মে ব্যাংক গো এহেড, চ্যালেঞ্জ ২০১৩’-এর ফাইনালে সবার ওপরে শোভা পেল বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা। শুধু তা-ই নয়, সব হিসাব পাল্টে দিয়ে বাংলাদেশি প্রতিযোগীই ছিনিয়ে আনলেন শ্রেষ্ঠত্ব, হলেন টুর্নামেন্টের সেরা, তিনি বাংলাদেশের মেয়ে ফারিহা প্রিয়াঙ্কা।
প্রতিযোগিতার মূল আসর বসেছিল আগস্টের শেষ সপ্তাহে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর ওয়েস্টিন হোটেলে। থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, চীন, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, ফিলিপাইন, হংকং, ইন্দোনেশিয়া ও সিঙ্গাপুরের প্রতিযোগীরা নিজ দেশের স্থানীয় প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়ার মাধ্যমে ফাইনালের টিকিট পান। সে ক্ষেত্রে প্রিয়াঙ্কার এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়াটা কিছুটা কাকতালীয়।
কিন্তু স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে তাঁর অসাধারণ ফলাফল নজর কাড়ে আয়োজকদের এবং তাঁরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে প্রিয়াঙ্কাকে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানান।
দেশে ফিরলে কথা হয় প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে। প্রিয়াঙ্কা বলেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা, ‘যেহেতু আমি আমার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের লেখাপড়া করেছি যুক্তরাজ্যে, তাই আয়োজকরা যুক্তরাজ্যের হয়েই আমাকে অংশ নিতে বলে। কিন্তু আমি প্রথম থেকেই আমার নিজ দেশের হয়ে অংশ নিতে আগ্রহী ছিলাম এবং তাদের সরাসরি আমার ইচ্ছার কথা বলি। একসময় তারা আমার ইচ্ছায় সম্মতি দেয়, বাংলাদেশের হয়েই আমি প্রতিযোগিতায় নাম লেখাই।
’
১০টি দেশের ৫৪ জন প্রতিযোগীকে নয়টি দলে ভাগ করে শুরু হয় ফাইনাল। ছয় দিনের এই স্নায়ুক্ষয়ী প্রতিযোগিতায় কী ছিল না! ভোর ছটায় ঘুম থেকে উঠে সব প্রতিযোগীকে প্রাতরাশ সেরে অংশ নিতে হতো দলগত প্রজেক্টে, যা চলত রাত ১২টা পর্যন্ত। এরপর সামান্য বিরতি দিয়ে আবার তিন ঘণ্টার একক প্রতিযোগিতা। রাত ৩টার পরই সামান্য ঘুমানোর সুযোগ! প্রতিযোগিতার পুরোটা সময় প্রতিযোগীরা ছিলেন বাইরের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন। প্রতি দলে একটি করে ল্যাপটপই ছিল তাঁদের কাজের মূল ভরসা।
দলগত প্রজেক্টের বিষয় ছিল, ‘হট ক্যান’ নামে নতুন ধরনের একটি কফির ব্র্যান্ডকে বাজারে নিয়ে আসার কৌশল উদ্ভাবন। এর মোড়ক, বিপণন, বিক্রয়—সবকিছুই হাতে-কলমে করে দেখাতে হয়েছে প্রতিযোগীদের। একক প্রতিযোগিতায় প্রত্যেকে দেখিয়েছেন তাঁদের ব্যক্তিগত নৈপুণ্য, করেছেন কুইজ, বিতর্ক, প্রতিভা প্রদর্শনীর মতো সৃজনশীল কাজ। মূলত চাপের মুখে প্রতিযোগীরা নিজের যোগ্যতার কতটুকু কাজে লাগাতে পারেন, সেটাই ছিল আসল চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ জিতে এসেছেন বাংলাদেশের মেয়ে প্রিয়াঙ্কা।
তাঁর দল ‘ট্রান্সফরমারস’ জিতে নিয়েছে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্মান এবং ৩০ হাজার ডলারের প্রাইজমানি (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৪ লাখ টাকা)। প্রিয়াঙ্কার দলের সদস্যরা হলেন সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মার্ক চ্যান, মালয়েশিয়ার হেল্প ইউনিভার্সিটির ন কা জেং, আরএমআইটির লাই টাং, হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের রজার লিউং চিউক হিন ও ইন্দোনেশিয়ার প্রাসেতিয়া মূলইয়া বিজনেস স্কুলের ইরমা সানি।
এ ছাড়া একক নৈপুণ্যে সেরা হওয়ার সৌজন্যে প্রিয়াঙ্কা জিতেছেন আরো এক হাজার ডলারের প্রাইজমানি, মে ব্যাংক নিউ ইয়র্ক (যুক্তরাষ্ট্র) শাখায় দুই সপ্তাহের ইন্টার্নশিপ এবং মে ব্যাংকে (কুয়ালালামপুর) চাকরির প্রস্তাব।
২০০৯ সালে ঢাকার সানবিমস স্কুল থেকে এ লেভেল উত্তীর্ণ হন প্রিয়াঙ্কা। এরপর গন্তব্য যুক্তরাজ্যের কিংস কলেজ লন্ডন।
পড়ার বিষয় ফার্মাকোলজি। ভালো ফল করার সুবাদে তিন বছরের স্নাতক কোর্সের এক বছর পড়াশোনা করার সুযোগ পান সিঙ্গাপুরে। ২০১২ সালে স্নাতক সম্পন্ন করে তিনি ইম্পেরিয়াল কলেজ অব লন্ডনে বিজনেস ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে ভর্তি হন। এখান থেকে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। প্রিয়াঙ্কা তাঁর লেখাপড়ার বিষয়ে বলেন, ‘আমি সব সময়ই চেয়েছি এ দেশের ওষুধ শিল্পের উন্নতিতে কাজ করতে, একজন উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে।
এ জন্য প্রয়োজন বিজ্ঞান ও ব্যবসা—উভয় বিষয়েরই দক্ষতা। এ জন্যই স্নাতকোত্তর পর্যায়ে আমি ম্যানেজমেন্টকে বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছি। ’
লেখাপড়ার পাশাপাশি নৃত্যকলায়ও দারুণ পটু প্রিয়াঙ্কা। লন্ডন যাওয়ার আগে প্রিয়াঙ্কা দেশে শখের সাংবাদিকতা করতেন একটি ইংরেজি দৈনিকে। সমাজসচেতন এই মেধাবী যুক্ত ছিলেন বেসরকারি সংস্থা মায়ের আঁচল ও জাগো ফাউন্ডেশনের সঙ্গেও।
ইংরেজি মাধ্যমে পড়ার পরেও বাংলায় দারুণ স্বচ্ছন্দ প্রিয়াঙ্কা। বাংলাকে তিনি ধারণ করেন তাঁর মনে, মননে। তাই বিলেত থেকে প্রতি ছুটিতেই দেশে চলে আসতেন। পরিবারের সঙ্গে ঘুরে বেড়ান সারা দেশ। আগামী মাসেই মে ব্যাংকে চার মাসের চুক্তিভিত্তিক চাকরিতে যোগ দিতে চলে যাচ্ছেন মালয়েশিয়া।
কিন্তু, তিনি দেশেই স্থায়ীভাবে ফিরে আসতে চান, কাজ করতে চান দেশের কল্যাণে। হয়ে উঠতে চান একজন সফল উদ্যোক্তা। এই প্রবাস গমন শুধুই নিজেকে আরও যোগ্য করে তোলার মিশন। জয়তু প্রিয়াঙ্কা!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।