আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেরা দশ বলিউডি বায়োপিক

দ্য ডার্টি পিকচার
মেরিলিন মনরো একসময় বলেছিলেন, “একজন অভিনেত্রীর জন্য ‘সেক্স সিম্বল’ খেতাবটি যথেষ্ট ভারী। বিশেষ করে তখন, যখন মানুষটি ক্লান্ত, ব্যথিত এবং কিংকর্তব্যবিমূঢ়। ”
সিল্ক স্মিতার জীবনের সঙ্গে এই লাইনগুলো মিলে যায়। হতদরিদ্র পরিবারে জন্মে স্বপ্ন দেখেছিলেন নায়িকা হওয়ার; ওই স্বপ্নই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায় পরবর্তীতে। নিজের যৌনাবেদনময়ী রূপ দিয়ে ভুলিয়েছেন শত পুরুষকে, সাহসী অভিনয় করে দর্শকের মনে শিহরণ জাগিয়েছেন অসংখ্য বার।

বাধাহীন এক উন্মাতাল জীবন কাটিয়েছেন, হয়েছেন অনেকের শয্যাসঙ্গী-- এমনই ছিলেন এক সময়ের পর্দা কাঁপানো দক্ষিণী অভিনেত্রী সিল্ক স্মিতা। তার সবই ছিল, ছিল না কেবল একাকীত্ব ঘুচাবার কোনো পথ। ছিল না একটু ভালোবাসার আলিঙ্গন পাওয়ার সুযোগ। খ্যাতি, অর্থবিত্ত সবই যখন উপভোগ করা হয়ে যায়, তখন চোখে পড়ে রূপালি জগতের চোখ ধাঁধানো গ্ল্যামারের পেছনের আসল রূপ।
প্রযোজক একতা কাপুর যখন সিদ্ধান্ত নিলেন সিল্ক স্মিতাকে নিয়ে সিনেমা নির্মাণের, তখন ডাক পড়ল পরিচালক মিলন লুথারিয়ার।

সেই সঙ্গে ছিলেন প্রথমবারের মতো পর্দায় আবেদনময়ী রূপে হাজির হওয়া বিদ্যা বালান। বেশ কয়েকটি ফ্লপ সিনেমা তৈরির পরও মিলনের উপর একতার বিশ্বাস ঠিকই কাজে দিয়েছিল।
ট্রেইলার মুক্তির সঙ্গে সঙ্গে বিশাল ও শেখরের সংগীতে বাপ্পি লাহিড়ির গাওয়া ‘উ লালা উ লালা’ গানটি প্রকাশের পরপরই ছড়িয়ে গেছে ভাইরাসের মতো।
অবশেষে ২০০১ সালের ২ ডিসেম্বর মুক্তি পেল ‘দ্য ডার্টি পিকচার’। মুক্তির পরপরই হৈচৈ ফেলে দিল সিনেমাটি।

শুধুমাত্র বক্স অফিসেই নয়, সমালোচকদের কাছেও বছরের সেরা সিনেমার খেতাব নিয়েই ছাড়ে ‘দ্য ডার্টি পিকচার’। সে বছর পুরস্কারের মৌসুমে প্রায় একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করে এই সিনেমা। তিনটি জাতীয় পুরস্কার, তিনটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কারসহ সর্বমোট ৫৪টি পুরস্কার অর্জন করে ‘দ্য ডার্টি পিকচার’।
তবে সিনেমায় নাসিরউদ্দিন শাহ কিংবা এমরান হাশমির অভিনয় যতই ভালো হোক না কেন, সবকিছুই ফিকে হয়ে গেছে বিদ্যা বালানের অসাধারণ পারফরম্যান্সের সামনে। বলিউডের সব ‘চিকনি চামেলি’ নায়িকাদের ভিড়ে নিজের স্থূলকায় শরীরের চলনবলন দেখিয়ে ভক্তদের রীতিমতো দিশেহারা করেছেন বিদ্যা।

তারপর থেকেই শুরু হয় স্থূলকায় অভিনেত্রীদের নতুন ট্রেন্ড। তবে শুধুমাত্র ‘সেক্সসিম্বল’ হয়েই থাকেননি, নিজের অভিনয় দিয়ে মাথা নত করতে বাধ্য করেছেন সমালোচকদেরও।
 

মঙ্গল পা-ে: দ্য রাইজিং
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শোষণের বিরুদ্ধে প্রথম আওয়াজ উঠিয়েছিলেন যে মানুষটি, তিনি ছিলেন না কোনো নেতা কিংবা প্রভাবশালী ব্যক্তি। ব্রিটিশ কোম্পানি সরকারের সামান্য একজন সৈনিক মঙ্গল পা-ে ভারতীয়দের মধ্যে প্রথমবারের মতো জ্বালিয়েছিলেন স্বাধীনতার আকাক্সক্ষার ক্ষুদ্র এক স্ফুলিঙ্গ। ইতিহাসে যদিও একে বলা হয় ‘সিপাহী বিদ্রোহ’।

কিন্তু ভারতীয়দের জন্য এটাই ছিল স্বাধীনতার জন্য প্রথম যুদ্ধ। আর ভারতের প্রথম মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন মঙ্গল পা-ে।
আমির খান আজ বলিউডে পরিচিত ‘মিস্টার পারফেকশনিস্ট’ হিসেবে; কিন্তু অনেকেই জানেন না তার এই খেতাবের প্রচলন হয়েছিল ‘মঙ্গল পা-ে: দ্য রাইজিং’ সিনেমায় অভিনয়ের পর থেকেই। ‘দিল চাহতা হ্যায়’ মুক্তির পর চার বছর বিরতি দিয়ে ‘মঙ্গল পা-ে’র মাধ্যমে ২০০৫ সালের ১২ অগাস্ট বড়পর্দায় ফিরে আসেন আমির। তবে এই সময়ে তার কোনো সিনেমা মুক্তি না পেলেও ‘মঙ্গল পা-ে’র জন্য তার ব্যাপক প্রস্তুতি প্রায়ই সংবাদের শিরোনাম হয়েছিল।

এই সিনেমায় তার অভিনয় বলিউডে আমির খানকে আলাদা একটি পরিচিতি এনে দিয়েছে যা আজও অব্যাহত আছে।
ইয়াশ রাজ ফিল্মস প্রযোজিত ‘মঙ্গল পা-ে: দ্য রাইজিং’ সত্যিকার অর্থে যে কোনো বায়োপিকের মতো নিরস কোনো সিনেমা নয়। রানি মুখার্জি এবং আমিশা প্যাটেলের পাশাপাশি ব্রিটিশ অভিনেতা টোবি স্টিফেনসের তুখোড় অভিনয়ের পাশাপাশি এ আর রহমানের সংগীত ছিল উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করার মতো। ঐতিহাসিক কাহিনি হলেও বাণিজ্যিক ধারার সব রকমের মালমসলা রয়েছে এতে। আর তাই ভারতে গড়পড়তা ব্যবসা করলেও বিশ্বজুড়ে সে বছর ব্যাপক সফল হয়েছিল ‘মঙ্গল পা-ে: দ্য রাইজিং’।

এমনকি সমালোচকদেরও ভালো লেগেছিল সিনেমাটি।
 

ভাগ মিলখা ভাগ
কাউকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, কোন দুটি জিনিস ভারতীয়দের সবচেয়ে বেশি পছন্দ? উত্তর খুবই সহজ-- বলিউড এবং ক্রিকেট। এমনই এক ক্রিকেটপাগল জাতিকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের একটি স্পোর্টস ড্রামা ধাঁচের সিনেমা উপহার দেওয়া শুধুমাত্র বলিউডের পক্ষেই সম্ভব। কাজটি নিঃসন্দেহে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। কিন্তু রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহেরার নিপুণ হাতের পরিচালনা এবং ফারহান আখতারের অভিনয়ের প্রতি আনুগত্য বিফলে যাওয়ার নয়।


ভারতের ‘উড়ন্ত শিখ’ বলা হয় তাকে; কিন্তু যে দেশে খেলা বলতে সবাই ক্রিকেটের কথা ভাবে, সেখানে সবসময় যেন স্পটলাইট থেকে একটু দূরেই ছিলেন দৌড়বিদ মিলখা সিং।
দেশবিভাগের পর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজের ভাগ্য অন্বেষণ করতে গিয়ে কখনও পেয়েছেন বিজয়ের স্বাদ, আবার কখনও বয়ে বেড়াতে হয়েছে পরাজয়ের গ্লানি। মিলখা সিং-এর জীবনকাহিনি আমাদের শেখায় কীভাবে শুধুমাত্র দৃঢ় মনোবল এবং একাগ্রতার মাধ্যমে যে কোনো অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়।
অভিনয়ের দিক থেকে ফারহান আখতারের দক্ষতা নিয়ে যদি আদৌ কারও কোনো প্রশ্ন থাকে, ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ সিনেমাটি তা দূর করেছে। ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ নিয়ে বলিউডপ্রেমীদের আগ্রহ ছিল অনেক বেশি, বিশেষ করে মিলখা সিংয়ের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য ফারহানের ব্যাপক প্রস্তুতি সবার নজর কেড়েছে।

শুটিং শুরু হওয়ার একমাস আগে থেকে দাড়িগোঁফ রাখা, মিলখা সিংয়ের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ এবং টানা ছয় মাস প্রশিক্ষণ-- বড়পর্দায় নিজেকে একজন দৌড়বিদ হিসেবে প্রমাণ করতে কোনো ত্রুটি রাখেননি ফারহান।
পরিচালক রাকেশ ওম প্রকাশ মেহেরা হলেন সেই ধরনের নির্মাতা, যারা শুধুমাত্র ব্যবসায়িক স্বার্থে সিনেমা তৈরি করেন না। ‘রঙ দে বাসান্তি’ কিংবা ‘দিল্লি সিক্স’-নিজের প্রতিটি সিনেমায় তিনি চেষ্টা করেছেন সমাজের মানুষের সুপ্ত চিন্তাকে জাগিয়ে তুলতে। তারুণ্যের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর এবং প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের প্রয়াস শেষে এবার প্রতিটি স্বপ্নবাজ মানুষকে অনুপ্রেরণা দিতে রাকেশ নির্মাণ করেছেন ‘ভাগ মিলখা ভাগ’।
‘ভাগ মিলখা ভাগ’-এ কোনো আইটেম গান নেই, নেই কোনো আবেদনময়ী অভিনেত্রীর উপস্থিতি কিংবা জমকালো লোকেশন।

পর্দার বাইরের গ্ল্যামার গার্ল অভিনেত্রী সোনম কাপুরকেও এখানে দেখা গেছে সাদামাটা রূপে। কিন্তু এরপরও চলতি বছর ১২ জুলাই মুক্তি পাওয়া ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ এখন পর্যন্ত ২০১৩ সালের সেরা বক্স অফিস হিট সিনেমার তালিকায় রয়েছে তিন নম্বরে। বলা বাহুল্য, একমাত্র স্পোর্টস বায়োপিক হিসেবে ইতোমধ্যেই একশ’ কোটির ক্লাবে নাম লিখিয়েছে ‘ভাগ মিলখা ভাগ’। আর যদি বলতে হয় সমালোচকদের কথা, বেশিরভাগ সমালোচকও অতি শ্রদ্ধার সঙ্গে বাহবা দিয়েছেন ‘ভাগ মিলখা ভাগ’কে।  
 

বোস: দ্য ফরগটেন হিরো
‘তোমরা আমায় রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব’-- এই উক্তিটি আমাদের সকলেরই কমবেশি পরিচিত।

মহাত্মা গান্ধীর অহিংস আন্দোলন যখন ইংরেজদের শোষণের হাত থেকে মুক্ত করতে পারছিল না উপমহাদেশকে, তখন সশস্ত্র বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন একজন। নিজের পরিবার-পরিজন সবকিছু ভুলে দেশ ও জাতির জন্য লড়াইয়ে নেমেছিলেন তিনি। তিনি আর কেউ নন, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু।
চলচ্চিত্র শিল্পে সবসময়ই কিছু বিশেষ ধারার সিনেমা থাকে, যা নির্মাণের পেছনে কোনো ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য থাকে না, বরং চলচ্চিত্র শিল্পকে সমৃদ্ধ করাই হয় মূল কাজ। ভারতের চলচ্চিত্রে ‘আর্ট ফিল্ম’ ঘরানার প্রবর্তক শ্যাম বেনেগালের সিনেমা ‘বোস-দ্য ফরগটেন হিরো’ এই উদ্দেশ্য নিয়েই তৈরি হয়েছে।

 
সমালোচকদের অন্যতম পছন্দের সিনেমা ‘বোস-দ্য ফরগটেন হিরো’ মুক্তি পায় ২০০৫ সালের ১৩ মে। ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে দুটি ভিন্ন বিভাগে পুরস্কার পাওয়া এই সিনেমায় উঠে এসেছে ইংরেজদের বিরুদ্ধে বাঙালিনেতা সুভাষচন্দ্র বসুর সংগ্রামের কাহিনি। সিনেমাতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন শচিন খাদেকার।
বলিউডের জমকালো সব বাণিজ্যিক ধারার সিনেমার ভিড়ে ৩০ কোটি রুপি বাজেটের সিনেমাটি বক্স অফিসে হিট হতে না পারলেও বাজেটের বেশি আয় করতে পেরেছে। চকলেট হিরোদের মিছিলে রূপালি পর্দার এই সুভাসচন্দ্র বসু হারিয়ে গেছেন ঠিকই, কিন্তু বলিউডের সেরা বায়োপিকের তালিকায় অবশ্যই স্থান পাবে ‘বোস: দ্য ফরগটেন হিরো’।


 

ব্যান্ডিট কুইন
দস্যুরানি হিসেবেই পরিচিত তিনি। বয়স এগারো না হতেই বাবার বয়সী এক লোকের সঙ্গে বিয়ে, উচ্চবর্ণের জমিদারবাড়ির লোকদের হাতে গণধর্ষণের শিকার হওয়ার পর হাজারো লাঞ্ছনা-বঞ্চনা এবং পাশবিক নির্যাতন সহ্য করে শেষ পর্যন্ত তিনি হয়েছিলেন ইতিহাসের স্মরণীয় এক ডাকাত। দরিদ্র জনগণের কাছে ছিলেন মায়ার দেবী, তার মুখের আদলে নির্মিত হত দুর্গার মূর্তি। কিংবদন্তি ওই ডাকাত হলেন ফুলন দেবী।
১৯৯৪ সালে পরিচালক শেখর কাপুর নির্মাণ করেন তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা সিনেমা ‘দ্য ব্যান্ডিট কুইন’।

তিনটি জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এই সিনেমায় অভিনয় করে সে বছর সেরা অভিনেত্রী হিসেবে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন সীমা বিশ্বাস। সে সময় সমালোচকদের তোপের মুখে পড়লেও চারটি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে ‘দ্য ব্যান্ডিট কুইন’।  
অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই এবং বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এক অনন্য দৃষ্টান্ত হলেন ফুলন দেবী। বলিউডি ইতিহাসে তাকে নিয়ে নির্মিত ‘দ্য ব্যান্ডিট কুইন’ নিঃসন্দেহে এক মাইলফলক হয়ে রয়েছে।  

শুটআউট অ্যাট ওয়াদালা
সত্তর দশকের মুম্বাই; শহরজুড়ে গ্যাংস্টারদের প্রভাব।

দিনের আলোতে খুন হচ্ছে মানুষ। চোখের সামনে সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য দেখার পরও পুলিশের হাত যেন বাঁধা। ক্ষমতায় থাকার জন্য নিজেদের মধ্যেই লড়াই করছে সন্ত্রাসীরা। রক্ত এবং হিংস্রতার এই খেলায় যোগ হল নতুন এক খেলোয়াড়, নাম মানিয়া সুর্ভে। স্বল্পসময়ের মধ্যেই মুম্বাই আন্ডারওয়ার্ল্ডের রাজা বনে গেল সে।

অবশেষে সবকিছু ভুলে যখন নতুন একটি জীবন শুরু করতে চাইল, তখনই পতন ঘটল এই রাজার।
‘কাঁটে’ এবং ‘শুটআউট অ্যাট লোখান্ডওয়ালা’-র মতো বলিউডি গ্যাংস্টার মুভির জন্য বিখ্যাত পরিচালক সঞ্জয় গুপ্ত। মূলত বলিউডের গ্যাংস্টার মুভি বলতেই আমরা বুঝি মুম্বাই আন্ডারওয়ার্ল্ড। এক্ষেত্রেও ভিন্নতা ছিল না। তবে লেখক হুসেইন জায়িদির ‘ডোংরি টু দুবাই’ উপন্যাসের উপর নির্মিত ‘শুটআউট অ্যাট ওয়াদালা’কে নিয়ে মানুষের আগ্রহ ছিল চূড়ান্ত পর্যায়ে।

আর ভক্তদের নিরাশ করেননি সঞ্জয়।  
মানিয়া সুর্ভের কাহিনি ছিল মুম্বাই পুলিশের রেজিস্টার করা প্রথম হত্যাকা-। মানিয়ার উত্থান এবং পতনের গল্প ছাড়াও একটি বিষয় আলাদাভাবে তুলে ধরা হয়েছে এখানে, তা হল একজন সন্ত্রাসীর প্রেমিক সত্তা। আর এই বিষয়ই মানিয়ার কাহিনিকে অন্য দশটি গ্যাংস্টার মুভি থেকে আলাদা করতে সক্ষম।     
মানিয়া সুর্ভের চরিত্রে অভিনেতা জন আব্রাহামের নতুন রূপকেও ভুলে গেলে চলবে না।

তিনি হয়তো বলিউডের খান কিংবা কাপুরদের সঙ্গে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত নন; কিন্তু মানিয়ার ভূমিকায় অভিনয় করে জন ভালোমতোই বুঝিয়েছেন, অভিনেতা হিসেবে কম যান না তিনি। আর তার প্রেমিকা হিসেবে কঙ্গনা রানৌতের অভিনয়ও ছিল প্রশংসনীয়।
এবার আসা যাক ‘শুটআউট অ্যাট ওয়াদালা’র অন্যতম প্রধান আকর্ষণ, আইটেম গান প্রসঙ্গে। তিনটি আইটেম গানে জনের সঙ্গে নেচেছেন হাল সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী সানি লিওনসহ প্রিয়াংকা চোপড়া এবং সোফি চৌধুরী। তবে সত্যিকার অর্থে যারা সিনেমাটি দেখেছেন, তারা অনেকেই বুঝতে পারবেন সব ধরনের সিনেমাপ্রেমীদের আকর্ষণ করার মতো একটি সিনেমা হল ‘শুটআউট অ্যাট ওয়াদালা’।

আর তাই চলতি বছরের পহেলা মে মুক্তি পাওয়া ‘শুটআউট অ্যাট ওয়াদালা’ বক্স অফিসে হিট তো হয়েছেই, সমালোচকদের কাছ থেকেও আদায় করেছে পাঁচের মধ্যে চার তারকা। আশা করা যাচ্ছে পুরস্কারের মৌসুমেও এমনই দেখা যাবে।

মুঘল-এ-আজম
উপমহাদেশের অন্যতম সেরা প্রেমকাহিনির নায়ক-নায়িকা হলেন সেলিম এবং আনারকলি। মোগল শাহজাদা সেলিমের সঙ্গে নর্তকী আনারকলির প্রেমের সেই গল্প, হাজারও প্রেমিক-প্রেমিকার অনুপ্রেরণা । আর তাদের এই অমর প্রেমকে স্মরণীয় করে রেখেছে ‘মুঘল-এ-আজম’ সিনেমা।


সেলিম এবং আনারকলির ঐতিহাসিক প্রেম কাহিনিকে রূপালি পর্দায় বাস্তব রূপ দিয়েছিলেন দীলিপ কুমার এবং মধুবালা।
১৯৬০ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমায় দীলিপ এবং মধুবালার সঙ্গে প্রধান চরিত্রে আরও অভিনয় করেন পৃথ্বীরাজ কাপুর। প্রাথমিকভাবে ‘মুঘল-এ-আজম’ সিনেমার কাজ শুরু হয়েছিল ১৯৪৪ সালে, এরপর বিরতি দিয়ে পঞ্চাশের দশকে পুরোদমে এর কাজ শুরু হয়। তৎকালীন যে কোনো সিনেমার তুলনায় বড় বাজেটের সিনেমা ছিল ‘মুঘল-এ-আজম’।   প্রতিটি দৃশ্যের জন্য এত অর্থ ব্যয় হয়েছিল যে প্রযোজকের অভাব দেখা দেয়।


হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে আজও ক্ল্যাসিকের মর্যাদা পায় ‘মুঘল-এ-আজম’। এর নির্মাণশৈলী এবং কলাকুশলীদের প্রাণবন্ত অভিনয় এত বাস্তবসম্মত ছিল যার ধার ঘেঁষে যেতে পারেনি এখনও কেউ। মোট বারোটি গান নিয়ে নির্মিত হয়েছিল ‘মুঘল-এ-আজম’, এর মধ্যে ‘পেয়ার কিয়া তো ডারনা কেয়া’ গানটি আজও মানুষের মুখে শোনা যায়। ১৯৬১ সালে ‘ফিল্মফেয়ার’ অ্যাওয়ার্ডসে মোট সাতটি বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছিল ‘মুঘল-এ-আজম’।
২০০৪ সালের ১২ নভেম্বর দিওয়ালিতে মুক্তি দেওয়া হয় ‘মুঘল-এ-আজম’-এর রঙিন সংস্করণ।

প্রায় ১০ কোটি রুপি ব্যয় করে তিন লাখ ফ্রেমের রঙিন সংস্করণ ‘মুঘল-এ-আজম’ সিনেমায় আসলটি থেকে বিশ মিনিটের দৃশ্য সম্পাদনা করা হয়েছিল রংয়ের কারণে।
ভক্তদের মতে, বর্তমান সময়ে যারা ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’-এর মতো সিনেমা দেখে বলেন, সর্বকালের সেরা সিনেমা, তারা আসলে কখনও ‘মুঘল-এ-আজম’ দেখেননি। সেলিম এবং আনারকলির জীবনের উপর গড়ে ওঠা ‘মুঘল-এ-আজম’ হল বলিউডের ইতিহাসের অন্যতম সেরা বায়োপিক।

গান্ধী মাই ফাদার
প্রত্যেক পরিবারে এমন কোনো না কোনো সদস্য থাকে, যাকে নিয়ে বাকিদের দুশ্চিন্তার শেষ থাকে না। ‘গান্ধী মাই ফাদার’ হল মহাত্মা গান্ধীর পরিবারের সে রকম এক সদস্যের গল্প।

মহাত্মা গান্ধী আদর্শ এবং মতবাদের কারণে, অহিংস আন্দোলনের প্রবর্তক হিসেবে নিজের উদার মানসিকতার জন্যে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। নিজের জাতি এবং নিজের দেশকে নিয়ে যিনি সারাজীবন কাজ করেছেন, ব্যক্তিগত জীবনে নিজের সন্তানের কাছে বাবা হিসেবে তিনি কেমন ছিলেন? সেই কাহিনি উঠে এসেছে ‘গান্ধী মাই ফাদার’ সিনেমায়।
এই সিনেমায় গান্ধীর কনিষ্ঠ পুত্র হরিলাল গান্ধীর ভূমিকায় ছিলেন অক্ষয় খান্না। একজন সফল পিতার অসফল পুত্রের এই গল্পে তুখোড় অভিনয়ের জন্য ব্যাপক প্রশংসা পান তিনি। আর গান্ধীর চরিত্রে অভিনয় করে সেরা সহঅভিনেতা হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পান দর্শন জারিওয়ালা।


অনিল কাপুরের প্রযোজনা এবং ফিরোজ আব্বাস খানের পরিচালনায় ‘গান্ধী মাই ফাদার’ মুক্তি পায় ৩ অগাস্ট ২০০৭ সালে। মোট তিনটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সিনেমাটি জি সিনে অ্যাওয়ার্ডস এবং আইফা অ্যাওয়ার্ডসেও সে বছর পুরস্কার লাভ করে। বক্স অফিসে তেমন ব্যবসা করতে না পারলেও সমালোচকদের প্রিয় সিনেমার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ‘গান্ধী মাই ফাদার’।
 

পান সিং তোমার    
সেলুলয়েডের পর্দায় মাঝে মাঝে এমন কিছু কাহিনি তুলে ধরা হয়, যেগুলো দেখলে আমরা ভুলে যাই যে সিনেমা দেখছি। এমনই এক কাহিনি হল পান সিং তোমারের।

একজন আর্মি সুবেদার, অবহেলিত জাতীয় দৌড়বিদ, অতঃপর ডাকাত। বড়ই অদ্ভুত এক জীবন কাটিয়েছিলেন তিনি।
‘পান সিং তোমার’ সিনেমায় দেখানো হয়েছে ষাটের দশকের সেনাবাহিনির সে সৈনিকের জীবন, যিনি একজন জাতীয় রেকর্ড গড়া দৌড়বিদ ছিলেন। সিনেমায় উঠে এসেছে একজন সৈনিকের সাধারণ জীবন ছেড়ে ডাকাত বনে যাওয়ার কাহিনি। তিগমাংশু ধুলিয়া পরিচালিত ‘পান সিং তোমার’ মুক্তি পায় ২০১২ সালের ২ মার্চ, আর জয় করে নেয় দুটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

সিনেমায় নাম ভূমিকায় অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা অভিনেতা হিসেবে বিজয়ী হয়েছিলেন ইরফান খান। সমালোচকদের ব্যাপক প্রশংসা পাওয়ার পাশাপাশি একাধিক ফিল্মফেয়ার পুরস্কার এবং স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ড লাভ করে ‘পান সিং তোমার’।
শুধু পুরস্কারই জিতে নেয়নি ‘পান সিং তোমার’। স্বল্প বাজেটের ওই সিনেমা সে বছর বক্স অফিসে ব্যাপক আয় করে হয়েছিল সুপারহিট। কোনো গ্ল্যামারাস নায়িকা কিংবা চকোলেট হিরোর নাচগান ছাড়াই বিপুল সংখ্যক দর্শকদের আকৃষ্ট করে ‘পান সিং তোমার’।



দ্য লিজেন্ড অফ ভগত সিং
জন্মের পর থেকে দেখেছেন নিজ দেশ এবং জাতির উপর ইংরেজদের শোষণের বিরামহীন খেলা। জ্বলেছে বুকের ভেতর প্রতিশোধের আগুন। আর এই আগুনের তেজ নিয়ে তিনি লড়েছেন মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য। ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম এক বীর শহীদ হলেন ভগত সিং।
২০০২ সালের ৭ জুন মুক্তি পাওয়া ‘দ্য লিজেন্ড অফ ভগত সিং’ জিতেছিল দুটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

প্রথমবারের মতো সেরা অভিনেতা হিসেবে জাতীয়ভাবে এই স্বীকৃতি পান অজয় দেবগন। তিনটি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস এবং একাধিক জি সিনে অ্যাওয়ার্ড পায় ‘দ্য লিজেন্ড অফ ভগত সিং’।
কিন্তু সমালোচকদের ব্যাপক প্রশংসা পাওয়ার পরও বক্স অফিসে ‘সুপার ফ্লপ’ হয় সিনেমাটি।
বলিউডের বায়োপিকের তালিকা এখানেই শেষ নয়। ব্যবসায়িক সাফল্য এবং সমালোচকদের পছন্দ-- দুইদিক বিচার করলে টিনসেলে নির্মিত হয়েছে আরও অনেক বায়োপিক।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল শাহরুখ খান অভিনীত ‘চাক দে ইন্ডিয়া’, হৃত্বিক রোশন এবং ঐশ্বরিয়া রায় বচ্চনের ‘যোধা আকবর’, অভয় দেওল অভিনীত ‘ওয়ে লাকি লাকি ওয়ে’, অভিষেক বচ্চন অভিনীত ‘গুরু’ ইত্যাদি। ভারতীয় বক্সার মেরি কোমের জীবন নিয়ে এখন নির্মিত হচ্ছে একটি বায়োপিক যাতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করছেন প্রিয়াংকা চোপড়া। বায়োপিকের এই যাত্রা আরও সহজ হতে চলেছে। বর্তমান সময়ে এই ধরনের সিনেমার ব্যবসায়িক সাফল্য তাই নির্দেশ করে।


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।