আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টিংকুর আম্মুর সাথে আমার সম্ভাব্য প্রেমের গল্প!!!

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !!

কয়েকদিন আগে ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা মারছি এমন সময় পল্টু বলল -জীবনে মানুষ না হয়ে বিলাই হলে ভাল হত । আমি খানিকটা অবাক হয়ে বললাম -হঠাত্‍ বিলাই হওয়ার সখ জাগলো কেন ? -আরে মিলিকে দেখিস না ! বিড়াল নিয়ে কেমন রংঢং করে । কথা সত্য । আমাদের ক্লাসের মিলি বিড়াল নিয়ে একটু বেশিই রংঢং করে । অন্তত ওর ফেসবুক প্রোফাইল দেখলে তো তাই মনে হয় ।

বিড়াল জড়িয়ে পেঁচিয়ে এমন সব ছবি আপলোড করে তখন যে কারো মনে হতে পারে আহা ঐ বিড়াল খানা কত ভাগ্যবান । আর পল্টুর তো মনে হবেই । পল্টু সেই কবে থেকে মিলির পিছনে ঘুরছে । পল্টু বলল -আমি ঠিক করেছি মিলিকে একটা বিড়াল গিফট করবো । কি বলিস ? -হুম ভাল বুদ্ধি ।

করে দেখতে পারিস । বিড়াল নিয়ে আমার কোন কালেই খুব বেশি আগ্রহ ছিল না । অবশ্য এর পিছনে কারন আছে । ছোট বেলায় আমায় একটা আস্তানা ছিল । দিনের বেশির ভাগ সময়ে আমি সেখানে কাটালাম ।

কিন্তু একদিন সেখানে দেখি বিড়াল ইয়ে করে রেখে গেছে । এমন মেজাজ গরম হল । সারা বাড়ী বিড়াল খুজে বেড়ালাম । বেটার একদিন কি আমার একদিন । কোথাও না পেয়ে যখন আমি আমার ঘরে এসে বসেছি দেখি বিড়াল মশাই আমার চেয়ারের গদির উপর আরাম করে শুয়ে আছে ।

ছোট ছিলাম, বেটাকে হাত দিয়ে ধরতে গেলাম কিন্তু হিতে বিপরীত হল । আমার হাতে খামচি দিয়ে একাকার করে ফেলল । শেষে রক্তারক্তি ব্যাপার । তারপর থেকে বিড়াল দেখলেই লাঠি হাতে বিড়ালের পিছনে দৌড় দিতাম । ইদানিং ফেসবুকে বিড়ালের আনাগোনা বেড়ে গেছে ।

যদিও মনে হয় মেয়ে গুলো হুদাই এমন আহ্লাদ করে । আর খানিকটা লোক দেখানো বটে । মিলিও নিশ্চই তেমনটাই করে । কিন্তু আমি নিজের চোখে কদিন থেকে যা দেখছি তাতে মনে হচ্ছে মেয়ে গুলোর মাথায় আসলেই একটু সমস্যা আছে । না হলে বিলাইকে জড়ায়ে ধরে কেউ চুম খায় ? আরে চুম খাবি ছেলেদের গালে চুম খা ।

বিলাইরে চুম খাওয়ার কি আছে । বিলাইকে চুম খাওয়ার জন্য মহিলা বিলাই তো আছে । যার প্রসঙ্গে কথা বলছি সে আমাদের বাসার পাশেই থাকে । বলা যায় আমার প্রতিবেশি । আমার ঘরের সাথেই একটা ছোট্ট বারান্দ আছে ।

ঠিক তেমনি মেয়েটার ঘরের সাথেই একটা বারান্দা আছে । যদিও শিওর না ঐটা মেয়েটারই বারান্দা কি না কিন্তু মেয়েটাকে প্রায়ই ঐ বারান্দায় দেখা যায় । আগে প্রায়ই মেয়েটাকে বারান্দায় দেখা যেত । বিশেষ করে বৃষ্টি দিনে মেয়েটাকে দেখতাম বারান্দায় দাড়িয়ে আছে । কখনও বা গ্রিলের ভিতর থেকে হাত বের করে দিয়ে বৃষ্টির পানি স্পর্শ করছে ।

আমি দেখতাম আড়াল থেকেই । একদিন বারান্দায় বেড়িয়ে দেখেছিলাম । মেয়েটা আমাকে দেখে সঙ্গে সঙ্গে ভিতরে চলে গিয়েছিল । তারপর থেকে আর সামনে যাই না । মেয়েটাকে আড়াল থেকে দেখি ।

কিন্তু ইদানিং মেয়েটা বারান্দায় আসা বাড়িয়ে দিয়েছে । তবে মেয়েটা এখন আর মেয়েটা আর একা আসে না । যখনই বারান্দায় আসে তখনই মেয়েটার কোলে একটা সাদা রংয়ের বিড়াল দেখা যায় । বিড়ালের সাথে কত আহ্লাদ করে । হাত দিয়ে এমন ভাবে আদর করে আবার বিড়ালটাকে চুম খায় ।

তখন আমার পল্টুর কথা টা মনে পরে । আসলেই বিড়াল হলে কত ভাল হত । আমার কাছ তেকে সব কথা শুনে পল্টুর মুখ গম্ভীর হয়ে খেল । বলল -হুম । তো তুই এখন কি চাস ? -চাই মেয়েটার দৃষ্টি আকর্ষন করতে ।

কিন্তু আমাকে বাড়ান্দায় দেখলেই মেয়েটা ভিতর চলে যায় । -শোন । মেয়েটার দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য আগে তোর ঐ বিলাই টার দৃষ্টি আকর্ষন করতে হবে । -বিলাইয়ে দৃষ্টি আকর্ষন ? কিভাবে ? পল্টু তাচ্ছিল্যের সুরে হাসলো । এমন একটা ভাব যেন আমি খুব হাস্যকর কোন প্রশ্ন করেছি ।

বলল -তুই না একটা ! একটা বিড়ালকে বাগে আনা কোন ব্যাপার ? তারপর আমাকে বোঝাতে লাগলো আমার কি কি করা লাগলো । পল্টুর বুদ্ধি মত এবার পাশের বাড়ির মেয়ে না পাশের বাড়ির বিলাইয়ের দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টায় নেমে গেলাম । পল্টু বলেছে কান টানলে যেমন মাথা আসবে তেমনি বিলাই টানলে মেয়ে আসবে । দেখা যাক কি হয় ! দোকান থেকে মিল্ক ভিটা পরিশোধিত দুধ কিনে নিয়ে আনলাম । হাতে দুধের প্যাকেট দেখে মা অদ্ভুদ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল -দুধের গন্ধ তোর বমি আসে সেই তুই হাতে করে দুধ কিনে এনেছিস ! আমি বললাম -খাওয়ার জন্য না মা ।

-তাহলে ? -কাজ আছে । তোমাকে বলা যাবে না । আমি আর বেশি কথা বললাম না । একটা ছোট্ট বাটি নিয়ে নিজের ঘরে চলে এলাম । বারান্দায় উকি দিয়ে দেখি মহারানীর বিড়াল রাজকীয় ভঙ্গিতে এসিটার উপর বসে আছে ।

মেয়েটির বারান্দার সামনেই একটা এসির আছে । তার সামনে একটা কড়ই গাছ উঠে গেছে । বিড়াল বেশির ভাগ সময়েই ঐ এসিটার উপরে বসে রোদ পোহায় । মাঝে মাঝে গাছটার উপরে চড়ে বসে । আমি বাটিতে দুধ ঢেলে আমার বারান্দায় উপর রাখলাম ।

এমন জায়গায় রাখলাম যেন বিড়ালটার চোখে পড়ে । তারপর নিজের কাজে চলে গেলাম । আমি জানি ম্যায়াও মিয়া আসবেই । আর একবার যদি অভ্যাস হয়ে যায় তাহলে তো কথাই নাই । আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম ।

প্রথম দিনে বেটা এল না । পরের দিনেও না । তৃতীয় দিনে দেখি অন্য একটা বিড়াল এসে হাজির । কালো মত সারা গায়ে ময়লা ভর্তি । লাঠি দিয়ে জোরে একটা বাড়ি দিলাম ।

দৌড়ে পালাল । কাঙ্খিত ফলাফল এল আরে চারদিন পরে । আমি দুপুর বেলা পিসিতে বসে ছিলাম । তখনই মৃদু স্বরে মিয়াও মিয়াও আওয়াজ কানে এল । আমি আস্তে করে উকি দিয়ে দেখি মেয়েটির বিড়াল টি এসে হাজির ।

চুকচুক করে বাটিতে রাখা দুধে চুমুক দিচ্ছে আর চারিপাশে ভয়ে ভয়ে তাকাচ্ছে । আমাকে দেখতে পেয়ে কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । আমি নিরাপদ কিনা বোঝার চেষ্টা করছে । আমি দিক থেকে কোন প্রকার নিরাপত্তা জনিত সমস্যা নেই এটা বুঝতে পেরে আবার দুধ খাওয়াতে মন দিল । প্রায় শেষ করে ফেলেছিল হঠাত্‍ একটা আওয়াজ পেলাম সামনের বারান্দা থেকে ।

-এই টিংকু এদিকে আয় ! তাকিয়ে দেখি পাশের বাড়ির মেয়েটি । টিংকু ! বিলাইয়ের নাম তাহলে টিংকু । টিংকু মেয়েটির ডাক শুনে মেয়েটির দিয়ে চোখ তুলে তাকালো । কি যেন ভাবছে । তারপর আমার দিকে তাকিয়ে আস্তে করে মিয়াও বলল ।

এমন একটা ভাব যেন আমাকে ধন্যবাদ দিল । তারপর দৌড়ে চলে গেল । মেয়েটি টিংকুকে কোলে নিয়ে ঘরের ভিতর চলে গেল । এরপর থেকে টিংকু প্রতিদিন আমার কাছে আসতে লাগলো । ওর সাথে ভাব হতেও সময় লাগলো না ।

যেদিন দুধ দিতে মনে থাকতো না আমার দরজার কাছে এসে মিয়াও মিয়াও করতো । আমি মাঝে মাঝে টিংকু কে আদর করে দিতে লাগলাম । একদিনের কথা । আমি বারান্দায় বসে টিংকুর দুধ খাওয়া দেখছি এমন সময় টিংকুর ডাক পড়লো । -এই টিংকু ।

এদিকে আয় । টিংকু একবার মেয়েটির দিকে তাকালো । তারপর আবার খাওয়ায় মন দিল । মেয়েটি আবার ডাকলো কিন্তু টিংকুর কোন ভাবান্তর হল না । আমি মনে মনে হাসতে লাগলাম ।

-এই যে শুনুন । আমি বললাম -আমাকে বলছেন ? -জি আপনাকেই বলছি । -বল । -আপনি কি শুরু করেছেন ? -কি শুধু করেছি ? -আপনি আমার টিংকুকে খেতে দিয়েছেন কেন ? -আরে একটা অবলা জীব কে খেতে দেওয়া কি অন্যায় কাজ ? -দেখুন আপনার মতলব আমি খুব ভাল করেই বুঝি ! আমি বুঝতে পারছি মেয়েটার মেজার গরম হয়ে যাচ্ছে । আমি একটা মোলায়েম করা হাসি দিলাম ।

তারপর টিংকুকে কোলে নিয়ে বললাম -টিংকু তোর আম্মুর মাথা গরম । বুঝছিস ? কাল থেকে তুই আর আসিস না । তোর আম্মু তাহলে রাগ করবে । টিংকু বলল -মিয়াও । মিয়াও ।

-আচ্ছা । তারপর মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললাম -টিংকু বলছে ওর আম্মুর মাথা নাকি সব সময় গরম থাকে ! সত্যি নাকি ? -মিয়াও মিয়াও । -এই টিংকু চুপ । আর আপনি ! আমার টিংকুকে ছেড়ে দিন । এখনই ছেড়ে দিন ।

আমি টিংকুকে ছেড়ে দিলাম । এভাবেই কদিন চলতে থাকলো । একদিন আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এল । আমি টিংকুর গলায় একটা সুতা দিয়ে ছোট্ট কয়েকটা লাইন লিখে পাঠালাম । কি লিখে পাঠালাম সেটা না হয় নাই বলি ।

কিন্তু তারপর থেকেই টিংকুর আসা বন্ধ । উকি ঝুকি দিতে লাগলাম কিন্তু কোন খোজ খবর নাই । না টিংকু না টিংকুর মায়ের । কই গেল ! গুনে গুনে সাত দিন মেয়েটা একটা বারও বারান্দায় এল না । এদিকে মেয়েটাকে দেখার জন্য মনটা কেমন ছটফট করতে লাগলো ।

মেয়েটার লম্বা চুল আর ঘন কালো চোখের ভিতর এক অন্য রকম আভা ছিল । প্রথম যেদিন মেয়েটিকে দেখেছিলাম সেদিনই মেয়েটার জন্য কেমন একটা অনুভুতির সৃষ্টি হয়েছিল । -এই যে টিংকুর মা । মেয়েটি আমার দিকে তাকিযে রইলো কিছুক্ষন । তারপর বলল -বলুন ।

-তোমার টিংকুর কি খবর ? -ভাল । -দেখা নেই যে কদিন । -ওকে আটকে রেখেছি । -আমার জন্য ? -জি ! -আচ্ছা আমি আর ওকে আদর করবো না । ইনফ্যাক্ট আমার বিড়াল খুব একটা পছন্দও না ।

-তাহলে এতো দিন এসব কেন করেছেন ? আমি মেয়েটির দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললাম -তুমি বোঝ নি কেন করেছি ? মেয়েটি আমার কথার উত্তর না দিয়ে তাকিয়ে রইলো । -দেখো ! আমি প্রতিদিন লুকিয়ে তোমাকে দেখতাম । তুমি যখন হাত দিয়ে বৃষ্টির পানি ধরার চেষ্টা করতে, তারপর তোমার কড়ই গাছে জোড়া টুনটুনি দেখে খুশি হতে অথবা একলা শালিক দেখে মন খারাপ করতে, তোমার মন খারাপ হলে যখন উদাস হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে অথবা আনন্দে একা একা গান গাইতে ....সব ! সব দেখতাম । -কেন ? -কেন দেখতাম এটা না বোঝার মত ছোট্ট খুকি তুমি নিশ্চই না । -শুনুন ।

এসব আমার ভাল লাগে না । আপনি আর কখনও এমন করবেন না । আর কখনও আমাকে লুকিয়ে দেখবেন না । আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মেয়েটি ঘরের ভিতর চলে গেল । মনটা একটু খারাপই হল ।

কিন্তু কি আর করা । পল্টুর বুদ্ধি কাজ করলো না । তবে টিংকুর জন্যও মনটা খারাপ হতে লাগলো । দুধ খাওয়া শেষে টিংকু প্রায়ই আমার চারিপাশে মিয়াও মিয়াও করে ঘুরে বেড়াতো । বিড়াল পছন্দ না করলেও টিংকুকে পছন্দ হয়েছিল ।

আমি মোটামুটি আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম । আর বারান্দায় খুব একটা যেতাম না । পল্টুও বলল মিলিকে বিড়াল গিফট করে নাকি কোন কাজ হয় নি । মাঝখান দিয়ে বিড়াল দিতে গিয়ে বিড়ালের নখের আচড়ে নাকি ওর হাত থেকে রক্ত বের হয়ে গেছে । প্রায় দু সপ্তাহ পরের কথা ।

রাতে ঘরের লাইট বন্ধ করে শুয়ে আছি । এমন সময়েই মৃদু মিয়াও মিয়াও আওয়াজ কানে এল । বিছানা থেকে উঠে দেখি বারান্দার দরজার কাছে দুটো চোখ জ্বলছে । প্রথমে একটু ভয় পেলেও বুঝতে অসুবিধা হল না টিংকু এসেছে । আমি লাইট জ্বেলে দেখি টিংকু দরকার কাছে চুপ করে বসে আছে ।

আমি আর একটু কাছে গিয়ে দেখি ওর গলায় একটা সুতার সাথে এক টুকরো কাগজ বাঁধা । কাগজ ! কি লেখা আছে ? আমি যে চিঠি দিয়েছিলাম তার জবাব ? কাগজটা খুলেই মন আনন্দে ভরে উঠল সম্মোধনটা দেখা । সম্মোধনে লেখা টিংকুর আব্বু ......

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।