ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ রাজ্য ভেঙে পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনের সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর ওই অঞ্চলের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। তাৎক্ষণিকভাবে একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পদত্যাগের পর গতকাল শুক্রবার উপকূলীয় অন্ধ্র ও রায়লসীমা অঞ্চলে ৪৮ ঘণ্টার বন্ধ্ শুরু হয়েছে। অখণ্ড অন্ধ্র প্রদেশের সমর্থকদের ডাকা এ ধর্মঘটে ওই অঞ্চলের জনজীবন অচল হয়ে পড়েছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা গত বৃহস্পতিবার অন্ধ্র প্রদেশ ভেঙে তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনের বিষয়টি অনুমোদন করে। এর প্রতিবাদে ওই দিনই পদত্যাগ করেন দক্ষিণী রাজনীতিক কেন্দ্রীয় পর্যটনমন্ত্রী কে চিরঞ্জীবী।
এ ছাড়া কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী এম এম পল্লম রাজু ও বস্ত্রমন্ত্রী কে এস রাও পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।
অখণ্ড অন্ধ্র প্রদেশের সমর্থকেরা গতকাল সকালে রায়লসীমা ও উপকূলীয় অন্ধ্র অঞ্চলের প্রায় সব মহাসড়ক বন্ধ করে দেন। এ ছাড়া দোকানপাট, বাণিজ্যিক কেন্দ্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেন তাঁরা। বিভিন্ন শহরে সভা-সমাবেশ ও অবরোধও করেন। বনেধ কয়েকটি এলাকায় সহিংস ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।
শ্রীকাকুলাম, কাডাপা ও চিতোর এলাকায় বন্ধ্কারীরা কিছু সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় হামলা চালিয়েছেন। কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল কংগ্রেসের স্থানীয় কয়েকটি কার্যালয়েও হামলা হয়। অনন্তপুর এলাকায় তেলেগু দেশম পার্টির (টিডিপি) কর্মীদের সঙ্গে ওয়াইএসআর পার্টির কর্মীদের সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। অন্ধ্র প্রদেশ নন-গেজেটেড অফিসার্সসহ (এপিএনজিও) বেশ কয়েকটি সংগঠনও ৪৮ ঘণ্টার বন্ধ্ শুরু করেছে। পৃথকভাবে ৭২ ঘণ্টার বন্ধ্ ডেকেছে ওয়াইএসআর পার্টি।
তেলেঙ্গানা প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে মধ্য আগস্ট থেকেই অন্ধ্র প্রদেশ সরকারের কর্মীরা ও কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকা অন্ধ্র প্রদেশ রাজ্য সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (এপিএসআরটিসি) কর্মীরা ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন।
এর আগে সহিংসতার আশঙ্কায় প্রাদেশিক রাজধানী হায়দরাবাদসহ রাজ্যের সব জেলায় চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করা হয়। অন্ধ্র প্রদেশের বিজয়বাডা আসন থেকে নির্বাচিত লোকসভার সদস্য ও কংগ্রেস নেতা এল রাজাগোপাল সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি এ সিদ্ধান্তকে ‘অসাংবিধানিক’ ও ‘অগণতান্ত্রিক’ বলে আখ্যা দেন।
এদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কিরণ কুমার রেড্ডি গতকাল জরুরি বৈঠক আহ্বান করেন।
রায়লসীমা ও উপকূলীয় অন্ধ্রের মন্ত্রী ও বিধায়কদের ওই সভায় অংশ নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
কেন্দ্রীয় সরকার বলেছে, রায়লসীমা ও উপকূলীয় অন্ধ্র অঞ্চল নিয়ে সীমান্ধ্র রাজ্য হবে। বাকিটা নিয়ে গঠিত হবে পৃথক রাজ্য তেলেঙ্গানা। আগামী ১০ বছর তেলেঙ্গানা ও সীমান্ধ্র—দুই রাজ্যেরই রাজধানী হবে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হায়দরাবাদ। রাজ্য ভাগের বিভিন্ন বিষয় বিবেচনার জন্য মন্ত্রিসভা কমিটি গঠন করা হবে।
দুই রাজ্যের পানিসম্পদ, বিদ্যুৎ ও রাজস্ব কীভাবে ভাগ করা হবে, তা ওই মন্ত্রিসভা কমিটি ঠিক করবে। সীমান্ধ্র রাজ্যের নতুন রাজধানী তৈরি ও দুই রাজ্যের পিছিয়ে পড়া এলাকার উন্নয়নের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দেওয়ার কথাও ভাবছে কেন্দ্রীয় সরকার।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর তেলেঙ্গানা রাজ্য প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব এখন যাবে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছে। রাষ্ট্রপতি তা অনুমোদনের জন্য অন্ধ্র প্রদেশের বিধানসভায় পাঠাবেন। তবে বিধানসভার সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য নয় কেন্দ্রীয় সরকার।
তার পরও বিধানসভায় ওই প্রস্তাব যাতে পাস না হয়, সে জন্য একসঙ্গে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন রায়লসীমা ও উপকূলীয় অন্ধ্রের বিধায়ক ও কয়েকজন মন্ত্রী। এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও হিন্দুস্তান টাইমস।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।