কিছু মুহূর্ত ফ্রেমে বন্দী করে রাখার মতোই হয়ে থাকে, যা একান্ত আপনার করে রাখতে ইচ্ছা করে আজীবন। সোহাগ গাজীরও নিশ্চয়ই এমন কিছু মনে হচ্ছে! রেকর্ড তো অনেকেই গড়ে। কিন্তু কোনো অধ্যায়ের সূচনাকারীর মর্যাদাই যে আলাদা। সোহাগ গাজী একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনাকারী। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম একই ম্যাচে সেঞ্চুরি এবং হ্যাটট্রিকের মালিক।
১০১ রানে অপরাজিত ও হ্যাটট্রিক (মোট ৮ উইকেট)। সেঞ্চুরি এবং ৮ উইকেট আরও রয়েছে একই ম্যাচে। ইংলিশ কিংবদন্তি ইয়ান বোথাম ১৯৭৮ সালে লর্ডসে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১০৮ রান ও ৮ উইকেট নিয়েছিলেন। কিন্তু কিংবদন্তিদেরও পেছনে ফেললেন গাজী হ্যাটট্রিক করে। রবিবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড টেস্টের পঞ্চম দিনে যা হলো তা বর্ণনারও অতীত।
সোহাগ গাজীর দুঃসাহসিক অভিযান শেষ পর্যন্ত ইতিহাসের পাতায় নতুন অধ্যায় যোগ করবে, এমনটি তিনি নিজেও ভাবেননি। অন্য কেউই কি ভেবেছিল! নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসের ৮৫তম ওভারে এন্ডারসন, ওয়াটলিং ও ব্রেসওয়েলকে দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ বলে আউট করে টেস্টের ৪০তম হ্যাটট্রিক করেন সোহাগ গাজী। বাংলাদেশের দ্বিতীয়। শেষ দিনে সোহাগ গাজীর এই উত্থান চট্টগ্রাম টেস্টে কিছুটা হলেও আড়ালে ঠেলে দিয়েছে মমিনুল হকের কীর্তি। দুই ইনিংসে ২০৩ রান ও একটি উইকেট নিয়ে মমিনুলই হতে পারতেন ম্যাচ-সেরা।
একটি সেঞ্চুরি এবং হ্যাটট্রিক আড়ালে ঠেলে দিল তাকে। কিন্তু লাভটা তো দলেরই! ম্যাচটা যে সবাই মিলে খেলতে হয়, এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্তও বলা যায় একে। কিছুদিন আগেও বাংলাদেশ দল বলতে বোঝাত সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালকে। দুজনের কাঁধে ভর দিয়েই চলতে হতো টাইগারদের। এ দুজন খারাপ খেলা মানেই দলের পরাজয়।
দৃশ্যটা বদলে দিলেন মমিনুল হক এবং সোহাগ গাজীরা। সাকিব-তামিমের কাঁধ থেকে বোঝা কমিয়ে দিলেন তারা। ভক্তরাও এবার নিশ্চিন্তে আস্থা রাখতে পারেন দলের ওপর। সাকিব-তামিম আউট হলে যারা বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখা বন্ধ করতেন, তাদের জন্য গাজী-মমিনুলরা নতুন ধারা নিয়ে এসেছেন। চট্টগ্রাম টেস্ট ড্রতেই শেষ হলো।
কিন্তু এ ড্রয়ের যে প্রাপ্তি এর মূল্য অনেক। আস্থার যে বিকেন্দ্রীকরণ হলো চট্টগ্রামে তা সত্যিই অসাধারণ। এখন আর বাংলাদেশ একক তারকানির্ভর কোনো দল নয়। বাংলাদেশের ক্রিকেট চট্টগ্রাম থেকে এই ইতিবাচক দিক নিয়েই ঢাকায় ফিরেছে। সঙ্গে আছে দুর্দান্ত আত্দবিশ্বাসও।
সাকিব আল হাসান টেস্ট ক্রিকেটে বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। এ তালিকায় সোহাগ গাজীর নাম আসার কথা নয়। সাকল্যে তিনি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন সাতটি। এর মধ্যে ৩৪ উইকেট এবং ২৪৬ রান করেছেন। তবে এত দিনের বোলার পরিচয়ে সোহাগ গাজী নতুন মাত্রা যোগ করলেন।
এবার জোর গলায় তাকে অলরাউন্ডার বলতে পারেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। বলতে পারেন, সময় এখন তারই। চট্টগ্রামে যে কীর্তি গড়েছেন, এর ধারাবাহিকতা থাকলে সাকিব আল হাসানের পাশে স্থান পেতে খুব বেশি দেরি হবে না তার। সোহাগ গাজীর ভবিষ্যৎটা ভবিষ্যতের হাতেই তুলে দেওয়া যাক। আপাতত ঢাকা টেস্ট নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে টাইগারদের।
ঈদের ছুটি শেষে ২১ অক্টোবর থেকে মিরপুর স্টেডিয়ামে শুরু হচ্ছে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। চট্টগ্রামের প্রাপ্তি এখানে কতটা কাজে লাগাতে পারবে বাংলাদেশ, তা-ই দেখার বিষয়!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।