নিম্নে উল্লেখিত যে কোন হেপাটাটিস ভাইরাসের কারণে যদি লিভারের নেক্রো-ইনফ্লামেশন হয় (এক প্রকার প্রদাহ যাতে লিভারের কোষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়) তাকেই ভাইরাল হেপাটাইটিস বলা হয়। ভাইরাস গুলো হচ্ছেঃ
১। হেপাটোট্রপিক ভাইরাসঃ
• হেপাটাইটিস এ ভাইরাস
• হেপাটাইটিস বি ভাইরাস
• হেপাটাইটিস সি ভাইরাস
• হেপাটাইটিস ডি ভাইরাস
• হেপাটাইটিস ই ভাইরাস
• হেপাটাইটিস নন এ-ই ভাইরাস যেমনঃ
হেপাটাইটিস জি ভাইরাস এবং টিটিভি
কিছু নন-হেপাটোট্রপিক ভাইরাস আছে যগুলো ভাইরাল হেপাটাইটিস করতে পারে, যেমনঃ
• এপস্টেইন বার ভাইরাস
• সাইটোমেগালো ভাইরাস
• হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস
• ইয়েলো ফিভার ভাইরাস
• ডেঙ্গু ভাইরাস
চলুন ভাইরাসগুলোর ইনকিউবেশন পিরিওড জেনে নেই (ইনকিউবেশন পিরিওড হচ্ছে ভাইরাস শরীরে ঢোকা থেকে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া পর্যন্ত যে সময় তাই। )
হেপাটাইটিস এ ভাইরাস ১৫ থেকে ৪৫ দিন
হেপাটাইটিস বি ভাইরাস ৩০ থেকে ১৮০ দিন
হেপাটাইটিস সি ভাইরাস ১৫ থেকে ১৫০ দিন
হেপাটাইটিস ডি ভাইরাস ৩০ থেকে ১৮০ দিন
হেপাটাইটিস ই ভাইরাস ১৫ থেকে ৬০ দিন।
ভাইরাল হেপাটাইটিস যদি ৬ মাসের কম সময় পর্যন্ত থাকে একে একিউট ভাইরাল হেপাটাইটিস বলে।
কিন্তু ভাইরাল হেপাটাইটিস যদি ৬ মাসের চেয়েও দীর্ঘকাল স্থায়ী হয় তখন একে আমরা বলব ক্রনিক ভাইরাল হেপাটাইটিস।
যেভাবে রোগটি ছড়ায়ঃ
১। পায়খানা বা বর্জ্য থেকে দূষিত খাবার বা পানির মাধ্যমেঃ
• হেপাটাইটিস এ ভাইরাস
• হেপাটাইটিস ই ভাইরাস
২। ভাইরাস দ্বারা দুষিত সিরিঞ্জ বা ইঞ্জেকশনের সুঁইয়ের মাধ্যমে, বা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর রক্ত গ্রহণ করার মাধ্যমে, বা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সাথে যৌন মিলনের মাধ্যমে অথবা শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় ভাইরাস আক্রান্ত মায়ের কাছ থেকেঃ
• হেপাটাইটিস বি ভাইরাস
• হেপাটাইটিস সি ভাইরাস
• হেপাটাইটিস ডি ভাইরাস
• হেপাটাইটিস জি ভাইরাস এবং টিটিভি।
যে কোন ভাইরাল হেপাটাইটিসের লক্ষণগুলো মোটামুটি একই ধরণের।
নীচে লক্ষণগুলো দেয়া হলো-
মাথা ব্যাথা, জ্বর, গা ম্যাজ ম্যাজ করা, অরুচী, বিশেষ করে সিগারেট বা কফিতে বিস্বাদ লাগা, জন্ডিস দেখা দেওয়া, পেটের উপরিভাগে বিশেষ করে ডান পাশে ব্যাথা করা, লসিকা গ্রন্থি (lymph gland) বড় হয়ে যাওয়া, প্লীহা বড় হয়ে যাওয়া, লিভার বড় হয়ে যাওয়া, হাড়ের জোড়ায় ব্যাথা হওয়া, চামড়ায় ফুসকুরি দেখা দেওয়া। এছাড়াও নাকে কনজেসন, গলা ব্যাথা, কাশি, গায়ে ব্যাথা, শীত লাগা এই লক্ষণগুলোও থাকতে পারে। বমি ভাব বা বমি হওয়া, প্রস্রাবের রং গাড় হলুদ হয়ে যাওয়া এবং পায়খানার রং হাল্কা হয়ে কাদার মত হয়ে যেতে পারে।
এবার আসা যাক ল্যাব টেস্টে আমরা কি পাবঃ
১। SGPT ৪০০ থেকে ৪০০০ ইউনিট/লিঃ পর্যন্ত হতে পারে।
২। প্লাজমা বিলিরুবিন ২.৫ মিঃগ্রাঃ/ডেসি লিঃ থেকে ২০ মিঃগ্রাঃ/ডেসি লিঃ পর্যন্ত হতে পারে। তবে গ্লুকোজ-সিক্স-ফসফেট ডিহাইড্রোজিনেজ এনজাইম ঘাটতিতে বা সিক্ল সেল এনিমিয়াতে বিলিরুবিন বেড়ে ২০ মিঃগ্রাঃ/ডেসি লিঃ থেকে ৪০ মিঃগ্রাঃ/ডেসি লিঃ পর্যন্ত হতে পারে।
৩। Serum alkaline phosphatase বাড়লেও সাধারণত ২৫০ ইউনিট/লিঃ এর বেশী হয় না।
৪। প্রথ্রম্বিন টাইম বেড়ে যেতে পারে।
এরপর আসা যায় ভাইরাল সেরোলজিতেঃ
ক) হেপাটাইটিস এঃ- anti HAV IgM পাওয়া যাবে একিউট হেপাটাইটিস এ ইনফেকশনে। পরবর্তীতে IgG দেখা দিবে এবং IgM চলে যাবে। এই IgG কয়েক বছর পর্যন্ত রক্তে পাওয়া যেতে পারে।
খ) হেপাটাইটিস বিঃ- প্রথমেই যে এন্টিজেন পাওয়া যাবে তা হল HBsAg. তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে এটা কমে যাবে। HBeAg, HBV-DNA এবং DNA polymerase থাকলে বুঝতে হবে ভাইরাস বংশ বিস্তার করছে। HBeAg ভাইরাল হেপাটাইটিস ক্রনিক রূপ নিচ্ছে এই সংকেত ও দেয়। যদি anti HBe দেখা দেয় বুঝতে হবে হেপাটাইটিস বি ভালো হওয়ার পথে। এখানে উল্লেখ্য প্রথম যে এন্টিবডি দেখা দেয় তা হল IgM anti-HBc. পরবর্তীতে IgG anti-HBc ধীরে ধীরে IgM anti HBc কে প্রতিস্থাপিত করে।
Anti HBs কয়েক বছর পর্যন্ত থাকতে পারে এবং পরবর্তীতে যদি হেপাটাইটিস বি ভাইরাস আক্রমণ করে তা প্রতিহত করে এই anti-HBs.
গ) হেপাটাইটিস সিঃ- Anti-HCV এবং HCV RNA পাওয়া যাবে হেপাটাইটিস সি ইনফেকশনে।
ঘ) হেপাটাইটিস ডিঃ- HDAg, IgM or IgG anti HDV হেপাটাইটিস ডি তে পাওয়া যাবে।
ঙ) হেপাটাইটিস ইঃ- IgM anti-HEV হেপাটাইটিস ই তে পাওয়া যাবে।
চিকিৎসাঃ
১। বেড রেস্ট (টয়লেট সুবিধাসহ) যতদিন না জন্ডিস ভাল হয়ে যায়।
২। রোগীকে বিশ্রামে রাখতে হবে যতদিন না লক্ষণমুক্ত হবেন এবং সিরাম বিলিরুবিন ১.৫ এর কম না হবে।
৩। পথ্যঃ রোগীর যা খেতে ইচ্ছা হয় খাবে। তবে কম তৈলাক্ত এবং প্রচুর শর্করাযুক্ত খাবার অরুচিতে বেশী উপযোগী।
পুষ্টিকর খাবারের সাথে গ্লুকোজ, ফলের রস এসব বেশি করে খেতে হবে।
৪। ঔষধ পত্র যতদূর সম্ভব পরিহার করে চলবেন।
এছাড়া কোন কোন ক্ষেত্রে হেপাটাইটিসের জন্য এন্টিভাইরাল ঔষধ ব্যবহার করতে হতে পারে।
ভাল থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।
ঈদের শুভেচ্ছা সবাইকে!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।