আমি মানি, জানি, মানুষকে ভাল বাস, মানুসের সেবা করো, আল্লাহ খুশি হবে, আল্লাহকে পাবে।
প্রবাদ প্রবচনধর্মী গল্পগুলো সাধারণত উপদেশমূলক বা শিক্ষণীয় হয়ে থাকে। তবে ঐতিহাসিক সত্য হলো কালক্রমে প্রবাদ প্রবচনগুলোর আকার ছোটো হয়ে গেছে। এর কারণটা হলো প্রয়োজনীয় অংশটুকুই মানুষ মনে রেখেছে, বাকি অংশের প্রয়োজন মনে করেনি। এর বিভিন্ন কারণের কথা উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞগণ।
আমরা সে বিষয়ে না গিয়ে বরং গল্পের দিকে নজর দেই।
আগেকার যুগে তো আজকালের অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধাময় হোটেল কিংবা মুসাফিরখানার ব্যবস্থা ছিল না। কিন্তু বাণিজ্য ছিল, ব্যবসায়ী ছিল, মালামাল নিয়ে তাদের এক শহর থেকে অন্য শহরে, দূর দূরান্তে যাবার প্রয়োজন ছিল। দূরের মুসাফিরদের জন্যে তখন ছিল সরাইখানার ব্যবস্থা। ব্যবসায়ীরা এসব সরাইখানায় রাতের বেলা বিশ্রাম নিয়ে সকালে আবার রওনা দিতো গন্তব্যে।
এরকম সরাইখানার মধ্যে দূর্গের মতো একটি সরাইখানা ছিল বেশ নামকরা। দূর্গের মতো বলার কারণ হলো দেয়ালগুলো ছিল বেশ উঁচু উঁচু। আর এতে প্রবেশের মূল দরোজা ছিল ইস্পাতের তৈরি মজবুত। কোনো চোরের পক্ষেই ওই দরোজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করার সাধ্য ছিল না। এ কারণে ব্যবসায়ীরা নিশ্চিন্তমনে এই সরাইখানায় বিশ্রাম নিতো।
সরাইখানার ভেতর এবং বাইরের পরিবেশ ছিল বেশ জাঁকজমকপূর্ণ। তিন চোর যুক্তি করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা যে-কোনো ভাবেই হোক ভেতরে ঢুকবেই। চুরির পাশাপাশি তাদের লক্ষ্য ছিল এই প্রাসাদে যে চোর ঢুকতে পারবে না বলে একরকম রূপকথা ছড়ানো হয়েছে, সেটা ভেঙে দেওয়া। তিনচোর বহু চিন্তাভাবনা করে অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলো মাটির অনেক নীচ দিয়ে একটা টানেল বানাবে যে টানেল সরাইখানার প্রতিরক্ষা প্রাচীরের নীচে দিয়ে ভেতরে গিয়ে শেষ হবে। প্রয়োজনীয় হাতিয়ার আর যন্ত্রপাতি নিয়ে তারা টানেল খুঁড়তে শুরু করে দিলো।
অনেকদিন পর তারা টানেলের কাজ শেষ করলো সরাইখানার ভেতরের একটি কূপের মাঝখানে এসে। এরপর কোনো এক অন্ধকার রাতে চোরেরা নীরবে নিঃশব্দে টানেলের ভেতর দিয়ে এসে সরাইখানায় ঢুকে পড়লো এবং ব্যবসায়ীদের মালামাল সব চুরি করে টানেলের ভেতর দিয়েই আবার চলে গেল।
সকাল হতে না হতেই সরাইখানায় চুরির খবর বিদ্যুতের মতো ছড়িয়ে পড়লো। খবরটি শুনে গভর্নর দেরি না করে ঘোড়ায় চড়ে সরাইখানায় পৌঁছে গেল। তার বিশ্বাসই হচ্ছিল না-এতো মজবুত দেয়াল পেরিয়ে কিংবা লোহার দরোজা ভেঙে চোর ঢুকতে পারে সরাইখানায়।
শাসকের পাইক পেয়াদারা ভালো করে পুরো সরাইখানা ঘুরে ফিরে দেখলো,কিন্তু কোত্থাও কোনো নাম নিশানাও দেখলো না। না কোনো সিঁদ কাটার চিহ্ন আছে না আছে কারো পায়ের ছাপ। গভর্নর বললো: ‘তাহলে নিশ্চয়ই এটা সরাইখানারই কারো কাজ হবে’। সরাইখানার ভেতরে হৈ হট্টগোল শুরু হয়ে গেল। দারোয়ানদেরকে ডেকে এনে লাথি ঘুষি মেরে কথা বের করতে চাইলো।
কিন্তু কিছুতেই তারা বলতে পারলো না কে চুরি করেছে। চোরদের সাথে তাদের হাত থাকার বিষয়টিও বোঝা গেল না। এইফাঁকে চোরেরা কিন্তু মালামাল নিরাপদ স্থানে রেখে সরাইখানায় ফিরে এলো কী কাণ্ড ঘটছে তা দেখার জন্যে।
বলছিলাম, চোরেরা মালামাল নিরাপদ স্থানে সরিয়ে রেখে সরাইখানায় ফিরে এসেছিলো কাণ্ড দেখার জন্যে। এসেই তারা দেখলো দারোয়ানদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।
কষ্টে বেচারাদের চিৎকার আকাশে ছড়ালো। চোরদের সর্দার দারোয়ানদের কষ্ট দেখে মনে মনে বললো: ‘যারা কিছুই করে নি, তাদেরকে খামোখা এমন শাস্তি দেওয়া আল্লাহর গায়ে সইবে না’! এই বলে একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে চিৎকার করে বললো: ‘থামো’! সাথে সাথে সবার দৃষ্টি পড়ে গেল তার ওপর। চোরের সর্দার আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বললো: ‘এদের সবাইকে ছেড়ে দাও! তারা নিদোর্ষ। আমিই চুরি করেছি’! গভর্নর তার দিকে তাকিয়ে বললো: ‘তুই চুরি করেছিস, কীভাবে’? চোরের সর্দার বললো: ‘আমি একটা টানেল তৈরি করেছি,যার সংযোগ কূপের সাথে’। সবার কূপের কাছে চলে গেল।
গভর্নর জিজ্ঞেস করলো: ‘ব্যবসায়ীদের মালামাল কোথায়, যদি সত্যি বলে থাকিস তাহলে বল্ চুরি করা মালগুলো কোথায়?' চোর বললো: ‘কূপের ভেতরে। যে কেউ গিয়ে দেখে আসতে পারে। ’ কিন্তু কেউ যেতে সাহস করলো না। অবেশেষে চোরের সর্দারের পরামর্শে তার কোমরে শক্ত দড়ি বেঁধে দেওয়া হলো এবং তাকেই পাঠানো হলো কূপের ভেতর। চোর তো টানেল পর্যন্ত পৌঁছে কোমরের দড়ি খুলে দড়ির মাথায় বড়ো একটা পাথর বেঁধে টানেল পথে পালিয়ে গেল।
তার সঙ্গীরাও আস্তে আস্তে পেছনে যেতে যেতে সরাইখানার সদর দরোজা দিয়ে বেরিয়ে গেল। গভর্নরসহ সরাইখানার ব্যবসায়ী মুসাফিররা অনেক সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করলো কিন্তু কূপের ভেতর পাড়ি জমানো চোরের কোনো খবরই হলো না।
সবাই পরামর্শ করলো, কী করা যায়..কী করা যায়...অবশেষে গভর্নরের আদেশে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে একজন সেপাই গেল কূপের ভেতর। সে টানেলের পথটি পেয়ে গেল এবং সেই পথ দিয়ে বের হয়ে সরাইখানার মূল দরোজায় এসে চিৎকার করে উঠলো। সবাই কূপের কাছেই জটলা পাকাচ্ছিল।
চিৎকার শুনে সেপাইকে দেখে সবাই বুঝে গেল-‘চার সত্যিই বলেছে’ সরাইখানার সাথে বাইরে যাওয়া আসার জন্যে একটা পথ আছে। গভর্নর তাড়াতাড়ি দারোয়ানদেরকে ছেড়ে দেওয়ার আদেশ দিলো। গভর্নর কীসব ভাবতে ভাবতে আনমনেই কথা বলছিল। হঠাৎ এক ব্যবসায়ী মুসাফির-যার কিছু মাল চুরি হয়েছিল-চিৎকার করে বললো: ‘আমি আমার মালামাল ঐ সাহসী এবং বীরোচিত চোরকে দান করে দিলাম। আমার মালগুলো তারই, সেগুলো তার জন্যে হালাল করে দিলাম।
কেননা ঐ চোর ছিল খুবই বুদ্ধিমান। এরকম একটা টানেল বানানো যে-সেই কথা নয়। এতো কঠোর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে এরকম একটা নিরাপদ পথ আবিষ্কার করা চাট্টিখানি কথা নয়। তারচেয়ে বড়ো কথা হলো: চোরটির সাহস এবং পৌরুষ। সে নিজেকে নিশ্চিত বিপদে ফেলে নিরীহ দারোয়ানদেরকে নির্যাতনের হাত থেকে মুক্তি দিয়েছে।
চুরি একটা খারাপ কাজ, সন্দেহ নেই। কিন্তু কেউ যদি খারাপ কাজ করেও বসে, তারচেয়ে উত্তম হলো চোরটির মতো সাহসী এবং পৌরুষদীপ্ত হওয়া। ’
এই ঘটনার পর থেকে কেউ কোনোরকম খারাপ কাজ করার পরও যদি এই চোরের সর্দারের মতো সাহসিকতার পরিচয় দেয়, তার ব্যাপারে ঐ চোরের প্রসঙ্গ টেনে বলে: ‘চোর হলেও সাহসী হও’।
(বি:দ্র: এই গল্পটি সম্পূর্ন কাল্পনিক, এতে কোন রকম রাজনৈতকতা, কাউকে ছোট করা, কোন কিছুই নাই। এটা সত্যের সাথের মিথ্যার ব্যবদান, চোর ও সত্যবাদী হতে পারে সে রকম একটা উদহরন মাত্র ।
এই গল্প পরে যদি কেউ ভাল কোন শিক্ষা পেয়ে থাকেন তবেই আমার এই কষ্ট সার্থক হলো বলে আমি মনে করবো। এখানে চোর তার সৎ সাহস দিয়ে নির্দোশ দারোয়ানকে বাচিয়ে দিয়ে গেল, সত্য সব সময়ই সত্য, সত্যকে সম্মান করা উচিৎ বলে আমি মনে করি। )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।