আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈদ পূজার বাজারে বেপরোয়া অজ্ঞান পার্টি

ঈদ ও পূজা কেন্দ্র করে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অজ্ঞান পার্টি। দূরযাত্রায় পাশে বসে ভুলিয়ে-ভালিয়ে খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে যাত্রীর জিনিসপত্র নিয়ে উধাও হচ্ছে তারা। মাত্র এক সপ্তাহে অজ্ঞান পার্টির শিকার হয়েছেন দুই শতাধিক ব্যক্তি। সর্বশেষ এ পার্টির খপ্পরে পড়ে গতকাল মৃত্যু হয়েছে একজনের।

এ ছাড়া ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনাও বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে।

রাজধানীতে প্রায় প্রতিদিনই অস্ত্রের মুখে ঘটছে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিছু ঘটনায় দুর্বৃত্তদের গ্রেফতার করতে পারলেও থেমে নেই এ তিন ধরনের অপরাধ। এদের দৌরাত্দ্য বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে রাজধানীজুড়ে।

গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানায়, রাজধানীসহ সারা দেশে সক্রিয় হয়েছে অজ্ঞান পার্টির ২০টি গ্রুপ। এদের মূল অবলম্বন হকারি করা।

হকারের রূপ নিয়ে লুটে নিচ্ছে তারা সর্বস্ব। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি গ্রুপকে শনাক্ত করেছেন গোয়েন্দারা। ঈদুল আজহা ও দুর্গাপূজা সামনে রেখে এসব গ্রুপ অবস্থান নিয়েছে ঢাকাসহ দেশের সবকটি হাইওয়েতে। এগুলোর মধ্যে ঢাকা-সিলেট রুটে মানিক গ্রুপ, ঢাকা-ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা রুটে ইসমাইল ও বেলাল গ্রুপ, ঢাকা-উত্তরবঙ্গ রুটে সজীব গ্রুপ, ঢাকা-খুলনা রুটে মাসুম চৌধুরী গ্রুপ, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে সামু হাজী গ্রুপ, ঢাকা-মাওয়া-খুলনা রুটে আজাদ গ্রুপ ও ঢাকা-কুষ্টিয়া রুটে আলামিন গ্রুপ সক্রিয়। গোয়েন্দা পুলিশের এডিসি (পশ্চিম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, বেশ কয়েকটি গ্রুপের তৎপরতা শুরু হয়েছে হাইওয়ে রুটে।

রুটগুলো আবার ভাড়া দিয়েছে অজ্ঞান ও মলম পার্টির গডফাদাররা। বিশেষ করে ঢাকা থেকে সব কলকাঠি নাড়ছে গডফাদার ফরিষ। গোয়েন্দাদের ফাঁদ থেকে রক্ষা পেতে মহাসড়ক থেকে দূরে অবস্থান নিয়ে আছে অপরাধীরা। এ ক্ষেত্রে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বিভিন্ন হোটেলে অবস্থানের তথ্য মিলেছে কারও কারও। কোনো গ্রুপ আবার খুলনায়।

শহর আলী গ্রুপ, এমরান হাজী গ্রুপ, ডন চৌধুরী গ্রুপ ও ফরিদ গ্রুপ এদের অন্যতম। এরা সবাই অজ্ঞান পার্টির গডফাদার। ডিবি পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় অজ্ঞান পার্টির এক নেতা স্বীকার করেন, তারা কখনো যাত্রী, কখনোবা হকার বেশে মানুষকে অজ্ঞান করছেন। চেতনানাশক পাউডার-মিশ্রিত রুমাল ঝেড়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমেও যাত্রীকে অচেতন করা হয়ে থাকে। চা, কফি, জুস, ঝালমুড়ি, শরবত, ডাবের পানি, বিস্কুট, হালুয়াসহ নানা ধরনের খাদ্যে নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে অজ্ঞান করা হয়।

এদিকে রাজধানীতে ঘটছে সশস্ত্র ডাকাতির ঘটনা। ডাকাত দল অস্ত্রের মুখে সবাইকে জিম্মি করে লুটে নিচ্ছে মালামাল। ঈদ সামনে রেখে বেড়ে গেছে ডাকাতি। ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটছে প্রায় প্রতিদিনই। গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, রাজধানীতে প্রতিদিন দুই শতাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।

তবে এগুলোর মধ্যে গড়ে ১০টি ঘটনার বিষয়ে থানায় অভিযোগ করা হয়। ছিনতাইয়ের শিকার অধিকাংশ মানুষ পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে যান না।

ধানমন্ডির রাপা প্লাজার আশপাশের বাসিন্দারা জানান, দিনে-রাতে ছিনতাইকারীরা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে কেড়ে নিচ্ছে পথচারীদের সর্বস্ব। যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকার বাসিন্দারা জানান, পুলিশের টহল না থাকায় ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। রাতে নয়, দিনের বেলায়ও পথচারীরা শিকার হচ্ছে ছিনতাইয়ের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব ঘটনার শিকার ব্যক্তিরা সহজে থানা পুলিশ পর্যন্ত যেতে চান না। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, থানায় গেলে পুলিশ আগে প্রশ্ন করে থাকে, ছিনতাইকারীকে চেনা গেছে কি না। ঘটনার শিকার ব্যক্তিরা পুলিশের কাছ থেকে হরহামেশা এ ধরনের প্রশ্ন শুনে এখন আর কেউ বাড়তি ঝামেলায় জড়াতে চান না।

অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে এক ব্যক্তির মৃত্যু : রাজধানীর মগবাজার এলাকায় অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের খপ্পরে পড়ে অজ্ঞাত পরিচয়ের (৩৫) এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। রমনা মডেল থানার এসআই আবদুস সাত্তার জানান, কালো চেক ফতুয়া ও কালো ফুল প্যান্ট পরিহিত ওই ব্যক্তিকে গত বুধবার সন্ধ্যার দিকে মগবাজার মোড় ফুটপাত থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

পরে তাকে ঢাকা মেডিকেলের ১১২ নম্বর ওয়ার্ডের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সকাল ৭টার দিকে তার মৃত্যু হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক আল আমিন জানায়, খাবারের সঙ্গে তাকে বিষাক্ত কিছু খাওয়ানো হয়েছিল। তার বিষক্রিয়ায় তিনি মারা গেছেন।

 

 



সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।