কোয়াইট! যে যাঁর মতো দাঁড়িয়ে থাকেন। নো সাউন্ড’—গলা ফাটানো চিৎকার। শুনেই থমকে গেলাম, জসিম ফ্লোরের সামনে। পাতালপুরির নীরবতা নেমে এল। বিএফডিসির বাইরে গাড়ির হর্ন ও চিৎকারকেও মনে হলো মিহি শব্দ।
এরই মধ্যে আবার চিৎকার, ‘কাট কাট! হয়নি। আবার শট নিতে হবে। ’
শুটিং ইউনিটে দেখি মনিটরের সামনে পরিচালক বদিউল আলম খোকন। সামনে ট্রলিতে ক্যামেরা। ক্যামেরার সামনে ফুল হাতে দাঁড়িয়ে অপু বিশ্বাস।
পরিচালক আবার শটটি নেওয়ার তাগিদ দিলেন। ক্যামেরা চলা শুরু। ফুলের তোড়া হাতে অপু বিশ্বাস গাড়িতে উঠে নিজেই গাড়ি চালিয়ে বের হয়ে গেলেন। ‘ওকে ডান’ বললেন খোকন।
সঙ্গে সঙ্গে আবারও পুরো ইউনিট জেগে উঠল।
কিন্তু গাড়ি চলে যাওয়ার পর অপু বিশ্বাস আর ফিরে এলেন না। বেশ খানিকটা সময় এভাবে পার হলো। ব্যাপার কী? তাহলে কি এখানকার লোকেশনের কাজ শেষ? এগিয়ে গেলাম পরিচালকের দিকে। বললেন, ‘ছবির নাম চিরদিনই তুমি যে আমার। হরতালের কারণে খুব সকাল থেকেই কাজ শুরু করেছি।
হিরোইনকে দুপুরের খাবারের বিরতি দেওয়া হয়েছে। খাওয়া শেষে আবার শুরু করব। ’ অপু বিশ্বাস তখন ৩ নম্বর ফ্লোরের গ্রিনরুমে। সেদিকে পা বাড়ানোর আগেই সেটে এলেন পরিচালক মোহাম্মদ মুস্তাফা কামাল রাজ। তিনি বেশিক্ষণ দাঁড়ালেন না।
ফিরে যাওয়ার আগে জানালেন, কানামাছি ছবির শুটিংয়ের আগেই আরেকটি ছবির কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন। এ জন্য দাপ্তরিক কিছু কাজ সারতে এফডিসিতে এসেছেন। রাজকে বিদায় দিয়ে আমাদের গন্তব্য ৩ নম্বর ফ্লোরের গ্রিনরুমে। সেখানে দুপুরের খাবার খাচ্ছেন অপু বিশ্বাস। কিন্তু প্লেটের দিকে তাকাতেই চোখ ছানাবড়া।
ভালো করে খেয়াল করলে বোঝা যায়, এটা প্লেট নয়, বাটি! তার মধ্যে শুধু সবজি। বললেন, ‘আমার দুপুরের মেন্যু এ-ই। অনেক কষ্টে নিজেকে কন্ট্রোল করছি। ’ কথা শেষ হতেই সেই চিরচেনা অপুর হাসি। সত্যিই, এই অপুর সঙ্গে পুরোনো অপুকে মেলানো কঠিন।
অপু বললেন, ‘গত ছয় মাস আমি কোনো কাজ করিনি। নতুন করে নিজেকে প্রস্তুত করেছি। ছয় মাস পর আবার শুরু করলাম। ’
দুই.
ক্যানটিনের মধ্যে তখন জমজমাট আড্ডা। পাশের চেয়ারে বসা একজন ষাটোর্ধ্ব মানুষ।
চুপচাপ চা পান করছেন। জানালেন, সেরু মামা নামেই এফডিসিতে সবাই চেনেন তাঁকে। এফডিসিতে তাঁর জীবনের ৪২ বছর কেটেছে। কাজ করেন এফডিসির কারিগরি বিভাগে। আমরা শুনতে চাই সেরু মামার জীবনের গল্প।
‘খুব ছোটবেলা থেকেই আমি এখানে। মুক্তিযুদ্ধের সময় নয় মাস বন্দির মতো এখানে থেকেছি। ২ নম্বর বিল্ডিংয়ের ছাদে মুক্তিবাহিনীর গোপন একটা ক্যাম্প ছিল। আমি বহু দিন তাঁদের খাবার সরবরাহ করেছি! এই ক্যানটিনের জায়গায় একটা বড় হলরুম ছিল। হলরুমের বাইরে পঁচিশে মার্চের রাতে পাকিস্তানি সেনাদের হামলায় একজন দারোয়ান গুলিবিদ্ধ হন।
তাঁকে ধরাধরি করে নিতে গিয়ে রক্তে আমি ভিজে যাই। কিন্তু বাঁচাতে পারিনি। ’ এবার একটু দম নিলেন তিনি। চায়ের কাপে আরেকবার চুমুক দিয়ে গলা ভেজালেন। ‘যুদ্ধের পর পর এফডিসিতে অনেক ভালো ভালো ছবি তৈরি হতো।
কিন্তু সেই দিন আর নাই। আগে অনেক নামী-দামি নায়ক-নায়িকারা কাছে ডেকে কথা বলতেন। খোঁজখবর নিতেন। কিন্তু নতুনেরা দেখা হলেও কথা বলেন না। কী যে দিন আসল।
’
ততক্ষণে তাঁর কাপের চা ফুরিয়ে এসেছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন তিনি। সেই দীর্ঘশ্বাস পুরো সিনেমাশিল্পের দীর্ঘশ্বাস মনে হলো আমাদের কাছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।