আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এমন বিদায় তাকেই মানায়

খেলা শেষ। দল জিতেছে। বিদায় বেলায় এরচেয়ে ভালো উপহার আর কি হতে পারে একজন ক্রিকেটারের? গত পরশু ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ক্রিকেটের 'জীবন্ত কিংবদন্তি' শচীন টেন্ডুলকার ইতি টেনেছেন ২৪ বছরের টেস্ট ক্যারিয়ারের। বিদায় টেস্টে তিন অংকের জাদুকরি ইনিংস খেলেননি ঠিকই, কিন্তু বিদায় বেলা যা বলেছেন, এক কথায় অতুুলনীয়। এমন আবেগঘন বক্তৃতা এর আগে কেউ দেননি ক্রীড়াঙ্গনে।

কি বলেননি! টেন্ডুলকার যখন চোখের জলে ভিজে উন্মুক্ত মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, তখন কাঁদছিল শতকোটির ভারত। আরব সাগরের পাড় ঘেঁষা মুম্বাই তখন আবেগের ঢেউয়ে ভেসে যাচ্ছিল। হাজার মাইল দূরের বাংলাদেশেও আঘাত হেনেছিল সেই আবেগের ঢেউ। প্রিয় ক্রিকেটারের বিদায়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার মোহাম্মদ আশরাফুল। হু হু করে কেঁদেছেন।

প্রিয় ক্রিকেটারের বিদায়বেলায় টেস্ট ক্রিকেটের সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ানের মনের আয়নায় উঁকি দিয়েছে টেন্ডুলকারকে ঘিরে অসংখ্য স্মৃতি।

অভিষেক টেস্টে সবচেয়ে কম বয়সে সেঞ্চুরি করে ক্রিকেটবিশ্বকে বিস্মিত করেছিলেন আশরাফুল। প্রিয় তারকা টেন্ডুলকারের বিপক্ষে প্রথম খেলতে নামেন ২০০৪ সালে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ইরফান পাঠানের বিধ্বংসী বোলিংয়ের মুখেও অপরাজিত ছিলেন ৬০ রানে। সেই ইনিংসটির প্রশংসা করেছিলেন 'ক্রিকেট গ্রেট'।

প্রিয় ক্রিকেটারের মুখে প্রশংসা শুনে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন আশরাফুল। রাতেই দেখা করেন। কিছু উপদেশ দেন টেন্ডুলকার। সেটা মনে রেখে চট্টগ্রামে খেলেন ১৫৮ রানের অপরাজিত এক ইনিংস। চট্টগ্রাম টেস্টের আগেও কথা বলেন টেন্ডুলকারের সঙ্গে।

আধঘণ্টার সেই আলাপে টেন্ডুলকার তাকে জানিয়ে দেন, কিভাবে ইনিংস তৈরি করতে হয়, 'আমি তাকে বলেছিলাম এক ইনিংসে ভালো করার পরের ইনিংসে ব্যর্থ হই। কারণ কি? বলেছিলেন প্রথম ইনিংসে যতটা মনোসংযোগী থাকো, পরের ইনিংসে ততটা নয়। কিন্তু বড় ক্রিকেটার হতে হলে সব সময়ই মনোসংযোগ ঠিক রাখতে হবে। সেদিনই মনে হয়েছিল, আসলে সে যত বড় ক্রিকেটার, ঠিক তত বড় মনের মানুষ। ' শুধু সেদিনের কথাই নয়।

২০০৯ সালের ২৬ জুনের কথাও আলাদাভাবে মনে রাখবেন আশরাফুল। সেদিন তার বাসায় পা রেখেছিলেন ক্রিকেট বিশ্বের 'বিস্ময়'। রাতে ডিনার করেন। ঘণ্টা খানেক ছিলেন বাসায়। প্রশংসা করেন বাসার সৌন্দর্য্যের।

সেদিনও তার মনে হয়েছে ক্রিকেটার টেন্ডুলকারকে সারাজীবন হাঁটতে হবে মানুষ টেন্ডুলকারের ছায়ায়, 'রাতে বাসায় এসেই আপন করে নেন সবাইকে। জিজ্ঞাসা করেন সবার কুশলাদি। এরপর খাবার টেবিলে তাকে মনে হয়েছে ঘরের মানুষ। আমি খাবার তুলে দিতে গেলে বারবার বলেছেন, নিজের হাতেই নিয়ে নিবেন। এত বড় তারকা ক্রিকেটার, অথচ কোনো অহংকার নেই।

আমি ঘোরলাগা চোখে বারবার তাকে দেখছিলাম। সেটা সে বুঝেছিল। রাতে যাওয়ার সময় বলেছিল, আমি তোমার মতোই একজন মানুষ। আমার পরিচয় একজন ক্রিকেটার। '

টেন্ডুলকার ২৪ বছরের ক্যারিয়ারের অনেককে পেয়েছেন সতীর্থ হিসেবে।

কেউই কখনো বলতে পারবে না, তার উপস্থিতি কখনো বেদনাদায়ক ছিল। সবসময়ই উৎসাহ যুগিয়েছেন সতীর্থদের। বট গাছ হয়ে ছায়া দিয়েছেন তরুণ ক্রিকেটারদের। বিশাল হৃদয়ের টেন্ডুলকার যে একজন ভালো 'টিমম্যান' সেটাও মানেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক, 'টেন্ডুলকার অসাধারণ এক ক্রিকেটার। তার মানের আর ক্রিকেটার আসবেন কি না বলতে পারব না।

বিশাল হৃদয়ের এক লোক তিনি। একজন টিমম্যান হিসেবেও অসাধারণ। আমি যখন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সে খেলেছিলাম, তখন তাকে খুব কাছ থেকে দেখেছিলাম। ৪৫ দিন ছিলাম দলের সঙ্গে। কখনোই দেখিনি কারো সঙ্গে জোরে কথা বলতে।

সবার খোঁজ নিতেন। খেলার সময় মাঠে নামার আগে যখন সবার কাঁধে হাত রেখে দাঁড়াতাম, তখন সে আমাকে মাঝখানে দাঁড় করিয়ে বলতো মুম্বাই বলতে। আমি বলতাম, আর দলের সবাই ইন্ডিয়ান্স বলতো। তিনবার বলার পর সে আমাকে বলতো, আমাদের সবার চেয়ে জোরে বলো তুমি। এরপর পিঠ চাপড়ে দিত।

মনে হতো যেন বড় ভাই ভালোবাসা দিয়ে পিঠ চাপড়ে দিচ্ছেন। ' টেন্ডুলকারকে ঘিরে এমন অনেক স্মৃতি রয়েছে আশরাফুলের। ক্রিকেট লিজেন্ডের বিদায়ের পর সেগুলো স্মৃতির পাতাতেই রয়ে যাবে।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।