শুভ জন্মদিন শাহরুখ সাকিব!
আমার আসল জন্মদিন জানুয়ারিতে হলেও আজকে আমার আরেকটা জন্মদিন! জি না, আজকে আমার সার্টিফিকেটের জন্মদিন না , আজকে আমার সামহোয়্যার ইন ব্লগে লেখক হিসেবে জন্মদিন! একবছর আচগে ঠিক আজকের দিনে প্রিয় নায়ক শাহরুখ খান ( বলিউড এ) এর জন্মদিনে সামুতে আমি প্রথম পোস্ট দেই আমার প্রথম পোস্ট ছিল হুমায়ুন আহমেদ এর সর্বশেষ ছবি ঘেঁটুপুত্র কমলা নিয়ে এরপর সময় অনেক গড়িয়ে গেছে, বুড়িগঙ্গার ঘোলা পানি আরও বেশি ঘোলা হয়েছে , আমি একে একে ৩৪ টা (আজকেরটা সহ) পোস্ট দিয়েছি এবং দেখতে দেখতে সামুতে আমার একবছর পূর্ণ হয়েছে মুন্নি সাহার মত অনুভূতি জানতে চাচ্ছেন? জি হ্যাঁ, অনুভূতি আমার বেশ ভাল, নতুনভাবে জন্ম নিতে আর সেই জন্মের প্রথম পূর্তি সবাইকে জানানোর মাঝে আনন্দ তো অবশ্যই আছে
প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আমার বিস্তারিত অনুভূতি জানানোর আগে আজকে একটা অন্য বিষয় নিয়ে লিখতে চাই , যেই বিষয়টা নিয়ে আমি সামুতে সবচেয়ে বেশি পোস্ট দিয়েছি, জি হ্যাঁ, সিনেমা হলিউড এ আমার সবচেয়ে প্রিয় পরিচালকদের মাঝে একজন হলে আলফ্রেড হিচকক। তাকে রহস্য বা থ্রিলারের জনক বলা হয় এবং তাকে সর্বকালের সেরা পরিচালকদের মাঝে একজন মানা হয়! ( দেখতে হবে না পছন্দটা কার!
)
হিচককের ছবি দেখার আগে তার প্রচুর নাম ডাক শুনেছিলাম, সবচেয়ে বেশি শুনেছিলাম তার বিখ্যাত "সাইকো" ছবির কথা। সাদাকালো ছবি দেখার আগে তার প্রতি একধরনের এলারজি ছিল, কারণ জানিনা, সম্ভবত ছোটবেলা থেকে রঙ্গিন টিভি দেখে অভ্যাস, তাই মনে হয়! তো একদিন সাহস করে দেখে ফেললাম সাইকো, দেখার পর মাথা পুরা নষ্ট! ৬০ এর দশকে এই লোক ক্যামনে এই জিনিস বানাইসে! এই প্রযুক্তির যুগে বেঁচে থাকলে তো এই ব্যাটা তো পুরা কাঁপায় ফেলত!
"সাদাকালো সিনেমা" এর প্রতি আমার এলারজি ভাল করার ওষুধ ছিল "সাইকো" সাইকোকে ধন্যবাদ
এরপরে একে একে হিচককের বাকিমুভিগুলো দেখতে লাগলাম, সবগুলাই এক একটা মাস্টারপিস! তবে যেই ছবিটা আমার সবচেয়ে বেশি ভাল্লাগেছে, যেই ছবিটা বিনা সন্দেহে আমার জীবনে দেখা বেস্ট বেস্ট বেস্ট থ্রিলার মুভি এবং যেই ছবিটা নিয়ে আজকে আপনাদের সামনে আলোচনা করবো তার নাম হল " ডায়াল এম ফোর মার্ডার"
ছবির নামঃ Dial M for Murder
মুক্তির সালঃ ১৯৫৪
পরিচালকঃ আলফ্রেড হিচকক
অভিনয়ঃ Ray Milland, Grace Kelly, Robert Cummings ও আরও অনেকে
কাহিনী সংক্ষেপঃ
টনি ওয়েনগিস( রে মিলানড) আর তার স্ত্রী মার্গট( গ্রেস কেলি) লন্ডনের একটা ফ্লাটে থাকে । টনি তার বিভিন্ন ব্যবসায়ীক কাজে বেশিরভাগ সময় বাইরেই ব্যাস্ত থাকায় এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তার স্ত্রী রহস্য-রোমাঞ্চ উপন্যাস লেখক মার্ক ( রবার্ট কামিংস)এর সাথে পরকীয়া প্রেম করে চলেছে।
দুর্ভাগ্যবশত একদিন মার্গট এর একটি পার্স হারিয়ে যায় এবং তার ভেতর ছিল মার্ক এর দেওয়া একটা প্রনয় পত্র।
সেই পার্স এর চিঠি কোন একভাবে টনির হাতে যায় । বিচক্ষন টনি আস্তে আস্তে সব কিছু অবজার্ভ করে স্ত্রীর পরকীয়া প্রেম সম্পর্কে জেনে ফেলেন আর ঠান্ডা মাথায় স্ত্রী কে খুন করার একটা মাস্টার প্লান তৈরি করে ।
যাকে দিয়ে খুন করাবেন টনি তার স্ত্রীকে ,সে হল টনির ছোটবেলার সহপাঠী। তাকেও প্লান করে ব্লাকমেইল করে সবকিছু ঠিক ঠাক । রাত এগারোটায় প্লান মাফিক স্ত্রীকে খুন করা হবে ...টনি থাকবে টেলিফোনের একপাশে আর একপাশে তার স্ত্রী ।
এই পাশ থেকে তার স্ত্রীকে খুন করা হবে টনি ওপর পাশ থেকে শুনবে তার আর্তনাদ । যাকে বলে একদম পার্ফেক্ট প্লান । এমনই মাস্টার প্লান আমি যখন মুভি দেখতেছিলাম আমার কাছে পিওর পার্ফেক্ট প্লান মনে হয়েছিল এটা । নিজের স্ত্রীকে খুন করার পিওর মাস্টার প্লান । যেন সাপও মরবে কিন্তু লাঠিও ভাঙবে না!
কিন্তু এমন একটা পার্ফেক্ট প্লানেও শুধু "কপালের লিখন যায় না খণ্ডন" এর জন্য একদম গোলমেলে হয়ে যায়, জাস্ট ছোট্ট একটা অসতর্কতার জন্য? কি সেই অসতর্কতা? এই প্ল্যান ফেল হবার পর টনি প্ল্যান ২ বানায়? কি সেই প্ল্যান ২? জানতে হলে মুভিটা দেখতে হবে ... !!!
১০৫ মিনিট দৈর্ঘ্যের এই মুভিতে আপনি এক সেকেন্ডের জন্যও চোখের পলক ফেলতে পারবেন না, এটা আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি! টানটান উত্তেজনার ছবি! সবার অভিনয় অসাধারণ! তবে যিনি সম্ভবত তার জীবনের সেরা অভিনয় করেছেন এবং যেই চরিত্রে শুধু তাকে ছাড়া আর কাওকে মানাত না, তিনি হলেন টনি চরিত্রে রুপদানকারী রে মিলানড! আমার ভাণ্ডারে কোন বিশেষণ নাই তার অভিনয় দক্ষতা বুঝানোর জন্য! এটা সাংঘাতিক শক্ত স্নায়ুর একজন মানুষের চরিত্রে, একজন পারফেক্ট মার্ডার প্ল্যানকারীর চরিত্রে তিনি যা দেখিয়েছেন তার যত প্রশংশা করবো ততটাই কম হবে!
১৯৯৮ সালে খোদ হলিউড এ " অ্যা পারফেক্ট মার্ডার" এই ছবির রিমেক হয় যাতে অভিনয় করেন মাইকেল ডগলাস এর মত অভিনেতা।
এছাড়া ১৯৮৫ সালে বলিউড এ "আইতবার" এবং সেই বছরেই তামিল ছবি "চাভি" এবং ২০০২ সালে "হামরাজ" নামক ছবি মুক্তি পায় এই ছবির উপর অনুপ্রাণিত হয়ে। যদিও দুঃখের সাথে জানাচ্ছি, একটাও অরিজিনাল ছবির ধারে কাছেও যায় না, এমনকি হলিউড এর টাও না!
একটা ছোট্ট , মজার, অদ্ভুত ও লজ্জার তথ্য পাঠকদের সাথে শেয়ার না করে পারছি না, এই ছবিটা এতটাই টানটান লেগেছিল আমার কাছে আর এর স্ক্রিপ্ট এতটাই উত্তেজনাকর ছিল যে , ছবি চলার মাঝখানে আমার অনেক টয়লেট চাপা সত্ত্বেও আমি পিসির সামনে থেকে উঠতে পারছিলাম না! বুঝেন অবস্থা কি দারুণ এক ছবি এটা! এখানেই হিচককের সার্থকতা, তিনি আমাকে টয়লেটে যাইতে দেন নাই!
৬৭,৪৭৯ জন ইউজার আর ক্রিটিকদের কাছ থেকে পাওয়া এই ছবির আইএমডিবি রেটিং ৮ দশমিক এক! আইএমডিবি টপ ২৫০ এ এই ছবির অবস্থান ১৬৬ তম! রটেন টমেটো ছবিকে দিয়েছে ৮৮% রেটিং। এরপরেও আমার মতে এটি আন্ডাররেটেড ছবি, আমার মতে এটার রেটিং ৯ হওয়া উচিত! অন্তত ৮ দশমিক ৫ তো অবশ্যই!
AFI's এর ১০০ বছরের নির্বাচিত বেস্ট ১০০ থ্রিলারের মাঝে এই ছবির অবস্থান ৪৮ তম। AFI's টপ টেন mystery film এর লিস্টে এই ছবির অবস্থান নবম! আর কিচ্ছু বললাম না, ইটস অ্যা মাস্ট মাস্ট মাস্ট ওয়াচ!
এবার আবার ফিরে আসি বর্ষপূর্তিতে ব্লগে আকাউনট থাকবে আর আমি লিখব- এটা কখনও মাথায় আসে নাই, টুকটাক ব্লগ পড়তাম ২০১১ সালে, এই বছরই কম্পিউটার কিনা হয়, এর আগে জানতামই না সামু সম্পর্কে তেমন, তবে বিখ্যাত ব্লগারদের নাম জানতাম। কলেজ জীবনের অন্যতম সেরা বন্ধু, বিখ্যাত ব্লগার বন্ধু "গাধা মানব" ফেসবুকে আমার লেখা পড়ে আমাকে ব্লগে লেখার জন্য পীড়াপীড়ি করতে থাকে, প্রথমে রাজি হইনাই একদম, শেষে তার জোরাজোরি বশত নভেম্বরের ২ তারিখ ব্লগে নাম লিখালাম।
শাহরুখ খান এর প্রতি পাগলামি বশত কলেজের বন্ধুরা "শাহরুখ সাকিব" নামে ডাকতো, তো গাধা মানব বলল ব্লগে নাকি ছদ্মনাম ব্যবহার করাই ভাল আর কোন নাম মাথায় আসে নাই, তাই এই নামেই ব্লগের জগতে এসে পড়লাম! আমার লেখা পড়ার পর থেকে কারো কাছে সামুতে আসলে ভাল্লাগলে তার পুরো কৃতিত্ব ব্লগার গাধা মানবের, আর আমার লেখা পড়ার পর থেকে "সামু রসাতলে গেছে" - এই মনোভাব জাগ্রত হলে তার পুরো কৃতিত্বও ব্লগার গাধা মানবের আমি কিচ্ছু জানি না, আমি মাসুম বাচ্চা!
ব্লগের হাজার হাজার অসাধারণ পোস্ট রেখে যারা আমার সস্তা রম্য, হালকা মুভি রিভিউ পড়তে আসেন, তাঁদের আমি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ জানাই! এখন পর্যন্ত আমার ব্লগ দেখা হয়েছে ১০,১৯১ বার- আমার কাছে এটা অনেক অনেক বেশি! আমি যে লিখতে পারি- এটাই আমি জানতাম না! আপনাদের মূল্যবান কমেন্ট, ছাগুদের অমূল্যবান কমেন্ট আমার চলার পথের পাথেয়, আমি আপনাদের কাছে ধন্য!
ব্লগের যেই জিনিসটা গত এক বছরে আমাকে সবচেয়ে বেশি পীড়া দিয়েছে, তা হল, যেই লেখাটা আমি অনেক কষ্ট করে লিখি, অনেক কষ্ট থেকে লিখি, যেই লেখাটা মানুষের পড়া খুব দরকার, বেশি বেশি পড়া দরকার- সেটা পড়ে খুব বেশি টেনেটুনে ১০০ জন , তাও ভাগ্য ভাল হলে! আর সম্পূর্ণ ফাইজলামি করে, মাথায় হঠাৎ যা আসে , তা যদি লিখি, যেটা না পড়লে কোন সমস্যা নাই, সে লেখা ৫০০ বা ৬০০ এর নিচে পড়াই হয় না! ক্যামনে কি?! আমাদের দেশের মানুষের এই সমস্যাটা আমাকে বেশ কষ্ট দিয়েছে।
যাই হোক, সুখ দুঃখ মিলিয়ে জীবন! নিজের আনন্দে লিখি, অন্য কারো দ্বারা প্ররোচিত হয়ে নয়। জামাত শিবিরকে কখনই ক্ষমা করতে পারব না, তাঁদের বিরুদ্ধে যত পারি লিখব, শুধু তারা নয়, অন্যায় যারা করবে, তাঁদের সবার বিপক্ষে লেখার প্রাণান্ত চেষ্টা করবো! ইতিমধ্যেই তিনবার ফেসবুক আকাউনট হ্যাক হয়েছে, হালকা পাতলা কিছু " হুমকিও" খেয়েছি, ব্যাপার না, চলার পথে কুকুর আসবেই, সব কুকুরকে ঢিল মারতে গেলে আমি আমার গন্তব্যে পৌঁছাতে পারব না আমাকে যারা হুমকির "থুতু" দেয়, তাঁদের সেই সব বালতি বালতি থুতু আমি জাস্ট একটা ভালোবাসার রুমাল দিয়ে মুছে ফেলতে পারি যখন আমার বন্ধুরা আর আশেপাশের মানুষরা বলে " বাহ! সাকিব! তুই তো চমৎকার লিখিস!" বা "দোস্ত! যতই মন খারাপ থাক, তোর ব্লগে গিয়ে তোর লেখা পড়লেই মন ভাল হয়ে যায়!" এই মন্তব্যগুলোই হল আমার সেই শক্তিশালী "ভালোবাসার রুমাল"
হ্যাপি ব্লগিং গাইজ! আস্তিকতা নাস্তিকতার ক্যাচাল ছেড়ে আমরা মানুষ হওয়ার চেষ্টা করি, যার যার আদর্শ নিয়ে সে সে থাকি, অযথা অন্যকে না খোঁচাই, আমাদের সকল পরিচয় যেন মানুষ হোক, নিজেদের দেশের জন্য কিছু করতে না পারলেও নিজের দেশকে যেন ভালবাসতে কোন কমতি না রাখি! ব্লগিং চলতে থাকুক, আঙুলের ব্যায়াম চলতেই থাকুক! সবাইকে আবারও অসংখ্য ধন্যবাদ, দোয়া করবেন আমার জন্য!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।