চলতি নভেম্বর মাসেই ঢাকাকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা নিয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে চলমান আন্দোলনকে ভিন্ন কৌশলে আরও তীব্র ও কঠোর রূপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তার আগে চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকেই তার আলামত শুরু হয়ে যাবে বলে ইঙ্গিত দিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য বলেছেন, আর পিছুটান দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীই এখন জেল-জুলুম, মামলা-হামলাসহ যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। প্রতিদিনই কোনো না কোনো এলাকায় মানুষ জীবন দিচ্ছে।
তাছাড়া সারা দেশেই দল ও অঙ্গসংগঠনের অভ্যন্তরীণ সব বিরোধ ও কোন্দল মিটিয়ে একসঙ্গে সর্বাত্দক আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ারও চেষ্টা চলছে। আগামী সপ্তাহে আবারও হরতাল দেওয়া হতে পারে তিন দিনের। আর সরকার ক্লান্ত হয়ে পড়লে দেওয়া হবে অবরোধসহ রাজপথে নেমে আসার আহ্বান। দলীয় নীতি-নির্ধারকরা আশা করছেন- আন্দোলনের তোড়ে সরকার এ মাসের মধ্যেই নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের গণদাবি মেনে নিতে বাধ্য হবে। বিএনপি সর্বদলীয় সরকারে যাবে না।
এই সরকারের অধীনে নির্বাচনেও নয়।
১৫ তারিখের পর থেকে মূল আন্দোলন : সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানিয়েছে, আগামী ১৫ নভেম্বর থেকে ২৫ নভেম্বরের মধ্যেই শুরু হবে বিরোধী দলের মূল আন্দোলন। যা একতরফা নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। আর নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র উত্তোলন, জমাদান, বাছাই ও প্রত্যাহরের দিনগুলোতে সারা দেশেই হরতালের মতো কর্মসূচি দিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করা হবে। একই সঙ্গে একতরফা নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রী বা সদস্য যারা হবেন তাদের যাকে যেখানে পাওয়া যাবে তাকে সেখানেই প্রতিরোধ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এ ছাড়াও ১৫ নভেম্বর ঢাকায় হেফাজতে ইসলামী যে সমাবেশ ডেকেছে তার সঙ্গে মিল রেখে এর আগে বা পরে ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে ১৮ দলীয় জোট। এ সমাবেশে বাধা দিলে সারা দেশে উত্তাল পরিস্থিতি তৈরি করা হবে। রাস্তায় নামতে না দিলে নেওয়া হবে আন্দোলনের ভিন্ন কৌশল। অঘোষিতভাবেই ঝটিকা মিছিল বের করার মাধ্যমেই তীব্র প্রতিরোধ সৃষ্টির চেষ্টা করা হবে চতুর্দিক থেকে। অর্থাৎ আন্দোলনের যত রকমের কৌশল আছে তার সবকিছুই প্রয়োগ করা হবে সরকারের বিরুদ্ধে।
আজ তিন দিনের হরতাল শেষ হওয়ার পর কাল অথবা পরশুর মধ্যেই স্থায়ী কমিটির বৈঠক আহ্বান করবেন বেগম খালেদা জিয়া। সে বৈঠকেই চলমান আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হবে। তবে স্থায়ী কমিটি ও ১৮ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে কর্মসূচি নির্ধারণ সংক্রান্ত সব ক্ষমতা ইতোমধ্যেই বেগম খালেদা জিয়ার ওপর অর্পণ করা হয়েছে।
নিবিড় পর্যবেক্ষণে ডিগবাজ নেতারা : এদিকে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই বেশ কিছু সিনিয়র নেতাকে বিএনপি থেকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এদের মধ্য থেকে অনেককে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগদানের মাধ্যমে একতরফা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করানোরও প্রচেষ্টা চলছে।
এ ধরনের ডিগবাজ নেতাদের সম্পর্কে বেগম খালেদা জিয়া পুরোপুরি অবহিত বলে জানা গেছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্য থেকে যারা এবার দল ছাড়তে পারেন কিংবা সরকারের সঙ্গে লিয়াজোঁ রক্ষা করে চলেছেন তাদের নামের একটি তালিকাও পৌঁছে গেছে খালেদা জিয়ার কাছে। এ তালিকা দিন দিন বড় হচ্ছে এবং বিএনপি নেতা এসব নেতাদেরসহ আন্দোলনে যারা গা বাঁচিয়ে চলছেন তাদের সবাইকেই নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। এদের বিরুদ্ধে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়ারও সিদ্ধান্ত রয়েছে। তার আগে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের দিয়ে শায়েস্তা করারও প্রক্রিয়া চলছে।
মফস্বলে নেতাদের সিদ্ধান্ত অমান্য করছে তৃণমূল : খুলনা ও যশোরসহ ঢাকার বাইরে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে যেসব নেতারা সরকারি দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে চলছেন এবং চলমান আন্দোলন কর্মসূচি শিথিলভাবে পালনের নির্দেশ দিচ্ছেন তাদের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নিজেরাই মাঠে নামছেন তৃণমূল বিএনপির নেতা-কর্মীরা। বাগেরহাটের রামপালসহ খুলনা ও যশোরের বিভিন্ন এলাকায় গত দুই দিন ধরে স্থানীয় নেতাদের নির্দেশ উপেক্ষা করেই হরতালে তৃণমূল নেতারা মাঠে নামছেন বলে জানা গেছে। তাদের ভাষ্য হলো জেলে গেলে যাব, মরতে হয় মরব, কিন্তু এ সরকার আর নয়। গত পাঁচটি বছরে জমির ফসল পর্যন্ত কেটে নিয়ে গেছে সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা। এদের রুখতেই হবে।
৭ নভেম্বরের পর আবারও হরতাল, ১৫ নভেম্বরের পর ঢাকায় মহাসমাবেশ : আগামী ৭ নভেম্বর বিএনপির ভাষায়, বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালনের পর ১০-১১ তারিখের মধ্যে আবারও তিন দিনের হরতাল কর্মসূচি দিতে পারে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। তাছাড়া ১৫ নভেম্বর ঢাকায় আহূত হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে মিল রেখে আগে কিংবা পরে কর্মসূচি দেওয়ারও চিন্তাভাবনা করছে বিএনপি। গত ৫ মে মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামীর সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের মতো এবারও তাদের ওপর সরকার কোনো হামলা বা অভিযান চালানোর চেষ্টা করলে ১৮ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে তা সর্বাত্মক প্রতিরোধ করতে যা যা করা দরকার তার সবকিছুই করা হবে বলেও জানিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতা বলেন, আশা করি সরকার আর এবার সে পথে যাবে না। কারণ এবার আলেম সমাজের ওপর কোনো আক্রমণ করা হলে সারা দেশে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে যাবে। যা নিয়ন্ত্রণের শক্তি এ সরকারের নেই।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপি আওয়ামী লীগের সর্বদলীয় সরকারে বা এ ধরনের কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। তবে নির্দলীয় সরকারের গণদাবি উপেক্ষা করে একতরফা কোনো নির্বাচনের আয়োজন করলে বাংলাদেশের জনগণ তার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। তিনি বলেন, দেশটা কোনো মগের মুল্লুক নয়। নব্বই ভাগ মানুষের দাবি উপেক্ষা করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করলে সে নির্বাচন কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা পাবে, আর সে সরকারই বা কতদিন টিকবে তাও জনগণই নির্ধারণ করবে। কতিপয় নেতা বিএনপি ছেড়ে যেতে পারেন বলে যে প্রচারণা রয়েছে সে সম্পর্কে দলের এই নীতি-নির্ধারক বলেন, বিএনপি এখন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল।
দীর্ঘ পাঁচ বছর আন্দোলন সংগ্রাম করার পর শেষপ্রান্তে এসে দল ছেড়ে অন্য কোনো দলে যাবে এমন পাগল বিএনপির প্রথম থেকে পঞ্চম সারির নেতাদের মধ্যে কেউ আছে বলে আমি মনে করি না। কাজেই এগুলো শ্রেফ গুজব ছাড়া আর কিছুই নয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।