ব্যাংকাররা বলছেন, বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ দিনেও অন্য সময়ের মতোই স্বাভাবিক ছিল কলমানি রেট।
একটি ব্যাংক এক দিনের জন্য অন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে যে সুদ হারে ঋণ নেয় তাকে বলা হয় কলমানি রেট।
সাধারণত ঈদের আগে টাকা তোলার হার বেড়ে যায় বলে ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকায় টান পড়ে। তখন কল মানি রেটও বেড়ে যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ সাড়ে ৭ শতাংশ সুদ হারে নিজেদের মধ্যে লেনদেন করেছে ব্যাংকগুলো।
আর ব্যাংক বর্হিভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সর্বোচ্চ সাড়ে ৮ শতাংশ হার সুদে কয়েকটি ব্যাংক থেকে ধার নিয়েছে।
১৬ অক্টোবর কোরবানির ঈদের আগে ব্যাংক খোলা রয়েছে আর মাত্র দুদিন।
গত কয়েক বছর দেখা গেছে, ব্যাংকে নগদ টাকার টান পড়ায় কোরবানির আগে মুদ্রা বাজারে সুদ হার বেড়ে যায়। তবে এবার ব্যাংকগুলোতে উদ্বৃত্ত তারল্য থাকায় কলমানি রেট ঈদের আগেও স্থিতিশীল রয়েছে। গত ঈদ-উল- ফিতরের সময়ও একই অবস্থা দেখা যায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেট ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রতিবেদনে দেখা যায়, বুধবার ব্যাংক ও আথিক প্রতিষ্ঠানগুলো মধ্যে লেনদেন হয়েছে ৭ হাজার ৬৪৬ কোটি ৫০ হাজার টাকা।
এর মধ্যে ব্যাংক থেকে ব্যাংকে লেনদেন হয়েছে ৭ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ সুদে। আর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে লেনদেনে সুদ পড়েছে সর্বোচ্চ সাড়ে ৮ শতাংশ।
ওইদিন কলমানি মর্কেট (মুদ্রাবাজার) থেকে সবচেয়ে বেশি ধার করেছে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড। সাড়ে ৭ শতাংশ হার সুদে ৮২৪ কোটি টাকা অন্য ব্যাংক থেকে নিয়েছে তারা।
এছাড়া এনসিসি ব্যাংক লিমিটেড ৬৯১ কোটি টাকা, মর্কেন্টাইল ব্যাংক ৫৬০ কোটি, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ৫৩৯ কোটি ধার করেছে। তারা ঋণ নিয়েছে ৭ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ সুদে।
বেশিরভাগ অর্থ ধার দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, রূপালী, বিশেষায়িত বেসিক ব্যাংক এবং বেসরকারি ট্রাস্ট ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ও যমুনা ব্যাংক লিমিটেড।
তিন বছর আগে অর্থাৎ ২০১০ সালের ১৯ ডিসেম্বর মুদ্রাবাজারে নগদ টাকার সঙ্কটের কারণে নজিরবিহীন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ওই দিন ১৯০ শতাংশ সুদে টাকা ধার করতে হয় অনেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে।
তবে গত বছর থেকেই পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে। আমানত টানতে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদ গুণলেও কলমানি লেনদেন হয়েছে ৭ থেকে ১২ শতাংশের মধ্যে। তবে ঈদের আগে তা ১৮ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ঈদের আগে নগদ টাকার চাহিদা মেটাতে স্বল্প সময়ের জন্য কলমানি মার্কেট থেকে ব্যাংকগুলো টাকা ধার করে চাহিদা মেটায়। এ সময় অধিকাংশ ব্যাংকের নগদ টাকায় টান পড়লে কলমানি মার্কেটে সুদের হারও বেড়ে যায়।
তবে সম্প্রতি অধিকাংশ ব্যাংকে পর্যাপ্ত নগদ টাকা থাকায় এবার কলমানি মার্কেটে সুদের হার বাড়েনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বর্তমানে ব্যাংকের কাছে ‘উদ্বৃত্ত তারল্য’ রয়েছে ৮২ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা রয়েছে সরকারের কোষাগারে।
ব্যাংকগুলো সরকারের বাধ্যতামূলক ঋণের জোগান দেয়ায় এই অর্থ ব্যাংকগুলোর কাছে সরকারি বিল ও বন্ড আকারে রয়েছে। অর্থাৎ, ব্যাংকগুলোর কাছে ৫১ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগযোগ্য নগদ অর্থ রয়েছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সঙ্কট এবং চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ প্রায় তলানিতে নেমে এসেছে। তাই এ বিপুল পরিমাণ অর্থ তাদের কাছে অলস পড়ে আছে।
অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদ হারের কারণেও অনেকে দেশি ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে বিদেশ থেকে ঋণ করছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।