...............................................................................................................................................................।
-আচ্ছা,তোমার সাথে আমার পরিচয়ের কতদিন হল??
-কতদিন হবে!!তাইতো,বলতো?
-আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করেছি,ম্যাডাম!
-ও,আচ্ছা!কত!২ বছর হবে।
-মাত্র দুই বছর!দুই বছর তো আমাদের সম্পর্কের ই বয়স;পরিচয় তো তারও প্রায় এক বছর আগে হবে।
-হুমম!!তাই…এত সময় হয়ে গেল!!!!!!!!
-হুমম!!সব মিলিয়ে তিন বছর হল আমাদের পরিচয়ের।
-কিন্তু হঠাত এই প্রশ্ন কেন??
-না…হঠাত মনে আসলো তাই বলে ফেললাম।
-ও,আচ্ছা!কিন্তু হঠাত কোন কিছু মনে আসার পেছনে কোন কারন থাকাটা অযৌক্তিক নয়।
-না,কারন থাকবে কেন?সব কিছুতে এত কারন খুজে বেড়াও কেন???
-আমার উপর তোমার একটা বড় অভিমান লুকিয়ে আছে…এ আমি ভালো করেই জানি। আর তুমিও ভালো করেই জান আমি এক কথার মানুষ। যা বলি তা-ই জীবন দিয়ে করার চেষ্টা করি।
-হুমম,কিন্তু কিছুটা একচেটিয়া ভাব কখনো বড় বেমানান লাগে এটাও নিশ্চয়ই ভালো করে জান!
-অনিকেত,তুমি আমাকে যত কিছুই বলার চেষ্টা করো কোন লাভ হবেনা।
-আমি লাভ লোকসানের কথা ভাবছিনা…কিন্তু কি করবো…এতদিন একটা মেয়ের সাথে সম্পর্ক অথচ……এটা ভাবতেইতো কেমন লাগে। সবাই যখন আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করে আমি কিছু বলতে পারিনা…আমাকে নিয়ে সবাই হাসে।
-আচ্ছা!!এতটা অধৈর্য হচ্ছ কেন??আর তো মাত্র কটা দিন। আমাদের পারিবারিক যতবাধা ছিল এখনতো তার সবকিছুই অবসানের পথে। বিয়ের তারিখও পড়ে গেল গত সপ্তাহে।
কিছুদিন পর-ইতো আমাদের বিয়ে। লোকের কথা যে মিথ্যা হতে চলেছে তা তো এখন তারাই টের পাচ্ছে। এতদিন যখন লক্ষী ছেলের মত অপেক্ষায় থাকতে পেরেছ,তখন আর এই কটা দিন নিশ্চয়ই অসুবিধে হবেনা, একটু অপেক্ষা করো প্লিজজ!!
-অপেক্ষা তো সেই কবেই থেকেই করে আসছি…কিন্তু এই শেষের দিনগুলো যে কাটতেই চাইছেনা। একেকটা দিনকে কখনো মাস কখনো বা বছর মনে হয়। শুধু তোমার সাথে যে দিন থাকি,সেদিনটা খুব তাড়াতাড়ি যায়।
-আমি ঠিক বুঝতে পারিনা,একটা সম্পর্কের মানে কি নিজের সব কিছু তার কাছে বিলিয়ে দেয়া??আর কিছু নয়??তার সাথে যে আমি ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যয় করছি…হাতে হাত রেখে হাটছি…মাথায় হাত বুলিয়ে সবুজ ঘাসে নিজের কোলে ঘুম পাড়াচ্ছি…একসাথে সকল ভাবনা শেয়ার করছি……বৈশ্বিক যত সমস্যা নিয়ে আলোচনা করছি…পাড়াপড়শির গালগল্প থেকে শুরু করে রাজকুমারীর গল্প পর্যন্ত শোনাচ্ছি…একসাথে রেস্টুরেন্টে বসে খাচ্ছি…পছন্দের খোলা জায়গায় একসাথে ঘুরে বেড়াচ্ছি…সুযোগ বুঝে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে রঙ চা থেকে শুরু করে ঝালমুড়ি খাচ্ছি……প্রতিটা মুহুর্তে ব্যাকুল আগ্রহে জিজ্ঞেস করছি ‘তুমি কেমন আছ??’ ‘আংকেল-আন্টি কেমন আছে?’ পিলু,টিলু,লিপু আর ঐ ছোট্ট শিপু(যার জন্য প্রতিদিন ফেরার কালে তাকে দেয়ার জন্য তোমার কাছে কিছু না কিছু দিতে আমার ভুল হতনা)কেমন আছে??আমিতো রোজই জিজ্ঞেস করে খবর নিচ্ছি তোমার বাসার সবাই কেমন আছে?...তোমাকে খুশি রাখতে যখন তখন বৃষ্টি হলেই ছুটে আসি একসাথে ভিজবো বলে…নয়তা একছাতার নিচে করে রাজপথে হাটবো বলে……বুক পকেটে হঠাত নেমে আসা চৈত্রতেও আমি বৃষ্টির ফোটার মত তোমার পাশে থাকছি, তোমাকে পকেটে শুন্যতাকে ঘাপটি মেরে বসে থাকতে দেয়নি……তোমার জন্মদিনে সবসময় চেষ্টা করেছি তোমাকে চমকে দিতে…সারাটাদিন পাশে থাকতে…মন খারাপ করবে ভেবে নিজের ভরা দূর্বিষহ মুহুর্তগুলো তোমাকে বুঝতে না দিয়ে হাস্যজ্জ্ব্যল থেকেছি সবসময়……ঈদ পার্বনে নিজের পোশাক কেনা নিয়ে না ভেবে তোমাকে খুশি করার চেষ্টা করেছি……,……,…এতসব কি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ নয়???যৌন পিপাসার দুয়ার খুলে দিলেই কি ভালোবাসা পুর্নতা পেত??? ঠোটে ঠোটে ব্যারিকেড দিয়ে ভালোবাসার পদ্ম ফোটাতে আমিওতো ব্যাকুল…কিন্তু আমি চেয়েছিলাম কোন এক বিরাট পূর্নতার পর আমরা পদ্ম ফুলে ফুলে সাজিয়ে দেব আমাদের ভালোবাসার সময়কালকে। নোংরা পৃথিবীর বুকে এই ব্যারিকেড যদি পদ্ম না হয়ে অশ্রু ফোটা হয়ে যায় সেই ভয় যে আমাকে রাত-বিরাতে তাড়া করে বেড়ায়। নিষ্ঠুর পৃথিবীর মানুষগুলো যদি আমাদের ছিন্ন করে দেয়,তবে সেই একশ গুন ব্যাথা আমি সইবো কেমন করে??এখনি যে তোমার জন্য হৃদ মাজারে ভূ-কম্পন বয়ে চলেছে। একবার যদি এই ব্যারিকেডে জড়াই তবে রাত বিরাতে শুধু পদ্মই ফোটাতে ইচ্ছে করবে,আর কিছু ভালো লাগবেনা কখনো। আমি তখন তোমার আরো একশ গুন কাছে চলে আসবো।
এখনি তোমার আড়াল হতে ইচ্ছে করেনা…তখনতো আরো ইচ্ছে করবেনা…তুমি পাশে থাকার পরও বিরহ ব্যাথা আমাকে তাড়া করবে। প্লিজজ…আর ব্যরিকেড ব্যাথার কথা তুলে আমাকে ব্যাকুল করোনা। আমার সর্বাঙ্গে এমনিতেই কেবল তোমার জন্য ব্যাকুলতা রাত-বিরাতে। ভালোবাসার বৈধ সার্টিফিকেট হাতে পেয়ে আমি সেই ব্যাকুলতা প্রান ভরে মেটাতে চাই। সমর্পন করে দিতে চাই নিজেকে তোমার কাছে।
অন্তত সে সময়টুকু পর্যন্ত ধৈর্যটা অটুট রাখো!তোমার আর কোন ভিন্ন পরিচয় তুলে ধরোনা প্লিজজ,যা আমাকে কেবল কষ্টই দিবে।
-এত কিছু বলাতে কি আমার ভালো লাগছে এখন??আমি কি হিংস্রতার রুপ দেখাতে চেয়েছি কখনো??হয়ত একটা আক্ষেপ আর অভিমানের জের ধরে মন খারাপ করি মাঝে মাঝে। কিন্তু একটু পর তো আবার ঠিকই হয়ে যাই…তবে এসব কথা না বললেও হত। আর বলেই বা হল কি…নিজেই কেদে চললে…আমাকেও……। আর কান্না করনো প্লিজজ…চল বাসায় ফিরে যাই…এই মুহুর্তে আমাদের বেশিক্ষন বাইরে থাকা ঠিক হবেনা।
কদিন পরেতো আর কোন বাধা থাকবেনা।
অনিকেত আর অনিমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে পারিবারিক ভাবেই। তাদের দুই বছরের প্রেমের সফল সমাপ্তি ঘটবে কয়েকদিন পরেই। অনিকেতের দুই বছরের প্রেম জীবনে সবচেয়ে বড় দুঃখ সে তার প্রিয়তমাকে একটি বার চুম্বন করতে পারেনি। ঠোটে ঠোটে ব্যারিকেড দিয়ে একটি প্রেমের পদ্মও ফোটানো হয়নি এই দুই বছরে।
না,অনিকেতের ব্যার্থতা নয়। অনিমাই এ বাধার প্রাচীর গড়ে দিয়েছে। অনিমা কখনোই চাইতোনা অনিকেত এমন বায়না করুক। অনিকেতের অসহায় করুন আর্তনাদ প্রতিবারই বিফলে গিয়েছে। অনিমার একটাই কথা-‘তোমাকে আমি ভালবাসি,তোমার জন্য আমি সব কিছু করতে রাজি,কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমরা আমাদের সম্পর্কের কূল-কিনারা ঠিক না করে আমার সব কিছু তোমাকে বিলিয়ে দিই।
আমি যদি তোমার থাকি তবে আমি চিরজীবনই তোমার। সুতরাং এই প্রেম সময়ে উতকোচ ভালোবাসা দেখাতে গিয়ে নিজেকে বিলিয়ে দেয়া মোটেও সমীচীন নয় এমনকি হওয়া উচিতও নয়। ’ অনিকেত অনিমাকে অনেক ভালোবাসে। তাই অনিমার কথাই শিরোধার্য। তবুও কখনো কখনো অনিমার মায়াবী চেহারায় মাতাল হয়ে অবাধ্য মনের পাল্লায় পড়ে অনিমার কাছে এর জন্য নানা বায়না ধরে।
কখনো বা নিজেই কিছুটা রাগ বা অভিমানে নিশ্চুপ বসে থাকে অনেকটা সময়। অনিকেত যতই মন খারাপ করুক অনিমা তার সিদ্ধান্তেই অটল থেকে যায়।
অনিকেত আর অনিমার বিয়ে হয়ে গেছে। দুই পরিবারের হাসি আনন্দ একসাথ হয়ে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হল কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই। বাসর সয্যায় অপেক্ষমান অনিমা।
অনিকেত একটু পরেই প্রবেশ করবে। বন্ধু বান্ধবদের নানা দুষ্টমিকে ঝেড়ে ফেলে তীব্র ব্যাকুলতা নিয়ে অনিমার ছায়ায় এসে দাড়াল। অনিমাকে এখনো ভালোভাবে দেখা হয়নি। বউ সাজে অনিমাকে কেমন লাগছে??এমনিতে অনিমা আমার কাছে সব সুন্দরের উর্ধ্বে। আজ বউ সাজে নিশচয়ই সে সৌন্দর্য পাহাড়সীমা অতিক্রম করেছে।
এতদিনের পরিচয়,কত দুষ্টমি না হয়েছে একসাথে,কতসময় কেটেছে হাতে হাত রেখে,দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমেছে তবুও হাত ছাড়েনি অনিমা। অথচ আজ অনিমাকে কেমন অচেনা লাগছে। একেবারে লাজুক,সেকেলের নববধুদের মত,ঘোমটা ফেলে একেবারে নিশ্চুপ নিজ জায়গাতেই,স্থির মূর্তির মত। কেদে চলেছে অবিরাম,কখনো একটু কেপে উঠছে কান্নার রোলে। অনিকেত কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে।
দৃষ্টি যেন কিছুটা অতীতে। এই অনিকেতের বউ হতে না পারলে সে আর কারো বউ হবেনা বলেছে কত হাজারবার,বিয়ের পরের নিজেদের ভবিষ্যত নিয়ে কত হাজার পরিকল্পনা আর স্বপ্নের ছক আকা হয়েছে একসাথে, বউ সাজার কথা কত হাজারবার বলেছে অনিমা,বিয়ের প্রথম রাতে কত দুষ্টমি করবে,এসব নিয়ে কত না কথা কাটাকাটি আর মিষ্টি ঝগড়া হয়েছে অনিকেত আর অনিমার মাঝে। এতদিনের পরিচিত মানুষের বউ হয়ে আসার পরও অনিমা কেমন ফুপিয়ে কাদছে। আহা!মেয়েরা বোধহয় এমনি। কী ধৈর্য না সৃষ্টিকর্তা তাদের দিয়েছেন!পিতা মাতা পরিবার পরিজন ছেড়ে অন্যের ঘরে এসে অন্যের পরিবারকে নিজের আপন করে নেয়,পিতা বানিয়ে নেই,মাতা বানিয়ে নেয়,ভাই,বোন সবই।
কত না ব্যাথা বুকে!এতদিন প্রান ভরে যে বাবাকে বাবা বলে ডাকা হয়েছে,যে মাকে মা বলে ডাকা হয়েছে। বিয়ের পর অন্যের পরিবারে এসে অন্য কাউকে এমন ভাবে ডাকতে হচ্ছে,সেবা করতে হচ্ছে। তাদের মাঝে খুজে নিতে হচ্ছে নিজের বাবা মায়ের আদর। বাকী জীবনের পুরোটা সময় এই অন্যের পরিবারে সুখ,দুঃখ,জমানো অভিমান সব কিছু উপেক্ষা করে স্বামীকে আকড়ে ধরে কাটাতে হয়। সত্যি তাদের এই বিশাল ত্যাগের প্রতি আমাদের পুরুষদের কৃতজ্ঞ চিত্তে সম্মান করা উচিত।
এসব ভাবতে ভাবতে অনিকেতের চোখ বেয়েও দু’ফোটা অশ্রু গড়ায়ে পড়ে। অনিকেতের অশ্রুশিক্ত চেহারা বড়ই অসহায় দেখাচ্ছে অনিমার কাছে,অনিমার অশ্রুফোটা যেমন অনিকেতের কাছে লুকাতে পারেনি তেমনি অনিকেতের অশ্রুফোটাও ধরা পড়ে গেছে অনিমার কাছে। পরনের টুকটুকে লাল শাড়ির আচল দিয়ে তেজদীপ্ত রঙ ছড়ানো মেহেদী হাতের পরশে অনিকেতের কান্না মুছে দেয় অনিমা। অনিমা প্রবল স্রোতের ঢেউয়ের মত গড়িয়ে গিয়ে অনিকেতকে ঝাপটে ধরে অঝোর ধারায় কান্না করে চলে। অনিকেত অনিমাকে স্বান্তনা দেয়ার চেষ্টা করে।
অনিকেত নিজেও বুঝে উঠতে পারছেনা কি করবে। আজ তাকে বড়ই অচেনা,বেমালুম,বোকা,অবোধ,নির্বোধ মনে হচ্ছে। হুমম,আজ অনিকেত অন্য পরিচয়ে অনিমার সামনে দাঁড়িয়ে তাই। অনিকেত আজ সংসার জীবনে প্রবেশ করছে স্বামীর তোকমা গায়ে মেখে। সংসার জীবন বড় কঠিন তা যেন আজ প্রথম দিনেই তারা অনুধাবন করে চলেছে।
এই জীবনে পুরুষ নারী উভয়কেই অনেক বেশি দ্বায়িত্ববান ভুমিকা পালন করতে হয়। অনিকেত অনিমাকে সাহস আর সান্তনা দিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করে,প্রতিজ্ঞা করে শত ঝড় ঝঞ্চ্বায় সারাটাজীবন ঠিক এভাবেই পাশে থাকার, অনিমাকে বুকে আগলে রাখার। অনিকেতও ভুল করেনি নিজ হাতে অনিমার চোখের জল মুছে দিয়ে প্রথম রাতেই নিজেকে একজন আদর্শ স্বামীর পরিচয় দিতে।
কান্নার জল শুকিয়ে দুজনে এখন দুষ্টমিতে মগ্ন। এতদিনের পরিচয় সত্ত্বেও আজ যেন আবার নতুন করে দুজনে পরিচিত হল,বিনিময় হল কিছু স্বপ্নের।
অনিমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে। বউ সাজে তাকে এত সুন্দর লাগবে অনিকেত ভাবতে পারেনি। অনিমার মেহেদী রাঙ্গানো হাতটা অনিকেতের খুব পছন্দ হয়েছে,সেই শুরু থেকেই কেবল অনিমার হাতটায় কেমন করে অনিকেত অঙ্গুলি দিয়ে খেলা করছে।
কখনো এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে অনিমার মুখপানে। অনিকেত মনের ভেতর খুব উচ্ছ্বাসায় হাসছে অনিমার ঠোট দুটোর দিকে তাকিয়ে।
আজ যে আর কোন বাধা নেই। এই ঠোট দুটি নিয়ে কত গর্বই না অনিমার ছিল। দুই বছরের প্রেম জীবনে একটিবার ঠোটের স্পর্শ পেতে দেয়নি অনিমা শুধু এদিনটির অপেক্ষায়। আগের তুলনায় এখন যেন সেই ঠোট দুটো আর আকর্ষনীয়,পরিপূর্ন কিংবা আরো মায়াবী দেখাচ্ছে। অনিকেতের এমন চেয়ে থাকায় অনিমার দৃষ্টি মিলতেই দুজনে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।
এই বাসরশয়ানে অনিমাকে দেখে অনিকেত যতই ব্যাকুল হচ্ছে অনিমা তার দুষ্টমিতে সে ব্যাকুলতা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে নিজেকে আগলে রেখে।
কনেঃআচ্ছা,তোমাদের না একটা কুল গাছ আছে!আমার জন্য মাঝে মাঝে নিয়ে আসতে,
বরঃহুমম!আজ এই সময়ে,হঠাত তোমার কুলের কথা মনে পড়ল কেন?
কনেঃখেতে ইচ্ছে করছে,তাই।
বরঃএ বাড়িতে যখন এসেছ,তখন নিশ্চয়ই খাবে। কিন্তু আজকের রাতে এমন বায়না ধরোনা প্লিজজ। মানুষের জীবনে এটা একটা স্মরনীয় রাত,এই রাত টা একবারই আসে।
কনেঃহুমম!তাইতো আজ খেতে ইচ্ছে করছে,রাতটাকে স্মরনীয় করে রাখবো।
বরঃতাই বলে কূল খেয়ে??আর কিছু না?রাত তো এমনিতেই শেষ হয়ে যাবে।
কনেঃদেরি করলে শেষ তো হবেই।
বরঃএখন বের হলে কেউ দেখলে কি ভাববে বল তো!!
কনেঃসবাই ঘুমিয়ে পড়েছে,কেউ টের পাবেনা…
বরঃযেতেই হবে???
কনেঃজানিনা…
বরঃযাচ্ছি…কে জানে কপালে কি আছে!!
বউয়ের কূল খাওয়ার বায়না মেটানোর জন্য শেষ পর্যন্ত বের হতেই হল। অনিমা অনেক নাছোড়বান্দা অনিকেত এ ভালো করেই জানে।
আর আজ প্রথম দিনেই বউয়ের সাথে কঠোর ভাব দেখানো মোটেও উচিত হবেনা মনে করে বের হল। বউয়ের জন্য রাতের আধারে কূল পেড়ে আনতেই হল।
বরঃএই নাও…
কনেঃহুমম,থ্যাংকস!
বরঃহুমম, হয়েছে।
কনেঃলবন মরিচ কই?
বরঃএটাও লাগবে?
কনেঃহুমম,তাহলে আমি খাবো কিভাবে??যাও,রান্নাঘর থেকে নিয়ে আস!
বরঃআজ প্রথম দিনেই এই অবস্থা,বাকি দিনগুলোতে যে কী হবে,খোদা-ই ভালো জানেন।
কনেঃহুমম,বিয়ে তো আগে করেননি,এবার বুঝবেন মজা।
বরঃমানে??আপনি মনে হয় এর আগে করেছেন কয়েকটা??
কনেঃহুমম,করেছি তো!!!
বিয়ের প্রথম রাত কোথায় বউয়ের সাথে আদরমাখা বুলিতে রাত পার করবেন তা না,রাতের আধারে গিয়ে কূল পাড়তে হচ্ছে। বিরক্তি সত্ত্বেও অনিকেত রান্না ঘর থেকে লবন মরিচও এনে দিলেন অনিমাকে।
কনেঃহুমম…গুড বয়…মাই সুইটো হাসবেন্ড…!!এবার আমার পাশে চুপটি করে বসে থাকো।
বরঃহুমম,তার আগে বল,আর কি কি আনতে হবে,সব একসাথে নিয়ে আসি…
কনেঃনা,আপাতোত আর কিছু লাগবেনা,আপনি গল্প শোনাতে থাকেন আমি শুনবো আর কূল খাবো।
বিরক্ত লাগলেও বউয়ের এমন মিষ্টি দুষ্টমি তার মন্দ লাগছে না।
তবে অপেক্ষাটা একটু বেশী হয়ে যাচ্ছে তা ভেবে মাঝে মাঝে বিরক্তি ফুটে উঠে চেহারায়।
কনেঃও আচ্ছা!ওখানে একটা ছবির আলবাম দেখলাম;সবাইকে চিনতে পারছিনা,আমাকে একটু ছবিগুলো দেখাওতো একটা একটা করে…সবার সাথে পরিচিত হই।
বরঃকোথায় আমিতো দেখলাম না,তুমি কোথায় খুজে পেলে?
কনেঃপাবেনাতো!!! তোমারতো নিজেরই খোজ খবর থাকেনা।
বরঃসেজন্যই তো তোমাকে এ বাড়িতে নিয়ে এসেছি,আমাকে সহায়তা করার জন্য।
কনেঃঐ যে বুক শেলফের উপরে ডান দিকে।
বউ কূল খাচ্ছে আর বর পাশে বসে বসে আলবামের মানুষ গুলোর সাথে নতুন বউয়ের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে।
বরঃকূল খাওয়াও শেষ,আলবামও দেখা শেষ,এবার কি বাতিটা নেভানো যায়??
কনেঃনা…না…!!বাতি নিভাবে কেন????বাতি নেভালে আমি ভয় পাই।
বরঃআজও ভয়…!! আমি সাথে থাকার পরও?
কনেঃআচ্ছা,তোমার ল্যাপটপটা একটু অন করবে??
বরঃকেন??
কনেঃমুভি দেখবো।
………………
কনেঃনা,এতক্ষন ধৈর্য্য নিয়ে মুভি দেখা যাবে না আর তাছাড়া তুমি খুব বিরক্ত বোধ করছ। ল্যাপটপটা বরং বন্ধ কর।
বউয়ের মুখে এমন শোনার পর বর বোধ করি একটু খুশিই হল,তবুও বউয়ের মন রক্ষার্থে নিজের বিরক্তিটা একটু ঢাকা দেয়ার চেষ্টা করল।
বরঃআরে না না…কি বল!!আমি বিরক্তি বোধ করছিনা।
কনেঃনা করলে ভালো,আমি দেখবোনা,ইচ্ছে করছেনা এখন।
ল্যাপটপ বন্ধ করে যথাস্থানে রাখে ফিরে না আসতেই,বউয়ের নতুন বায়না গর্জে উঠল।
কনেঃঐ যে শেলফ থেকে রবীন্দ্রনাথের কবিতার ঐ বইটা(সঞ্চয়িতা) একটু নাওতো।
বরঃহুমম,এই নাও!
কনেঃনা,আমাকে দিতে হবেনা…বইটা নিয়ে তুমি ওখানেই দাড়াও।
বর কিছুটা চমকে উঠল। হায়রে কি জানি কিসের ভুত আবার তার মাথায় চাপল। এখন আবার কি করতে বলে। কবিতা শোনাতে বলবে এটুকু বুঝতে পেরেছি,কিন্তু এখানে দাড়ানোর মানেটাতো কিছু বুঝতে পারছিনা।
কনেঃহুমম,এবার বইটা খোল।
বরঃখুললাম।
কনেঃঐ কবিতাটা বের কর-‘তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি,শতরুপে শতবার…’
কিছুক্ষন খোজাখুজির পর বের করলেন।
বরঃহুমম,বের করেছি,…এবার!
কনেঃএবারও বলে দিতে হবে,এখনো বুঝলেনা!!এবার আমাকে এটা আবৃত্তি করে শোনাও।
বরঃঠিকাছে,কিন্তু কাছে এসে পাশে বসেওতো শোনাতে পারি!!
কনেঃহুমম,পারো!কিন্তু আমি তা চাচ্ছিনা,আমি চাই তুমি ওখানে দাড়িয়েই আমাকে শোনাবে।
বরঃআমি কি আবৃত্তি প্রতিযোগিতার অডিশন দিতে আসলাম কিনা বুঝতেছিনা!!
কনেঃএত ভনিতা করে লাভ নেই…শুরু কর…
বর জানে তাকে শোনাতেই হবে…কি আর করা…শোনাতেই হল। কবিতা আবৃত্তি শেষ। বউয়ের মুখে তৃপ্তির হাসি। কবিতা আবৃত্তি শেষের পর নিজেকেও কেমন ফুরফুরে লাগছে। আসলে কবিতা এমনই।
মূহুর্তে মানুষের মনকে পরিশুদ্ধ করে দেয়।
শুরুর আগে প্রচন্ড বিরক্তিভাব মনে থাকলেও শেষ করার পর বিরক্তির ছিটেফোটাও যেন নেই।
কনেঃহুমম,অনেক ধন্যবাদ!এবার বইটা যথাস্থানে রেখে চলে আসো।
বউয়ের আদর মাখা বুলিতে মনটা যেন আরো গলে গেল। দ্রুতই বউয়ের পাশে এসে স্থান করে নিল।
বরঃ আসিয়াছি কাছে মনে যাহা আছে
বলিবারে চাহি সমুদয়।
আপনার ভার বহিবারে আর
পারে না ব্যাকুল এ হৃদয়।
আজি মোর মন কী জানি কেমন,
বসন্ত আজি মধুময়,
আজি প্রাণ খুলে মালতীমুকুলে
বায়ু করে যায় অনুনয়।
যেন আঁখি দুটি মোর পানে ফুটি
আশা-ভরা দুটি কথা কয়,
ও হৃদয় টুটে যেন প্রেম উঠে
নিয়ে আধো-লাজ আধো-ভয়।
তোমার লাগিয়া পরান জাগিয়া
দিবসরজনী সারা হয়,
কোন্ কাজে তব দিবে তার সব
তারি লাগি যেন চেয়ে রয়।
জগৎ ছানিয়া কী দিব আনিয়া
জীবন যৌবন করি ক্ষয়?
তোমা তরে, সখী, বলো করিব কী?
কনেঃ আরো কুল পাড়ো গোটা ছয়।
বরঃতবে যাই সখী, নিরাশাকাতর
শূন্য জীবন নিয়ে।
আমি চলে গেলে এক ফোঁটা জল
পড়িবে কি আঁখি দিয়ে?
বসন্তবায়ু মায়ানিশ্বাসে
বিরহ জ্বালাবে হিয়ে?
ঘুমন্তপ্রায় আকাঙ্খা যত
পরানে উঠিবে জিয়ে?
বিষাদিনী বসি বিজন বিপিনে
কী করিবে তুমি প্রিয়ে?
বিরহের বেলা কেমনে কাটিবে?
কনেঃ দেব পুতুলের বিয়ে।
অতঃপর মিষ্টি কথনে পরান জুড়াতে জুড়াতে তারা পরস্পরের কাছে রাত্রি সমর্পন করে দিল……!
(রবি ঠাকুরের নবদম্পতির প্রেমালাপ কবিতা অবলম্বনে রচিত)
৩০ আগস্ট,২০১৩
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।