ইউরোপ থেকে আমেরিকা মাঝে ১০৬ দশমিক চার মিলিয়ন বর্গকিলোমিটারের উত্তাল আটলান্টিক মহাসমুদ্র। এখন প্রতিদিন এ পথে উড়োজাহাজে আনাগোনা হলেও ১৯২৭ সাল পর্যন্ত তো তা ছিল স্বপ্নের মতো! ১৯০৩ সালে ১৭ ডিসেম্বর অরভিল এবং উইলবার রাইট আবিষ্কার করলেন উড়োজাহাজ। যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন যুগের সূচনা হয় এর পর ইউরোপ-আমেরিকাবাসীর স্বপ্ন দেখা শুরু হলো উড়োজাহাজে করে আটলান্টিক পাড়ি দেওয়ার দারুণ প্রতিযোগিতা। এরই মধ্যে এক মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা হয় ফ্রান্সের পাইলটদের মধ্যে। প্যারিস থেকে আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে নিউইয়র্ক যাচ্ছিলেন দুই পাইলট চার্লস নানগিজার এবং ফ্রাঙ্কোইজ কোলি।
কিন্তু নিউইয়র্ক পৌঁছা হয়নি তাদের। মাঝপথেই হারিয়ে যান তারা। সমুদ্রে কিংবা পথের পাহাড়ি বনাঞ্চলে খুঁজেও উড়োজাহাজ ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়নি। পাওয়া যায়নি এই দুই পাইলটরে মৃতদেহ। এসব দুর্ঘটনায় ভীত হননি চার্লস লিন্ডবার্গ (১৯০৭-১৯৭৪)।
মার্কিন এই অ্যাভিয়েশন পাইওনিয়ার লিন্ডবার্গ প্লেন চালনা শেখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে দেন। প্রথম মহাযুদ্ধ (১৯১৪-১৮) শেষ হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী তাদের অতিরিক্ত বিমানগুলো বেচে দেয়। তখন নিজের জন্য একটা প্লেন কিনেন লিন্ডবার্গ। সেই প্লেন দিয়ে তিনি চিঠিপত্র বহন করতেন আর প্রশিক্ষণ দিতেন। ১৯২৭ সালে ২০ এবং ২১ মে চার্লস লিন্ডবার্গ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটি থেকে ফ্রান্সের প্যারিস পর্যন্ত ৫,৮০৯ কিলোমিটার পাড়ি দেওয়ার সময় কম ঝুঁকি নেননি।
তার বিমানটির সর্বনিম্ন ওজন রাখার জন্য সেটাতে ছিল না ব্রেক, রেডিও এমনকি প্যারাশুট! অন্ধকার, কুয়াশা আর শিলাবৃষ্টির মধ্যে তাকে উড়তে হয়েছে সমুদ্রের ১০ ফুট ওপর দিয়ে। বাতাসে তার মুখ বিস্ফোরিত হচ্ছিল, হাত অবস হয়ে যাচ্ছিল, ক্লান্তিতে চোখ বন্ধ হয়ে আসছিল তার পরও লড়াকু লিন্ডবার্গ হার মানেননি। সাড়ে ৩৩ ঘণ্টার বিরতিহীন বিমান যাত্রার পর যখন প্যারিসে অবতরণ করেন দেড় লাখ লোক তাকে উষ্ণ সম্ভাষণ জানাতে আসেন। আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দেওয়ার সফল প্রচেষ্টা পাল্টে দেয় লিন্ডবার্গের জীবন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।