২৮শে অক্টোবর, ২০১৩ তারিখে কালের কণ্ঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ সংবাদপত্রকে কেন মানুষে বিশ্বাস করে না শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখেছেন। এই লেখাটি সেটার প্রতিক্রিয়া।
আবু আহমেদের শিরোনামে যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটা সত্য। তবে বিশ্বাস না করলেও মানুষ সংবাদপত্র মিডিয়া ইত্যাদির বানানো সোশ্যাল কনস্ট্রাক্ট অনুযায়ী চিন্তা ভাবনা করে। এই কারণে মানুষ মুখে সংবাদপত্রের কথা বিশ্বাস করে না বললেও সেটাতে কিছু যায় আসে না।
আবু আহমেদ মানুষ সংবাদপত্র কেন বিশ্বাস করে না সেটার কারণ হিসেবে বলেছেন,
সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলগুলো তাদের নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। এসব সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলে যেসব সংবাদ ছাপা ও প্রচারিত হয়, সেগুলোয় যারা ওই সব সংবাদমাধ্যমে কাজ করে, তাদের মতামতই অনেকটা প্রতিফলিত হয়। পেশাদার সাংবাদিকতা বলতে যা বোঝায় বাংলাদেশ থেকে এই মুহূর্তে তা বিদায় নিয়েছে। পেশাদার সাংবাদিকতা বলতে কী বোঝায়? ১০০ পার্সেন্ট সততা ও নিরপেক্ষতা। কিন্তু আজকে দৈনিক কাগজগুলো যেসব সংবাদ দিচ্ছে, সেগুলো পক্ষপাতিত্বে ভর্তি।
আবু আহমেদ একজন অধ্যাপক। অর্থাৎ উনার প্রতিষ্ঠিত গবেষণা অভিজ্ঞতা আছে। উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি পড়ান ও সেটার ওপরে গবেষণা করেন। অর্থনীতি সামাজিক বিজ্ঞানের একটা অংশ এবং এই বিষয়ে গবেষণা করা একজনের জানা থাকা উচিৎ যে নিরপেক্ষতা বা ইংরেজিতে objectivityর কোন স্থান সামাজিক বিজ্ঞানে এখন নেই। এটা বহু আগে ছিলো।
সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণার মূলনীতিতে যারা এই নিরপেক্ষ বা নৈর্ব্যক্তিকতা বিশ্বাস করতো তারা পজিটিভিস্ট নামে পরিচিত ছিলো। পজিটিভিস্টদের দর্শন বহু আগেই পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। কোন বিষয়ে নৈর্ব্যক্তিক অবস্থান নেয়া সম্ভব না এটা এখন সবাই মানে। কোন বিষয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান আসলে ভ্রান্ত ধারণার নাম। সেটা পত্রিকাই হোক বা অন্য কোন মিডিয়াই হোক।
আর পেশাদার শব্দটা আবু আহমেদের মতো অনেককে প্রায়ই বলতে শোনা যায়। পেশাদার মানে কী? আবু আহমেদ এখানেও বলছেন একটা ১০০% সততা ও নিরপেক্ষতার কথা যেটা আসলে কখনোই সম্ভব না।
আবু আহমেদ "দেশের অধিকাংশ লোকের" রেফারেন্স (এই রেফারেন্সের কোথাকার?) অনুযোগ করছেন,
এখন দেশের অধিকাংশ লোক মনে করে যেহেতু বর্তমান সরকার এসব চ্যানেলকে তাদের রাজনৈতিক নেতাদের সুবিধা পাইয়ে দিতে অনুমোদন দিয়েছে, সে জন্য এসব চ্যানেলে সংবাদ ও টক শোর নামে যা কিছু প্রচার হয়, তার অর্ধেকই মিথ্যা। এবং এসব চ্যানেল গণমানুষের অধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে না দাঁড়িয়ে বিভিন্ন কৌশলে সরকারের পক্ষে নিউজ-ভিউজ দিতে বেশি ব্যস্ত।
অভিযোগ গুরুতর।
আবু আহমেদ নিশ্চয়ই এই খবর ও টকশোয়ের কন্টেন্ট এ্যানালাইসিস করেছেন বলে এসব কথা বলছেন। আবু আহমেদের উচিৎ এইসব গবেষণা জরিপ ও ফলাফল জনসমক্ষে প্রকাশ করা। প্রকাশিত খবরগুলোর আদ্ধেকটাই যদি মিথ্যা হয় তাহলে সেটা দুশ্চিন্তার কথা বটে!
আবু আহমেদ আসলে কী বলতে চাইছেন এবং কেন তার কাছে প্রকাশিত খবরের আদ্ধেকটাই মিথ্যা মনে হয় সেটা পরিস্কার হয় তার প্রবন্ধটিতে আদিলুর প্রসঙ্গটা পড়ে। তিনি লিখেছেন,
মানবাধিকার নেতা আদিলুর রহমানকে সরকার জেলে নিয়ে গেল। তিনি নাকি পুলিশ-র্যাব কর্তৃক হেফাজতের সমাবেশে মানুষ হত্যার ক্ষেত্রে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন।
এ ক্ষেত্রে আগের কথা স্মরণ করুন। আগে কোনো তথ্য মিথ্যা পেলে সরকার প্রেসনোট দিয়ে সে তথ্যের ভুল ধরিয়ে দিত। কোনো মানবাধিকারকর্মীকে গ্রেপ্তার করে জেলে নিত না। সে ক্ষেত্রে জনগণও বুঝত সরকারের অবস্থা। এবং অন্য যারা কল্পিত মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে, তাদের কথাও বুঝত।
কিন্তু এবার হলো তার উল্টো। মানবাধিকারকর্মী, যে অন্যের মানবাধিকারের জন্য কাজ করে, তাঁকেই জেলে নেওয়া হলো। আর আমাদের সংবাদমাধ্যমগুলো এ ক্ষেত্রেও সরকার যা বলেছে, সেই সঙ্গেই পক্ষপাতিত্ব করছে। তাই প্রতিবাদের ক্ষেত্রটাই যদি কেড়ে নেওয়া হয়, তাহলে সেই দেশের কথিত গণতন্ত্রকে উৎসব করে স্মারক বক্তৃতা দিয়ে বিদায় করে দিলেই ভালো।
মিডিয়ার মিথ্যা কথা নিয়ে উচ্চকিত আবু আহমেদ সাহেব হেফাজত খেদানো অভিযান নিয়ে মানবাধিকারবারি আদিলুর রহমানের মিথ্যাচারের বিষয়টা এড়িয়ে গেলেন।
উপরন্তু আদিলুরের কাজকে "অন্যের মানবাধিকারের জন্য কাজ" হিসেবে উল্লেখ করলেন। এটা অনুমান করা কঠিন না যে উনি আসলে আদিলুরকেই সত্যবাদি ভাবেন এবং নিহতের সংখ্যা নিয়ে মিডিয়া যা বলছে সেগুলোই মিথ্যা।
আবু আহমেদ লেখা শেষ করেছেন মিডিয়ায় হিডেন বা লুক্কায়িত বাণিজ্যের কথা বলে।
দৃশ্যত এসব সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেল ব্যবসায়িক মুনাফা বলতে যা বোঝায়, তা না করলেও তাদের অনেক হিডেন বা লুক্কায়িত বা অপ্রকাশিত বাণিজ্য আছে। শুনেছি স্কুলের শিক্ষক হতে প্রার্থীকে উল্টো স্কুলকে টাকা দিতে হয়।
জানি না এসব সংবাদমাধ্যমের কর্মী হওয়ার ক্ষেত্রে এদের টক শোগুলোতে ঘুষ নিতে কিংবা এদের প্রচারিত নাটক বা শোগুলোতে অংশ নিতে গেলে, উপস্থাপক-উপস্থাপিকা হতে গেলে উল্টো টিভি চ্যানেলগুলোকে অর্থ দিতে হয় কি না। কারণ যারা টিভি চ্যানেলে সাফল্য দেখাতে পারে, তাদের নাকি অন্যত্র বাজারমূল্য বেড়ে যায়।
আবু আহমেদ এখানে যেটা বলেননি সেটা হলো মিডিয়া নিয়ে তার এতো বিস্তর ঘ্যানর ঘ্যানরের (সাথে মানবাধিকারবারি আদিলুর বোনাস) পিছনে তার নিজের হিডেন বা লুক্কায়িত বাণিজ্যটা কী? সাংবাদিক ও টকশোয়ের লোকেরা নাহয় খারাপ বুঝলাম। কিন্তু কলামলেখকেরা কী ১০০% সৎ ও নিরপেক্ষ?
সূত্র:
মূল লেখার লিংক
ইমেজ লিংক
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।