জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবী যে কত বড় বিপদের মুখে পড়েছে, তা জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের চেয়ে এত সহজ ও পরিষ্কারভাবে বোধ হয় আর কেউ বোঝাতে পারেননি। কপ-১৯ জলবায়ু সম্মেলনের উচ্চপর্যায়ের অধিবেশনের উদ্বোধনী ভাষণে তিনি বলেন, আইসল্যান্ডে একসময় আইস, অর্থাৎ বরফ থাকবে না। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের এই দুঃসময়টা কি তাহলে পৃথিবীতে মানব প্রজাতির শেষ অধ্যায়ের শুরু? বান কি মুনের কথায় সে রকম একটি ইঙ্গিত রয়েছে। ওয়ারশ সম্মেলনে একটি ঐক্যবদ্ধ চুক্তিতে আসার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের নিজেদের জন্য নয়, আপনাদের সন্তান ও তাদের সন্তানের কথা ভেবে কাজ করুন।
উদ্বোধনী অধিবেশনে বারবার এ কথাগুলো এসেছে।
পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ পৃথিবীটা যেন পুরো মানবজাতির একটি একান্নবর্তী পরিবারের আবাসস্থল। এর যত্ন নিতে হবে। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের প্রেসিডেন্ট বিশ্ব উষ্ণায়ন রোধে কার্যকর চুক্তি সম্পাদনের তাগিদ দিয়ে বলেন, কালকের জন্য ফেলে রাখা যাবে না, আজকের জন্যও না—এখনই তা করতে হবে।
কিন্তু এ সম্মেলনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে সে রকম কোনো সার্বিক চুক্তি সম্পাদনের পথ প্রশস্ত হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন অনেকে। বিশেষত স্বল্পোন্নত ও গ্রুপ-৭৭ ভুক্ত দেশগুলোর অভিজ্ঞতা তা-ই বলে।
মঙ্গলবার এডিপির (ডারবান প্ল্যান বিষয়ে) তিন ও চার অধ্যায়ের ওপর উন্নত ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর প্রতিনিধিদের মধ্যে তীব্র বিতর্ক হয়েছে। কয়েকটি উন্নত দেশ জলবায়ু তহবিলে অর্থায়ন বাড়াতে রাজি নয়। অথচ তহবিলের অভাবে উপদ্রুত অঞ্চলে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া, পুনর্বাসন ও অন্যান্য কাজ থেমে যাবে।
গত তিন বছরে উন্নত অনেক দেশ অর্থায়নের ঘোষিত লক্ষ্য পূরণ করেনি। সম্মেলনের বিভিন্ন আলোচনায় আবার এ কথাও উঠেছে যে সীমিত তহবিলের অর্থ যতটুকু যাদের কাছে যাওয়ার কথা, সেখানেও নয়ছয় হচ্ছে।
অপচয়, অব্যবস্থাপনা ও অপব্যবহারের কথাও আলোচনায় এসেছে।
মঙ্গলবার সম্মেলন ভেন্যুর আমেরিকান সেন্টারে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই বিদ্যুৎ নিয়ে আলোচনা চলছিল। সেখানে ছিলেন জোনাথন পারশিঙ। তিনি ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব এনার্জির ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ফর ক্লাইমেট। আমি তাঁকে প্রশ্ন করি, আমেরিকা বা উন্নত দেশের বিজ্ঞানীরা কেন মহাকাশে ‘সোলার স্যাটেলাইট’ প্রেরণের উদ্যোগ নিচ্ছেন না?
সোলার স্যাটেলাইট, সেটা আবার কী?
আমি বুঝিয়ে বলি, মহাকাশে প্রেরিত বিশেষ ধরনের উপগ্রহ সৌরশক্তি গ্রহণ করে তাকে প্রথমে বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গে পরিণত করবে।
তারপর সেই তরঙ্গ পৃথিবীতে বিভিন্ন বাসার ছাদে অ্যান্টেনার মাধ্যমে স্যাটেলাইট সৌরবিদ্যুৎ পৌঁছে দেবে। এ রকম করা গেলে তো আর কয়লা বা গ্যাস পুড়িয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করতে হবে না। সবকিছু চলবে বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গের মাধ্যমে।
আমার কথা আলোচনা কক্ষের সবাই চুপচাপ শুনলেন। এটা নিয়ে যে ভাবনার অবকাশ আছে, শ্রোতাদের মনোভাবে তা বোঝা গেছে।
অবশ্য জোনাথন বললেন, এসব দূরের ব্যাপার। কবে হবে, আদৌও সম্ভব কি না, সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ।
অবশ্য ‘সৌর স্যাটেলাইট’ একেবারে অসম্ভব, তা তিনি মনে করেন না।
আইসল্যান্ড যেন ‘আইসশূন্য’ না হয়ে যায়, সে জন্য সবকিছুই করতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।