আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুই নেত্রীর অবস্থা সালিশ যাই হোক তালগাছ আমার

ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন চ্যানেল আই-এর জনপ্রিয় টকশো তৃতীয় মাত্রায়। শুক্রবার রাত ১টায় প্রচারিত টকশোটি পরদিন সকালে পুনঃসম্প্রচার হয়। টকশোটি সঞ্চালনা করেন তৃতীয় মাত্রার উপস্থাপক জিল্লুর রহমান। দেশের বর্তমান রাজনীতি, অর্থনীতি এবং মিডিয়া নিয়ে তিনি কথা বলেছেন। মাহফুজ আনামের সাক্ষাৎকারটি প্রশংসিত হয়েছে দর্শকদের কাছে।

এ কারণে বাংলাদেশ প্রতিদিনের পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারের সংক্ষেপিত অংশ তুলে ধরা হলো।

 

প্রশ্ন : অনিশ্চয়তার দোলাচলে দুলছে বাংলাদেশ। দুই নেত্রী ফোনে কথা বলেছেন। আবার সংলাপ হবে কি হবে না, তা নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রশ্ন, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আছে। রাজনীতিতে সহিংসতার মাত্রা ক্রমে বাড়ছে- আরেকটি এক-এগারোর মতো ঘটনা ঘটবে কি না? আপনি কোনো সমঝোতার সম্ভাবনা দেখেন কি না?

মাহফুজ আনাম : সম্ভাবনা দেখি না কিন্তু প্রয়োজনটা প্রচণ্ডভাবে উপলব্ধি করি।

কেননা সুস্পষ্টভাবে বলতে গেলে বোঝায় বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষা করা, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে আরও বেশি উজ্জ্বল করা একমাত্র সমঝোতার মাধ্যমেই হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে এ দায়িত্ব নিতে হবে। এটা তাদের মানতে হবে। না হলে ইতিহাস তাদের ওপর অত্যন্ত কঠিন রায় দেবে।

প্রশ্ন : সাম্প্রতিককালে দুই নেত্রী টেলিফোনে কথা বললেন।

সবাই প্রত্যাশা করছিল আলোচনা শুরু হোক। তা শুরুও হয়েছে। টেলিফোন সংলাপ গণমাধ্যমে প্রচার নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এর যে কনটেন্ট তা বিশ্লেষণ করলে আপনার কাছে কী মনে হয়?

মাহফুজ আনাম : তা পাবলিকলি প্রকাশ করা যাবে কি না এ নিয়ে নীতিগত একটা প্রশ্ন উত্থাপন করা যায়। সাধারণ একটা নিয়ম আপনার সঙ্গে আমি টেলিফোনে কথা বললে তা প্রকাশ করার আগে আমাদের দুজনেরই অনুমতি নিতে হবে।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা। এ মুহূর্তে কথা বলছেন যখন জাতির একটি বৃহত্তর সংকট এবং পুরো জাতি বসে আছে আলোচনা কী হয় জানার জন্য। পাবলিক ইন্টারেস্ট চরমে বলা যায়। মানুষের জানার অধিকার যেমন এখানে প্রবল আবার অন্যদিকে গোপনীয়তা বা নৈতিকতার একটা ব্যাপার আছে। আমি মনে করি এ মুহূর্তে এটা প্রকাশ হওয়াটা জনগণের সামনে মোর ইনফরমড একটা আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করেছে।

আমরা আজকাল খুব বেশি আইন আইন করি। আইন অবশ্যই প্রয়োজন কিন্তু এর পরও তো একটা ন্যাশনাল ক্রাইসিস চলছে। সেই ক্রাইসিসে আমাদের দুই নেত্রী কথা বলেছেন। আর কনটেন্টের কথা বলতে গেলে দুর্ভাগ্যজনকভাবে অপ্রাসঙ্গিক কথা অনেক বেশি এসেছে। অতীত বেশি এসেছে।

কথাটা খুব সীমিত ও পয়েন্টেড হওয়া উচিত ছিল। একটা নিমন্ত্রণ এসেছে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে। বিরোধীদলীয় নেতা বলেছেন তিনি হরতালের কারণে ২৮ তারিখ আসতে পারবেন না, ২৯ তারিখের পরে যে কোনো এক দিন রাজি আছেন। প্রধানমন্ত্রী বলতে পারতেন, আমি খুশি হতাম হরতাল প্রত্যাহার করে আপনি এলে। যেহেতু আপনি আসতে পারছেন না, জনগণের স্বার্থ ভাবছেন না, ঠিক আছে আপনি ২৯ বা ৩০ তারিখে আসুন।

এটুকুই পার্থক্য। ১৬ কোটি মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে। রাজনীতিতে এত বড় একটা সংকট। প্রতিদিন তিন-চার-পাঁচ জন লোক মারা যাচ্ছে। গাড়ি পুড়ছে।

সম্পদ পুড়ছে। সেখানে এ কথাটা বললে কী হতো? তাতে দেশবাসী খুশি হতো। অন্যদিকে খালেদা জিয়াও বলতে পারতেন, বিলম্বে হলেও আপনি ফোন দিয়েছেন। এটা কর্মসূচির আগে দিলে আমি খুশি হতাম। এর পরও আপনি করেছেন।

ঠিক আছে, হরতাল উইথড্র করব না কিন্তু কালকে আমি আসছি। শেখ হাসিনা জেদ ধরেছেন ২৮ তারিখেই আসতে হবে। তিনি প্রথমে দাওয়াত দিয়েছেন। পরে হরতাল প্রত্যাহারের কথা বলেছেন। খালেদা জিয়াও বলতে পারতেন আপনি দাওয়াত দিয়েছেন, আমি কাল আসছি।

কিন্তু আপনি শর্ত দিচ্ছেন কেন? হরতাল প্রত্যাহার না করে যদি খালেদা জিয়া দেখা করতে যাওয়ার কথা বলতেন আর তাতে যদি শেখ হাসিনা দাওয়াত প্রত্যাহার করে নিতেন তখন জনমনে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া হতো।

প্রশ্ন : তিনি বলেছেন হরতালে আমি বের হই না।

মাহফুজ আনাম : বের হন না। আজকে বের হন। পুরো জাতি বসে আছে একটা উদ্বিগ্নতার মধ্যে আর আমি হরতালে বের হই না- তার অভ্যাসটা বেশি প্রয়োজন নাকি জাতির উৎকণ্ঠা? আনডিগনিফাইডভাবে যদি বলতে যাই তাহলে বলব খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীকে অপমান করেছেন।

আপনি শেখ হাসিনাকে পছন্দ করতে না পারেন কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তো দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্বাচিত একটা চেয়ার। দেশের সর্বোচ্চ নির্বাহী পদ। আমি ব্যক্তি শেখ হাসিনাকে পছন্দ করি না। কিন্তু তিনি তো প্রধানমন্ত্রী। তিনি এত রূঢ়ভাবে, এত হাইপার এগ্রেসিভলি কথা না বললেই পারতেন।

অপ্রাসঙ্গিক অনেক কথা এসেছে। প্রধানমন্ত্রীও শুরুতেই একটা ভুল করেছেন। তিনি বলেছেন, আপনাকে অনেকবার ফোন করে পাচ্ছি না। এটা তো প্রাসঙ্গিক নয়। আসসালামু আলাইকুম বলে কাজের কথা শুরু করলেই হয়।

অপ্রাসঙ্গিক কথা একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাকে ধ্বংস করেছে। এর পরও একটা ক্ষীণ আশা এখনো আছে।

প্রশ্ন : বিরোধীদলীয় নেতা শর্ত জুড়ে দিয়েছেন যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে আলোচনা করতে চাইলে আমি আসব।

মাহফুজ আনাম : এটা তো অত্যন্ত দুঃখজনক পর্যায়ে চলে গেল। দোষারোপের পর্যায়ে চলে গেল।

'তুমি হত্যা কর', 'তুমি হত্যা কর'- এটা করতে করতে পুরো ২২ বছরের ইতিহাস ওই ৩৭ মিনিটে চলে এলো। দুজনেরই বিষয়টা সীমিত রাখা উচিত ছিল। দুঃখজনক হলো যারা সত্যিকার অর্থে আলোচনাটা চাননি, চাননি শেখ হাসিনা ফোন করুন তাদের কিন্তু জিত হয়ে গেল।

প্রশ্ন : এমন একটা শক্তি কি আপনি ক্রিয়াশীল দেখেন?

মাহফুজ আনাম : আমি প্রথম দিনই বলেছি আমাদের দেশে সব সময় একটা গোষ্ঠী থাকে সংঘাতে যাদের প্রসার লাভ হয়। সমঝোতার বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান।

দুই নেত্রী যদি খুব একটা সংঘাতময় পরিস্থিতিতে থাকেন তখন যত ধরনের কুটিল কথা, ধ্বংসাত্দক কথা তারা শোনেন বেশি। যেমন, একজন নির্বাচন করবেন, অন্যজন প্রতিহত করবেন। আর নির্বাচন প্রতিহত করলে কাদের লাগবে? দেশের যত গুণ্ডা-পাণ্ডা, বাজে লোকগুলোকে। অন্যদিকে সরকারি দল বলছে আমরা হতে দেব না। রাজপথ দখলে রাখব।

রাজপথ দখলে রাখব মানে কী? গুণ্ডাবাজি করব। আর তো কিছু নয়। এটা যদি রাজনৈতিক ধারা হয় আস্তে আস্তে ভদ্রলোকেরা রাজনীতি থেকে সরে যাবেন আর গুণ্ডারা সব রাজনীতিতে আসবে। দুই নেত্রীও গুণ্ডাদের হাতে বন্দী হয়ে যাবেন। তাদের হাতে অপশন কমে যাবে।

মারধর ছাড়া কোনো অপশন থাকবে না। এই যদি অবস্থা হয় তাহলে আমরা বিশ্ববাসীর কাছে কীভাবে মুখ দেখাব।

প্রশ্ন : এখন সরকার পক্ষ বলছে আমরা তো দাওয়াত দিয়েছি। সুতরাং আমরা আর ফোন করব না। তারা আসুক।

আর তারা বলছেন সরকার পক্ষ তো হোস্ট।

মাহফুজ আনাম : চিন্তা করে দেখুন জনগণকে কত পরিহাস করছেন এ দুজন! আরে ভাই, প্রটোকল ইমপরটেন্ট নাকি জাতির এ উদ্বেগটা ইমপরটেন্ট। সবাই চাচ্ছে দুই নেত্রী আলোচনায় বসুন, কথা বলুন। এখন একজন বলছেন আমরা দাওয়াত দিয়েছি। এখন আর দিতে পারব না।

অন্যজন বলছেন দাওয়াত ২৮ তারিখে ছিল। এখন আমরা কীভাবে যাব? এখন সরকার যদি আবার বলে যে ঠিক আছে তখন আসতে পারেননি, এখন আসেন। জাতির স্বার্থে তারা এটা সহজেই বলতে পারেন। আবার সৌজন্যতা বলেও একটা কথা আছে। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী একবার একটা পদক্ষেপ নিয়েছেন এবার সৌজন্যতা দাবি করে খালেদা জিয়া একটা পদক্ষেপ নেবেন।

ভদ্রতার জ্ঞান থেকে তিনি আসতে পারেন। জনগণের কথা চিন্তা করে আসতে পারেন। কী হবে তিনি যদি বলেন, ২৮ তারিখে আসতে পারিনি, ঠিক আছে আমি সামনে অমুক তারিখে আসতে পারি। এ কথাটা কি দেশের স্বার্থে, শান্তির স্বার্থে বলা একেবারে আকাশ ভেঙে পড়া? আমাদের দুই নেত্রীর যে দায়িত্বহীনতা, তাদের যে দাম্ভিকতা, তারা জনগণের ভোটে রাজনীতি করেন আর জনগণের এ দাবিগুলো তাদের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। এত আবেগপ্রবণ হয়ে বলছি কারণ আমি গণতন্ত্র পছন্দ করি।

আমি চাই এ দেশটা সফল হোক। সাংবাদিকতার সুবাদে মাঝেমধ্যে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ হয়। বাংলাদেশ নিয়ে একদিকে তাদের যেমন অনেক আশা তেমনি আবার আমাকে প্রশ্ন করে, 'মাহফুজ, হোয়াটস হ্যাপেনিং ইন ইওর কান্ট্রি? হোয়াই ডু ইউ অলওয়েজ কোয়ার্ল অ্যাবাউট দি ইলেকশন কামস?' আমি কী উত্তর দেব? এটা তো সত্য। নির্বাচন এলেই ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। এখন পর্যন্ত একটা সিস্টেমের মধ্যে আসতে পারলাম না।

একটা সিস্টেম এসেছিল। কিন্তু ওই সিস্টেমের উদ্যোক্তা যিনি তিনিই জাতিকে বুঝিয়েছেন যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার খুব ভালো। তিনি এখন মত পাল্টে ফেলেছেন। এখানে একটা কথা আমি মানি তা হলো গতবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই বছর থাকার পর এবং দুই নেত্রীকে জেলে ঢোকানোর পর কিছু প্রশ্ন জন্ম নিয়েছে। তিনি সংগতভাবেই এ পদ্ধতি সম্পর্কে ভাববার প্রয়োজন বোধ করেছেন।

এ ক্ষেত্রে দুজন বসেই এ ব্যবস্থার দুর্বলতাগুলো সংশোধন করতে পারতেন। এক জায়গায় সংবিধান বলছে এক নির্বাচিত সরকার অন্য নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক থাকবে। আরেক জায়গায় ৯০ দিন স্পষ্টভাবে বলা আছে। যতগুলো অস্পষ্টতা ছিল সেগুলো দূর করে নির্বাচন ৯০ দিনের মধ্যেই যেন হয় এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার অন্য কিছু করতে না পারে এমন কিছু আর্টিকেল এনে ওটাকে আরও টাইট করতে পারতেন। অথবা দুই নেত্রী বসে আরেকটা ফর্মুলা আনতে পারতেন।

প্রশ্ন : টেলিফোন সংলাপটি যদি আপনার পত্রিকার কোনো সাংবাদিক বের করতেন তাহলে কী হতো?

মাহফুজ আনাম : তথ্যমন্ত্রী তো প্রথম দিনই বলেছেন যে জনগণের জানার আগ্রহ আছে। আর টেলিফোন সংলাপটা যদি এমনই হতো যে প্রধানমন্ত্রী খুবই বেকায়দাজনক জায়গায় তাহলে তারা এটা প্রকাশ সহ্য করতেন না। এখন তাদের ধারণা খালেদা জিয়া এত অসহিষ্ণু ব্যবহার করছেন, এত অপমানজনক কথা বলেছেন যা সবাইকে জানালে তাদের লাভ হবে। আবার বিএনপিও অখুশি নয়। তারা আবার মনে করছে ওরে বাপরে বাপ, আমার নেত্রী কী দেখিয়ে দিল? কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক, জনগণের মনে আশা ছিল দুই নেত্রী কথা বলা শুরু করলে কিছু একটা হবে।

সেই আশাটাও ভঙ্গ হলো।

প্রশ্ন : নির্বাচন তো খুবই সনি্নকটে। এখন যদি তারা বসেন আর একটা সমঝোতা যদি হয় তা বাংলাদেশকে কী দেবে? দেশের কি মৌলিক পরিবর্তন হবে?

মাহফুজ আনাম : মৌলিক পরিবর্তনের আশা তো আমরা ছেড়েই দিয়েছি। দুই নেত্রী সত্যিকার অর্থে খুব দূরদর্শী ভূমিকা রাখবেন সেই আশা তো আমরা ছেড়েই দিয়েছি। এখন আমরা তাদের পায়ে ধরছি যে এই গণ্ডগোল থেকে বাঁচান।

এই বাস পোড়ানো, এই হত্যা-মারামারি থেকে বাঁচান। লাগাতার হরতাল থেকে বাঁচান। স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা পাগল হয়ে যাচ্ছেন।

প্রশ্ন : আজকে তো গায়েবানা জানাজা আছে।

৪, ৫ ও ৬ তারিখ হরতাল আছে। এর পরের সপ্তাহে অবরোধ হওয়ার কথা।

মাহফুজ আনাম : একটা দেশের বৃহত্তর উন্নয়ন নিয়ে দুই নেত্রী আলোচনা করবেন এই আশা তো আমরা ছেড়েই দিয়েছি। এখন হাতে-পায়ে ধরছি, এবার আমাদের জীবনটাকে একটু সাশ্রয় দিন। মূলত নির্বাচনকালীন সরকারপ্রধান কে হবেন, এই জায়গায় গিয়ে সবকিছু আটকে গেছে।

বিএনপির কতজন সদস্য, কতজন আওয়ামী লীগের, কে কোন পোর্টফোলিও রাখবেন এটা মূল সমস্যা নয়। এখানে প্রধানমন্ত্রীকে বুঝতে হবে। আমাদের দেশে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে যে পরস্পর সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে তা শেখ হাসিনা নিজেও জানেন। যদি ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ না জিতে বিএনপি জিতত আর বিএনপি একইভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে দিত তাহলে আওয়ামী লীগ কি খালেদা জিয়ার অধীনে নির্বাচনে যেত? আমার মনে হয় না। চেয়ারটা উল্টে দেখলেই কিন্তু স্পষ্ট হয়ে যায় করণীয় কী।

প্রধানমন্ত্রীকে বুঝতে হবে তাকে রেখে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। এখন তার সামনে রাস্তা একটা খোলা। তিনি বার বার বলছেন বিএনপি না এলে না আসবে। তিনি বলে দিয়েছেন তফসিল ঘোষণার পরপরই সর্বদলীয় একটা সরকার গঠন করবেন। এগুলো সমঝোতার কথা নয়।

এখন তিনি যদি তার চিন্তাতেই এগিয়ে যেতে চান, যেতে পারেন। কিন্তু অন্য সবাই যদি মনে করে এবং তার দলের মধ্যে বহু লোক আছেন যারা তার সামনে তাকে খুব বাহবা দেন আর আড়ালে আমাদের সঙ্গে বলেন আমরা তো খুব একটা সংঘাতের দিকে যাচ্ছি। আমাদেরকেই জিজ্ঞেস করেন, কী হবে দেশে? এসব জেনেশুনে একটা জেদের বশবর্তী হয়ে দেশটাকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যাওয়া খুব দূরদর্শী নেতৃত্ব বলে আমার মনে হয় না।

প্রশ্ন : অনেককে বলতে শুনছি বিএনপি যদি না আসে তাতে অসুবিধা নেই, যদি ব্যাপকসংখ্যক ভোটার ভোট দিতে যায় আর দু-একটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে নির্বাচন মোটামুটি গ্রহণযোগ্য হবে।

মাহফুজ আনাম : আমাদের মুশকিল হলো যে যেখানে অবস্থান করি ভবিষ্যৎকে আমাদের সেই কাঠামোর মধ্যে দেখি।

যাকে ইংরেজিতে বলে পলিটিক্যাল ন্যারেটিং। এখন আওয়ামী লীগের যে কাউকে জিজ্ঞেস করলে বলবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো খারাপ বিষয় আর হতে পারে না। দেশের জন্য সাংঘাতিক অনিষ্টকর একটা ব্যাপার। এই আওয়ামী লীগই আমাদের সবাইকে তত্ত্বাবধায়কের কথা বুঝিয়েছে। আজ শেখ হাসিনা যদি হঠাৎ করে বলে দেন তত্ত্বাবধায়ক মেনে নিলাম তখন এ লোকগুলোই বলবে হ্যাঁ, ঠিক আছে, ভালো ভালো।

আমরা নিজেরা চিন্তা করি না। নেত্রী যা বলেন তা-ই শুনি। নেত্রীকে কোনো পরামর্শ বা বুদ্ধি দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আর তারা তো বুদ্ধি নিতেও আগ্রহী নন। দুর্ভাগ্যবশত দুই রাজনৈতিক দল দেশটাকে তিন ভাগ করেছে।

একটা হচ্ছে দেশপ্রেমিক, আরেকটা দেশের শত্রু আর মাঝে হচ্ছে ষড়যন্ত্রকারী। দেশের প্রেমিক মানে কী? আমার দলের সব লোক দেশপ্রেমিক, সে খুনি হোক, টেন্ডারবাজ হোক, চরম দুর্নীতিবাজ হোক, রেপিস্ট হোক- সে দেশপ্রেমিক। কেননা সে আমার লোক। আর বিরোধী দল? ওরা তো দেশকে ভালোই বাসতে পারে নো। ওরা সবচেয়ে ভালো একটা প্রস্তাব দিলেও তা দেশের জন্য ভালো নয়।

আর সাংবাদিকসহ আমরা মাঝে যারা আছি তারা হচ্ছি ষড়যন্ত্রকারী। এটা কেন ছাপল? ওইটা কেন ছাপল না? দুই দিন খালেদা জিয়াকে ফ্রন্ট পেজে দিল, এইটা দিল না। আবার দুই দিন শেখ হাসিনাকে দিল, ওইটা দিল না। এ ধরনের একেবারেই অপ্রত্যাশিত ও জাতির জন্য অপ্রয়োজনীয় ইস্যু নিয়ে তারা ব্যস্ত আছেন। সারাক্ষণ শত্রু খুঁজে বেড়াচ্ছেন।

সারাক্ষণ ষড়যন্ত্রকারী খুঁজে বেড়াচ্ছেন। আমরাও তো দেশকে ভালোবাসতে পারি। তারা মনে করেন উনারা ছাড়া কেউ দেশকে ভালোবাসতে পারে না। কোনো দল যখন বিরোধী দলে থাকে তখন তারা বলে ডেইলি স্টার স্বাধীন সাংবাদিকতা করে। ওই একই লোক ক্ষমতায় গেলে বলে তোমরা বিরোধী দলের কেনা গোলাম হয়ে গেছ।

গণতন্ত্র একটা ম্যাচিউরিটির সঙ্গে আসে। গণতন্ত্র একটা টোটাল প্যাকেজ। সেটা হলো আপনি একবার জিতবেন, আরেকবার হারবেন। যে দল হারবে সে আপনার দোষ-ত্রুটি খুঁজে বেড়াবে। যে দল জিতবে সে আরও বিচক্ষণতার সঙ্গে দেশ চালাবে।

আমাদের দেশে হেরে যাওয়ার পরিণতিটা এত ভয়াবহ হয়ে গেছে যে কেউ আর হারতে চায় না। এখন যদি বিএনপির কাউকে জিজ্ঞাসা করে সে বলবে, আওয়ামী লীগের সময় পলিটিক্যাল লোকজন নিগৃহীত হয়েছে। ব্যবসায়ীরা কোনো ব্যবসা পাননি। সরকারি কর্মচারী যাদের গায়ে একটু বিএনপির গন্ধ আছে তারা ওএসডি হয়ে বসে আছেন। এমন একটা বিষাক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে এবং এমনভাবে আমরা নিজেদের বিভক্ত করেছি যে আজ ডাক্তারদের মধ্যে প্রো-বিএনপি, প্রো-আওয়ামী লীগ।

সাংবাদিকদের মধ্যে প্রো-বিএনপি, প্রো-আওয়ামী লীগ। এটা যেন ট্রাইবল ওয়ার। আমাদের ট্রাইবল নেই কিন্তু ট্রাইবল হয়ে যাচ্ছে। যদিও আমাদের একটা গণতান্ত্রিক দেশ, এত বড় স্বাধীনতা সংগ্রামের ঐতিহ্য, আমাদের সংস্কৃতি এত সমৃদ্ধ, তার মধ্যে একটা ট্রাইবল মানসিকতা।

প্রশ্ন : রাজপথে প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে।

রেল পুড়ছে, বাস পুড়ছে। অর্থনীতি বিপর্যস্ত। দুই নেত্রীর কথোপকথন শুনে বোঝা যাচ্ছে উনারা তৃতীয় শক্তির আশঙ্কা করছেন। একজন আরেকজনকে অভিযুক্ত করছেন। তারপরও উনারা কেন এমন করছেন?

মাহফুজ আনাম : দুই নেত্রীর অবস্থা সালিশ যাই হোক তালগাছ আমার।

আজকে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী। উনি হরতালের বিরুদ্ধে। আবার যখন অপজিশনে ছিলেন উনিই কিন্তু হরতাল দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়ার অনেক বক্তব্যে উনি বলেছেন, হরতাল ধ্বংসের। হরতাল করো না।

এই যে অ্যামনেজিয়া- আমি অপজিশনে এলে ভুলে যাই হরতালের খারাপ দিক। আর ক্ষমতায় এলে হরতালের ভয়াবহতা বুঝতে পারি। বাংলাদেশের অর্থনীতি কীভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে চিন্তা করেন। ৪ নভেম্বর হরতাল হলে ২০ লাখ ক্লাস এইটের ছেলেমেয়ের পরীক্ষা ব্যাহত হবে। ক'দিন আগে 'এ' লেভেল, 'ও' লেভেল পরীক্ষা ব্যাহত হলো।

আবার ১৫ বা ১৬ নভেম্বর যদি হরতাল হয় ওইদিন আরও ৩০ লাখ ছেলেমেয়ের পরীক্ষা ব্যাহত হবে। এটা কি অপজিশনের মনে কোনো প্রভাবই রাখবে না?

প্রশ্ন : মহাজোট চার-পঞ্চমাংশ আসন নিয়ে ক্ষমতায়। আওয়ামী লীগ এককভাবে দুই-তৃতীয়াংশ আসন নিয়ে ক্ষমতায়। তাদের প্রথম শপথ অনুষ্ঠানে বিরোধী দল সংসদে গেল। তার পরে তারা দেশটাকে এই জায়গায় নিয়ে এলো কেন? কিংবা আগের শাসনকালে বিএনপিও দুই-তৃতীয়াংশ আসন পেয়ে দেশটাকে ওই পরিস্থিতির দিকে কেন নিয়ে গেল?

মাহফুজ আনাম : আমাদের দেশে অনেক ধরনের সমস্যা আছে।

আছে অর্থনৈতিক সমস্যা। কিন্তু রাজনৈতিক সমস্যার মূল জায়গা হচ্ছে সরকারি দলের সঙ্গে বিরোধী দলের সমঝোতার অভাব। আমরা বার বার দেখছি আপনি যদি '৯১ সালে যান আওয়ামী লীগ বিরোধী পজিশনে। প্রথমে শুরু হয় পার্লামেন্টের কোন জায়গায় বসব, কোথায় বসব না। পরে আস্তে আস্তে দূরত্ব বাড়তে বাড়তে বিরাট আকার ধারণ করে।

ক্ষমতাসীন দল ভাবে ওরা তো পরাজিত শক্তি। ওদের কোনো জনসমর্থন নেই। তাই উপেক্ষা করতে থাকে। আমি মনে করি, বিরোধী দল এবং সরকারি দলের সমস্যার সমাধানটা খুবই একটা প্রায়োরিটি। আজকে নির্বাচন নিয়ে সমঝোতা হচ্ছে না কেন? এখানে কেউ হারতে চাচ্ছে না।

আওয়ামী লীগ ভাবে বিএনপি ক্ষমতায় এলে আমার লোকজনকে মেরে ফেলবে, আমার লোকজনের সবকিছু যাবে এবং যতটা না শেখ হাসিনা ভয় পান তার চেয়ে বেশি ভয় পাচ্ছেন তার আশপাশের অন্য লোকগুলো। কারণ আনফরচ্যুনেটলি শেখ হাসিনা তার দলের লোকজনের দুর্নীতি বন্ধের কোনো উদ্যোগ নেননি। উনি শুনতেই চাননি। আমি অনেক সময় শুনেছি, ঠিক আছে, ওরা এত পরিশ্রম করছে, এত ত্যাগ স্বীকার করছে, ওরা তো কিছু করবেই। এই কিছুটা যে খুব দ্রুত বিরাট হয়ে যায়।

যেহেতু দলের কর্মীরা দুর্নীতি করেছেন, এখন উনারা এসে নেত্রীর পায়ে ধরছেন যে, আপনি ক্ষমতা ছাড়লে আমাদের অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। এখন আমি মনে করি, এই সমঝোতা যদি হতো তাহলে নির্বাচন-পরবর্তী সংঘাতের বিষয়টার একটা সুরাহা হতো। অবশ্য খালেদা জিয়া তো বলেছেন, উনি প্রতিশোধ নেবেন না। উনি হয়তো নিলেন না, আরেকজন নিতে পারে। আবার এমন হতে পারে যে, আওয়ামী লীগ এত খারাপ করেছে যে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ওদের ওপরে হামলা করেছে।

যাই হোক, এই মুহূর্তে আমি মনে করি, শেখ হাসিনাকে বুঝতে হবে উনি নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান থেকে বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে পারবেন না। এখন উনি যদি মনে করেন বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন করবেন তাহলে সেখানে রাজনৈতিক অবশ্যম্ভাবী কতগুলো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। এবং আমি মনে করি তাতে শান্তিপূর্ণভাবে দেশ পরিচালনা হবে না। উনি নির্বাচন করে ফেলতে পারেন। কিন্তু নির্বাচনই কি শেষ? নির্বাচনের পরে কী হবে? এবং আমার ধারণা, উনি যদি সত্যি সত্যি একদলীয় নির্বাচন করেন, তবে বিএনপির এই মুহূর্তে যে জনসমর্থন তা আরও বেড়ে যাবে।

অনেক লোক আছে যারা হয়তো বিএনপিকে পছন্দ করে না কিন্তু তারা বিএনপি ছাড়া নির্বাচন চায় না। তার মানে বিএনপি ছাড়া নির্বাচন হলে নির্বাচন-পরবর্তী আমি কোনো শান্তি দেখতে পাচ্ছি না।

প্রশ্ন : এখানে ফাইটিং ফোর্স হিসেবে বিএনপির সঙ্গে মাঠে যে জামায়াত আছে, হেফাজত আছে...

মাহফুজ আনাম : জামায়াত এমন একটি দল যারা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করে। ভারতে আছে আরএসএ, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং বিজেপি। তারা এক ধরনের হিন্দুত্ব নিয়ে রাজনীতি করে।

এই জিনিসটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। জামায়াত দুই-তিন শতাংশের বেশি ভোট পায় না। অর্থাৎ, বাংলাদেশের জনগণ ধর্মভিত্তিক রাজনীতি চায় না। তারা জনগণের কাছে যায়, জনগণ বার বার তাদের প্রতিহত করে। কিন্তু জামায়াতের যে সন্ত্রাস, তাদের যে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততা, এটা আমাদের জন্য আসলেই শঙ্কার ব্যাপার।

বিএনপি একেবারেই বুঝতে পারছে না যে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ যুদ্ধাপরাধের বিচার চায়। কারণ আমরা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে অত্যন্ত গর্ব করি। তারা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধিতা করেছে এবং আজ পর্যন্ত মাফও চায়নি। তার মানে এখনো তারা '৭১ সালের মানসিকতাকে ধরে রেখেছে। আমি যদি দেখতাম যে জামায়াত একটা পার্টি এবং তারা জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়েছে, নৃশংস গণহত্যার দায়ভার স্বীকার করেছে তাহলে কথা ছিল।

এখন জামায়াতে যাদের বয়স ৪০ বছরের কম তারা তো কলাবোরেটও হতে পারে না, ওরা গণহত্যার সঙ্গেও জড়িত না, যাদের জন্ম হয়েছে যুদ্ধের পরে। অর্থাৎ বিরাট সংখ্যক জামায়াতি আছে যারা যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। তাদের আমি বলব, তোমরা কেন যুদ্ধাপরাধীদের দায়ভার কাঁধে নিচ্ছ? কিন্তু এ ধরনের কোনো উদ্যোগ জামায়াত নেয়নি। শুধু তা নয়, কোনোভাবেই তারা স্বাধীনতা সংগ্রাম ও তখনকার সময়ের গণহত্যাকে স্বীকৃতিই দেয়নি। খালেদা জিয়া কিন্তু অনেক সময় বোঝেন না আমাদের মুক্তি সংগ্রামের মূল্যবোধগুলো কী।

হেফাজতের ৫ মে'র ঘটনাকে উনি বললেন, ওখানে গণহত্যা হয়েছে। জেনোসাইড হয়েছে। আমি এক বিএনপি নেতাকে বললাম, আপনারা কি আর শব্দ খুঁজে পেলেন না? আপনারা কি জানেন না জেনোসাইড শব্দটার লিবারেশন ওয়ারের সঙ্গে সম্পর্ক আছে। সে আমার ওপর ক্ষেপে গেল। বলল, জেনোসাইড তো ইংরেজি শব্দ।

এটা তো ব্যবহার করা যায়। ইংরেজি শব্দ কেন ব্যবহার করা যাবে না? আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। অনেক শব্দের ঐতিহাসিক মূল্য আছে। আমাদের জন্য জেনোসাইড হিস্টোরিক্যাল একটা ঘটনার সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশে ফুট করে এক জায়গায় কিছু লোক মারা গেল।

আপনি বলে বসলেন গণহত্যা। এটা আমি মনে করি, সত্যিকার অর্থে খালেদা জিয়া হয়তো স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কে অত সচেতন হতে চান না। শক্তভাবে বললে আমি বলব, আমাদের দেশের মূল্যবোধের প্রতি উনার এক ধরনের অনীহা প্রকাশ।

প্রশ্ন : বর্তমান সরকার তাদের প্রধান প্রধান শত্রু চিহ্নিত করছে। তাদের মধ্যে নোবেল লরিয়েট ইউনূসও রয়েছেন।

ওয়ান-ইলেভেনের পরে উনি রাজনৈতিক দল করতে চেয়েছিলেন। রাজনীতি করতে উৎসাহিত হয়েছিলেন। সেখানেও সিপিডির ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম- আপনাদের নাম এসেছে যে আপনারা উনাকে সামনে নিয়ে একটা কিছু করতে চাচ্ছেন।

মাহফুজ আনাম : ইউনূস সাহেবের রাজনীতিতে আসা একটা ভালো উদ্যোগ হতে পারত। আজ আওয়ামী লীগ-বিএনপি একাধারে ২২ বছর দেশ চালাচ্ছে।

এই ২২ বছরে জাপান, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, আমেরিকা, ব্রিটেনে কত নেতৃত্বের পরিবর্তন হয়েছে। একই পার্টি আছে কিন্তু লিডার চেঞ্জ হয়েছে। লেবার পার্টির লিডার একসময় টনি ব্লেয়ার ছিলেন, এখন আরেকজন। আমাদের দেশে কোনো পরিবর্তন হয়নি। নেতৃত্বেরও নয়, দলেরও নয়।

সেই চিন্তা থেকে যে এত বড় একজন সমাদৃত ব্যক্তি রাজনীতিতে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য উনি ঠিক সুইট্যাবল নন, উনি চলে গেলেন। এতে কী এমন অপরাধ। একটা গণতান্ত্রিক দেশে আমি রাজনীতি করতে চেয়েছি। তার জন্য এত গালি! এত অপমান! ইউনূস সাহেবকে নিয়ে আমার অবস্থান খুবই পরিষ্কার।

আমাদের জন্য একটা কলঙ্ক যে, এত বড় একজন সম্মানিত ব্যক্তিকে আমরা অপমান করেছি। একটা রাষ্ট্রের সব শক্তি প্রয়োগ করে চার বছর ধরে ইউনূস সাহেবের খুঁটিনাটি তথ্য আবিষ্কার করা হয়েছে। উনি একটা ব্যাংক পরিচালনা করতেন, যে ব্যাংকের মাসিক লেনদেন ছিল ওয়ান বিলিয়ন ডলার। আজকে কিন্তু ইউনূস সাহেব সম্পর্কে একটি আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তারা আনতে পারেননি। তারা ধরেছেন উনি বয়সসীমা পার হওয়ার পরে থাকলেন কেন? ঠিক আছে, ওই সময়কার বোর্ড এটা অনুমোদন দিয়েছিল।

এখনকার কোর্ট বলেছে, এটা ঠিক হয়নি। ওইটা তো সুরাহা হয়ে গেছে। কিন্তু উনার ব্যক্তিগত সততা নিয়ে কোনো খুঁত কি কেউ বের করতে পেরেছেন? আমার ব্যক্তিগত শ্রদ্ধা উনার প্রতি যতটুকু ছিল এই চার বছরে সরকারের ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়েও উনার কোনো ত্রুটি খুঁজে না পাওয়ায় তা আরও বেড়েছে। সোনালী ব্যাংক থেকে চার হাজার কোটি টাকা উধাও হয়ে গেল। বেসিক ব্যাংকের মতো একটা ভালো ব্যাংকের আজ কী দুরবস্থা! প্রায়ই শুনছি বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে শত কোটি, হাজার কোটি টাকা চলে যাচ্ছে, সেদিকে আমাদের অর্থমন্ত্রী কোনো ধরনের আইনি পরিবর্তন বা ব্যাংকিং রিফর্মের প্রয়োজন বোধ করলেন না।

যে গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কোনো রকম অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেল না, ওই ব্যাংকটা নিয়ে তার এত নাড়াচাড়া করার দরকারটা কী?

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।