি কিনত্রাজে গত রবিবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে দেখা করতে গিয়ে সামরিক সরঞ্জাম কেনার বিষয়ে জানতে চান। রাশিয়ার সঙ্গে ঋণ চুক্তির পর আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি জানানো হবে বলে ইআরডি সচিব জানান। এ বিষয়ে জানতে রবিবার সন্ধ্যায় ইআরডি সচিব আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আইএমএফের আবাসিক প্রতিনিধি তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এসেছেন বলে জানান তিনি। সূত্র জানায়, বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বর্ধিত ঋণ সুবিধার (এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি-ইসিএফ) আওতায় গত বছর এপ্রিলে আইএমএফের সঙ্গে ১০০ কোটি ডলার ঋণ চুক্তি সই করে সরকার। ঋণ দেওয়ার সময় কয়েকটি শর্ত দেয় সংস্থাটি। এর মধ্যে একটি ছিল, সরকার ভবিষ্যতে কোনো দেশ, ব্যাংক বা সংস্থা থেকে কঠিন শর্তে (নন-কনসেশনাল) ঋণ নিতে চাইলে আইএমএফকে অবহিত করতে হবে। ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে ১০০ কোটি ডলারের সীমাও নির্ধারণ করে দেওয়া আছে।

তবে যৌক্তিক প্রয়োজন মনে হলে এ সীমা বাড়ানো যেতে পারে বলে শর্তে উল্লেখ রয়েছে। সেই শর্তের আলোকেই আইএমএফ প্রতিনিধি রাশিয়ার কাছ থেকে ১০০ কোটি ডলার মূল্যের সমরাস্ত্র কেনার বিষয়ে জানতে চান। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সমরাস্ত্র কেনা বাবদ প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশকে ৮৫ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় রাশিয়া। ১৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর মস্কো যাওয়ার আগে গত ১৫ ও ২৯ ডিসেম্বর সরকারের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল রাশিয়ায় যায়। ওই সফরে ঋণের পরিমাণ ১০০ কোটি ডলারে উন্নীত করার অনুরোধ জানানো হয়।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর রাশিয়া সফরে পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রাক-কাঠামো নির্মাণ বিষয়ে ৫০ কোটি ডলার ঋণ চুক্তি সই হবে। বাংলাদেশের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব আবুল কালাম আজাদ এই চুক্তিতে সই করবেন। আর আট হাজার কোটি টাকা মূল্যের সামরিক সরঞ্জাম কেনার চুক্তিতে সই করবেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাস্টার জেনারেল অব অর্ডন্যান্স মেজর জেনারেল আবদুল মতিন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি এম ইদ্রিস আলী রাশিয়া থেকে সমরাস্ত্র ক্রয়ের উদ্যোগ সম্পর্কে গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর রাশিয়া সফরে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিষয়টি। এর সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর জন্য সমরাস্ত্র ক্রয়ের বিষয়টিও রয়েছে।

তিনি বলেন, 'সমরাস্ত্র কেনার অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সশস্ত্র বাহিনীর আরো সক্ষমতা বাড়ানো। সেনাবাহিনী ১০-১২ বছর আগের এপিসি (আর্মর্ড পারসোনেল ক্যারিয়ার) ব্যবহার করছে। সেগুলোর আয়ুষ্কাল প্রায় শেষ। সংসদীয় কমিটি থেকে আমরা সেনাবাহিনীর জন্য এপিসি কেনার সুপারিশ করেছিলাম। এগুলো জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে ব্যবহার হলে চার-পাঁচ বছরে এর টাকা উঠে আসবে।

' এম ইদ্রিস আলী আরো বলেন, 'যুদ্ধাস্ত্র সংগ্রহের বিষয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেন হচ্ছে আমাদের জন্য সব চেয়ে উপযোগী দেশ। অন্যান্য দেশের তুলনায় এ দুটি দেশ থেকে আমরা অনেক সস্তায় এগুলো কিনতে পারি। ' সূত্র জানায়, রাশিয়ার কাছ থেকে সেনাবাহিনীর জন্য যেসব অস্ত্র কেনা হতে যাচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে মিডিয়াম ও শর্ট রেঞ্জের অ্যান্টি ট্যাংক গাইডেড মিসাইল, ফাইটিং আর্মার্ড পারসোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি), কমান্ড এপিসি, এপিসি অ্যাম্বুলেন্স, মাঝারি ধরনের হেলিকপ্টার, পন্টুন ব্রিজ, মিডিয়াম হেলিকপ্টার, অ্যান্টি ট্যাংক গ্রেনেড লঞ্চার ও এর গোলা। বিমানবাহিনীর জন্য কেনার তালিকায় রয়েছে ইয়াক-১৩০ প্রশিক্ষণ জঙ্গি বিমান, অ্যাটাক হেলিকপ্টার এবং কয়েক ধরনের রাডার। সমরাস্ত্র ক্রয়ের ধারাবাহিকতা বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে ২০৩০ সালের মধ্যে সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত নভেম্বরে সশস্ত্র বাহিনী দিবসে বলেন, ফোর্সেস গোল-২০৩০-এর আওতায় তিন বাহিনীর আধুনিকায়নের কাজ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর অপারেশনাল ক্ষমতা বৃদ্ধি ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে সংগ্রহ করা হচ্ছে এমবিটি-২০০০ ট্যাংক, সেলফ প্রপেল্ড গান, উইপন লোকেটিং রাডার, আর্মার্ড রিকোভারি ভেহিকেল, হেলিকপ্টারসহ বিভিন্ন সমরাস্ত্র। ওই পরিকল্পনার আওতায় চীন আগামী বছরের জুলাই-আগস্টের মধ্যে মোট ৪৪টি এমবিটি-২০০০ ট্যাংক বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করবে। ইতিমধ্যে কিছু সরবরাহ করা হয়েছে। প্রতিটি টাংকের দাম পড়ছে প্রায় চার মিলিয়ন মার্কিন ডলার (৩২ কোটি টাকা)।

গত বছর এপ্রিলে এ বিষয়ে চীনের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান নরিনকোর (NORINCO) সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি হয়। গত ২৮ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনীর বিমানবহরে ফ্রান্সে তৈরি উচ্চগতিসম্পন্ন দুই ইঞ্জিনের দুটি সর্বাধুনিক দওফিন এএস ৩৫৬ এন-৩ প্লাস হেলিকপ্টার যুক্ত হয়। জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলায় হেলিকপ্টার দুটি কাজে লাগানো হবে এবং জাতিসংঘ মিশনে ব্যবহারের মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে বিমানবাহিনীর গ্র্যাজুয়েশন কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক জানান, বিমানবাহিনীকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে এবং দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারের জন্য ইতিমধ্যে কঙ্বাজারে একটি পূর্ণাঙ্গ বিমানঘাঁটি স্থাপন করা হয়েছে। বিমানবাহিনীতে ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

ইতিমধ্যে বিমানবাহিনীর জন্য এফ-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান এবং এমআই-১৭১ হেলিকপ্টার কেনার চুক্তি সই হয়েছে। রাশিয়া থেকে আনা হবে সুখোই-৩০ যুদ্ধবিমান। প্রধানমন্ত্রী রাশিয়া সফরের সময় (২০১০ সালে) এ বিষয়ে কথা হয়েছে। বর্তমান সরকার 'মিগ-২৯' যুদ্ধবিমানে এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল সংযোজন করেছে। তবে সুখোয় যুদ্ধবিমানের বিষয়ে আর কোনো অগ্রগতির কথা শোনা যায়নি।

চীনের সঙ্গে চুক্তি অনুসারে ১৬টি এফ-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমানের মধ্যে সম্প্রতি কয়েকটি দেশে পৌঁছেছে। গত নভেম্বরে সশস্ত্র বাহিনী দিবসে প্রধানমন্ত্রী জানান, বিমানবাহিনীর বিমানবহরে যোগ হচ্ছে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক এফ-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান, পাশাপাশি সংগৃহীত হচ্ছে এমআই-১৭১ সিরিজের হেলিকপ্টার। গত ২০ জুন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ হাজী মহসীনকে 'ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড' প্রদানের সময় রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান বলেন, অচিরেই নৌবাহিনীতে সাবমেরিন অন্তর্ভুক্ত করতে বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে নৌবাহিনীতে মেরিটাইম হেলিকপ্টার, ক্যাসেল ক্লাস করভেট ও হাইড্রোগ্রাফিক ভ্যাসেল সংযুক্ত হয়েছে এবং অদূর ভবিষ্যতে মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট, ফ্রিগেট, মিসাইলসহ অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ সংযোজনে বর্তমান সরকার ঐকান্তিক চেষ্টা করে যাচ্ছে। গত ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসে প্রধানমন্ত্রী জানান, আগামী ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিল মাস নাগাদ নৌবাহিনীতে আরো দুটি মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট যুক্ত হতে যাচ্ছে।

চীন থেকে দুটি অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র সজ্জিত জাহাজ (করভেট) সংগ্রহ করা হচ্ছে, যা ২০১৬ সাল নাগাদ নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হবে। যুদ্ধজাহাজ বঙ্গবন্ধুতে অত্যাধুনিক অ্যান্টি শিপ অটোমেট মিসাইল যুক্ত হবে। চীন থেকে দুটি নতুন লার্জ পেট্রোল ক্রাফট জানুয়ারি মাসে (চলতি মাসে) দেশে পৌঁছাবে। চীন থেকে আরো দুটি ফ্রিগেট কেনার বিষয়ে চুক্তি হয়েছে। এ ছাড়া নৌবাহিনীর জন্য সাবমেরিন কেনার বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে।

গত ৮ জানুয়ারি আইএসপিআর জানায়, নৌবাহিনীর জন্য চীনে দুটি যুদ্ধজাহাজ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এক হাজার ৩৩০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন ৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের নির্মাণাধীন এ করভেটের অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ অন্যান্য আধুনিক সরঞ্জামাদি সংযোজন করা হবে, এতে নৌবাহিনীর অপারেশনাল কার্যক্ষমতা অনেকাংশে বাড়বে।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.