বনানী থেকে বিশ্বরোড আসতে ঘড়ি ধরে সময় লাগছে পাঁচ থেকে সাত মিনিট।
কুড়িল ও এয়ারপোর্ট ফ্লাইওভার এবং বনানী ওভারপাস হওয়ার আগে এখানে আধা ঘণ্টারও বেশি লেগে যেত। ফ্লাইওভার দুটি যেমন সময়ের দূরত্ব কমিয়েছে, তেমনি সহজ করেছে পথচলা। এখন সিগন্যালে বসে ট্রাফিক পুলিশের হাতের ইশারার প্রহর গুনতে হয় না। বনানী সিগন্যাল পার হলে এক টানেই চলে আসা যায় জিয়া কলোনি।
আর সেখান থেকে আর্মি গলফ ক্লাব এলেই আপনি পেঁৗছে যাচ্ছেন কুড়িল। এয়ারপোর্ট। ভাসানটেক। অথবা বারিধারা। বনানী রেলগেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকা বা কুড়িল রেলগেটে এসে লম্বা লাইনে অপেক্ষার দিন শেষ হয়ে গেছে এ দুটি ফ্লাইওভারের বদৌলতে।
গাড়ির হাইড্রোলিক হর্ন আর প্রচণ্ড রোদ-গরমের অসহ্য যন্ত্রণা থেকেও রেহাই দিয়েছে এ ফ্লাইওভার। মানুষের জীবনকে করেছে সহজ। সময় বাঁচিয়েছে অনেক। এর সঙ্গে বাড়তি সুবিধা যোগ করেছে বনানী রেলগেটের ওপর নির্মিত ওভারপাসটি। এটির কারণে আর রেলগেটের সিগন্যালে বসে থাকতে হয় না।
এমনকি রেলগেটের কাছে যাওয়ারও প্রয়োজন পড়ে না। এ ছাড়া কুড়িল ফ্লাইওভার বা এয়ারপোর্ট-মিরপুর ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে বা বাসে চড়ে গেলে রাতের পরিবেশ দেখে মন জুড়িয়ে যায়। বিশেষ করে নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকার গাছগাছালি আর কুড়িল চৌরাস্তার মাঝের ছোট লেকে চোখ আটকে যায়। নিয়নের আলোয় সবুজকে আরও গাঢ় সবুজ মনে হয়। দিনের বেলায়ও বেশ মনোমুঙ্কর এখানকার পরিবেশ।
দিনে অথবা পড়ন্ত বিকালে অনেকেই এখানে বেড়াতেও আসছেন। শুধু তাই নয়, রাতেও চোখে পড়ে উৎসুক জনতা। কুড়িল বিশ্বরোডের চেহারাই যেন পাল্টে গেছে আজকাল। আগে গাজীপুর, টঙ্গী বা এয়ারপোর্ট এলাকায় আসা রামপুরা বা যাত্রাবাড়ীর বাসগুলো দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকত। এমনকি একটি ট্রেন যাওয়ার পর আরেকটির জন্য অপেক্ষা করতে হতো একই সিগন্যালে।
গাড়ির দীর্ঘ সারি খিলক্ষেত এলাকাও ছাড়িয়ে যেত। অথচ বর্তমানে কুড়িল রেলগেটটি পারাপারের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কেননা একমাত্র পথচারী ছাড়া কোনো যানবাহন পারাপারের প্রয়োজন পড়ে না। একসময় হয়তো এ রেলগেটে গেটম্যানেরও প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে। কেননা এখানকার রাস্তাঘাটের কাজ এখনো শেষ হয়নি।
রাস্তাগুলোর কাজ প্রায় সমাপ্ত। একই অবস্থা চোখে পড়ে মহাখালী ফ্লাইওভারে। জাহাঙ্গীর গেট এলে নিমিষেই চলে আসা যায় বনানী। তবে মাঝেমধ্যে বনানী-কাকলী সিগন্যালের গাড়ির জট ভোগান্তিতে ফেলে মানুষকে। তখন মহাখালী ফ্লাইওভারের ওপর গাড়ির দীর্ঘ সারি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
তবে এখন এ দৃশ্য তেমন চোখে পড়ে না। হঠাৎ কোনো সমস্যা না হলে এ ধরনের ঘটনা ঘটে না। খিলগাঁও রেলগেটে এখন আর বাসের জটলা থাকে না। তবে অব্যবস্থাপনা আর ট্রাফিক আইন মেনে না চলায় হিউম্যানহলার ও রিকশার জট লেগেই থাকে। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টার আটকে থাকার অভিজ্ঞতা পুরনো দিনের।
এখানকার রিকশাজট এখন সহনীয়। রাজারবাগ থেকে বাসাবো, রাজারবাগ থেকে মালিবাগ অথবা মালিবাগ থেকে কমলাপুর রেলগেট যেতে মাত্র কয়েক মিনিটের প্রয়োজন। এখানেও সময়ের দূরত্ব কমিয়ে এনেছে খিলগাঁও ফ্লাইওভারটি।
গত শুক্রবার উদ্বোধন হওয়া গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের সুফলও পেতে শুরু করেছে ঢাকাবাসী। এর ফলে সায়েদাবাদের ধুলার অাঁধারে যানজটে বসে থাকার দিন শেষ হয়ে এসেছে।
সায়েদাবাদ থেকে যাত্রাবাড়ী যেতেই বসে থাকতে হতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এমনকি ঢাকা থেকে কুমিল্লা যেতে যে সময় লাগে, এর চেয়েও বেশি সময় লাগত গুলিস্তান থেকে চিটাগাং রোড পর্যন্ত যেতে। এখন আর সে যন্ত্রণা নেই। গুলিস্তান থেকে কুতুবখালী যেতে মাত্র পাঁচ মিনিটের ব্যবধান। পলাশী থেকে কুতুবখালী ১০ মিনিট।
সায়েদাবাদ থেকে কুতুবখালী পাঁচ বা সাত মিনিট। ফলে ঢাকা-মাওয়া রোডের যানজটও কমে এসেছে। সেই সঙ্গে অসহনীয় দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রামগামী মানুষ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।