আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনুরাধাপুর, শ্রীলংকার প্রাচীন রাজধানী

অনুরাধাপুর শ্রীলংকার প্রাচীন সভ্যতার ভিত্তিভূমি এবং পুরাতাত্ত্বিক স্থাপনার জন্য বিখ্যাত। ইউনেস্কো একে বিশ্ব সভ্যতার একটি উত্তরাধিকার হিসেবে ঘোষণা করেছে। শ্রীলংকার বর্তমান রাজধানী কলম্বো থেকে ২০৫ কিলোমিটার উত্তরে ঐতিহাসিক মালভাথু ওয়া নদীর তীরে এ শহর অবস্থিত। প্রাচীনকাল থেকে এখনো জনবসতি রয়েছে পৃথিবীর এমন শহরগুলোর মধ্যে অনুরাধাপুর অন্যতম। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দী থেকে ১১শ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এ শহর শ্রীলংকার রাজধানী ছিল।

এ সময়কালে রাজনৈতিক, বাণিজ্যক ও নাগরিক সুবিধার দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী শহর ছিল অনুরাধাপুর। প্রায় ১৬ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবস্থিত প্রাচীন শহরটি বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র বলে গণ্য।

প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে জানা গেছে, খ্রিস্টপূর্ব দশম শতাব্দীতে ইতিহাসের ঊষালগ্নেই এখানে জনবসতি গড়ে ওঠে। এ এলাকার মানবসমাজ লোহার ব্যবহার আয়ত্ত করেছিল। ৭০০ থেকে ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এখানে জনসংখ্যা বাড়তে থাকে।

কারণ নদী অববাহিকায় অবস্থিত এ এলাকার জমি ছিল উর্বর এবং এখানে সেচ সুবিধা ছিল। ৫০০ থেকে ২৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এখানে নগর গড়ে ওঠে। রাজা পান্ডুকাভয় এই নগরের পরিকল্পনা করেন বলে শ্রীলংকার ইতিহাস গ্রন্থ ‘মহাবংশে’ উল্লেখ করা হয়েছে। মহাবংশতে অনুরাধাপুর সম্পর্কে বলা হয়েছে, রাজা পান্ডুকাভয় এখানে দীঘি খনন, সাধারণ সমাধিক্ষেত্র, বধ্যভূমি, রানীর মন্দির, মহাবলিস্থান প্রভৃতি নির্মাণ করেন। তিনি সন্ন্যাসীদের জন্য একটি অতিথিশালা নির্মাণ করেন।

ব্রাহ্মণদের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন একটি আশ্রম এবং রোগীদের জন্য চিকিত্সালয় ও বিশ্রাম কেন্দ্র। বলা হয়ে থাকে, মহারাজ পান্ডুকাভয় খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে অনুরাধাপুরে তার রাজধানী স্থাপন করেন। তিনি একটি সুসংহত পরিকল্পনা অনুসারে রাজধানী ও নগরীর উপকণ্ঠ নির্মাণ করেন এবং অভয়বাপী নামে একটি জলাধার নির্মাণ করেন। এছাড়াও তিনি ‘কালবেলা’ ও ‘চিত্তরাজা’ নামে যক্ষের উদ্দেশ্যে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। তার রাজত্বকালে দাস ও চণ্ডালরা নগরের উপকণ্ঠে আলাদা গ্রামে বাস করতেন।

তিনি নগর ও গ্রামের সীমানা নির্ধারণ করেন। ২৫০ থেকে ২১০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রাজা দেবনামপ্রিয়র সময়ে শ্রীলংকায় বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার শুরু হয়।

রাজা দেবনামপ্রিয় ছিলেন ইতিহাসখ্যাত ভারতীয় সম্রাট অশোকের সমসাময়িক। বৌদ্ধ ধর্মের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে নগর হিসেবে অনুরাধাপুরের গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পায়। এ সময় থেকেই গড়ে উঠতে থাকে বিখ্যাত সব স্থাপনা।

রাজা কূটকন্বাতিশ্যর সময় নগর প্রাচীর নির্মিত হয়। পরে রাজা বাসবের সময় প্রাচীরের উচ্চতা বাড়ানো হয় ও প্রহরী ঘর নির্মিত হয়, যার ধ্বংসাবশেষ আজও আছে। পর্যটকরা অনুরাধাপুরের যেসব স্থাপনা দেখে বিস্ময়ে বিমুগ্ধ হন তার মধ্যে আটটি স্থানকে বলা হয় আট মহাস্থাপনা। এই আট মহাস্থাপনা হলো শ্রীমহাবোধি, রুয়ানওয়েলিশ্ব, থুপারামায়া, লোভমহাপয়, অভয়গিরি, দাগব, জেতবনরাম, মিরিসাভেটিস্তূপ এবং লংকারাম। রাজা বাসব অনুরাধাপুরের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা অনেক বৃদ্ধি করেন।

তিনি নাগরিকদের জন্য প্রচুর দীঘি খনন করেন। এই জলাশয়গুলোতে পানি সরবরাহের জন্য ছিল বাঁধানো নালা। নগরে ছিল উদ্যান। এসব উদ্যানের মধ্যে রনমাসু উদ্যান শুধু রাজপরিবারের সদস্যরাই ব্যবহার করতে পারতেন। সাধারণ নগরবাসীর জন্য আলাদা উদ্যান ছিল।

সাধারণ মানুষের চিকিত্সার জন্য বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ছিল। চতুর্থ খ্রিস্টাব্দে রাজা দ্বিতীয় উপতিশ্য প্রতিবন্ধীদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করেন। পরবর্তী রাজা বুদ্ধশ্য ছিলেন চিকিত্সাবিদ্যায় পারদর্শী। তিনি প্রজাদের জন্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। এই হাসপাতালের ধ্বংসাবশেষ আজও পর্যটকদের বিস্মিত করে।

রাজা বুদ্ধশ্য পশুদের চিকিত্সার জন্যও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অনুরাধাপুরের প্রাচীন স্থাপনাগুলোর মধ্যে পর্যটকরা এখনো যেগুলোর প্রতি বিশষ আগ্রহবোধ করেন সেগুলো হলো রত্নপ্রাসাদ, দক্ষিণাস্তূপ, ইশুরুমুনিয়া, মাগুল উয়ানা, রানীর প্রাসাদ ও মন্দির, সেলাসেটিয়া, কিরিবাথ বিহার, নাকবিহার, কুট্টাম পকুনা, সমাধিমূর্তি, তোলুইলা মূর্তি ইত্যাদি। ধ্বংসাবশেষের মধ্যে তিন ধরনের স্থাপনা রয়েছে। প্রথম ধরনের স্থাপনা হলো ঘণ্টাকৃতির উপাসনালয় ভবন, দ্বিতীয় ধরনের স্থাপনা হলো প্রাসাদ আর তৃতীয় ধরনের স্থাপনা হলো কারুকার্য করা বাঁধানো ঘাটসহ দীঘি। ঘাটে রয়েছে বসার বেদি ও বিভিন্ন ভাস্কর্য।

এই দীঘিগুলো নগরীর বিভিন্ন স্থানে এবং আশপাশের জঙ্গলে ছড়িয়ে রয়েছে। বর্তমানে অনুরাধাপুরে সিংহলি, শ্রীলংকান তামিল, ভারতীয় তামিল, শ্রীলংকান মুরসহ বিভিন্ন জাতির প্রায় ৫৬ হাজার ৬৩২ জন অধিবাসী রয়েছে। প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক এই প্রাচীন নগরে আসেন এবং শ্রীলংকার প্রাচীন সভ্যতার অতুল কীর্তি দেখে বিস্ময়ে বিমুগ্ধ হন।  

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.