টাকার মান ধরে রাখতে বাজার থেকে ডলার কেনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বাজার থেকে ১৭০ কোটি ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত অর্থবছরে কিনেছিল ৪৭৯ কোটি ডলার।
এই কারণে পাঁচ মাস ধরে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে টাকা-ডলারের বিনিময় হার একই জায়গায় স্থির রয়েছে বলে জানান তারা।
বাজার থেকে ডলার কেনার কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ এন্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী ছাইদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারার কারণে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়ে গেছে।
“এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে ডলার না কিনলে পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের ‘রুপি’র মতো বাংলাদেশেও টাকার মান কমে যেত। সেক্ষেত্রে রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ”
এই সব বিবেচনাতেই চলতি অর্থবছরেও বাজার থেকে ডলার কেনা হচ্ছে বলে জানান ছাইদুর রহমান।
সোমবার আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৭৭ টাকা ৭৫ পয়সায় বিক্রি হয়েছে। চলতি বছরে ৪ জুনও এই একই দরে ডলার লেনদেন হয়েছে।
অন্যদিকে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া সোমবার ৬১ টাকা ৯০ পয়সায় ডলার কিনেছে। সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে রুপির বিপরীতে ডলারের দর বাড়তে বাড়তে এক পর্যায়ে ৬৭ টাকা ৫০ পয়সায় উঠেছিল।
এক বছর আগে (২০১২ সালের ৫ মে) ডলার-রুপির বিনিময় হার ছিল ৫৪ টাকা।
২০০৩ সালে দেশে ভাসমান মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থা (ফ্লোটিং) চালু হয়। অর্থ্যাৎ বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থা বাজারের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়।
এর আগ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার-টাকার বিনিময় হার ‘ঠিক’ করে দিত। সে দরেই ডলার লেনদেন হত।
ছাইদুর রহমান বলেন, “সোমবারও বাজার থেকে আমরা কিছু ডলার কিনেছি। চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার কেনা হয়েছে। ”
“বাজার স্থিতিশীল রাখতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কিনছে।
বর্তমানে বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। ”
এটা ধরে রাখতে ভবিষ্যতেও বাজার থেকে ডলার কেনা অব্যাহত থাকবে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই কর্মকর্তা।
ছাইদুর রহমান বলেন, “বেশ কিছুদিন ধরে টাকা-ডলারের বিনিময় হার স্থিতিশীল রয়েছে। ভারতের মুদ্রাবাজারে বেশ কিছুদিন ধরে অস্থিরতা চলছে। আমাদের এখানে সেটা নেই।
”
‘এটা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ভালো’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রিজার্ভ ১৭ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার
সোমবার দিন শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭৩৪ কোটি ১০ লাখ (১৭ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন) ডলার, যা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
রপ্তানি আয়ের ভালো প্রবৃদ্ধি রিজার্ভ বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে বলে জানান ছাইদুর রহমান।
বাজার থেকে ডলার কেনাতেও রিজার্ভ বাড়ছে বলে জানান তিনি।
চলতি সপ্তাহেই এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদের ৮৯ কোটি ডলার আমদানি বিল পরিশোধ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
“তারপরও রিজার্ভ সাড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলারের উপরে অবস্থান করবে,” বলেন ছাইদুর রহমান।
এই রিজার্ভ দিয়ে প্রায় ছয় মাসের আমদানি বিল মেটানো সম্ভব বলে জানান তিনি।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২১ দশমিক ২৪ শতাংশ।
অক্টোবরে রেমিটেন্স এসেছে ১২৩ কোটি ডলার
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সোমবার অক্টোবর মাসের রেমিটেন্সের তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, অগাষ্ট ও সেপ্টেম্বর মাসের চেয়ে অক্টোবরে রেমিটেন্স বেড়েছে।
গত মাসে ১২৩ কোটি ৪৭ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। আর চার মাসের (জুলাই-অক্টোবর) হিসাবে এসেছে ৪৫০ কোটি ৪৭ লাখ ডলার।
যা গত অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ১২ শতাংশ কম।
গত বছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে ৫০১ কোটি ২২ লাখ ডলারের রেমিটেন্স দেশে এসেছিল।
চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১২৩ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল।
অগাষ্ট ও সেপ্টেম্বরে এসেছে যথাক্রমে ১০০ কোটি ৫৮ লাখ ও ১০২ কোটি ৫৭ লাখ ডলার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।