”সব রাজাকারদের বিচার চাই”
মুসলমান সেনাপতি জেরুজালেম নগরী অবরোধ করে রেখেছেন। সেনাপতি আমর ইবনুল আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নেতৃত্বে মাসের পর মাস চলছে অবরোধ। অবশেষে খ্রিস্টান নেতৃবৃন্দ জানালো, ‘ আমিরুল মুমিনীন হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি যদি জেরুজালেম নগরীতে আসেন তবে বিনা রক্তপাতে এ পবিত্র নগরীর চাবি তুলে দেয়া হবে উনার মুবারক হাতে।
আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার মুবারক নির্দেশ রক্তপাত করা যাবে না, তিনি নিজেই জেরুজালেম আসবেন। অর্ধ পৃথিবীর শাসক হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি একটি গোলাম, সামান্য খাবার ও পানি নিয়ে উটের পৃষ্ঠে আরোহন করে রওয়ানা হলেন জেরুজালেমের পথে।
খরতপ্ত মরু উটের লাগাম হাতে চলছেন গোলাম। ঘাম ঝরছে দরদর করে। সমগ্র পৃথিবী যে হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার ভয়ে কম্পমান সে আমিরুল মুমিনীন আল্লাহ পাক উনার ভয়ে কাঁপছেন থর থর করে।
গোলামকে ডেকে বললেন আপনি ক্লান্ত হয়ে গেছেন, আমাকে কিছুক্ষণ উটের রশি হাতে চলতে দিন, আর আপনি উটের পিঠে বসুন। গোলাম বললেন, ‘ হে আমিরুল মুমিনীন, এটা কখনও হতে পারে না।
’ হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, সারাপথ প্রচন্ড গরমের মধ্যে আপনি উট টেনে চলবেন এটা কিভাবে সম্ভব? এটা ইনসাফ হতে পারেনা। আমি এ জুলুমের জন্য আল্লাহ পাক উনাকে কি জবাব দিব? ‘ আমিরুল মুমিনীন খলীফা তিনি মুবারক নির্দেশ দিয়ে গোলামকে উটের পিঠে চড়িয়ে তিনি উটের রশি হাতে মরু পাড়ি দিলেন। এইভাবে পালাক্রমে দিনের পর দিন অতিক্রম করে জেরুজালেম নগরীর প্রান্তে উপস্থিত হলেন।
খ্রিস্টান নরপতি ও পাদ্রীগণ আমিরুল মুমিনীন হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার জন্য এতদিন অপেক্ষা করছেন সে আমিরুল মুমিনীন হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে অভিবাদন জানাবার জন্য উটের আরোহীর দিকে সসম্মানে এগিয়ে গেলেন। আমিরুল মুমিনীন খলীফা উনার গোলাম সিক্ত নয়নে চিৎকার করে বললেন, ‘উটের আরোহী খলীফা নয়, উটের চালক খলীফা’।
হযরত আবু উবায়দা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিও সিরিয়ার রণাঙ্গন থেকে সম্মানিত খলীফা উনাকেকে স্বাগত জানাবার জন্য স্বসৈন্যে জেরুজালেম নগরীতে উপস্থিত হয়েছেন। মুসলমান সেনাপতি ও খ্রিস্টান সেনাপতি, নরপতি ও হাজার হাজার কৌতূহলী জনতা এ দৃশ্য দেখে হতবাক! এ ধরনের আর একটি দৃষ্টান্ত মানবজাতির ইতিহাস থেকে উল্লেখ করার জন্য দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া যাবে না। এটা ইতিহাসের জীবন্ত উদাহরণ নয় বরং এটাই জীবন্ত ইতিহাসের পূর্ণাঙ্গ রূপ। আজ যখন বর্ণ, ধর্ম, প্রথা ও ভাষার বিভক্তিতে মানবতা খন্ডিত, বিভাজিত, অবহেলিত, উপেক্ষিত ও পদদলিত, তখনই মানুষের জন্য আমিরুল মুমিনীন হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার মানবতাবাদী সুন্নতী আদর্শই হতে পারে ধুলায় ধুসরিত, অবহেলিত, লাঞ্ছিত মুসলিম জাতিকে মানবতার উচ্চ শিখরে প্রতিষ্ঠিত করার বিজয়বার্তা। কোনও কাফিরী নীতি দ্বারা জাতির অধপতন ছাড়া সামান্য কল্যান হতে পারেনা।
উটের রশি হাতে আমিরুল মুমিনীন হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার উপস্থিতি খ্রিস্টান জনপদকে এত অভিভূত ও বিস্মিত করেছিল যে তাদের যুগযুগ ধরে যুদ্ধ করার সমরাস্ত্র, তীর, বল্লম, উন্মুক্ত কৃপাণ সবকিছু উনার নববী আদর্শের মানবতার কাছে আজ পরাভূত ও পরাজিত। বিনা যুদ্ধে বিনা বাক্য ব্যয়ে পবিত্র জেরুজালেম নগরীর চাবি তারা তুলে দিল খলীফাতুল মুসলিমীন ,আমিরুল মুমিনীন হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার মুবারক হাতে।
পূর্ববতী আসমানী কিতাবে যত খুশু-ছিয়ত বর্ননা করা হয়েছে আমিরুল মুমিনীন হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে তার হুবহু মিল পেলেন বিধর্মীরা। তারা নিশ্চিত হলেন উনারাই সমগ্র জগত পরিচালনাকারী। আর আজ তাদের আসমানী কিতাব নিজে পরিবর্তন করে ইসলাম উনার বিরোধীতাই মেতেছে কাফির-মুনাফিক্বরা।
আমিরুল মুমিনীন হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানার্থে খাবারের আয়োজন করা হয়। সুন্নতী দস্তরখানা মুবারকে খাবার খাচ্ছেন তিনি। যখন কিছু খাবারের টুকরা দস্তরখানা মুবারকে পড়ে যাচ্ছিল তখন তিনি সেগুলো তুলে খাচ্ছিলেন। এদিকে এক ছাহাবা ই ক্বিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আদবের সহিত বললেন, হে আমিরুল মুমিনীন আপনি এখানে এগুলো তুলে না খেলেও তো পারেন। জবাবে আমিরুল মুমিনীন হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন ‘আমরাতো সেই জাতি ইসলামই যাদের মাথায় পরিয়ে দিয়েছেন ইজ্জতের সুমহান মুকুট।
আমরা কি নির্বোধদের খুশি করার জন্য প্রিয় রাসূল নুরে মুজাসসাম হুযুর পাক ছল্লাল্রাহু আলাইহি ওয়া সাল্রাম উনার মুবারক আদর্শ ত্যাগ করবো?’
মূলত নুরে মুজাসসাম হুযুর পাক ছল্লাল্রাহু আলাইহি ওয়া সাল্রাম উনাকে হুবুহ অনুসরণ-অনুকরণ করার জন্যই উনাদের এই বেমেছাল পৃথিবী বিজয়। আর এখন আমরা মুসলিম জাতি সুন্নত ছেড়ে দেয়ার জন্য পরিনত হয়েছি কথিত আধুনিকতা এবং সভ্যতার ছোয়ায় বিধর্মীদের গোলামীতে। আর আওড়াচ্ছি তোতা পাখির মত কাফিরদের কখিত মানবতার জয়গান। উপহার হিসেবে পাচ্ছি বেশরা-বেহায়া, নির্যাতিত, অপদস্ত পরিবার এবং সামাজিক ব্যবস্থা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।