আমি মনে প্রাণে একজন মুসলিম। ঘৃণা করি ধর্ম বিদ্বেষী নাস্তিকদের এবং ধর্ম ব্যবসায়ী ছাগু তথা উগ্রবাদীদের। ক্যঁচাল পছন্দ করিনা । ।
সিরাজগন্ঞ্জ অন্ঞ্চলের বিয়ের গেট, এরমধ্য বরকে বসতে দেয়।
পন্ঞ্চম পর্ব
১৯ শে ডিসেম্বর ২০০১ বাবার মৃত্যূর শোকে পাথর!!! সেই শোক কাটতে না কাটতে আরেকটা ধাক্কা খেলাম আদ্রিতার বিয়ের সংবাদ শুনে!!!!!!!! এভাবেই বেচেঁ থাকতে হয় জীবনের কষ্টগুলি লালন করে
অন্তরের গভীরে!! স্মরণীয় থেকে চিরস্মরনীয় হয়ে রয় জীবনের ডায়েরীতে…
দুঃখ এবং কষ্টকে সঙি করে বয়ে চলেছি জীবনে। অনেকে বলেন ভূলে যাও!! আমি বলি অত সহজ নয়!!
কষ্ট ভোলা যায়না অত সহজে!! সে যে জীবনেরই অরেকটি অংশ হয়ে জুড়ে রয়েছে আঙাঙ্গীকভাবে জীবনের অন্তরের অন্তস্হলে…
২০০০ সালে আব্বা তৃতীয়বারের মত হজ্জকার্য সম্পন্ন করেন সাথে আম্মাও ছিলেন। দেশে ফিরে জানতে পারেন আমার এবং আদ্রিতার মধ্য সম্পর্কের সূচনাটা.. আব্বা ধর্মভীরু মানুষ হলেও ধর্মান্ধ ছিলেননা।
আমি তখন ইন্টার মিডিয়েট সেকেন্ড ইয়ারে পড়ালেখা করি। বয়স তখন কুড়ি হবে।
শহরের বাসাতে থাকি পড়ালেখা করি সরকারী কলেজে, বছরে ৩-৪ বার গ্রামের বাড়িতে যাই তখন টুকটাক আদ্রিতার সাথে দেখা হয় কথা হয়। আবার ছুটি শেষে শহরের বাসায় চলে আসি পড়ালেখায় মননিবেশ করি। মাঝে মধ্য দু একখানা পত্র লিখতাম আদ্রিতাকে তা লিখতাম কম্পুটারে কারন হাতের লেখা খারাপ হওয়ায় কম্পুটারে লিখে প্রিন্ট করে খামে ভরে ডাকবিভাগে পোষ্ট করতাম। বাবা মার বড় সন্তান হওয়ায় আব্দার যা করতাম আব্বা সেটা পুরন করতেন।
১৯ শে ডিসেম্বরে ২০০১ আব্বা ইন্তেকালের পর আমাদের তিন তিনটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের হাল আমাকেই ধরতে হয়।
একদিকে ব্যবসা অন্যদিকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য রাত জেগে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছি। আম্মা এবং ছোট দুইভাই গ্রামের বাড়িতে থাকেন। একমাত্র বোনের বিয়ে আব্বা দিয়ে গেছেন। পরে আম্মার কাছে শুনেছি আব্বার ইচ্ছা ছিল আমি ইন্টার পাশ করার পর আদ্রিতার পরিবারের সাথে কথা বলে বিয়ের বন্দোবস্ত করার। কিন্তু ভাগ্যর পরিহাস! সে সময় আমার আব্বা পেলেননা!!!!!!!!!!!!!
১৪ ই জানুয়ারী ২০০২ দিনটা কেমন যেন অস্বস্তিতে কাটালাম।
গ্রামের বাড়ি যেতে চেয়েও গেলামনা। ১৫ ই জানুয়ারী বাড়ি গেলাম। আম্মা সহ বাড়ির সবার মুখ কেমন যেন শোকের ছায়া দেখতে পেলাম। আমি ভাবছি আব্বার মৃত্যূশোকের কারনে সবাই এমন নিঃষ্প্রাণ। রাতে ঘুমিয়ে পরদিন সকালে পায়ে হেটে আদ্রিতাদের বাড়ির দিকে এগুচ্ছি সাথে ছিল বাল্যবন্ধু মামুন।
মামুন আমাকে অন্যদিকে বেড়াতে যাওয়ার প্রস্তাব দিলো। আমি বললাম চল একটু এদিক থেকে বেড়িয়ে বাড়ি চলে যাবো কাল শহরের বাসায় যেতে হবে। আদ্রিতাদের বাড়ির সামনে আসতেই হলুদরঙা ছেড়া ছেড়া কাগজের ফুল পড়ে থাকতে দেখলাম। কিছুটা এগিয়ে দেখলাম বিয়ের গেটের ভগ্নাংশ!!! মামুনকে জিজ্ঞেস করতেই সে বললো গতপরশু আদ্রিতার বিয়ে হয়ে গেছে অমুক গ্রুপ অব ইন্ডাষ্ট্রির মালিকের ছোটভায়ের সাথে। কথাটা শুনে একটা দির্ঘশ্বাস ফেলে বাড়ির দিকে এগুলাম।
দুপুরে গোসল সেরে যোহরের নামাজ মসজিদে পড়ে বাড়িতে ভাত খেয়ে ব্যগ গুছিয়ে শহরের বাসার দিকে রওয়ানা হলাম। আম্মা জিজ্ঞেস করলে বললাম তারতারি যেতে হবে দোকানের মাল আনতে দু একদিনের জন্য ঢাকা যেতে হবে। অতঃপর আম্মাকে কদমবুছি করে ছোট এতিম ভাই দুটোকে মাথায় হাত বুলিয়ে চোখের নোনাজলে হেটে হেটে এনায়েতপুরে এসে বাসে করে সিরাজগন্ঞ্জের কড্ডার মোড়ে এসে খালেক এন্টার প্রাইজে চড়ে রংপুরের পথে চলছি….
সন্ধ্যা নামতেই রাস্তায় ঘন কুয়াশা। মনে হচ্ছিল বাসটা কুয়াশায় অন্য একটা বাসের সাথে ধাক্কা থেয়ে জীবনটা সাঙ্গ হোক!! এজীবন থেকেই বা কি হবে!!!!! পরক্ষণে ভাবি আমাকে বাঁচতে হবে অন্তত পরিবারের মা এবং এতিম ছোট দুটি ভাইকে মানুষ করার জন্য। রংপুরে পৌছলাম রাতে বাসায় এসে না খেয়েই লেপ গায়ে শুয়ে পড়লাম।
সারাটি রাত চলে গেল দু চোখের নোনাজলের বন্যায়…..
বেশ কিছুদিন চলে গেল। আব্বার চল্লিশা উপলক্ষে গ্রামের বাড়ি গেলাম। কুরআনখানি করে লোকজনকে খাইয়ে ক্লান্ত শরীরে বারান্দায় চেয়ারে চুপ করে বসে আছি। আম্মা এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন আমাদের ইচ্ছা ছিল তোমার বাবার চল্লিশা শেষ হলে তোমার নানার দ্বারা আদ্রিতাদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে এরমধ্যই মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেল!! আমরা ভাবতেও পারিনি!! আম্মাকে বললাম কি আর করা!! ভাগ্য না থাকলে এমনই হয়!!
সকালে ঘুম থেকে উঠে একমাত্র বোনের মুখে শুনলাম আদ্রিতার বিয়ের দিন আদ্রিতার অমতে বিয়ের আয়োজন করা হয়। একপর্যায়ে আদ্রিতা যখন কবুল বলছিলনা তখন আমার জেঠীমা(আদ্রিতার স্কুলের ম্যডাম) আদ্রিতাকে বুঝিয়েছে
যুবায়েরতো কেবল ব্যবসার হাল ধরলো তার যোগ্যতা কতটুকু তা এখনো বোঝা যাচ্ছেনা ভবিষ্যতে সে তোমাকে সুখে রাখতে পারবে কিনা তার গ্যরান্টি কি?.. যে ছেলে তোমাকে বিয়ে করতে এসেছে সে অনেক প্রতিষ্ঠিত..তার ঘরে তুমি রাজরাণী হয়ে থাকবে!!!! তার পরও যখন আদ্রিতা কবুল বলেনি তখন এলাকার মৌলভী সাহেব বললেন ”নারীর নীরবতাই মৌনতার সমর্থন” এই বলে ছেলে পক্ষের কাছে গিয়ে বললেন মেয়ে কবুল করেছে তাই দুজনে এখন স্বামী স্ত্রী।
তারপর সেলামী পর্ব শেষে আদ্রিতাকে দু একদিন রেখে ঢাকা নিয়ে যায়।
২০০২ পেরিয়ে এখন ২০১৩ চলছে…১১ বছর পেরিয়ে গেল। ভূলে থাকার চেষ্টাতো কম করলামনা…
তারপরও ১৪ই জানুয়ারী এলে পুরনো স্মৃতি ভেসে ওঠে বুকের বামপাশটা মোচড় দিয়ে ওঠে!!!!
বিড় বিড় করে কয়েকটি লাইন আওড়াই
সুখ নেইকো মনে
নাক ছবিটা হারিয়ে গেছে
হলুদ বনে বনে…
আদ্রিতা বিষয়ক লেখাসমূহ..
১.শ্রাবণের অতিথি
Click This Link
২.আদ্রিতার মামার বিয়ে
Click This Link
৩.আদ্রিতার ক্রিকেট দর্শন
Click This Link
৪. তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রণে
Click This Link
(আরো একটি পর্ব অপ্রকাশিত আছে সুখস্মৃতি নিয়ে, কিন্তু আজ ১৪ জানুয়ারী উপলক্ষ মুল পর্বটি প্রকাশ করলাম)
উৎসর্গ- ব্লগার কান্ডারী অথর্ব ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।