আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজকের তাজমহলের মালিক শুধুমাত্র ভারতীয়রাই নয় আমরাও বটে।

নিরব আঙ্গিনায় বসে আছি হয়ত স্পর্শ আমাতে আমি হব।

ভারতের প্রতি বরাবরই আমার একটু বিতশ্রুদ্ধ ধারণা ছিল। থাকাটা অস্বাভাবিক কিছুইনা। বরং স্বাভাবিক। আমি গত ৬বছর যাবৎ ভারতে যাতায়াত করি।

ভারত বলতে মূলত আমি কলকাতাকেই মূখ্য ধরতাম (বেশীর ভাগ বাঙ্গালীর তাই ধারণা),তথাপী আসাম,ত্রিপুরা,মেঘালয় সহ বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্য ঘুরে বেড়িয়েছি। সবই জানার ইচ্ছে থেকে। ধীরে ধীরে অবশ্য সমগ্র ভারত ঘুরে দেখার সুপ্ত বাসনা মনে মনে রয়েছে। কিন্তু ইদানিং কালে মমতা ব্যানার্জীর আচরণ দেখে বিতশ্রুদ্ধতা আরো বেড়ে গেছে। সবকিছুতেই মিথ্যা অহমিকা নিয়ে খুব বেশী বাড়াবাড়ি করে এই অহংকারী নারী।

আমার সহয়োগীতা নিয়ে অনেকে ভারত ভ্রমন করে। অনেক সময় স্বদলবলে ভারত ঘুরতে যাই। যাহোক এবার ভারত সম্পর্কে আমার ধারণা পুরোপুরিই পাল্টে গেল। এবং জানতে পারলাম আজকের তাজমহল,আগ্রাফোর্ড,রেডফোর্ড,কুতুব মিনার সহ মোঘল আমল বা তারো আগে যে সকল স্থাপত্য বর্তমানে ভারতে রয়েছে তার মালিক শুধুমাত্র ভারতীয় জনগনই নয় আমরাও অন্যতম মালিক। কিন্তু দর্ভাগ্য বশত আমরা আমাদের অধিকার সম্পর্কে জানাতো দূরে থাক তার চেয়েও অনেক দূরে।

ঘটনাক্রম : আমার শান্তিনিকেতন যাওয়া হয়নি। তাই শান্তি নিকেতন যাবার জন্য ভিসা করলাম। আমার ধারণা অনুযায়ী শান্তি নিকেতনে অনেক কিছু পাব শিখার। তাছাড়া কিছু বন্ধু-বান্ধব আছে তাদের সাথে দেখা করব। কিন্তু হঠাৎ করেই ডাক পড়ল বাংলাদেশী ইয়থ ডেলিগেট হিসেবে রাষ্ট্রিয় সফরে ভারত যাবার।

যথারীতি কাগজ-পত্র সম্পন্ন করলাম এবং প্রস্তুতি নিলাম। আমার ধারণা ছিল শান্তি নিকেতনে যাব,কারণ গত বছর ইয়থ ডেলিগেটরা শান্তি নিকেতনে গিয়েছিল। পরে যখন দেখলাম আমাদের সফর সূচীতে শান্তি নিকেতন নেই একটু অসন্তুষ্ট হলাম। কিন্তু ধারণা পাল্টে গেল সফর শুরুর দিনেই। আমার এই ভূলটা ভাঙ্গিয়ে দিল ইন্ডিয়ান হাই কমিশনের ফাষ্ট সেক্রেটারী সুজিত ঘোষ।

খুবই আন্তরিক ভাবে তিনি আমাদের সকল বিরক্তি সহ্য করেছেন (অবশ্য সহ্য করা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। কারণ তিনি আমাদের দলনেতা হিসেবে রাষ্ট্র কর্তৃক নির্ধারিত)। আমরা যারা বাংলাদেশী সবাই শুধু মাত্র কলকাতার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করি। কিন্তু আসলে আমরা বুঝতে চাইনা একটা দেশের প্রধান হলো রাজধানী। সকল সিধান্ত রাজধানী থেকে হয়।

একটা প্রদেশ থেকে কখনো কোন বড় সিধান্ত নেয়া সম্ভব নয় (বাধা দেয়া সম্ভব। যেটা মমতা ব্যার্নাজী করেছেন। ) দিল্লীতে বাঙ্গালী চোখে পড়ে কম। কলকাতায় টাকা থেকে রুপিতে খুব সহজে এবং ভালো দামে টাকা পরির্বতন করা যায়। তাই আমি সরাসরি টাকা নিলাম।

কিন্তু বিধিবাম দিল্লীতে টাকা থেকে রুপিতে চেন্জ করা খুবই কঠিন। যাও পেলাম বলে অর্ধেক দাম। তাই চেণ্জ করলাম না। ঘুরলাম রাষ্ট্রিয় মর্যাদায়। মর্যাদা দিতে কম দেয়নি।

সম্মানিত অনুভব করেছি নিজেকে। তারা আমাদেরকে যথেষ্ট সম্মান দিয়েছে। আমাদের কোন প্রকার সমস্যা তো দূরে থাক সেবার কোন ক্ষান্ত দেয়নি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রোগ্রাম পূর্ব নির্ধারিত। দিল্লী ইউনিভার্সিটি,দুরদর্শন চ্যানেল,অল ইন্ডিয়া রেডিও,মন্ত্রনালয়,পার্লামেন্ট মিউজিয়াম,কুতুব মিনার,জামা মসজিদ,রাজ ঘাট,আগ্রা রেড ফোর্ড,তাজ মহল,প্রেসিডেন্ড প‌্যালেস সহ রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাত সবই ছিল অন্তর্ভূক্ত।

রাষ্ট্রপতি (নড়াইলের জামাইবাবু,প্রনব মূর্খাজী) আমাদের সাথে অান্তরিক ভাবে সময় কাটালেন। এবং জানালেন যে আজকের যে স্থাপত্যকর্ম ভারতবর্ষ জুড়ে বিদ্যমান তার উত্তরাধিকার সূত্রে মালিক বাংলাদেশী জনগন জড়িত। কারণ এই স্থাপনাগুলো তৈরির সময় এই এলাকার জমিদারেরা আমাদের পূর্ব পুরুষ থেকে খাজনা আদায় করে শাষককূলে প্রেরণ করত এবং সেই খাজনার টাকায় তাজমহল,আগ্রাফোর্ড,রেডফোর্ড,কুতুব মিনার সহ যাবতীয় স্থাপনা তৈরি হয়েছে। সময়ের আর্বতে দেশ ভাগ হয়েছে তাই আজ আমরা কেউ বাংলাদেশী কেউ ভারতীয়। কিন্তু যখন এগুলো নির্মান হয়েছে তখন সবাই একই দেশের অধিভূক্ত ছিলাম।

তাই আমাদের পূর্বপুরুষের অবদান আছে এই সকল স্থাপত্য নির্মানে। দেশ ভাগ হয়েছে তাই আমাদের অধিকার কমে যাবে। বা উত্তরাধিকারী থেকে বঞ্চিত করবে তাতো হতে পারেনা। তাই আমরা যারা যুব সমাজ তারা আমাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। জানতে হবে এবং সবাইকে জানাতে হবে আমাদের করনীয় সম্পর্কে।

যেভাবে আমার ভূল ভেঙ্গেছে কলকাতাতে নয় দিল্লীতে বাংলাদেশীদের আস্তানা বাড়াতে হবে। যাতায়াত বাড়াতে হবে। মানুষকে চিনাতে হবে বাংলাদেশ নামে একটা রাষ্ট্র আছে তোমাদের ছোট ভাই নয় তোমাদের সহোদর। তবেই সমগ্র ভারতে বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি অবস্থান তৈরি করা যাবে। শুধু মাত্র কলাকাততে অবস্থান তৈরি করলে সমগ্র ভারতে আমাদের অবস্থান তৈরি হবেনা।

এটা ভারত ভ্রমনাকারী সমগ্র বাংলাদেশীকে অনুধাবন করতে হবে। যেহেতু রাষ্ট্রিয় সফরে গিয়েছি তাই দিল্লী ছাড়াও ব্যাঙ্গালুর এবং কলকাতায় ঘুরেছি। তবে দিল্লী এবং ব্যাঙ্গালুরের মানুষের আতিতেয়থায় মুগ্ধ হয়েছি। অনুপ্রাণিত হয়েছি বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে। উৎসাহিত হয়েছি তাদের দেশপ্রেম দেখে।

বিমোহিত হয়েছি তাদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখে। খুব কষ্ট লাগে আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে খুব বেশী না দেশ প্রেম এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকলে আজকে আমাদের দেশটা পরিপূর্ন সোনায় সোহাগা হয়ে থাকত। অনেক শিক্ষনীয় ছিল এই ভ্রমনটা। কি শিখলাম সেটা বড় কথা নয়, কোন শিক্ষাটাকে বাস্তবতায় রুপ দিব এবং কাজে লাগাব সেটাই মূল। আমি আশা করি যে শিক্ষা গুলো পেলাম সেটা থেকে সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে খুব শিঘ্রই বাস্তবায়ন করব।

পরিশেষে বলব: গ্রন্থগত বিদ্যা পরহস্তে ধন নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন। অন্যের হাতে ধন এবং বইয়ের মধ্যে বিদ্যা কোন কাজেই আসবে না যদি এটাকে প্রয়োজনের সময় ব্যবহার করা যায়। তাই আগে প্রয়োজন নিজেকে সংশোধন করা। নিজেকে পরিবর্তন করা। আসুন আমরা দেশকে ভালোবাসি,আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকি এবং পরিশ্রমি জীবন গড়ি।

আমি আমার বুকে হাত রেখে বলতে পারি আমার দেশকে আমার মায়ের মতোই ভালবাসি। তাই দেশের কল্যানে আমার অবস্থান থেকে যতটুকু সম্ভব ভালো কাজ করে যাব। আপনিও আপনার অবস্থান থেকে দেশের কল্যানে যতটুকু সম্ভব ভালো কাজ করুন কোন প্রকার প্রতিদানের আশা ব্যাতিরেখে। বি:দ্র: এই ভ্রমনে আমি এও বুঝতে পেরেছি খুব শিঘ্রই বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে প্রথম শ্রেনীর শক্তিশালী দেশ হিসেবে আর্ভিভূত হবে। শুধু মাত্র সময়ের অপেক্ষা।

বর্তমানে যারা এইদেশ পরিচালনা করছে তাদের জেনারেশন শেষ হতে দিন আর আমাদের জেনারেশন আসতে দিন। টাইগার ইজ অলওয়েজ টাইগার। জেগে উঠতে শুরু করেছি। আমাদেরকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবেনা এই বিশ্ব দরাবারে। সেটা সকল পরাশক্তি ইতিমধ্যেই টের পেয়ে গেছে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।