আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গাছ হবে মানুষের আরেকটা মাত্রা; সুদূর বা অদূর ভবিষ্যত।

i am fine still now.

মিসির আলী সাহেব প্রায় তিন ঘন্টা ধরে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছেন কম্পিউটার এর দিকে। গাছের মাধ্যমে ট্রান্সপোর্টেশনের যে অপার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে তাতে মাথা ঘুরে যাবার অবস্থা হয়েছে তার। আপাতত যে রেজাল্ট উনি পেয়েছেন তার গবেষনায়, তাতে করে প্রায় ৮৩০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত ওজনদার কোন পদার্থ ফটো-ভেলোসিটিতে ট্রান্সপোর্ট করা সম্ভব। এ ওজনটা এখানে কোন ব্যাপার না। যেহেতু আলোর বেগ এখানে অগ্রগণ্য, এসকেইপ ভেলোসিটি নিয়ে কোন টেনশন করার কিছু নেই।

তার মানে পুরো পৃথিবীই ট্রান্সপোর্ট করা সম্ভব পার্ট বাই পার্ট। রিলিওন ছেলেটা কাল বলেছিলো, মিঃ প্রেসিডেন্ট এবং মিনিস্টার অব ইউ,আর (ইউনিভার্স রিলেশনশীপ) ঘোষনা দিয়েছেন যে, মহাবিশ্বের প্রায় ৩০টা গ্রহ এবং উপগ্রহ আমাদের দুর্যোগকালীন আবাসন দিতে রাজী আছে। কিন্তু ট্রান্সপোর্টেশনের সমস্ত দায় দায়িত্ব আমাদের। মার্স এবং মুন এ ইতোমধ্যে অনেক ভীড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে সেই আদ্যিকালের ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমের বদৌলতে; রকেট সিস্টেম। কিন্তু এই সিস্টেমে যে সময় লাগবে পুরো পৃথিবী খালি করতে, তা প্রায় অসীমের কাছাকাছি।

অথচ সময় হাতে মাত্র কয়েক বছর। যা মনে হচ্ছে এ যাত্রা মানব সভ্যতা টিকে যাবে। -স্যার। উদ্ভিদ বিদ্যার প্রবাদপুরুষ স্যার মিসির আলী একটু চমকালেন। -কে? -আমি।

-ও, রুশো। এসো, ভিতরে এসো। রুশো একটি বনসাই। ২৩শতাব্দীর শেষের দিকে মানুষের পোষা প্রানীর স্থান করে নেয় ছোট ছোট গাছ। কারন তখন মিসির আলী সাহেবের দাদা স্যার নওশান আলী সাহেব আবিষ্কার করেন প্লান্টচেম্বার।

নির্দিষ্ট উচ্চতা ও বয়সের কিছু গাছকে এই চেম্বারে রেখে তার সাথে কথা বলা ও মনের ভাব আদানপ্রদান করা সম্ভব। -স্যার সকাল থেকে রিলিওন এসে বসে আছে। আজ নাকি গুরুত্বপুর্ন কিছু একটা নিউজ আসার কথা? -ও হ্যাঁ। আচ্ছা চল, দেখা করা দরকার। -স্যার, পৃথিবী কি ধ্বংশ হয়ে যাচ্ছে? সাথে কি আমরাও? -হ্যাঁ পৃথিবী ধ্বংশ হয়ে যাচ্ছে।

আর আমরাও বলতে তুমি কী বোঝাতে চাচ্ছ? -মানে মানব সভ্যতা। -তুমি কি নিজেকে মানুষ মনে কর? ভ্রু কুঁচকালেন মিসির আলী। -আমি মানব সভ্যতা বুঝাতেই 'আমরা' বলে ফেলেছি। দুঃখিত স্যার। -হুম! মানব সভ্যতা হুমকির মুখে, উদ্ভিদ সভ্যতা নয়।

খনিজ সম্পদের বদ্ধ প্রকোষ্ঠে সেই পৃথিবী সৃষ্টি থেকে জমে থাকা বিষাক্ত গ্যাস বিস্ফোরিত হবে ভুপৃষ্ঠের কিছু কিছু স্থানে। যে পরিমান গ্যাস বেরুবে তা দীর্ঘদিন শনির মত বলয় করে রাখবে পৃথিবীকে। তাতে কার্বন-ডাই-অক্সাইডেরই পরিমান এত বেশী এবং অন্যান্য গ্যাস এতই কম যে, গাছেদের কোন সমস্যা হবে না। -আপনার দাদা এই ভবিষ্যত বানী করে গেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন অসামান্য প্রতিভা।

তিনি মানুষ ও গাছের মধ্যে যে সংযোগ স্থাপন করেছেন তার এই ঋন কেউ কোনদিন শোধ করতে পারবে না। না গাছ, না মানুষ। -কিন্তু তোমাদের কারনেই মানুষ এতদিন এই ভবিষ্যৎ বানী নিয়ে হাসিঠাট্টা করে এসছে। এখন এই শেষ মুহুর্তে এসে যদি আমি কিছু একটা করতে না পারি ... ... হেই রিলিওন! হোয়াটস আপ ইয়াংম্যান? -গুড ডে স্যার। ভালো।

আপনার গেটের বাইরে হাজার হাজার সাংবাদিক ও প্রেস, মিডিয়া। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ অপেক্ষা করে আছে আপনার কাছ থেকে কিছু শোনার জন্য। কিছু কি পেলেন স্যার? -হ্যাঁ। চলো। রুশো, তুমিও এসো।

দৈনিক মহাকাশ (প্রভাতী) (সর্বাধিক প্রচলিত আন্তর্বৈশ্বয়িক পত্রিকা) জুলাই ২৩, ২৪১৪। সে অনেক অনেক দিন আগের কথা। এদেশেরই একজন খ্যাতনামা বিজ্ঞানী ও সাহিত্যিক স্যার জগদীশ চন্দ্র কেবল গাছেদের জীবন আবিষ্কার করেছিলেন, ওটা কেবল শুরু ছিলো। ক্রমে ক্রমে গাছেদের চিন্তা চেতনা ও গাছেদের সাথে মনের ভাব আদান প্রদানের বিভিন্ন কৌশল আবিষ্কৃত হয়েছে কালে কালে। অস্বীকার করার উপায় নেই, এর সার্বিক সম্মাননার দাবীদার একমাত্র বাংলাদেশ।

এ যাবতকালের সবচে আলোচিত ব্যাক্তিত্ব ছিলেন প্রখ্যাত বৈজ্ঞানিক ও সাহিত্যিক নওশান আলী এবং বর্তমানে তার দৌহিত্র উদ্ভিদ বিজ্ঞানী মিসির আলী। উনিশ শতকের কিংবদন্তী লেখক হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্ট কাল্পনিক চরিত্র মিসির আলীর নামের সাথে মিল রেখে তার নাম রেখেছিলেন তার পিতামহ। আজ এই গ্রহের সমস্ত মানুষকে নতুন জীবন দানের যে আশা তিনি একটু আগে প্রেস কনফারেন্সে দিয়েছেন, তা নিঃসন্দেহে তাকে আরেক কিংবদন্তীতে উদ্ভাসিত করবে। সাংবাদিক ও প্রেস মিডিয়ার এবং ইমেইল, ফেসবুক, টুইটার ও ব্লগ থেকে নির্বাচিত বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এ ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন। তার কিছুক্ষন পর তিনি জরুরীভাবে ডাকা আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সম্মেলনে তার আবিষ্কার তুলে ধরেন।

লেইডার্স নিএল, আল্বানোস পিহবেন, উইলিয়াম র' স্যামুয়েল ও বিশ্বের খ্যাতনামা উদ্ভিদ বিজ্ঞানীগন তার থিওরীর ভুয়সী প্রসংশা করে এই কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার সাথে কাজে লেগে থাকার আশাবাদ ব্যাক্ত করেন। খুব শীঘ্রই আন্তর্জাতিক দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা ও বিজ্ঞান সোসাইটি এই থিওরীকে বাস্তবে রূপদান করবে। পাশাপাশি মিঃ প্রেসিডেন্ট অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড কিছুক্ষন আগে ব্লগ ব্রিফিং এর মাধ্যমে যথাযথ সমস্ত সংস্থাকে আজ দুপুরের মধ্যে এই কাজে নেমে পড়ার আদেশ জারি করেছেন। আশা করা যাচ্ছে আজ দৈনিক মহাকাশ এর বৈকালী কিংবা নৈশ এডিশনে আমরা স্যার মিসির আলীর এই অসামান্য আবিষ্কারের বিষদ বিবরন তুলে ধরতে পারবো। (চলবে)


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।