আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

১০৫ জন আহত, ১০০ কারখানায় ছুটি

ঢাকার আশুলিয়া ও গাজীপুরে গতকাল মঙ্গলবার আবারও বিক্ষোভ-ভাঙচুর করেছেন পোশাকশ্রমিকেরা। এ সময় শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ সময় অন্তত ১০৫ জন আহত হন। এ অবস্থায় গতকাল প্রায় ১০০ কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

গত সোমবার গাজীপুরের কাশিমপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে দুই শ্রমিক নিহত হওয়ার প্রতিবাদে এবং ন্যূনতম মজুরি আরও বৃদ্ধির দাবিতে গতকাল সকাল থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকেরা। সোমবার পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে শ্রমিক বাদশা মিয়া ও রুমা আক্তার নিহত হন। পুলিশ ও আনসার সদস্যদের গুলিতে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে বলে শ্রমিকেরা দাবি করেন।

গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় বলেন, পুলিশের গুলিতে নয়, সংঘর্ষে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। রুমার বাড়ি রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার বিশ্বনাথ গ্রামে এবং বাদশা মিয়ার বাড়ি ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার চরমাধবদিয়ায়। ওই ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি।

ফরিদপুরে গতকাল বাদশার বাড়িতে গেলে তাঁর মা জহুরা বেগম ও স্ত্রী রূপা বেগম এই হত্যার বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। বাদশার চাচা তারা মিয়া জানান, দুই বছর আগে বাদশা পোশাক কারখানায় চাকরি নেন।

তিন মাস আগে বিয়ে করেন। গতকাল ১০টার দিকে তাঁর লাশ দাফন করা হয়।

গাজীপুরের পুলিশ ও শ্রমিকেরা জানান, দুই শ্রমিকের মৃত্যুতে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা গতকাল সকাল সাড়ে আটটা থেকে সারদাগঞ্জ এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে দুই পক্ষে সংঘর্ষ হয়। শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে।

সকাল ১০টার দিকে কাশিমপুর-শ্রীপুর সড়ক অবরোধ করে আগুন লাগিয়ে শ্রমিকেরা আবার বিক্ষোভ শুরু করেন। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দুই পক্ষে সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন আহত হন।

 সহিংসতা এড়াতে গতকাল কোনাবাড়ী, কাশিমপুর ও সারদাগঞ্জ এলাকার প্রায় ৫০টি কারখানা বন্ধ রাখা হয়। নিরাপত্তা রক্ষায় সহিংসপ্রবণ এলাকায় নির্বাহী হাকিমের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ তিন প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়।

এর আগে সকাল নয়টার দিকে কোনাবাড়ীর কাশিমপুর সড়কে বেশ কয়েকটি সোয়েটার কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করতে থাকেন। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরাতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে ১০ শ্রমিক আহত হয়।

তিন শ্রমিকনেতা গ্রেপ্তার: জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম কামরুজ্জামান জানান, নাশকতা সৃষ্টি ও শ্রমিকদের উসকানি দেওয়ার অভিযোগ সোমবার দিবাগত রাতে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের গাজীপুর জেলা শাখার সভাপতি জিয়াউল কবির, সাংগঠনিক সম্পাদক কফিল উদ্দিন ও বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক তমিজ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদিকে সোমবার কোনাবাড়ী এলাকায় দোকান ও বাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাটের অভিযোগে কোনাবাড়ী পুলিশ ক্যাম্পের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রবিউল আলম বাদী হয়ে ১৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত কয়েক হাজার শ্রমিককে আসামি করে একটি মামলা করেন।

টঙ্গীর পাগাড় এলাকায় সকাল নয়টার দিকে অনন্ত ফেব্রিক্স লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন। এ সময় আশপাশের ১০-১২টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। পার্শ্ববর্তী জাবের জোবায়ের কারখানার মহাব্যবস্থাপক মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক বিক্ষোভের খবর পেয়ে তাঁরা কারখানায় ছুটি ঘোষণা করেন। তার পরও বহিরাগত কিছু শ্রমিক কারখানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ভাঙচুর করেন। এ সময় শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে।

শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট ও লাঠিপেটা করেন। এতে প্রায় ৫০ জন শ্রমিক আহত হন।

আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকার ব্লুক্যাপ, মাউন্টেন ও বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকেরা সকালে এসে কারখানা থেকে বের হয়ে যান। কিছু শ্রমিক আশপাশের কারখানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে অন্তত সাতটি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। সকাল সাড়ে আটটার দিকে পলাশবাড়ী এলাকার কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা নবীনগর-কালিয়াকৈর সড়ক অবরোধ করেন।

পরে পুলিশ তাঁদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয়। সোয়া নয়টার দিকে জামগড়া এলাকায় কয়েকটি কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। এ সময় শ্রমিকেরা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছন—এমন খবরে পুলিশ তাঁদের ধাওয়া দিলে দুই পক্ষে সংঘর্ষ বেধে যায়। পরে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। পরে শিমুলতলা থেকে জামগড়া পর্যন্ত অন্তত ২০টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়।

নিশ্চিন্তপুর এলাকায় সকাল সাড়ে নয়টার দিকে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের চেষ্টা করলে পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় ওই এলাকায় দুটি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। একইভাবে কাঠগড়া ও পুকুরপাড় এলাকায় কয়েকটি কারখানায় ছুটি দেওয়া হয়। শ্রমিকেরা জিরাবর-বিশমাইল সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ ধাওয়া দেয়।

যে কারণে শ্রমিক অসন্তোষ: শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ন্যূনতম মজুরি পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা ঘোষণা করা হলেও গ্রেড অনুযায়ী কে কত টাকা বেতন পাবেন, তা তাঁদের জানানো হচ্ছে না।

আর যেসব কারখানায় পিস রেট (উৎপাদন অনুযায়ী পারিশ্রমিক) অনুযায়ী পারিশ্রমিক দেওয়া হয়, সেসব কারখানার শ্রমিকদের কী ধরনের সুযোগ বাড়ানো হয়েছে, তাও স্পষ্ট করা হচ্ছে না। এসব কারণে শ্রমিকেরা পারিশ্রমিক নিয়ে সংশয়ের মধ্যে রয়েছেন। এর মধ্যে যোগ হয়েছে শ্রমিকদের ওপর পুলিশের নির্যাতন আর গুলি করে হত্যার মতো ঘটনা।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।